তারাবীহ এর নামাজ সংক্রান্ত একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্লেষন এবং আহলে হাদিসদের মিথ্যাচারের জবাব

তারাবীহ শব্দটি কোন হাদিস দ্বারা প্রমাণিত কি?
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷
.
তারাবীহ শব্দটি সাহাবায়ে কেরাম এবং তাবেয়ীগণের বক্তব্যের আলোকে প্রমাণিত।
.
তারাবীহ শব্দটি বহুবচন। যার এক বচন হল, ‘তারবীহাতুন’। যার অর্থ হল, চার রাকাআত পর একবার বিশ্রাম নেয়া।
.
তিনের অধিক পরিমাণ চার রাকাআত পরপর বিশ্রাম নেবার নাম হল, ‘তারাবীহ’।
.
عَنْ أَبِي الْحَسْنَاءِ أَنَّ عَلِيَّ بْنَ أَبِي طَالِبٍ ” أَمَرَ رَجُلًا أَنْ يُصَلِّيَ، بِالنَّاسِ خَمْسَ تَرْوِيحَاتٍ عِشْرِينَ رَكْعَةً “
.
হযরত আবুল হাসনা বলেনঃ হযরত আলী রাঃ এক ব্যক্তিকে পাঁচ তারবীহা এর সাথে বিশ রাকাত পড়াতে হুকুম দিয়েছেন। {সুনানে কুবরা লিলবায়হাকী, হাদীস নং-৪২৯২, ৪৩৯৭, কানযুল উম্মাল, হাদীস নং-২৩৪৭৪}
.
عَنْ إِبْرَاهِيمَ، «أَنَّ النَّاسَ كَانُوا يُصَلُّونَ خَمْسَ تَرْوِيحَاتٍ فِي رَمَضَانَ»
.
তাবেয়ী হযরত ইবরাহীম নাখয়ী রহঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয় লোকেরা রমজানে পাঁচ তারবীহায় (তারাবীর) নামায আদায় করতো। [কিতাবুল আছার লিআবী ইউসুফ, বর্ণনা নং-২১১]
.
عَنْ إِسْمَاعِيلَ بْنِ عَبْدِ الْمَلِكِ قَالَ: «كَانَ سَعِيدُ بْنُ جُبَيْرٍ يَؤُمُّنَا فِي شَهْرِ رَمَضَانَ، فَكَانَ يَقْرَأُ بِالْقَرَاءَتَيْنِ جَمِيعًا، يَقْرَأُ لَيْلَةً بِقِرَاءَةِ ابْنِ مَسْعُودٍ فَكَانَ يُصَلِّي خَمْسَ تَرْوِيحَاتٍ،
.
হযরত ইসমাইল বিন আব্দিল মালিক রহঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত সাঈদ বিন যুবায়ের রমজান মাসে আমাদের ইমামতি করতেন।তিনি দুই কিরাতেই তিলাওয়াত করতেন। এক রাতে পড়তেন ইবনে মাসঈদ রাঃ কিরাতে। তিনি পাঁচ তারবীহায় নামায পড়াতেন। [মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক, বর্ণনা নং-৭৭৪৯]
.
أَبُو الْخَصِيبِ قَالَ: ” كَانَ يَؤُمُّنَا سُوَيْدُ بْنُ غَفَلَةَ فِي رَمَضَانَ فَيُصَلِّي خَمْسَ تَرْوِيحَاتٍ عِشْرِينَ رَكْعَةً “
.
আবুল খাছীব রহঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাদের সুয়াইদ বিন গাফালাহ রাঃ রমজান মাসে আমাদের ইমামতী করতেন। তিনি পাঁচ তারবীহায় বিশ রাকাআত পড়াতেন। [আসসুনানুল কুবরা লিলবায়হাকী, হাদীস নং-৪২৯০]
.
عَنْ أَبِي الْبَخْتَرِيِّ: «أَنَّهُ كَانَ يُصَلِّي خَمْسَ تَرْوِيحَاتٍ فِي رَمَضَانَ، وَيُوتِرُ بِثَلَاثٍ»
.
আবুল বাখতারী রহঃ (বুখারী মুসলিমের রাবী) থেকে বর্ণিত। তিনি রমজান মাসে পাঁচ তারবীহায় নামায পড়তেন এবং তিন রাকাআত বিতর পড়তেন। [মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-৭৬৮৬]
.
عَنْ سَعِيدِ بْنِ عُبَيْدٍ، «أَنَّ عَلِيَّ بْنَ رَبِيعَةَ كَانَ يُصَلِّي بِهِمْ فِي رَمَضَانَ خَمْسَ تَرْوِيحَاتٍ، وَيُوتِرُ بِثَلَاثٍ»
.
হযরত সাঈদ বিন উবায়েদ রহঃ থেকে বর্ণিত। নিশ্চয় আলী বিন রাবীয়া রমজান মাসে পাঁচ তারবীহায় নামায পড়তেন এবং তিন রাকাআত বিতর পড়তেন। [মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-৭৬৯০]
.
তারাবীহ শব্দ উল্লেখ করে এরকম বর্ণনা হাদীসের কিতাবে ও হাদীসের ব্যাখ্যাগ্রন্থে ভরপুর। তাই এ শব্দটি পরবর্তী যুগে আবিস্কার বলার কোন সুযোগ নেই। বরং সাহাবায়ে কেরাম এবং তাবেয়ীগণের বর্ণিত শব্দের নাম তারাবীহ।
.
আর সবচে’ বড় বিষয় হল, এখানে শব্দ মুখ্য বিষয় নয়, বরং মূল বিষয় হল, রমজান মাসের বিশেষ নামায। যা বিশ রাকাআত। এ নামাযটি যে নামেই প্রসিদ্ধ পাক না কেন, এটি কখনোই মূল বিষয় হতে পারে না। মূল বিষয় হল, এ নামাযের অস্তিত্ব নববী যুগ এবং সাহাবাযুগে অস্তিত্ব আছে কি না?
.
আর আমাদের সাইটে প্রকাশিত একাধিক প্রশ্নোত্তর ও প্রবন্ধে আমরা প্রমাণ করেছি যে, রমজানের বিশেষ নামায যা তারাবীহ নামে পরিচিত তা নববী যুগ থেকে নিয়ে সাহাবা ও তাবেয়ীযুগ এবং অধ্যবধি পড়ে আসা হচ্ছে। যা উক্ত নামাযটি শরীয়তসিদ্ধ আমল হবার প্রমাণ বহন করে। কারণ, উম্মতের আমলী পরম্পরা কোন আমল সহীহ এবং বিশুদ্ধ হবার সবচে’ বড় দলীল।
.
.
তারাবীহ এর নামায নফল/সুন্নাতে গায়রে মুয়াক্কাদা নয়, বরং সুন্নাতে মুয়াক্কাদা !
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷
.
আমাদের দেশের আহলে হাদিস ভাইয়েরা সব সময় শরীয়তকে ছোটো করতে পারলেই মনে হয় বেঁচে যায়। সব সময় কষ্ট কম করার ধান্দা। নিজ স্বর্থের কারনে শরীয়ত কখনো সংর্কীর্ণ হয়না।
.
এবার মূল আলোচনায় আসি। তারাবীহ পড়া সুন্নতে মুআক্কাদা। তাই এটি ছেড়ে দিলে সুন্নতে মুআক্কাদা ছেড়ে দেবার গোনাহ হবে। বছরে একটি রহমতের মাস রমজান। যার প্রতিটি সিজদা অনেক দামী। তাই তারাবীহ ছেড়ে দেবার অভ্যাস খুবই গর্হিত।
.
হাদিসে এসেছে,, রাসুল (স.) বলেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক তোমাদের উপরে রমজানের রোজা ফরজ করে দিয়েছেন আর আমি তোমাদের জন্য রমজানের তারাবিহকে সুন্নাত করলাম। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নম্বরর : ১৩২৮)
.
রোযা রাখা ফরজ। তারাবীহ পড়া সুন্নতে মুআক্কাদা। দু’টিই স্বতন্ত্র ইবাদত। একটির কারণে অন্যটি হবে না দাবি করা অজ্ঞতা বৈ কিছু নয়।
.
(قَوْلُهُ وَالْجَمَاعَةُ فِيهَا سُنَّةٌ عَلَى الْكِفَايَةِ إلَخْ) أَفَادَ أَنَّ أَصْلَ التَّرَاوِيحِ سُنَّةُ عَيْنٍ، فَلَوْ تَرَكَهَا وَاحِدٌ كُرِهَ، بِخِلَافِ صَلَاتِهَا بِالْجَمَاعَةِ فَإِنَّهَا سُنَّةُ كِفَايَةٍ، فَلَوْ تَرَكَهَا الْكُلُّ أَسَاءُوا؛ أَمَّا لَوْ تَخَلَّفَ عَنْهَا رَجُلٌ مِنْ أَفْرَادِ النَّاسِ وَصَلَّى فِي بَيْتِهِ فَقَدْ تَرَكَ الْفَضِيلَةَ، وَإِنْ صَلَّى أَحَدٌ فِي الْبَيْتِ بِالْجَمَاعَةِ لَمْ يَنَالُوا فَضْلَ جَمَاعَةِ الْمَسْجِدِ (رد المحتار، كتاب الصلاة، باب الوتر والنوافل، مبحث صلاة التراويح-2/495
.
রমজান মাসের জন্য নির্দিষ্ট তারাবি নামাজ জামাতে পড়া ও কোরআন শরিফ একবার খতম করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা। রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজে তারাবি নামাজ পড়েছেন এবং সাহাবায়ে কিরামকে পড়ার জন্য আদেশ দিয়েছেন। উজর ছাড়া তারাবির নামাজ না পড়লে সুন্নতে মুআক্কাদা তরক করার গোনাহ হবে। লাগাতার ছেড়ে দেয়া কবিরা গোনাহের শামিল। (রদ্দুল মুহতার ২/৪৯৫)
.
তারাবিহ সুন্নতে মুয়াক্কাদা। (আজনারুল ফাতাওয়া : খ. ৩, পৃ. ৫২৫)
.
ইশার নামাজের চার রাকাত ফরজ ও দুই রাকাত সুন্নাতের পর এবং বিতর নামাজের আগে দুই রাকাত করে ১০ সালামে যে ২০ রাকাত নামাজ আদায় করা হয় শরিয়তের পরিভাষায় তাকে সালাতুত তারাবি বা তারাবির নামাজ বলা হয়। এ নামাজ সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। (বাদাউস সানায়ে, খন্ড. ১, পৃষ্ঠা. ৪৬৬)
.
বিশ রাকাত তারাবি পড়া সুন্নাতে মুয়াক্কাদা, আট রাকাত নয়। কেননা নবী করিম (সা.), খোলাফায়ে রাশেদা এবং সব সাহাবি ২০ রাকাত তারাবি পড়তেন।
(উমদাতুল কারি, খ. ১২, পৃ. ১৮৩)
.
তারাবী নামায সুন্নত হওয়াকে যে অস্বীকার করবে অথবা অবৈধ মনে করবে সে বিদআতের আবিস্কারক, পথভ্রষ্ট। আর তাহতাবী কিতাবে রয়েছে যে তারাবী নামায সুন্নত, এই নামায বর্জন ও ছেড়ে দেওয়া জায়েয নাই। (কামুসুল ফিকহ ২/৪৪৮)
.
.
সৌদী আরবের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠ্য হিসেবে পঠিত “আররওজুল মুরবি” গ্রন্থে এসেছে-
والتراويح سنة مؤكدة
তথা তারাবী নামায সুন্নতে মুআক্কাদা।
{আরওজুল মুরবি-৬৫}
.
একই বক্তব্য প্রদান করছেন প্রসিদ্ধ হাদীস বিশারদ আল্লামা মোল্লা আলী কারী রহঃ। তিনি লিখেছেন-
والحاصل ان الأصح فيها انها سنة مؤكدة
তথা সবচে’ বিশুদ্ধতম কথা হল, তারাবীহ নামায সুন্নতে মুআক্কাদা। {শরহুন নুকায়া-১/৩৪১}
.
চার মাযহাবের ফিক্বহের গ্রন্থেই একই বক্তব্য এসেছে-

ক) আলবাহরুর রায়েক-১/১১৭।
খ) আলমুহাজ্জাব-১/৮৪।
গ)হুলয়াতুল উলামা-২/১১৯।
ঘ)আলইক্বনা-১/১১৭,
ঙ) নিহায়তুজ জাইন-১/১১৪।
চ) আলফুরূহ-১/৪৮৮।
ছ) আলমুগনী-১/৭৯৭ ইত্যাদি।
.
৫–জামাত ও গায়রে জামাত

তাহাজ্জুদে আসল হল জামাত না হওয়া। আর তারাবীহে জামাত পড়াই উত্তম। দেখুন
{আররওজুল মুরবি-৬৫}
.
আরেকটি বিষয় হলো,, জামাতের সাথে তারাবীর নামায পড়া।
.
এব্যপারে ফুকাহায়ে কেরাম বলেন: জামাতের সাথে তারাবীর নামায পড়া সুন্নতে কেফায়া। কোন মহল্লায় যদি কেউ-ই জামাতের সাথে না পড়ে তাহলে সকলেই গুনাগার হবে। আর যদি কিছু লোক মসজিদে জামাতের সাথে আদায় করে আর কেউ কেউ ঘরে একা একা আদায় করে তাহলে এতে কোন অসুবিধা নেই। তবে একথা অবশ্যই স্বরণ রাখতে হবে যে, যারা একা একা পড়ল তারা জামাতে পড়ার সাওয়াব থেকে বঞ্চিত হল। (কামুসল ফিকহ: ২য় খন্ড, ৪৫০ পৃষ্ঠা)

উল্লেখ যে পবিত্র রমজান মাসে তারাবীর নামাযে একবার কুরআন শরীফ খতম করা সুন্নত। দুই বার খতম করা ফজিলত বা উত্তম। আর তিনবার খতম করা আফজাল বা অতিউত্তম।

(রাদ্দুল মুহতার : ২য় খন্ড, ৪৯৭ পৃষ্ঠা, ফাতওয়া দারুল উলুম দেওবন্দ ৪র্থ খন্ড, ২৭৪ পৃষ্ঠা)
.
আল্লাহপাক আমাদেরকে সঠিক বুঝ দান করুন। আমীন।
.
.
তারাবীহ তাহাজ্জুদ ভিন্ন নামাযঃ এক নামায বলা তারাবীহ অস্বিকার করার নিফাকী পদ্ধতি
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷
.
কোন কিছুকে অস্বিকার করার পদ্ধতি দু’টি। যথা-
.

.
পরিস্কার শব্দে অস্বিকার করা।
.

.
মুনাফিকীর সাথে অস্বিকার করা। অর্থাৎ মুখে স্বীকারের ভান ধরা কিন্তু মূলত অস্বিকার করা।
.
যেমন এক ব্যক্তি ইশার নামাযকে অস্বিকার করে।
.
আরেকজন বলে আমি ইশার নামাযকে মানি। তবে ইশার নামায হল, তিন রাকাত। কারণ ইশা ও মাগরিব নামায একই। সূর্যাস্তের পরপর পড়লে এর নাম মাগরিব হয়, আর দেড় ঘন্টা পরে পড়লে এর নাম ইশা। সূর্যাস্তের পরপর পড়লে যেমন রাকাত সংখ্যা তিন, দেড় ঘন্টা পড়ে পড়লেও রাকাত সংখ্যা তিনই।
.
লক্ষ্য করুন।
.
প্রথম ব্যক্তি সরাসরি ইশার নামাযকে অস্বিকার করেছে। তার মাঝে কোন নিফাকী নেই। কিন্তু দ্বিতীয় ব্যক্তিও ইশার নামাযকে অস্বিকার করছে। সেই সাথে মুনাফিকীও করছে। সে বলছে ইশার নামাযকে মানে। আবার বলছে ইশা আর মাগরিব নামায একই। অর্থাৎ এক নামাযের দুই নাম হল মাগরিব ও ইশা। তাহলে সে মূলত মাগরিব নামাযকেই মানে। ইশাকে মানেই না। কিন্তু মানুষকে ধোঁকা দেবার জন্য বলছে সে ইশাকে মানে। আর মাগরিব এশা এক নামায।
.
তাহলে প্রথম ব্যক্তিটি অস্বিকারকারী পরিস্কার। আর দ্বিতীয় ব্যক্তিও ইশার নামায অস্বিকারীকারী সেই সাথে মুনাফিক।
.
কারণ, ইশার নামায কিছুতেই মাগরিব নামায নয়। বরং আলাদা স্বতন্ত্র একটি নামায। যার রাকাত সংখ্যা চার।
.
বাহ্যিকভাবে কিন্তু উক্ত মুনাফিক আর আমরা যারা ইশার নামায মান্য করি তাদের মাঝে মতভেদ মনে হবে রাকাত সংখ্যা নিয়ে। মানুষ বুঝবে উভয় ব্যক্তিই ইশাকে মানে। মতভেদ শুধু রাকাত সংখ্যা নিয়ে। একজন বলছে রাকাত চারটি।আরেকজন বলছে রাকাত হল তিনটি। কিন্তু উভয়ই ইশার নামাযকে স্বীকার করে।
.
কিন্তু আসল বিষয় কিন্তু তা নয়। বরং উভয়ের মাঝে মতভেদটা হল ইশার নামায আছে কি না? তা নিয়ে। যে বলছে ইশার নামায তিন রাকাত সে মূলত ইশার নামাযকে মানেই না। বরং শুধু মাগরিব নামায মানে। আর যে ইশার নামাযকে চার রাকাত বলে, সে ইশার নামাযকে মানে। স্বতন্ত্র নামায মানে। যা মাগরিব নামায নয়। বরং আলাদা নামায।
.
তাহলে কি বুঝা গেল? বাহ্যিকভাবে তিন আর চার রাকাতের মতভেদ বুঝা গেলেও আসলে কি উভয়ের মাঝে রাকাতের মতভেদ নাকি ইশার নামাযের অস্তিত্ব আছে কি না? তা নিয়ে মতভেদ?
.
নিশ্চয় ইশার নামাযের অস্তিত্ব নিয়ে মতভেদ। কিন্তু মুনাফিক লোকটি তার ইশার নামায অস্বিকার করার বিষয়টির উপর রাকাত সংখ্যার ধুম্রজাল দিয়ে পর্দা ঢেলে দিল। আর মানুষকে ধোঁকা দিচ্ছে সে ইশার নামায মানে। শুধু রাকাত সংখ্যা নিয়ে মতভেদ। অথচ সে ইশার নামাযই মানে না।
.
আর দু’টি উদাহরণ লক্ষ্য করুন!
.
ক)
.
শিয়াদের যখন আমরা বলি তোমরা কুরআনকে অবিকৃত মান? তারা তখন “তাকিয়া” করে বলে মানি। কিন্তু তাদের এ মানার আড়ালে তারা মনে মনে রাখে হযরত ইমাম মাহদী আঃ যে কুরআন নিয়ে গর্তে আছে সেই কুরআন অবিকৃত। আমাদের কাছে যে কুরআন আছে তা বিকৃত।
.
তাহলে মুখে প্রকাশ করছে আমাদের কাছে থাকা কুরআনকে অবিকৃত মানে, আর মনে রাখছে ইমাম মাহদীর কাছে থাকা কুরআন অবিকৃত। তাহলে সে শব্দের মারপ্যাঁচে মিথ্যা ও প্রতারণা করছে। মূলত তারা আমাদের কাছে থাকা কুরআনকে অবিকৃত মানে না।
.
খ)
.
কাদিয়ানীদের যদি বলেন,কালিমা বল, তখন তারা “লাইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ” বলবে আমাদের মত। কিন্তু সে তার মনে মনে মুহাম্মদ বলে উদ্দেশ্য নেয় মির্যা গোলাম আহমাদ কাদিয়ানীকে। আমাদের নবীকে নয়। কিন্তু ভাবে প্রকাশ করে আমাদের নবী মুহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহকেই মানছে। কিন্তু আসলে মানে না, বরং মানে কাদিয়ানীকে। কিন্তু মুখে বুঝায় মানে।
.
তো এভাবে শব্দের মারপ্যাঁচে মনের কথা লুকিয়ে অস্বিকার করা একটি মুনাফিকী পদ্ধতি। যা কাদিয়ানী এবং শিয়াদের প্রতীক। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমাদের দেশের লামাযহাবী/গায়রে মুকাল্লিদ/শব্দধারী মুসলিম  জামাত বা কথিত আহলে হাদীস সম্প্রদায়ের লোকেরা রমজানের তারাবীহের ক্ষেত্রে কাদিয়ানী ও শিয়াদের মতই মুনাফিকী আচরণ করে থাকে সাধারণ মুসলমানদের সাথে।
.
তাদের লিখিত বইয়ে দেখবেন তারাবীহের আলোচনা আছে। তাদের যদি জিজ্ঞাসা করেন, তারাবী নামাযকে মানে কি না? বলবে মানে।
.
যদি জিজ্ঞাসা করেন রাকাত সংখ্যা কত? তখন বলবে আট। যদি বলেন কিভাবে? তখন বলবে তারাবীহ তাহাজ্জুদ এক নামায।
.
এগার মাস যে নামায ছিল তাহাজ্জুদ সেটিই রমজানে এসে হয়ে যায় তারাবীহ।
.
তাদের বইয়ের দু’টি উদ্ধৃতি দেই। বাকি ওদের লিখিত সকল তারাবী বিষয়ক বইয়েই তা পাবেন।
.

.
শায়েখ আসাদুল্লাহ গালিব তার রচিত নামায বইয়ে লিখেছে “রাত্রির বিশেষ নফল ছালাত তারাবী ও তাহাজ্জুদ নামে পরিচিত। রমযানে এশার পর প্রথম রাতে পড়লে তাকে তারাবীহ আর রমযান অন্যান্য সময়ে শেষ রাতে পড়লে তাকে তাহাজ্জুদ বলে। {ছালাতুর রাসূল [সা]-১৭১}
.

.
গায়রে মুকাল্লিদ তার রচিত বইয়ে লিখেছে “তাহাজ্জুদ ও তারাবী একই নামায। এর সময় ইশার পর হতে ফজরের শেষ পূর্ব পর্যন্ত। এটা রমজান মাসে তারাবী ও অন্য মাসে তাহাজ্জুদ নামে পরিচিত। এর নিয়ম ও দুআ একই। {সহীহ নামায ও মাসনূন দুআ শিক্ষা-১০৪}
.
লামাযহাবী ভাইদের লেখা যেকোন তারাবী সংক্রান্ত বই খুলে দেখুন একই বক্তব্য রয়েছে তাতে।
.
আমাদের দেয়া আগের ইশা ও মাগরিবের উদাহরণটা একটু মিলিয়ে দেখুন। এরা কিভাবে মুনাফিকী আচরণ করে মানুষকে ধোঁকা দিচ্ছে।
.
সাধারণ মানুষতো মনে করবে লামাযহাবী ভাইয়েরা বুঝি তারাবী মানেন। শুধু রাকাত সংখ্যা নিয়ে মতভেদ। আসলে কিন্তু তা নয়। ওরা তারাবীকে মানেই না। মানে শুধু তাহাজ্জুদকে। যেহেতু তাহাজ্জুদের রাকাত আট তাই ধোঁকার আশ্রয় নিয়ে তারাবীর রাকাতও আট বলে থাকে। মানে শুধু তাহাজ্জুদকে, কিন্তু মুখে নাম নেয় তারাবীর। আর ভাব নেয় মতভেদ শুধু রাকাত সংখ্যা নিয়ে মূলত তারাও তারাবী মানে। কিন্তু বাস্তবতা কিন্তু সম্পূর্ণই ভিন্ন।
.
যেমন ইতোপর্বে দেখেছেন যে ব্যক্তি বলছে ইশার নামায তিন রাকাত বলে, সে কিন্তু ইশাকে মানেই না। কিন্তু মুখে বলছে মানে। তিন রাকাত এজন্য বলছে যেহেতু ইশা মাগরিব এক নামায।
.
একই হালাত লামাযহাবীদের। তারাও তারাবী মানে না। মানে শুধু তাহাজ্জুদকে। কিন্তু সাধারণ মুসলমানদের ধোঁকা দেবার জন্য রাকাত সংখ্যার মতভেদকে সামনে নিয়ে আসে। ভাব ধরে তারাবী মানে। আসলে এটি মুনাফিকী ছাড়া আর কিছু নয়।
.
তারাবী অস্বিকার করলে সরাসরি অস্বিকার করুক। এভাবে মুনাফিকী আচরণ করে অস্বিকার করা কেন?
.
তারাবীহ তাহাজ্জুদ এক নমায দাবিটি কতটুকু দলীল সম্মত
—————————————————————————————
.
তারাবীহ তাহাজ্জুদকে এক নামায বলা মুর্খতা ছাড়া আর কিছু নয়। তারাবী ও তাহাজ্জুদ সম্পূর্ণই ভিন্ন দু’টি নামায। আমরা পরিস্কার কিছু পার্থক্য তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ বিষয়ে নিম্নে উপস্থাপন করছি।
.
১-দু’টির শরয়ী উৎস আলাদা!
.
তাহাজ্জুদ নামায কুরআন দ্বারা প্রমাণিত। যথা পবিত্র কুরআনের আয়াত-
.
وَمِنَ اللَّيْلِ فَتَهَجَّدْ بِهِ نَافِلَةً لَّكَ عَسَىٰ أَن يَبْعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامًا مَّحْمُودًا [١٧:٧٩]
.
রাত্রির কিছু অংশ কোরআন পাঠ সহ জাগ্রত থাকুন। এটা আপনার জন্যে অতিরিক্ত। হয়ত বা আপনার পালনকর্তা আপনাকে মোকামে মাহমুদে পৌঁছাবেন। {আলইসরা-৭৯}
.
আর তারাবী নামায রাসূল সাঃ এর হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। যেমন-
.
রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-
.
شَهْرٌ كَتَبَ اللَّهُ عَلَيْكُمْ صِيَامَهُ، وَسَنَنْتُ لَكُمْ قِيَامَهُ،
.
এটি এমন মাস যাতে আল্লাহ তাআলা তোমাদের জন্য রোযাকে ফরজ করেছেন, আর আমি তোমাদের জন্য এর রাতের নামাযকে সুন্নত করেছি। {সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১৩২৮, সুনানে নাসায়ী, হাদীসস নং-২২১০}
.
সুতরাং দু’টি এক নামায হয় কি করে?
.
২-মাশরূ তথা শরীয়ত সিদ্ধ ইবাদত হবার স্থানও আলাদা!
.
তাহাজ্জুদ মক্কায় থাকা অবস্থায় শরীয়ত সিদ্ধ ইবাদত সাব্যস্ত হয়, আর তারাবী মাশরূ হয় মদীনায়।
.
তাহলে এক কিভাবে হল?
.
৩-সময়কালও আলাদা!
.
তাহাজ্জুদ মাশরূ হয় হিজরতের আগে। আর তারাবী হয় হিজরতের পর।
.
৪-মাশরূ হবার পদ্ধতিও ছিল ভিন্ন!
.
তাহাজ্জুদ প্রথমে ফরজ ছিল। অনেক দিন পর্যন্ত তা ফরজই ছিল। তারপর তার ফরজিয়্যাত রহিত হয়ে নফল হয়ে যায়।
.
قُلْتُ: يَا أُمَّ الْمُؤْمِنِينَ، حَدِّثِينِي عَنْ خُلُقِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَتْ: «أَلَسْتَ تَقْرَأُ الْقُرْآنَ؟ فَإِنَّ خُلُقَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ الْقُرْآنَ» قَالَ: قُلْتُ: حَدِّثِينِي عَنْ قِيَامِ اللَّيْلِ، قَالَتْ: ” أَلَسْتَ تَقْرَأُ: يَا أَيُّهَا الْمُزَّمِّلُ؟ “، قَالَ: قُلْتُ: بَلَى، قَالَتْ: «فَإِنَّ  أَوَّلَ هَذِهِ السُّورَةِ نَزَلَتْ، فَقَامَ أَصْحَابُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى انْتَفَخَتْ أَقْدَامُهُمْ، وَحُبِسَ خَاتِمَتُهَا فِي السَّمَاءِ اثْنَيْ عَشَرَ شَهْرًا، ثُمَّ نَزَلَ آخِرُهَا، فَصَارَ قِيَامُ اللَّيْلِ تَطَوُّعًا بَعْدَ فَرِيضَةٍ
.
হযরত সাদ বিন হিশাম রহঃ বলেন, আমি বললাম! হে উম্মুল মুমিনীন! আপনি আমাকে রাসূল সাঃ এর আখলাক চরিত্র বিষয়ে কিছু বলুন। আম্মাজান আয়শা রাঃ বলেন, তুমি কি কুরআন পড়ো না? রাসূল সাঃ এর আখলাক চরিত্র কুরআনে যা আছে তাই ছিল। তারপর সাদ বলেন, আপনি আমাকে রাসূল সাঃ এর রাতের নামাযের ব্যাপারে বলুন। তখন আম্মাজান আয়শা রাঃ বলেন, তুমি কি “ইয়া আইয়্যুহাল মুজ্জাম্মিল” পড়ো না? হযরত সাদ বলেন, আমি বললাম, হ্যাঁ আমি পড়িতো। আম্মাজান আয়শা রাঃ বলেন, এ সূরার যখন প্রথমাংশ নাজিল হয়, [যাতে তাহাজ্জুদ ফরজ হয়] তখন সাহাবায়ে কেরাম এত দীর্ঘ তাহাজ্জুদ পড়তেন যে, তাদের পা ফুলে যেতো। আর এ সূরার শেষাংশ বারমাস পর্যন্ত আসমানে আটকে থাকে। বার মাস পর যখন এর শেষাংশ নাজিল হয়, তখন যে তাহাজ্জুদ ফরজ ছিল তা নফল হয়ে যায়। {সুনানে আবু দাউদ-১/১৮৯-১৯৯}
.
এ হাদীস দ্বারা তিনটি বিষয় পরিস্কার বুঝে আসছে। যথা-
.
১-তাহাজ্জুদদের মাশরূয়িয়্যাত কুরআন দ্বারা হয়েছে।
.
২-তাহাজ্জুদের মাশরুয়িয়্যাত মক্কায় হয়েছে। কারণ সূরা মুজ্জাম্মিল মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে।
.
৩-তাহাজ্জুদ প্রথমে ফরজ ছিল। এক বছর পর্যন্ত ফরজ থাকার পর তা নফল হয়েছে।
.
কিন্তু তারাবী শুরু থেকেই ছিল সুন্নত।
.
তাহলেই দু’টি এক নামায হল কিভাবে?
.
৫-হুকুমের দিক থেকেও ভিন্ন
.
তাহাজ্জুদ নামায নফল। বা সুন্নতে গায়রে মুআক্কাদা। যা আমরা ইতোপূর্বের হাদীস দ্বারা পরিস্কার জানতে পেরেছি। আর তারাবীহ নামায হল সুন্নতে মুআক্কাদা।
.
সৌদী আরবের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠ্য হিসেবে পঠিত “আররওজুল মুরবি” গ্রন্থে এসেছে-

والتراويح سنة مؤكدة তথা তারাবী নামায সুন্নতে মুআক্কাদা।  {আরওজুল মুরবি-৬৫}
.
একই বক্তব্য প্রদান করছেন প্রসিদ্ধ হাদীস বিশারদ আল্লামা মোল্লা আলী কারী রহঃ। তিনি লিখেছেন-
.
والحاصل ان الأصح فيها انها سنة مؤكدة তথা সবচে’ বিশুদ্ধতম কথা হল, তারাবীহ নামায সুন্নতে মুআক্কাদা। {শরহুন নুকায়া-১/৩৪১}
.
চার মাযহাবের ফিক্বহের গ্রন্থেই একই বক্তব্য এসেছে-
.
ক) আলবাহরুর রায়েক-১/১১৭।
খ) আলমুহাজ্জাব-১/৮৪।
গ)হুলয়াতুল উলামা-২/১১৯।
ঘ)আলইক্বনা-১/১১৭,
ঙ) নিহায়তুজ জাইন-১/১১৪।
চ) আলফুরূহ-১/৪৮৮।
ছ) আলমুগনী-১/৭৯৭।ইত্যাদি।
.
৫–জামাত ও গায়রে জামাত
.
তাহাজ্জুদে আসল হল জামাত না হওয়া। আর তারাবীহে জামাত পড়াই উত্তম। দেখুন {আররওজুল মুরবি-৬৫}
.
প্রথমে প্রসিদ্ধ হাদীসটি দেখে নেই
.
عَنْ أَبِي سَلَمَةَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، أَنَّهُ سَأَلَ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا: كَيْفَ كَانَتْ صَلاَةُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي رَمَضَانَ؟ قَالَتْ: مَا كَانَ يَزِيدُ فِي رَمَضَانَ وَلاَ فِي غَيْرِهِ عَلَى إِحْدَى عَشْرَةَ رَكْعَةً، يُصَلِّي أَرْبَعَ رَكَعَاتٍ، فَلاَ تَسْأَلْ عَنْ حُسْنِهِنَّ وَطُولِهِنَّ، ثُمَّ يُصَلِّي أَرْبَعًا، فَلاَ تَسْأَلْ عَنْ حُسْنِهِنَّ وَطُولِهِنَّ، ثُمَّ يُصَلِّي ثَلاَثًا، فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ تَنَامُ قَبْلَ أَنْ تُوتِرَ؟ قَالَ: «تَنَامُ عَيْنِي وَلاَ يَنَامُ قَلْبِي
.
হযরত আবু সালমা বিন আব্দুর রহমান থেকে বর্ণিত তিনি আয়েশা রাঃ এর কাছে জানতে চান নবীজী সাঃ এর নামায কেমন হত রামাযান মাসে? তিনি বললেন-রাসূল সাঃ রামাযান ও রামাযান ছাড়া ১১ রাকাত থেকে বাড়াতেন না। তিনি ৪ রাকাত পড়তেন তুমি এর সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে জানতে চেওনা। তারপর পড়তেন ৪ রাকাত তুমি এর সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা বিষয়ে জানতে চেওনা, তারপর পড়তেন ৩ রাকাত। হযরত আয়েশা রাঃ বলেন-তখন আমি বললাম-হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি বিতর পড়ার পূর্বে শুয়ে যান? তিনি বললেন-হে আয়েশা! নিশ্চয় আমার দু’চোখ ঘুমায় আমার কলব ঘুমায়না। (সহীহ বুখারী-১/১৫৪)
.
উক্ত হাদীসে কয়েকটি বিষয় খেয়াল করে রাখুন। যথা-
.
১-এ হাদীসের আলোচ্য হল রমজান ও গায়রে রমজান তথা সারা বছরে পড়া রাতের নামায বিষয়ে।
.
২-যে নামায রাসূল সাঃ চার রাকাত করে পড়তেন।
.
৩-আট রাকাত পড়তেন সারা বছর।
.
৪-শেষে এসে রাসূল সাঃ তিন রাকাত বিতর পড়তেন।
.
৬–রমজান ও গায়রে রমজান
.
উপরোক্ত হাদীসে যে নামাযের কথা বলা হয়েছে রমজান ও গায়রে রমজান তথা সারা বছরের নামাযের কথা বর্ণিত হয়েছে। সেটি হল তাহাজ্জুদ। অর্থাৎ তাহাজ্জুদ হল সারা বছর পড়া নামায। আর তারাবীহ শুধু রমজানে পড়া হয়।
.
সারা বছর পড়ার নামায আর শুধু এক মাস তথা রমজানে পড়া নামায এক হয় কি করে?
.
যেমন ইশরাকের নামায সারা বছর পড়া হয়, আর দুই ঈদের নামায কেবল বছরের দুই দিন পড়া হয়। এ দু’টি নামায কি এক হতে পারে? বরং তা আলাদা নামায।
.
যোহরের নামায প্রতিদিন পড়া হয়, আর জুমআর নামায সপ্তাহে একদিন পড়া হয়। তাহলে এ দু’টি নামায এক হতে পারে কি? তা আলাদা আলাদা নামায পরিস্কার।
.
ঠিক একইভাবে তাহাজ্জুদ হল সারা বছরের নামায, আর তারাবীহ হল শুধু রমজানের নামায, সুতরাং এটিও আলাদা আলাদা নামায।
.
৭-পড়ার পদ্ধতির ভিন্নতা
.
হযরত আয়শা রাঃ এর হাদীস দ্বারা তাহাজ্জুদ নামায চার রাকাত করে পড়ার কথা উল্লেখ হয়েছে। অথচ তারাবীহ নামায দুই রাকাত করে পড়া সুন্নত। দেখুন সৌদী আরবের শিক্ষা সিলেবাস অন্তর্ভূক্ত বই “আররওজুল মুরবি” গ্রন্থ-৬৫}
.
এছাড়া চার মাযহাবের ফিক্বহের গ্রন্থগুলো দেখলেই বিষয়টি পরিস্কার হয়ে যাবে।
.
তাহলে চার রাকাত করে পড়া নামায আর দুই রাকাত করে পড়া নামায এক হয় কি করে?
.
৮–ঘুমের বিশ্রাম
.
হযরত আয়শা রাঃ এর হাদীস দ্বারা বিতর ও তাহাজ্জুদের মাঝে রাসূল সাঃ এর ঘুমানো প্রমাণিত। কিন্তু রাসূল সাঃ থেকে তারাবীহ ও বিতরের মাঝে ঘুমানো প্রমাণিত নয়। কেননা, হাদীসে এসেছে-
.
عن عائشة زوج النبي صلى الله عليه وسلم أنها قالت كان رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا دخل رمضان شد مئزره ثم لم يأت فراشه حتى ينسلخ 
.
রাসূল সাঃ এর সম্মানিতা স্ত্রী হযরত আয়শা সিদ্দিকা রাঃ ইরশাদ করেনঃ যখন রমজান মাস আসে, তখন রাসূল সাঃ কোমর বেঁধে ফেলেন। তিনি তার বিছানায়  আর ফিরে আসতেন না রমজান মাস শেষ হওয়া পর্যন্ত। {সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদীস নং-৩৪২, শুয়াবুল ঈমান-৩/৩১০, হাদীস নং-৩৬২৪}
.
তাহলে যে নামাযের মাঝে ঘুমানো প্রমাণিত আর যাতে প্রমাণিত নয় তা এক নামায হয় কি করে?
.
৯–“মান ক্বামা রমজানা” হাদীস সংক্রান্ত
.
“মান ক্বামা রমজানা” তথা যে হাদীসে এসেছে যে, রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন “যে ব্যক্তি রমজান মাসে ঈমানের সাথে সওয়াব পাবার আশায় নামায পড়বে তার পূর্বের গোনাহ মাফ হয়ে যাবে” মর্মের হাদীসটি কোন মুহাদ্দিস তাহাজ্জুদ অধ্যায়ে আনেননি। সবাই এনেছেন তারাবীহ অধ্যায়ে। যদি তারাবী তাহাজ্জুদ এক নামায হতো তাহলে এ হাদীস তাহাজ্জুদ অধ্যায়ে কেন মুহাদ্দিসরা আনেননি?
.
১০-জামাতের উৎসাহ দান
.
তারাবীহ নামায রাসূল সাঃ নিজেও জামাতে পড়েছেন, এবং অন্যকে পড়তে দেখে খুশি হয়েছেন। দেখুন-কিয়ামে রমজান লিলমারওয়াজী-১৫৫, ১৫৩}
.
কিন্তু তাহাজ্জুদ নামায জামাতে পড়েছেন বা সাহাবায়ে কেরাম জামাতে তাহাজ্জুদ নামায পড়েছেন তার কোন প্রমাণ কেউ দেখাতে পারবে না।
.
তাহলে দুই নামায এক হল কিভাবে?
.
১১-কুরআন খতম
.
তারাবীহ নামাযে পুরো কুরআন খতম করার বিষয়টি খুলাফায়ে রাশেদীন থেকে প্রমাণিত। কিন্তু তাহাজ্জুদ নামাযে এভাবে প্রমাণিত নয়।
.
১২-রাকাত সংখ্যা নির্দিষ্ট
.
তাহাজ্জুদের রাকাত নির্দিষ্ট নয়। যে যতটুকু ইচ্ছে পড়তে পারে। দুই, চার, ছয়, আট, দশ। কিন্তু তারবীহের রাকাত সংখ্যা উভয় দলের কাছেই নির্দিষ্ট আমাদের কাছে বিশ রাকাত, আর লামাযহাবীদের কাছে আট রাকাত।
.
তাহলে রাকাত সংখ্যা নির্দিষ্ট আর অনির্দিষ্ট নামায এক হয় কি করে?
.
১৩-বিতরের জামাত
.
তারাবীহের পর বিতরের জামাত খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নত। কিন্তু তাহাজ্জুদের পর বিতরের জামাতের কোন প্রমাণ নেই।
.
তাহলে দুই নামায এক কিভাবে?
.
১৪-ইসলামের প্রতীক
.
তারাবীহ নামায শায়ায়েরে ইসলাম। দেখুন আসাদুল্লাহ গালিবের লেখা ছালাতুর রাসূল-১৭৩, নাইলুল আওতার-২/২৯৫, শরহে আবু দাউদ লিলআইনী-২৭৫, শরহে নববী আলা মুসলিম-৩/১০১, ১২৮, ১৩২, মিরকাত-৪/৩১৪, ৩১৬, ইহয়ায়ে উলুমিদ্দীন-১/৩৯০ ইত্যাদি।
.
কিন্তু তাহাজ্জুদ নামায শায়ায়েরে ইসলামের অন্তর্ভূক্ত এরকম কোন বক্তব্য কোন মুহাক্কিক, মুহাদ্দিস ফক্বীহ প্রদান করেননি।
.
১৫-আদায়ের সময় আলাদা
.
তাহাজ্জুদ আদায়ের উত্তম সময় হল শেষ রাত। আর তারাবীহ আদায় করা হয় ইশার নামাযের পর পর। যা পরিস্কার প্রমাণ করে এ দু নামায এক হতে পারে না। এক নামায আরেক নামায থেকে পৃথক করা হয়  সময়ের দূরত্বের মাধ্যমে। যেমন জোহরের চার রাকাত আর আসরের নামায আলাদা নামায বুঝা যায় সময়ের দূরত্বের কারণে। সময়ের ভিন্নতার কারণে। তাহলে সময়ের ভিন্নতা আলাদা নামায হাবার প্রমাণ। তেমনি তারাবী তাহাজ্জুদ আলাদা নামায হবার পরিস্কার প্রমাণ হল তার আদায়ের সময়ের ভিন্নতা।
.
১৬-নাম আলাদা
.
ফরজ নামায, ইশরাক, আওয়াবিন তাহাজ্জুদ ইত্যাদি আলাদা নামই প্রমাণ করে এসবই আলাদা আলাদা নামায। তেমনি তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ আলাদা নামও প্রমাণ করে এ দু’টি নামায এক নামায নয়।
.
১৭-বর্ণনার অধ্যায় আলাদা
.
মুহাদ্দিসীনে কেরাম তারাবীহ ও তাহাজ্জুদের জন্য আলাদা দু’টি অধ্যায় কায়েম করেছেন তাদের কিতাবে। যা পরিস্কার প্রমাণ করে এ দু’টি ভিন্ন নামায। এক নামায হলে দুই বাব তথা অধ্যায় কায়েম করার মানে কি?
.
কয়েকটি উদাহরণ দেয়া হল
.
tarabih tahajjud
.
মুহাদ্দিসীনে কেরামের দু’টি নামাযের জন্য আলাদা বাব কায়েম করা পরিস্কার প্রমাণ করে এ দু’টি নামায আলাদা। এক নয়।
.
১৮-রমজানের শর্ত
.
রাসূল সাঃ এর জমানায় একবার চাঁদ দেখেনি অনেকে। তখন فارادوا ان لا يصوموا ولا يقوموا তথা তখন সবাই রোযা না রাখা ও তারাবীহ না পড়ার ইচ্ছে করে নেন সবাই। হঠাৎ করে এক গ্রাম্য ব্যক্তি এসে চাঁদ দেখার সংবাদ দেয়। তখন উক্ত ব্যক্তির ঈমান ও বিশ্বাসের সত্যতা যাচাইয়ের পর রাসূল সাঃ হযরত বিলাল রাঃ কে ঘোষণা দেবার জন্য হুকুম দেন- ان يصوموا وان يقوموا তথা রোযা রাখ এবং তারাবীহ পড়। {দারা কুতনী-২/১৫৯}
.
উপরোক্ত হাদীস প্রমাণ করে তারাবীহের জন্য রমজান আবশ্যক। কিন্তু তাহাজ্জুদের জন্য তা আবশ্যক নয়। তাহাজ্জুদ সারা বছরই পড়া হয়।
.
১৯–তাহাজ্জুদ ঘুমের পর
.
তাহাজ্জুদ নামায ঘুমের পর ঘুম থেকে উঠে পড়া হয়। {তাফসীরে ইবনে আব্বাস রাঃ-১৮১}
.
অথচ তারাবীহ পড়া হয় ইশার পর ঘুমের আগেই।
.
২০–নাম ভিন্ন
.
একেতো তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ নামই ভিন্ন। সেই সাথে তাহাজ্জুদের আরেক নাম হল কিয়ামুল লাইল অথচ তারাবীহের আরেক নাম হল কিয়ামে রমজান।
.
নামায ভিন্ন না হলে নাম ভিন্ন কেন?
.
প্রথমে কয়েকটি হাদীস দেখে নেই
.
عن عائشة كان إذا دخل رمضان تغير لونه، وكثرت صلاته، وابتهل في الدعاء، وأشفق لونه

হযরত আয়শা রাঃ বলেনঃ যখন রমজান মাস আসে, তখন রাসূল সাঃ এর চেহারার রং বদলে যেত, তিনি তখন অনেক বেশি নামায পড়তেন। খুবই কাকুতি মিনতির সাথে দুআ করতেন। আর আল্লাহ তাআলাকে খুবই ভয় পেতেন। {শুয়াবুল ঈমান-৩/৩১০, কানযুল উম্মাল, হাদীস নং-১৮০৬২}
.
عن عائشة زوج النبي صلى الله عليه وسلم أنها قالت كان رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا دخل رمضان شد مئزره ثم لم يأت فراشه حتى ينسلخ 
.
রাসূল সাঃ এর সম্মানিতা স্ত্রী হযরত আয়শা সিদ্দিকা রাঃ ইরশাদ করেনঃ যখন রমজান মাস আসে, তখন রাসূল সাঃ কোমর বেঁধে ফেলেন। তিনি তার বিছানায়  আর ফিরে আসতেন না রমজান মাস শেষ হওয়া পর্যন্ত। {সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদীস নং-৩৪২, শুয়াবুল ঈমান-৩/৩১০, হাদীস নং-৩৬২৪}
.
আম্মাজান আয়শা রাঃ থেকে আরেক আরে হাদীসে এসেছে-
.
يجتهد فى العشر الاواخر مالا يجتهد فى غيره
.
রাসূল সাঃ রমজানের শেষ দশকে এত বেশি ইবাদত করতেন যা অন্য সময়ে করতেন না। {সহীহ মুসলিম-১/৩৭২}
.
আরেক বর্ণনায় এসেছে
.
اذا دخل العشر شد مئزره واحيى ليله وايقظ اهله
.
যখন রমজানের শেষ দশক আসতো, তখন রাসূল সাঃ কোমড়কে বেঁধে ফেলতেন, আর সাররাত ইবাদত করতেন,এবং পরিবারের লোকদেরও জাগিয়ে দিতেন। {বুখারী-১/৩৭১, মুসলিম-২৭২}
.
২১-রমজানে ইবাদত বাড়াতেন না কমাতেন?
.
এ হাদীসগুলো প্রমাণ করছে রাসুল সাঃ রমজান মাসে নামায বাড়িয়ে দিতেন। আম্মাজান আয়শা রাঃ বলেছেন আমাদের নবী রমজানের রাতে বিছানায় আসতেন না। সারারাতই ইবাদত করতেন। আর শেষ দশকে প্রচুর পরিমাণ ইবাদত করতেন এমনকি পরিবারের কাউকে ঘুমাতে দিতেন না, জাগিয়ে দিতেন।
.
আর আমাদের লামাযহাবী ভাইয়েরা বলেন রাসূল সাঃ কখনোই রাতে এগার রাকাতের বেশি পড়তেন না। তাই তারাবী নামায আট রাকাত।
.
যদি তাই হয়, তাহলে বলতে হবে রাসূল সাঃ আসলে রমজানে ইবাদত কমই করতেন। আগেও আট রাকাত রমজানেও আট রাকাত। তাহলে রমজানে ইবাদত বাড়লো কোথায়?
.
তাছাড়া বুখারীতে আব্দু্ল্লাহ বিন আব্বাস রাঃ থেকে অন্য বর্ণনায় তের রাকাতের কথা এসেছে।{বুখারী-১/১৫৩}
.
তাহলে রাসূল সাঃ যদি রমজানে তিন রাকাত বিতর ছাড়া আট রাকাত তারাবীহ পড়েন, আর রমজান ছাড়া পড়েন বিতর ছাড়া দশ রাকাত। তাহলে রমজানে ইবাদত বাড়ালেন কোথায়? রমজানেতো ইবাদত আরো কমিয়ে দিলেন!
.
রমজান ছাড়া পড়তেন দশ আর রমজানে এসে আট। ইবাদত বাড়লো না কমলো?
.
সুতরাং পরিস্কার বুঝা যাচেছ আম্মাজান আয়শা রাঃ থেকে বর্ণিত বুখারীর হাদীসটি তারাবীহ সংক্রান্ত নয় বরং এটি তাহাজ্জুদ সংক্রান্ত। তাহাজ্জুদ নবীজী সাঃ রমজান ও রমজান ছাড়া এগার বা তের রাকাতের বেশি পড়তেন না। তারাবীহের কথা উক্ত হাদীসে আলোচিতই হয়নি।
.
২২-তারাবীর পর তাহাজ্জুদের প্রমাণ
.
আমরা ইতোপূর্বে জেনেছি রাসূল সাঃ রমজানে সারারাত ইবাদত করতেন। বিছানায় যেতেন না। আর আবু দাউদ, নাসায়ী, তিরমিজী, ইবনে মাজায় আবু জর গিফারী রাঃ থেকে হাদীসে এসেছে রাসূল সাঃ তিনদিন সাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে মসজিদে জামাতের সাথে তারাবী পড়িয়েছেন। প্রথম রাতে রাত্রের তিন ভাগের এক ভাগ পর্যন্ত, দ্বিতীয় দিন রাতের অর্ধেক পর্যন্ত, তৃতীয় দিন শেষ রাত্র পর্যন্ত।
.
এখন প্রশ্ন হল রাসূল সাঃ প্রথম রাতে তিন ভাগের এক ভাগ ও দ্বিতীয় দিন অর্ধেক রাতে মসজিদে তারাবী শেষ করে বাসায় গিয়ে কি ঘুমিয়েছিলেন? তাতো অসম্ভব যা ইতোপূর্বের হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। কারণ নবীজী সাঃ রমজানে ঘুমাতেন না। তাহলে তিনি ঘরে গিয়ে কি নামায পড়েছেন? সেটি নিশ্চিয় তাহাজ্জুদ হবে। কারণ তারাবীতো সাহাবীদের সাথে মসজিদে পড়েই চলে এলেন।
.
তাহলে রাসূল সাঃ থেকেও তারাবীর পর তাহাজ্জুদ পড়ার পরিস্কার ইংগীত পাওয়া যায়।
.
২৩-তারাবীর পর তাহাজ্জুদ পড়তে হযরত উমর রাঃ এর উৎসাহ প্রদান
.
হযরত উমর রাঃ যখন হযরত উবাই বিন কাব রাঃ কে তারাবীহ নামাযের ইমাম নিযুক্ত করলেন, তখন তিনি রাতের শুরুভাগে ইশার পর তারাবী পড়াতেন। তখন হযরত উমর রাঃ তারাবী ছাড়া তাহাজ্জুদ পড়ার উৎসাহ প্রদান করে বলেন,-
.
وَالَّتِي تَنَامُونَ  عَنْهَا أَفْضَلُ مِنَ الَّتِي تَقُومُونَ. يَعْنِي آخِرَ اللَّيْلِ. وَكَانَ النَّاسُ يَقُومُونَ أَوَّلَهُ.
.
যে নামায থেকে তোমরা ঘুমিয়ে যাও [তাহাজ্জুদ]যা তোমরা আদায় করতে শেষ রাতে, সেটি এ নামায থেকে উত্তম যা তোমরা আদায় করছো।তথা তারাবীহ। আর লোকজন প্রথম রাতে তারাবীহ পড়তো। {মুয়াত্তা মালিক-৩৭৮, সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদীস নং-১১০০}
.
২৪-হযরত ইমাম বুখারীও তারাবী ও তাহাজ্জুদ আলাদা পড়তেন
.
كَانَ مُحَمَّد بن إِسْمَاعِيل البُخَارِيّ إِذَا كَانَ أَوَّلُ لَيْلَةٍ مِنْ شَهْرِ رَمَضَانَ يجْتَمع إِلَيْهِ أَصْحَابه فيصلى بهم وَيقْرَأ فِي كل رَكْعَة عشْرين آيَة وَكَذَلِكَ إِلَى أَن يخْتم الْقُرْآن وَكَانَ يقْرَأ فِي السحر مَا بَين النّصْف إِلَى الثُّلُث من الْقُرْآن فيختم عِنْد السحر فِي كل ثَلَاث لَيَال
.
মুহাম্মদ বিন ইসমাঈল বুখারী রহঃ যখন রমজানের প্রথম রাত আসতো তখন তার সাথীরা তার কাছে একত্র হয়ে যেতো। তারপর তিনি তাদের নিয়ে [তারাবী]নামায পড়তেন। আর প্রতি রাকাতে তিনি বিশ আয়াত তিলাওয়াত করতেন। আর এভাবে তিনি খতম করতেন। আর যখন সেহরীর সময় হতো, তখন তিনি অর্ধেক থেকে কুরআনের এক তৃতিয়াংশ তিলাওয়াত করতেন। এভাবে সেহরীতে তিন দিনে খতম করতেন। {হাদয়ুস সারী মুকাদ্দিমা ফাতহুল বারী-৬৬}
.
ইমাম বুখারী রহঃ। যিনি নিজে হযরত আয়শা রাঃ এর এগার রাকাত ওয়ালা হাদীস তার কিতাবে এনেছেন।
.
কিন্তু মজার ব্যাপার হল আমাদের দেশের লা-মাযহাবীদের মত উক্ত হাদীস দ্বারা ইমাম বুখারী নিজেই তারাবী তাহাজ্জুদ এক নামায বুঝতে পারেননি। তাই তিনি শুরু রাতে তারাবী আবার শেষ রাতে তাহাজ্জুদ পড়তেন।
.
আরো মজার ব্যাপার হল,তিনি আট রাকাত তারাবীহ পড়তেন না এটি নিশ্চিত। বরং আট রাকাতের বেশি পড়তেন। কারণ যদি রমজানে আট রাকাত করে প্রতিদিন বিশ আয়াত পড়া হয়, তাহলে পুরো ত্রিশ দিনে খতম হবে না। অথচ ইমাম বুখারী রহঃ তারাবীতে খতম করতেন।
.
তাহলে ইমাম বুখারী তার বর্ণিত উক্ত হাদীস দ্বারা নিজে আট রাকাত তারাবীহ যেমন বুঝেননি, তেমনি আট রাকাতের উপর আমলও করেননি।

কিন্তু আমাদের দেশের অতি পন্ডিতরা ইমাম বুখারী থেকে বড় পন্ডিত হয়ে গেছেন। ইমাম বুখারী যা বুঝেননি, আমাদের অতি পন্ডিত শায়েখগুলো এর চেয়ে বেশি বুঝে গেছেন।
.
সারকথা
.
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা আশা করি আপনাদের কাছে প্রতিভাত হয়ে গেছে যে, তারাবীহ তাহাজ্জুদ সম্পুর্ণ ভিন্ন দু’টি নামায। এক নামায বলা মুর্খতা বৈ কিছু নয়। আর তারাবী নামাযকে আট রাকাতে সীমাবদ্ধ বলাও আরেক অজ্ঞতা যা রাসূল সাঃ, সাহাবায়ে কেরাম ও সালাফে সালেহীনের কেউ করেননি। এটি একটি নতুন বিদআতি মতবাদ। আল্লাহ তাআলা আমাদের এ বিদআতি মতবাদতের অপপ্রচার থেকে হিফাযত করুন। আমীন।
.
.
তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ আলাদা আলাদা স্বলাত
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷
.
মুহাদ্দিসীনদের ক্বওল ও আমল থেকে প্রমান
——————————————————————-
.
হযরত আমীরুল মু’মিনিন উমর রা. ( মৃত্যুঃ২৩ হিঃ) বলেনঃ
.
রাতের ঐ অংশের নামায (তাহাজ্জুদ)যখন তোমরা ঘুমিয়ে থাক তা এই অংশ অপেক্ষা উত্তম যখন তোমরা সালাত আদায় কর। (রাতের ঐ অংশ) এর দ্বারা তিনি শেষ রাত বুষিয়েছেন , কেননা তখন রাতের প্রথমভাগে লোকেরা সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করত।
[ সহীহ বুখারী (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ২৪/ তারাবীহর সালাত, হাদিস নম্বরঃ ১৮৮৩ ]
.
উল্লেখ্য এখানে হযরত ওমর রা. তারাবীহের পরে তাহাজ্জুদ নামায পড়ার জন্য তারগীব প্রদান করেছেন।
এখানে হযরত ওমর রা. এর ক্বওলটি তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ যে ভিন্ন ভিন্ন স্বালাত তারই প্রমাণ বহন করে। আর একথাটিই বিভিন্ন মুহাদ্দিসীন কিরাম তাদের কিতাব সমুহে স্পষ্ট করেছেন। নিম্নে উদাহরন স্বরুপ কিছু উল্লেখ করা হলঃ
.
১) ইমাম আবুল ওয়ালী সুলাইমান আল বাযি আল কুরতুবী রহ. ( মৃত্যুঃ ৪৭৪ হিঃ)। হযরত উমর (রা)এর এই কথার ভিত্তিতে বলেন শেষ অর্ধ রাতের কিয়ামপ্রথম অর্ধ রাতের কিয়ামের চেয়ে উত্তম।
( দেখুনঃ আল মুনতাকা লিল বাযি: খন১,পৃ-২০৮)
এতে স্পষ্ট বুঝা যায় যে, তারাবীহের পরেও শেষ রাতে আলাদা কিয়াম আছে।
.
২) ইমাম ইবনে বাত্তাল রহ.(মৃত্যুঃ৪৪৯ হিঃ) ( শেষ অর্ধ রাতের কিয়ামপ্রথম অর্ধ রাতের কিয়ামের চেয়ে উত্তম,এই কথা বয়ান করতে গিয়ে) বলেনঃ
.
“রাতের শেষ অংশে কিয়ামের সময় আল্লাহ তা’আলা (প্রথম আসমানে) অবতরণ করেন এবং এটা বান্দার দু’আ কবুল হওয়ার জন্য উত্তম মুহুর্ত।”
[ সহীহ বুখারি লিল ইবনে বাত্তানঃ ৪/১৪৭]
.
৩) ইমাম ইবনে হাজার আসক্বালানী রহ. (মৃত্যুঃ ৮৫২ হিঃ) ( হযরত ওমর রা. এর ক্বওলের ব্যখ্যায়) বলেনঃ শেষ রাতের নামায (তাহাজ্জুদ) প্রথম রাতের নামাযের (তারাবীহ) চেয়ে উত্তম।[ ফাতহুল বারীঃ ৪/২৫৩]
.
৪) ইমাম আইনী রহ( মৃত্যুঃ ৮৫৫ হিঃ) এ কথাই ব্যক্ত করেছেন। [ দেখুনঃ উমদাতুল ক্বারীঃ ১১/১২৬]
.
৫) ইমামদের শাইখ আব্দুল কাদির জিলানী রহ.ও ( মৃত্যুঃ ৫৬১ হিঃ) হযরত ওমর রা. এর এই ক্বওলের উদ্ধৃতিতে তারাবীহের পরে তাহাজ্জুদ পরার প্রমাণ পেশ করেন। [ দেখুনঃ গুনিয়াতুল তালিবীনঃপৃ-২৬৯].
.
প্রমাণিত হল যে, হযরত ওমর রা. তারাবীহের পরে তাহাজ্জুদ পড়ার জন্য তারগীব প্রদান করেছেন। তার কাছে তারাবীহ এবং তাহাজ্জুদ আলদা আলাদা স্বলাতই ছিল।
.
বিভিন্ন ফকিহ ও মুহাদ্দিসীনদের ক্বওল ও আমল (তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ ভিন্ন ভিন্ন):
.
সালাফ ও সালেহীনদের কাছেও তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ ভিন্ন ভিন্নই ছিল। নিম্মে তাদের মধ্য থেকে গুটি কয়েক উদাহরন আপনাদের খিদমাতে পেশ করছি,,,,,,,
.
১) মুসাব্বিহ বিন সাঈদ (রহ.) বলেন, ‘‘যখন প্রথম রমযানের রাত্রী আগমন করতো, তখন ইমাম বুখারী (রহ.) তাঁর ছাত্রদের একত্রিত করতেন। তাঁদের নিয়ে নামায আদায় করতেন। নামাযে প্রত্যেক রাকা’আতে ২০ টি করে আয়াত পাঠ করতেন। আর এভাবে তিনি কুরআন খতম করতেম। অনুরূপভাবে তিনি সাহরীর সময় নামাযে কুরআনের অর্ধাংশ অথবা এক তৃতীয়াংশ পাঠ করতেন। আর তিনি সাহরীর সময় প্রতি ৩ রাতে কুরআন এক খতম করতেন।’’
.
[তারীখে দামেশক, ইবনে আসাকির, ৫২/৭৯; হা. ৫৫৬৫৬; প্রকাশনায়ঃ দারুল ফিকর, প্রথম প্রকাশঃ ১৪১৮ হি.; হাদইউস সারী মুকাদ্দামাতু ফাতহুল বারী, ইবনে হাজার আসকালানী, পৃ. ৫০৫; প্রকাশনায়ঃ মাকতাবাতুল মালিক ফাহাদ বিন আব্দুল আযীয, সঊদী আরব; প্রথম প্রকাশঃ ১৪২১]
.
ইমাম বুখারীর আরেক ছাত্র মুহাম্মাদ ইবনে আবী হাতিম আল ওয়াররাক (রহ.) বলেন, ‘‘ইমাম বুখারী সাহরীর সময় ১৩ রাকা’আত নামায আদায় করতেন। এক রাকা’আত ছিল বিতর।’’
.
[হাদইউস সারী মুকাদ্দামাতু ফাতহুল বারী, ইবনে হাজার আসকালানী,
পৃ. ৫০৫; তাহযীবুল আসমা-ই ওয়াল লুগাত লিন নববী, ১/৭৫; সিয়ারু
আ’লামিন নুবালা, ১২/৪৪১]
..
অভিযোগঃ
.
আহলে হাদিস আলিম হাফিয যুবাইর আলী যাই রহ. বলেনঃ ইমাম বুখারি রহ. এর তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ আলাদা আলাদা পড়ার ঘটনাটির কোন সনদ হাদী উস সারীতে বর্ণিত নেই। তাই বে-সনদ হওয়ার কারণে এই ঘটনাটি মারদুদ বা প্রত্যাখ্যাত।
.
জবাবঃ
.
ইমাম বাইহাকী রহ তার শুআইব উল ঈমান লিল বাইহাক্বী গ্রন্থে হাদি উস সারীর উক্ত ঘটনাটি সনদ সহ উল্লেখ করেছেন। অতঃপর তিনি বলেনঃ এই সনদের মধ্যে কোন প্রকার খারাপ নেই। [ দেখুনঃ শুআইব উল ঈমান লিল বাইহাক্বী: খন্ড-০৩,পৃ-৫২৪-৫২৫, সহিহ সনদ, তারিখে বাগদাদ]
.
২)আল ইমাম আল হাফিযুল মুহাদ্দিস আবু মুহাম্মাদ আসফাহানী রহ. (মৃত্যুঃ ৪৪৬ হিঃ)। যিনি খাতিব আল বাগদাদ রহ এর উস্তাদ । তার সম্পর্কে প্রসিদ্ধ আছে যে, তিনি পুরা রমজান লোকজনদের নিয়ে তারাবীহ পড়তেন এবং যখন তারাবীহ থেকে ফারেগ হতেন তখন ঐ মসজিদেই তাহাজ্জুদের নামায পড়তে থাকতেন।
[ দেখুনঃ তারীখে বাগদাদ: ১০/১৪৩]
.
৩) ইমাম ইবনে রুশদ রহ. (মৃত্যুঃ ৫৯৮ হিঃ) বলেনঃ
.
” এবং অবশ্যই যে তারাবীহের উপর ওমর রা. জমা করে গিয়েছেন তার উপর তারগীব প্রদান করেছেন।কিন্তু উলামাদের মধ্যে এই বিষয়ে ইখতিলাফ রয়েছে যে, প্রথম রাতের তারাবীহ উত্তম না শেষ রাতের নামায (তাহাজ্জুদ) উত্তম, যে শেষ রাতের নামায রাসুলুল্লাহ সা. পড়েছেন।জমহুরদের নিকট শেষ রাতের নামাযই( তাহাজ্জুদ) উত্তম। [ দেখুনঃ আল বিদায়াতুল মুজতাহিদঃ ১/২১০]
.
৪) ইমাম আবু মুহাম্মাদ আবুল ওয়াহাব আস সা’আলাবি আল বাগদাদি রহ. ( মৃত্যুঃ ৪২২হিঃ) বলেনঃ যে ব্যক্তি তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ উভয়ই পড়বে তার জন্য পছন্দনীয় বিষয় হল, সে তাকবীর এ তাহরিমা ও সুরা ফাতিহার মধ্যে সানাহ, তা’আউজ এবং তাসমিয়া পড়াকে সাকতা করবে। [ আত তালক্বীন লিস সা’আলাবি: ১/৪৪]
.
৫) ইমাম আবু ইসহাক্ব সিরাজী রহ. (মৃত্যুঃ৪৭৬ হিঃ) বলেনঃ রমজান মাসে ২০ রাক আত তারাবীহ পড়বে এবং এর পর জাম আতের সাথেই তিন রাকাত বিতর পড়বে। কিন্তু যদি তাহাজ্জুদ পড়ার ইরাদা থাকে তাহলে তাহাজ্জুদের পরেই বিতর পড়বে।
[ দেখুনঃ আত তামবীহ লিস সিরাজী : ১/৩৪]
.
৬) এই কথাটিই একটু ভিন্ন শব্দে ইমাম নববী রহ উল্লেখ করেছেন। [ দেখুন আল মাজমু লিন নববী:৪/১৫]
.
৭) ইমাম ইবনে ক্বুদামা রহ (মৃত্যুঃ ৬২০ হি) বলেনঃ রমজানে তারাবীহ এবং বিতর দুইই জাম আতের সাথে পড়বে। কিন্তু তারাবীহের পর তাহাজ্জুদ পড়নেওয়ালা ব্যক্তি তাহাজ্জুদের পর তারাবীহ পড়বে। [ আল মুগনী:পৃ-৫৮]
.
৮) ইমাম ইবনুল হাজ রহ. ( মৃত্যুঃ৭৩৭ হি) বলেনঃ ( লোকদের জন্য মুনাসসিব হল) জাম আতের সাথে তারাবীহ ও বিতর পড়বে তারপর শুয়ে পড়বে। অতঃপর ঘুম থেকে উঠার পর তাহাজ্জুদের জন্য দাড়িয়ে যাবে। [ আল মাদখাল: ২/২৯২]
.
তিনি এই কিতাবেরই অন্যত্র উল্লেখ করেন, ইমাম মালিক, ইমাম আবু মুহাম্মাদ এবং শাইখ আবুল হাসান সিয়াত রহ. তারাবীহ নামাযের পরে তাহাজ্জুদ আদায় করতেন। [ দেখুনঃ আল মাদখাল:২/২৯৯]
.
.
৯) ইমাম ইবনুল মুলাক্কান রহ.ও( মৃত্যুঃ৮০৪ হিঃ) তারাবীহ এবং তাহাজ্জুদকে আলাদা আলাদা নামায হিসেবে উল্লেখ করেছেন। [ দেখুনঃ আত তারিখ লি ইবনে মুলাক্কান : ১/২৬]
.
১০) ইমামদের শাইখ আব্দুল ক্বাদির জিলানী রহ. ( মৃত্যুঃ ৫৬১ হিঃ) বলেনঃ তারাবীহের পরে তাহাজ্জুদ পড়ার ব্যাপারে দুটি ক্বওল আছে।
.
এক. তারাবীহের পরে কিছুটা ঘুমিয়ে পুনরায় উঠে তাহাজ্জুদের জন্য দাড়িয়ে যাওয়া।
.
দুই. তারাবীহের পর না ঘুমিয়েই পুনরায় তাহাজ্জুদের জন্য দাড়িয়ে যাওয়া।
[ গুনিয়াতুত তালিবীনঃপৃ-২৬৯ ]
.
গাইরে মুকাল্লিদগন কেবল কিছু যুক্তি ও চাপার জোড়েই প্রমাণ করতে চান যে, তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ একই স্বলাত। তাদের কাছে এই বিষয়ে স্পষ্ট কোন শরীয়াহ দলীলই নেই।
.
তারাবীহ ও তাহাজ্জুদকে একই স্বলাত এ ব্যাপারে সালফ ও সালিহীনদের থেকে যদি আপনাদের কাছে কোন দলীল থাকে তাহলে আপনারা তা পেশ করুন। নতুবা আমাদের দলীল সমৃদ্ধ কথা মেনে নিয়ে নাফসানিয়াত থেকে বেরিয়ে আসুন।
.
.
হাদিস থেকে প্রমানঃ
——————————–
.
রাসুলুল্লাহ সা.কর্তৃক তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ আলাদা আলাদা আদায়ঃ
.
বুখারীর হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা) সাহাবিদের নিয়ে রমজানের কেবলমাত্র তিন রাত্রি তারাবীহের নামায আদায় করেছেন। তার মধ্যে এক রাতে তারাবীহ পড়ার পর পূনরায় আলাদাভাবে নামায আদায় করেন। যা ছিল তাহাজ্জুদ।
হাদিসে এসেছে
.
“كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يُصَلِّي فِي رَمَضَانَ، فَجِئْتُ فَقُمْتُ إِلَى جَنْبِهِ وَجَاءَ رَجُلٌ آخَرُ، فَقَامَ أَيْضًا حَتَّى كُنَّا رَهْطًا فَلَمَّا حَسَّ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّا خَلْفَهُ جَعَلَ يَتَجَوَّزُ فِي الصَّلَاةِ، ثُمَّ دَخَلَ رَحْلَهُ، فَصَلَّى صَلَاةً لَا يُصَلِّيهَا عِنْدَنَا”. ……………
.
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রমযান মাসে একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত আদায় করছিলেন। আমি তার পাশে এসে দাঁড়ালাম! এরপর অন্য এক ব্যাক্তি এসেও তাঁর পাশে দাঁড়ালেন। এভাবে আমরা এক দল লোক হয়ে গেলাম। এরপর নরী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বুঝতে পারলেন যে আমরা তাঁর পেছনে আছি তখন তিনি সালাত সংক্ষেপ করে ফেললেন। তারপর তিনি আপন গৃহে চলে গেলেন এবং এমন (দীর্ঘ) সালাত (তাহাজ্জুদ) আদায় করলেন যে এভাবে তিনি আমাদের সাথে সানাত আদায় করেন নি।…………………….
.
এখানে এটা খুবই স্পষ্ট যে, রাসুলুল্লাহ সা. তার সাহাবীদের নিয়ে যেটা পড়েছিলেন তা ছিল তারাবীহ। আর একাকী নিজ কামরার মধ্যে যে নামায পড়েছিলেন তা ছিল তাহাজ্জুদ।
.
রাসুলুল্লাহ সা. এর নিজ কামরায় আদায়কৃত নামায যে তাহাজ্জুদ ছিল তার বেশ কয়েকটি জোড়ালো কারণও রয়েছে। তন্মোধ্যে………….
.
১// সফরে না থাকলে রাসুলুল্লাহ সা. তাহাজ্জুদ নামায সর্বদায় তার নিজ কামরায়ই আদায় করতেন, মসজিদে নয়। আম্মাজান আয়িশা রা. বলেনঃ
.
كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي مِنَ اللَّيْلِ فِي حُجْرَتِهِ
.
রাসুলুল্লাহ (সা) রাতের স্বলাত (তাহাজ্জুদ) তার নিজ কামরায় আদায় করতেন।( বুখারি:১/১০১) “
.
২// আনাস রা. এর উক্তিঃ “فَصَلَّى صَلَاةً لَا يُصَلِّيهَا عِنْدَنَا”
“তিনি এমন (দীর্ঘ) সালাত (তাহাজ্জুদ) আদায় করলেন যে, এভাবে আমাদের সাথে সানাত আদায় করেন নি।”
আনাস রা. উক্ত উক্তি থেকেও স্পষ্ট হয় যে, রাসুলুল্লাহ সা. এর একাকী ঐ নামাযটা ছিল তাহাজ্জুদ এবং সাহাবীদের সাথে আদায়কৃত নামাযটা ছিল তারাবীহ। কেননা, প্রথমত,ঐ নামায এবং সাহাবিদের সাথে আদায়কৃত নামায দুটি ছিল ভিন্নতর। দ্বিতীয়ত, রাসুলুল্লাহ সা. এর ঐ নামাযের এবং তাহাজ্জুদ নামাযের বৈশিষ্ট্য একই রকম। রাসুলুল্লাহ সা. এর তাহাজ্জুদ নামায সম্পর্কে আম্মাজান আয়িশা রা বলেনঃ” তুমি তার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করো না। “(বুখারী,হাদিস নম্বরঃ ২০১৩)
.
সাহাবীদের কর্তৃক তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ আলাদা আলাদা আদায়ঃ
.
ত্বলক বিন আলী রা. যিনি রাসুলুল্লাহ সা.এর একজন সাহাবী। তিনি তারাবিহের পরে তাহাজ্জুদ পড়েছেন মর্মে হাদিসে স্পষ্ট বর্ণিত আছে। তার ছেলে ক্বাইস বিন তালিক তার বাবা সম্পর্কে বর্ণনা করেনঃ
.
باب فِي نَقْضِ الْوِتْرِ حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، حَدَّثَنَا مُلاَزِمُ بْنُ عَمْرٍو، حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ بَدْرٍ، عَنْ قَيْسِ بْنِ طَلْقٍ، قَالَ زَارَنَا طَلْقُ بْنُ عَلِيٍّ فِي يَوْمٍ مِنْ رَمَضَانَ وَأَمْسَى عِنْدَنَا وَأَفْطَرَ ثُمَّ قَامَ بِنَا تِلْكَ اللَّيْلَةَ وَأَوْتَرَ بِنَا ثُمَّ انْحَدَرَ إِلَى مَسْجِدِهِ فَصَلَّى بِأَصْحَابِهِ حَتَّى إِذَا بَقِيَ الْوِتْرُ قَدَّمَ رَجُلاً فَقَالَ أَوْتِرْ بِأَصْحَابِكَ فَإِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ” لاَ وِتْرَانِ فِي لَيْلَةٍ ” .
.
(আমাদের পিতা) ত্বলক বিন আলী রা. রমজান মাসে একদিন আমাদের এখানে বেড়াতে আসেন এবং আমাদের সাথে সন্ধ্যা পর্যন্ত অবস্থান করেন এবং ইফতার করেন। তারপর তিনি আমাদের নিয়ে নামায (তারাবীহ) আদায় করেন এবং বিতর পড়েন। অতঃপর তিনি তার মসজিদে চলে গেলেন এবং তার সাথীদের নিয়ে সালাত আদায়ে লেগে গেলেন। যখন শুধু বিতরের সালাত অবশিষ্ট রয়ে গেল, তিনি এক ব্যাক্তিকে আগে বাড়িয়ে দিলেন এবং বললেন, তুমি এদের সাথে বিতরের সালাত আদায় করে নাও। কেননা আমি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে বলতে শুনেছি, “এক রাত্রে দুইবার বিতরের সালাত আদায় করতে নেই।
.
উপরের হাদিস থেকে এটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে যে, তলক ইবনু আলী (রাঃ) প্রথমে তারাবীহের নামায আদায় করেন অতঃপর তার সাথীদের সাথে তাহাজ্জুদ নামায আদায় করেন। এমনটা তো হতে পারে না যে, তিনি তারাবীহের নামায পরে এসে পুনরায় তার সাথীদের নিয়ে তারাবীহের নামাযই আদায় করেছেন। বরং তা তাহাজ্জুদই ছিল।
.
তাবেঈ + সাহাবীদের কর্তৃক তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ আলাদা আলাদা আদায়ঃ
.
ইমাম আবু বকর ইবনে আবু শাইবা + আবুল আহওয়াস রহ + মুগিরা রহ +ইমাম ইব্রাহিম নাখায়ী রহ. ( মৃত্যুঃ ৯৬ হিঃ) বলেনঃ কিছু লোক ইমামের সাথে রমজানের কিয়াম (তারাবীহ) আদায় করছিল এবং কিছু লোক এমন ছিল যারা মসজিদের এক কোণে তাহাজ্জুদের নামায আদায় করছিল।
[দেখুনঃ মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা:খন্ড ৫, পৃ:২৩৩-২৩৪, হাদিস নং -২০৬৩]
হাদিসটির সনদ সহিহ।
.
এছাড়াও হাদিসটি অন্য একটি সহিহ সনদেও বর্ণিত হয়েছে। সনদটি হলঃ
.
ইমাম আবু বকর ইবনে আবু শাইবা —> আবু খালিদ আল আহমার রহ –>আল আআ’মাশ রহ –>ইমাম ইব্রাহিম নাখায়ী রহ।
[দেখুনঃ মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা:খন্ড ৫, পৃ:২৩৩]
.
প্রকাশ থাকে যে, ইব্রাহীম নাখাঈ রহ. অনেক সাহাবীর সাক্ষাত লাভ করেছিলেন। সুতরাং ঐ লোকগুলি যার কথা ইব্রাহীম নাখাঈ রহ. বলেছেন তাদের মধ্যে তাবেঈদের পাশাপাশি সাহাবীদের উপস্থিতিও অস্বীকার করার মত নয়।
.
যুক্তি ও বাস্তবতার আলোকে প্রমানঃ
——————————————————
.
প্রমাণ-০১: ভিন্ন ভিন্ন শব্দ, ভিন্ন অর্থ, ভিন্ন উদ্দেশ্য
.
তারাবীহ : মূল ধাতু رَاحَةٌ (রা-হাতুন) অর্থ : প্রশান্তি। অন্যতম ধাতু رَوْحٌ (রাওহুন) অর্থ : সন্ধ্যারাতে কোন কাজ করা। সেখান থেকে ترويحة (তারবীহাতুন) অর্থ : সন্ধ্যারাতের প্রশান্তি বা প্রশান্তির বৈঠক; যা রামাযান মাসে তারাবীহর ছালাতে প্রতি চার রাক‘আত শেষে করা হয়ে থাকে। বহুবচনে (التراويح) ‘তারা-বীহ’ অর্থ : প্রশান্তির বৈঠকসমূহ (আল-মুনজিদ)
.
হাফিয ইবনে হাজার আসক্বালানী রহ. তার ফাতহুল বারী গ্রন্থে লিখেনঃ “তারাবীহ” হচ্ছে “তারাবীহা” এর বহুবচন যেটার অর্থ হল একবার বিশ্রাম। [ দেখুনঃ ফাতহুল বারী ৪/৩১৫]
.
ইমাম আইনী রহ. বলেনঃ “তারাবীহ সলাতের” নামটা “তারাবীহ “হওয়ার কারণ হল, প্রত্যেক চার রাকআতের পরে লোকজন বিশ্রাম নেয়। তারাবীহ শব্দটি হচ্ছে তারাবীহা এর বহুবচন এবং তারাবীহা বলতে বুঝায় একবার বিশ্রাম নেওয়া। [ দেখুনঃ উমদাতুল ক্বারী: ৮/২৪১]
.
এটা খুবই পরিষ্কার বিষয় যে, আরবি ভাষাতে একটা নামাযকে তখনই তারাবীহ বলা হবে যখন তাতে কমপক্ষে তিনটি বিশ্রাম থাকবে। তাই প্রথম চার রাকাতের পর যে বিশ্রাম নেওয়া হবে তাকে বলা হবে তারাবীহা(একবচন)। দ্বিতীয় চার রাকাতের পর যে বিশ্রাম নেওয়া হবে তাকে বলা হবে “তারাবীহাতানী” । তৃতীয় চার রাকাতের পর যে বিশ্রাম নেওয়া হবে তাকে বলা হবে “তারাবীহ” ।
.
উপরের আলোচনা থেকে এটা বুঝা যাচ্ছে যে, আরবি ভাষাতে একটা নামাযকে তখনই তারাবীহ বলা হবে যখন তা কমপক্ষে ১২ রাকাত পড়া হবে। ৮ রাক আতকে তারাবীহ বলা আরবি ভাষা অনুযায়ী ঠিক নয়, এটা অযৌক্তিক এবং অন্যায়। ৮ রাকআতকে তারাবীহ হিসেবে প্রচারণা চালানো চরম পর্যায়ের ধোঁকাবাজি ছাড়া আর কিছু নয়।
ক্বিয়ামুর রমাদানকে সাধারনত তারাবীহ বলা হয়।
.
তাহাজ্জুদ : মূল ধাতু هُجُوْدٌ (হুজূদুন) অর্থ : রাতে ঘুমানো বা ঘুম থেকে উঠা। সেখান থেকে تَهَجُّدٌ (তাহাজ্জুদুন) পারিভাষিক অর্থে রাত্রিতে ঘুম থেকে জেগে ওঠা বা রাত্রি জেগে ছালাত আদায় করা (আল-মুনজিদ)।
তাছাড়াও অন্যত্র আছে, “তাহাজ্জুদ শব্দের অর্থ হলো রাত্রের নামায, আর রাত্রে ঘুম হতে উঠে নামায আদায়কারীকে বলে মুতাহাজ্জিদ। আযহারী বলেন আরবী ভাষায় রাত্রে শয়নকারীকে হাজিদ বলে, আর ঘুম হতে উঠে নামায আদায়কারীকে মুতাহাজ্জিদ বলে।” (মিছবাহুল
লোগাত, পৃষ্ঠা ৯৭৭)
অনুরূপ লিসানুল আরব, কামূস আল মুহীত ও আল মুনজিদ–এও উল্লেখ আছে। “‘তাহাজ্জুদ’ শব্দের অর্থ হলো রাত্রে জাগ্রত হওয়া, ঐ নামায যা অর্ধ রাত্রে উঠে পড়া হয়।” (ফিরুযুল লোগাত, পৃষ্ঠা ৩৯৩)
.
ক্বিয়ামুল লাইল সাধারণত তাহাজ্জুদ নামে পরিচিত।
.
প্রমাণ-০২: স্বলাত আদায়ের সময় ভিন্ন ভিন্ন
.
ফরয নামায পাঁচবার এজন্যে যে, প্রত্যেক নামাযের সময় ভিন্ন, এ কারণেই ফুকাহা, মুহাদ্দিসগণ প্রতিটি নামাযের সময় আলাদাভাবে উল্লেখ করেছেন। ঐ রকমভাবে তাহাজ্জুদ ও ইশরাক দু’টি ভিন্ন নামায কেননা একটার সময় অপরটা থেকে ভিন্ন। তাহাজ্জুদের সময় অর্ধ রাতের পর থেকে ফজর (প্রভাত, ঊষা) উদিত হওয়া পর্যন্ত, আর ইশরাকের সময় সূর্যউদয়ের পর থেকে শুরু হয়। বুঝা গেল সময় ভিন্ন হওয়ার কারণে নামাযও ভিন্ন হয়। এখন দেখার বিষয় হলো তারাবীহ-তাহাজ্জুদের সময় ভিন্ন-ভিন্ন নাকি এক? যেহেতু দুটি নামাযের সময় ভিন্ন সেহেতু নামায দু’টিও ভিন্ন।
.
তাহাজ্জুদের আদায়ের উত্তম সময় শেষ রাতেঃ
.
[১]
আবূল ওয়ালীদ ও সুলাইমান (রহঃ) আসওয়াদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আয়িশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, রাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সালাত (নামায/নামাজ) কেমন ছিল? তিনি বললেন, তিনি প্রথমাংশে ঘুমাতেন, শেষাংশে জেগে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন।……………….. [ সহীহ বুখারী (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ১৯/ তাহাজ্জুদ বা রাতের সালাত, হাদিস নম্বরঃ ১০৮০]
.
[২]
আবদান (রহঃ) মাসরূক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলে, আমি আয়িশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম , তিনি কখন তাহাজ্জুদের জন্য উঠতেন? তিনি বললেন, যখন মোরগের ডাক শুনতে পেতেন। [ সহীহ বুখারী (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ১৯/ তাহাজ্জুদ বা রাতের সালাত, হাদিস নম্বরঃ ১০৬৫]
.
[৩]
আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনু আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বলেছেনঃ আল্লাহ্ পাকের নিকট সর্বাধিক প্রিয় সালাত (নামায/নামাজ) হল দাউদ (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)- এর সালাত (নামায/নামাজ)। আর আল্লাহ্ পাকের নিকট সর্বাধিক প্রিয় সিয়াম হল দাউদ (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)- এর সিয়াম। তিনি (দাউদ (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অর্ধরাত পর্যন্ত ঘুমাতেন, এক তৃতীয়াংশ তাহাজ্জুদ পড়তেন এবং রাতের ষষ্ঠাংশ ঘুমাতেন। তিনি একদিন সিয়াম পালন করতেন, এক দিন করতেন না। [ সহীহ বুখারী (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ১৯/ তাহাজ্জুদ বা রাতের সালাত, হাদিস নম্বরঃ ১০৬৪]
.
তারাবীহ পড়ার সময় প্রথম রাতেঃ ইশার নামাযের পরপরই
.
প্রথম দলীলঃ
.
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) রামাযান মাসের ২৩, ২৫ ও ২৭ তিন রাত্রি মসজিদে জামা‘আতের সাথে তারাবীহর ছালাত আদায় করেছেন। এই তিন দিনের মধ্যে প্রথম দিন রাত্রির এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত, দ্বিতীয় দিন অর্ধ রাত্রি পর্যন্ত এবং তৃতীয় দিন নিজের স্ত্রী-পরিবার ও মুছল্লীদের নিয়ে সাহারীর আগ পর্যন্ত দীর্ঘ ছালাত আদায় করেন। [দেখুনঃ সূনান নাসাঈ, হাদিস নম্বরঃ ১৩৬৪]
.
আশাকরি হাদিসের মধ্যে ” প্রথম দিন রাত্রির এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত, দ্বিতীয় দিন অর্ধ রাত্রি পর্যন্ত……… ” বাক্যগুলি দেখতে পাচ্ছেন। তো মশাই, এই “পর্যন্ত” এর শুরু কোথা থেকে? মাগরিব থেকে ? ইশা থেকে? না ইশার পর থেকে ? আশা করি শুরুর সময়টা ইশার পর থেকেই হবে।
.
২য় দলীলঃ
.
হযরত আমীরুল মু’মিনিন উমর রা. ( মৃত্যুঃ২৩ হিঃ) বলেনঃ
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,রাতের ঐ অংশের নামায ( তাহাজ্জুদ)যখন তোমরা ঘুমিয়ে থাক তা এই অংশ অপেক্ষা উত্তম যখন তোমরা সালাত আদায় কর। ( রাতের ঐ অংশ) এর দ্বা রা তিনি শেষ রাত বুঝিয়েছেন , কেননা তখন রাতের প্রথমভাগে লোকেরা সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করত।
[ সহীহ বুখারী (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ২৪/ তারাবীহর সালাত, হাদিস নম্বরঃ ১৮৮৩ ]
.
এই হাদিসের ব্যাপারেও একই কথা। রাতের তিনটি ভাগঃ প্রথম ভাগ,মধ্য ভাগ এবং শেষ ভাগ। তো শায়েখ! এই প্রথম ভাগের শুরু কখন থেকে কখন পর্যন্ত? আপনিই হিসাব করে নিন,,,,।
.
গাইরে মুকাল্লিদ আলিমদের ফতুয়া থেকে
.
[১]
গাইরে মুকাল্লিদ উলামাগণও একথার স্বিকারোক্তি দিয়েছেন দেখুন, ফাতওয়ায় ওলামায় হাদীস- তারাবীহর সময় শুরুএশার নামাযের পর, এবং তাহাজ্জুদের সময় শেষ রাতে।(ফাতওয়ায় ওলামায় হাদিস- ৬/২৫১)
.
[২]
সেখানে আরও আছে,
যে ব্যক্তি রমযান মাসে এশার সময় তারাবীহ পড়বে ঐ ব্যক্তি শেষ রাতে তাহাজ্জুদ পড়তে পারবে। তাহাজ্জুদের সময়ই সকাল হওয়ার পূর্বের টাইম (অর্থাৎ শেষ রাত)এবং শুরু রাতে তাহাজ্জুদ হয় না। (ফাতওয়ায় ওলামায় হাদিস- ৬/৩৩১)
.
প্রমাণ-০৩: হুকুম ভিন্ন ভিন্ন
.
তাহাজ্জুদ নফলঃ
.
হযরত সাদ বিন হিশাম রহঃ বলেন, আমি বললাম! হে উম্মুল মুমিনীন! আপনি আমাকে রাসূল সাঃ এর আখলাক চরিত্র বিষয়ে কিছু বলুন। আম্মাজান আয়শা রাঃ বলেন, তুমি কি কুরআন পড়ো না? রাসূল সাঃ এর আখলাক চরিত্র কুরআনে যা আছে তাই ছিল। তারপর সাদ বলেন, আপনি আমাকে রাসূল সাঃ এর রাতের নামাযের ব্যাপারে বলুন। তখন আম্মাজান আয়শা রাঃ বলেন, তুমি কি “ইয়া আইয়্যুহাল মুজ্জাম্মিল” পড়ো না? হযরত সাদ বলেন, আমি বললাম, হ্যাঁ আমি পড়িতো। আম্মাজান আয়শা রাঃ বলেন, এ সূরার যখন প্রথমাংশ নাজিল হয়, [যাতে তাহাজ্জুদ ফরজ হয়] তখন সাহাবায়ে কেরাম এত দীর্ঘ তাহাজ্জুদ পড়তেন যে, তাদের পা ফুলে যেতো। আর এ সূরার শেষাংশ বারমাস পর্যন্ত আসমানে আটকে থাকে। বার মাস পর যখন এর শেষাংশ নাজিল হয়, তখন যে তাহাজ্জুদ ফরজ ছিল তা নফল হয়ে যায়। {সুনানে আবু দাউদ-১/১৮৯-১৯৯}
এ হাদীস দ্বারা তিনটি বিষয় পরিস্কার বুঝে আসছে।
যথা-
.
১-তাহাজ্জুদদের মাশরূয়িয়্যাত কুরআন দ্বারা হয়েছে।
.
২-তাহাজ্জুদের মাশরুয়িয়্যাত মক্কায় হয়েছে। কারণ সূরা মুজ্জাম্মিল মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে।
.
৩-তাহাজ্জুদ প্রথমে ফরজ ছিল। এক বছর পর্যন্ত ফরজ থাকার পর তা নফল হয়েছে।
.
তারাবীহ সুন্নাতঃ
.
রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-
شَهْرٌ كَتَبَ اللَّهُ عَلَيْكُمْ صِيَامَهُ، وَسَنَنْتُ لَكُمْ قِيَامَهُ،
এটি এমন মাস যাতে আল্লাহ তাআলা তোমাদের জন্য রোযাকে ফরজ করেছেন, আর আমি তোমাদের জন্য এর রাতের নামাযকে সুন্নত করেছি। {সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১৩২৮, সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং-২২১০}
.
প্রমাণ-০৪: সুন্নাতে মুয়াক্কাদা-গাইরে মুয়াক্কাদা
.
তাহাজ্জুদ সুন্নাতে গাইরে মুয়াক্কাদা যা পূর্বে হাদিসে আয়শায় রা. অতিবাহিত হয়েছে। বিপরীতে তারাবীহ সুন্নাতে মুয়াক্কাদা উদাহরণত দেখুন ফিকহে হাম্বলির গ্রহণযোগ্য গ্রন্থ ‘আর-রাওযাতুল মুরাব্বা’ যা সৌদি আরবের পাঠ্যসূচির অন্তর্ভূক্ত সেখানে লেখা আছে- এবং তারাবীহ সুন্নাতে মুয়াক্কাদা।(আর-রাওযাতুল মুরাব্বা- পৃ. ৬৫)
.
মোল্লা আলি কারি রহ. লেখেন- মোটকথা বিশুদ্ধতম মত হল যে, তারাবীহ সুন্নাতে মুয়াক্কাদা।(শরহুন নেকায়া- ১/৩৪১)
.
একটা নামায সুন্নাতে মুয়াক্কাদা আরেকটা নামায সুন্নাতে গাইরে মুয়াক্কাদা উভয় নামায এক হয় কী করে?
তারাবীহ সুন্নাতে মুয়াক্কাদা হওয়ার ব্যপারে নিম্নে ঊল্লেখিত চারও মাযহাবের গ্রন্থগুলো দেখুন- আল-বাহরুর রায়েক ১/১১৭ ; হাশিয়ায়ে ফাতাওয়া আন-নাওয়াজেল ৯৪ ; হাশিয়াতুত তাহতাবী ৪১১ ; রদ্দুল মুহতার ২/৪৯৩ ; আল-ফাতাওয়া আত-তাতারখানিয়া ১/৪৭৫ ; আল-মুহায্যাব ১/৮৪ ; হুলিয়াতুল উলামা ২/১১৯ ; আল-ইকনা’ লি শিরবীনি ১/১১৭ ; নেহায়াতুয যাইন ১/১১৪ ; আল-ফুরু’ ১/৪৮৮ ; আল-মুগনী লি ইবনে কুদামা ১/৭৯৭ ।
.
প্রমাণ-০৫: শিআ’রে ইসলাম
.
তারাবীহর নামাযশিআরে ইসলাম তথা ইসলামের নিদর্শনাবলীর মধ্য থেকে একটি। দেখুন- নাইলুল আওতার- ২/২৯৫ আদ-দিবায- ২/৩৮৫ শরহে মুসলিম লি নববী- ৩/১০১, ১২৮, ১৩২ শরহে আবু দাউদ লি আইনি- ৫/২৭৫ শরহে মুসলিম লি সুয়ূতী- ২/৩৮৫ মিরকাতুল মাফাতীহ- ৪/৩১৪, ৩১৬ এহইয়ায়ু উলূমুদ্দীন- ১/৩৯০
.
তারাবীহ সুন্নাত যা রাসূলে কারীম সা. নিজেই জারী করেছেন এবং ওমর রা. এর জারীকৃত সুন্নাত নয় এবং ইহা দীনের বাহ্যিক নিদর্শন সমূহের মধ্য থেকে একটি। বিপরীতে তাহাজ্জুদ ইসলমের নিদর্শন থেকে নয়।
.
.প্রমাণ-০৬: রমজানের শর্ত
.
রাসূল সাঃ এর জমানায় একবার চাঁদ দেখেনি অনেকে। তখন فارادوا ان لا يصوموا ولا يقوموا তথা তখন সবাই রোযা না রাখা ও তারাবীহ না পড়ার ইচ্ছে করে নেন সবাই। হঠাৎ করে এক গ্রাম্য ব্যক্তি এসে চাঁদ দেখার সংবাদ দেয়। তখন উক্ত ব্যক্তির ঈমান ও বিশ্বাসের সত্যতা যাচাইয়ের পর রাসূল সাঃ হযরত বিলাল রাঃ কে ঘোষণা দেবার জন্য হুকুম দেন- ان يصوموا وان يقوموا তথা রোযা রাখ এবং তারাবীহ পড়। {দারা কুতনী-২/১৫৯}
উপরোক্ত হাদীস প্রমাণ করে তারাবীহের জন্য রমজান আবশ্যক। কিন্তু তাহাজ্জুদের জন্য তা আবশ্যক নয়। তাহাজ্জুদ সারা বছরই পড়া হয়।
.
প্রমাণ-০৭:হাদিসের কিতাব সমুহে বর্ণনার অধ্যায় আলাদা আলাদা
.
মুহাদ্দিসীনে কেরাম তারাবীহ ও তাহাজ্জুদের জন্য আলাদা দু’টি অধ্যায় কায়েম করেছেন তাদের কিতাবে। যা পরিস্কার প্রমাণ করে এ দু’টি ভিন্ন নামায। এক নামায হলে দুই বাব তথা অধ্যায় কায়েম করার মানে কি?
.
কয়েকটি উদাহরণ দেয়া হলঃ
.
সহীহ বুখারী বাব ফজলু কিয়ামিল্লাইল-১/১৫১ বাব ফজলু মান কামা রমজানা-১/২৬৯
.
সহীহ মুসলিম বাবু সালাতুল লাইল-১/২৫৩ বাবুত তারগীব ফী কিয়ামি রমজানা ওহুয়াত্তারাবীহ-১/২৫৯
.
আবু দাউদ বাবু ফী সালাতিল্লাইল-১/১৮৮ বাবু কিয়ামু শাহরি রমজানা-১/১৯৬
.
সুনানে তিরমিজী বাবু ফী ফাজলি সালাতিল্লাইল-১/৯৮ বাবু মাযাআ’ ফী কিয়ামি শাহরি রমজানা-১/১৬৬
.
সুনানে নাসায়ী কিতাবু কিয়ামুল লাইল-১/২৩৭ সাওয়াবু মান কামা রমজানা ওয়া ছামা-১/৩০৭
.
সুনানে ইবনে মাজাহ বাবু মা মা’যাআ ফী কিয়ামুল লাইল-৯৪ বাবু মা’যাআ’ ফী কিয়ামি শাহরি রমজানা-৯৪
.
মুয়াত্তা মালিক বাবু পী সালাতিল লাইল-৯৯ বাবু ফী কিয়ামি রামজানা-৯৭
.
মুয়াত্তা মুহাম্মদ বাবু সালাতিল লাইল-১/১১৯ বাবু কিয়ামু শাহরি রমজানা-১৪১
.
মিশকাতুল মাসাবীহ বাবু সালাতুল লাইল-১/১০৫ বাবু কিয়ামু শাহরি রমজানা-১/১১৪
.
রিয়াজুস সালেহীন বাব ফাজলু কিয়ামিল লাইল-৩৬২ বা ইস্তিহবাবু কিয়ামি রমাজানা ওয়াহুয়াত তারাবীহ-৩৬৭
.
সহীহ ইবনে হিব্বান ফছলু ফী কিয়ামিল লাইল-৫/১১২ ফছলু ফীত তারাবীহ-৫/১০৭
.
মাযমাউজ যাওয়ায়েদ বাবু ফী ছালাতিল লাইল-২/৫১৯ বাবু কিয়ামু রমজান-৩/৪০১
.
বুলুগুল মারাম সালাতুত তাতাউও-৮৩ কিয়ামু রমজান-১৫২
.
সুনানে কুবরা বায়হাকী বাবু ফী কিয়ামিল লাইল-২/৪৯৯ বাবু ফী কিয়ামি শাহরি রমজানা-২/৪৯১
.
মুখতাছার কিয়ামুল লাইল লিলমারওয়াজি কিয়ামুল লাইল-২/১৪৯ কিয়ামু রমজান-১৫০-১৭৮
.
মুহাদ্দিসীনে কেরামের দু’টি নামাযের জন্য আলাদা বাব কায়েম করা পরিস্কার প্রমাণ করে এ দু’টি নামায আলাদা। এক নয়।
.
প্রমাণ-০৮:হাদীসের কিতাবে তারাবীহের গুরুত্ব
.
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত রাসূল সা. বলেছেন, যে ব্যক্তি রমযানে ঈমানের সাথে সওয়াব লাভের আশায় তারাবীহর সালাতে দাড়াবে তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।(বুখারি শরীফ- হা. নং ২০০৯)উল্লিখিত হাদীসটিতে তারাবীহর শ্রেষ্ঠত্য বর্ণনা করা হয়েছে। ঊক্ত হাদীসটি কোন মুহাদ্দিস তাহাজ্জুদ অধ্যায়ে উল্লেখ করেননি শুধুমাত্র তারাবীহ অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন। যদি তারাবীহ-তাহাজ্জুদ একই নামায হবে তাহলে তারাবীহর শ্রেষ্ঠত্যের হাদীস কেন তাহাজ্জুদ অধ্যায়ে কোন মুহাদ্দিস উল্লেখ করলেন না।
.
প্রমাণ-০৯: জামাতের জন্যে উৎসাহ দান
.
তাহাজ্জুদ জামাতের সাথে পড়ার ব্যাপারে রাসূল সা. কর্তৃক উৎসাহ দান প্রমাণিত নয়। কিন্তু তারাবীহ জামাতের সাথে পড়ার ব্যাপারে রাসূল সা. থেকে উৎসাহ দেয়া প্রমাণিত যেমন আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত-
তিনি বলেন: রাসূল সা. বাহিরে আসলেন এসে দেখেন রমযান মাসে কিছু লোক মাসজিদের এক কোণে নামায আদায় করছে। রাসূল সা. জিজ্ঞাসা করলেন এরা কারা? উত্তরে বলা হল, এমন কিছু মানুষ যাদের কুরআন মুখস্থ নেই। উবাই বিন কাব রা. তাদের ইমামতি করছেন। তারা উবাই বিন কাব রা. এর ইমামতিতে নামায আদায় করছে। এ কথা শুনে রাসূল সা. বললেন তারা সঠিক কাজ করেছে অথবা বলেছেন তারা যা করছে ভালই করছে।(কিয়ামুল লাইল- পৃ. ১৫৫)
.
প্রমাণ-১০: বড় জামাতের গুরত্বারোপ
.
তাহাজ্জুদে লোক জড়ো করার গুরত্বারোপ করা রাসূল সা. থেকে প্রমাণিত নয়, কিন্তু তারাবীহতে জামাত বড় হওয়া তথা বেশী লোক জড়ো হওয়ার গুরত্ব রাসূল সা. থেকে প্রমাণিত এ ব্যাপারে দু’টি হাদীস এখানে উল্লেখ করছি- এক. আয়শা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন- লোকেরা মাসজিদে নব্বীতে রমযানের এক রাতে ভিন্ন ভিন্ন জামাতে নামায আদায় করছিল। কুরআনের কিছুু অংশ যাদের মুখস্থ ছিল তাদের পিছনে লোকেরা নামায আদায় করছিল। কারো পিছনে পাঁচ জন, কারো পিছনে ছয় জন বা এর চেয়ে কম, বেশী লোক উক্ত ব্যক্তির পিছনে নামায আদায় করছিল। আয়শা রা. বলেন এক রাতে রাসূল সা. আমাকে নির্দেশ দিলেন দরওয়াজায় চাটাই টানিয়ে দেয়ার, আমি চাটাই টানিয়ে দিলাম। অতঃপর রাসূল সা. এশার নামাযের পর বাহিরে গমন করলেন ঐ সময় মাসজিদে যত লোক উপস্থিত ছিল সবাই রাসূল সা. এর নিকট জমা হল। অতঃপর রাসূল সা. তাদেরকে গভীর রাত পর্যন্ত নামায পড়ালেন।(কিয়ামুল লাইল পৃ.১৫৩) দুই. আবু যর গিফারি রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
আমরা রাসূল সা. এর সাথে রমযান মাসে রোযা রেখেছি, রাসূল সা. আমাদের তারাবীহর নামায পড়ান নি এমনকি যখন সাত রাত বাকি আছে তখন রাসূল সা. আমাদের ২৩, ২৫ এ দু’ রাত তারাবীহ পড়িয়েছেন, এরপর আবার ২৭ তারিখ রাতে রাসূল সা. নিজের পরিবারভুক্ত সদস্যদের জড়ো করেছেন এবং সাথে অন্য লোকও জমা হয়ে গেল সে রাতে রাসূল সা. অনেক দীর্ঘ নামায পড়িয়েছেন। (আবু দাউদ- হা. ১৩৭৫) (এ কারণেই আমিরুল মুমিনীন ওমর রা. পরবর্তীতে স্বতন্ত্রভাবে জামাতের সাথে বিশ রাকআত তারাবীহ পড়ার গুরুত্বারোপ করেছেন যা আজ অবধি চলছে)। প্রমাণ-১৪: (পুরা রাত নামায আদায়) তাহাজ্জুদে সারা রাত অতিবাহিত করা রাসূল সা. থেকে প্রমাণিত নয়। আয়শা রা. বলেন- ( আমার জানা নেই যে, রাসূল সা. রমযান ব্যতীত অন্য মাসে সারা রাত নামায আদায় করেছেন।(নাসাঈ শরীফ- হা. ২৩৪৮)
.
সাদ বিন হিশাম বলেন, আয়শা রা. বলেছেন- রাসূল সা. এর ব্যপারে আমার জানা নেই যে, রাসূল সা. কোন এক রাতেও সারা রাত নামায আদায় করেছেন রমযান ব্যতীত। (সাদ বিন হিশাম বলেন) আমি ইবনে আব্বাস রা. এর নিকট এ কথা বর্ণনা
আমরা রাসূল সা. এর সাথে রমযান মাসে রোযা রেখেছি, রাসূল সা. আমাদের তারাবীহর নামায পড়ান নি এমনকি যখন সাত রাত বাকি আছে তখন রাসূল সা. আমাদের ২৩, ২৫ এ দু’ রাত তারাবীহ পড়িয়েছেন, এরপর আবার ২৭ তারিখ রাতে রাসূল সা. নিজের পরিবারভুক্ত সদস্যদের জড়ো করেছেন এবং সাথে অন্য লোকও জমা হয়ে গেল সে রাতে রাসূল সা. অনেক দীর্ঘ নামায পড়িয়েছেন। (আবু দাউদ- হা. ১৩৭৫) (এ কারণেই আমিরুল মুমিনীন ওমর রা. পরবর্তীতে স্বতন্ত্রভাবে জামাতের সাথে বিশ রাকআত তারাবীহ পড়ার গুরুত্বারোপ করেছেন যা আজ অবধি চলছে)।
.
প্রমাণ-১১: ফরয হওয়ার সম্ভাবনা
.
উপরে আম্মাজান আয়িশা রা. এর হাদিস তো এটা প্রমাণ করে যে, প্রথমে তাহাজ্জুদ ফরয ছিল, পরে তা নফল করা হয়েছে।
আর একবার যে হুকুমের ফরযিয়্যত (বাধ্যবাধকতা) স্পষ্ট কোরআনের আয়াত দ্বারা রহিত হয়ে যায়। তা আবার ফরয হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। তাই তাহাজ্জুদ নামায আর ফরয হওয়ার আশংকা নাই। অথচ রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযান মাসে তিনদিন বা চারদিন তারাবীহের নামায জামা‘আতের সাথে আদায় করার পর ফরয হয়ে যাওয়ার আশংকায় তিনি জামাত ছেড়ে দিয়েছিলেন। হাদিসে এসেছে,
.
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইডে ওয়াসাল্লাম মসজিদে (তারাবীহ) নামায আদায় করেন। ঐ সময় তাঁর সাথে অন্যান্য লোকেরাও নামায আদায় করেন। পরবর্তীতে রাতে উক্ত নামায আদায় করাকালে অনেক লোকের সমাগম হয়। অতঃপর তৃতীয় রাতেও লোকেরা উক্ত নামায (তারাবীহ) আদায় করার জন্য জমায়েত হলে সেদিন তিনি (সাঃ) মসজিদে গমন করেন নাই। অতঃপর প্রত্যুষে তিনি (সাঃ) সকলকে লক্ষ করে বলেনঃ তোমরা যা করেছ তা আমি অবলোকন করেছি। আমি একারণেই নামায জামাআতের সাথে আদায় করার জন্য আসিনাই যে, আমার ভয় হচ্ছিল তোমাদের উপর তা ফরয করা হয় কি না (তবে কষ্টকর বোঝা হয়ে দাঁড়াবে)। এটা রমযান মাসের (তারাবীহ নামায আদায়ের) ঘটনা। [সূনান আবু দাউদ (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ২/ সালাত (নামায), হাদিস নম্বরঃ ১৩৭৩]
.
.

বিশ রাকাত তারাবীহঃ উম্মতের ১৪শ বছরের আমল
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷
.
তারাবীহ শব্দের ব্যাখ্যায় বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাকার হাফিযুল হাদীস ইবনে হাজার আল-আসকালানী (রহ.) বলেন,
.
اَلتَّرَاوِيْحُ جَمْعُ تَرْوِيْحَةٍ وَهِيَ الْـمَرَّةُ الْوَاحِدَةُ مِنَ الرَّاحَةِ كَتَسْلِيْمَةٍ مِّنَ السَّلَامِ سُمِّيَتِ الصَّلَاةُ فِي الْـجَمَاعَةِ فِيْ لَيَالِيْ رَمَضَانَ اَلتَّرَاوِيْحَ لِأَنَّهُمْ أَوَّلَ مَا اجْتَمَعُوْا عَلَيْهَا كَانُوْا يَسْتَرِيحُوْنَ بَيْنَ كُلِّ تَسْلِيمَتَيْنِ
.
অর্থাৎ اَلتَّرَاوِيْحُ শব্দটি تَرْوِيْحَةٌ শব্দের বহুবচন, যার অর্থ একবার আরাম করা। যেমন- تَسْلِيْمَةٌ অর্থ একবার সালাম করা। শরীয়তের পরিভাষায় তারাবীহ বলে, সে নামাযকে যা রামাযান মাসের রাতে জামাতবদ্ধ হয়ে আদায় করা হয়। তারাবীহ বলে নামকরণ করার কারণ হল, সর্বপ্রথম যারা জামাত বদ্ধ হয়ে তারাবীহের নামায আদায় করেছেন তারা প্রতি দুই সালামের মাঝে আরাম করতেন।[১]
.
১৪০০ বছরের আমলঃ
.
বিখ্যাত হাফিযুল হাদীস ইমাম বায়হাকী (রহ.) তার অমর গ্রন্থ আস-সুনানুল কুবরায় হাদীস বর্ণনা করেন যে,
.
عَنِ السَّائِبِ بْنِ يَزِيْدَ قَالَ: كَانُوْا يَقُوْمُوْنَ عَلَىٰ عَهْدِ عُمَرَ بْنِ الْـخَطَّابِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ فِيْ شَهْرِ رَمَضَانَ بِعِشْرِيْنَ رَكْعَةً. قَالَ: وَكَانُوْا يَقْرَءُوْنَ بِالْـمَئِيْنِ، وَكَانُوْا يَتَوَكَّئُوْنَ عَلَىٰ عِصِيِّهِمْ فِيْ عَهْدِ عُثْمَانَ بْنِ عَفَّانَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ مِنْ شِدَّةِ الْقِيَامِ
.
হযরত সায়িব ইবনে ইয়াযীদ (রাযি.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাযি.)-এর যুগে সাহাবায়ে কেরাম ২০ রাকাআত তারাবীহ পড়তেন। হযরত ওসমান (রাযি.)-এর যুগে তারাবীহের নামাযে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকা কষ্টকর হওয়ার কারণে লাঠিতে ভর করে দাঁড়াতেন।[২]
উক্ত কিতাবে আরও উল্লেখ রয়েছে যে,
.
عَنْ شُتَيْرِ بْنِ شَكَلٍ، وَكَانَ مِنْ أَصْحَابِ عَلِيٍّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّهُ كَانَ يَؤُمُّهُمْ فِيْ شَهْرِ رَمَضَانَ بِعِشْرِيْنَ رَكْعَةً
.
হযরত আলী (রাযি.)-এর যোগ্য শাগরিদ জলীলুল কদর তাবেয়ী হযরত শুতাইর ইবনে শাকাল (রহ.) তারাবীহের নামাযের ইমাম ছিলেন। তিনি তারাবীহের নামায ২০ রাকাআত পড়াতেন।[৩]
তিনি একথাও বলেন,
.
عَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: دَعَا الْقُرَّاءَ فِيْ رَمَضَانَ فَأَمَرَ مِنْهُمْ رَجُلًا يُصَلِّيْ بِالنَّاسِ عِشْرِيْنَ رَكْعَةً
.
হযরত আলী (রাযি.) এক ব্যক্তিকে ২০ রাকাআত তারাবীহ পড়ানোর জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন।[৪]
তখনকার মক্কাবাসীর আমলও বিশ রাকাআত ছিল। হযরত নাফে’ (রহ.) বলেন, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাযি.) মক্কায় বিশ রাকাআত তারাবীহ পড়তেন। তবে মক্কাবাসীরা প্রতি ৪ রাকাআত পর বিরতিকালে তাওয়াফ করে অধিক সাওয়াব অর্জন করতেন, মদীনাবাসী এটা শুনে মক্কাবাসীদের অনুরূপ সাওয়াব অর্জনের উদ্দেশ্যে প্রতি চার রাকাআত পর ৪ রাকাআত করে বাড়িয়ে দেন। তাই ২০ রাকাআত ৩৬ রাকাআতে পরিণত হয়।[৫]
তাই ইমাম মালিক (রহ.) বলেন, হার্‌রা যুদ্ধের আগে থেকে আজ পর্যন্ত ৩৬ রাকাআত তারাবীহের নামাযের আমল চালু রয়েছে। ইমাম শা’রানী বলেন,
.
قول أبي حنيفة والشافعي وأحمد أن صلاة التراويح في شهر رمضان عشرون ركعة وإنها في الجماعة أفضل مع قول مالك في احدى الروايات عنه إنها ست وثلاثون ركعة
.
অর্থাৎ তারাবীহের রাকাআত সম্পর্কে ইমাম আবু হানিফা, ইমাম শাফেয়ী ও ইমাম আহমদ (রহ.) এর উক্তি হল, রামাযান মাসে তারাবীহের নামায ২০ রাকাআত। আর তা জামাতের সাথে আদায় করা উত্তম। ইমাম মালেক (রহ.)-এর এক উক্তি হচ্ছে, তারাবীহের নামায ৩৬ রাকাআত।[৬]
.
ইমাম তিরমিযী (রহ.) তারাবীহের রাকাআত সংখ্যার ক্ষেত্রে ইমামগণের মতামত বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, ইমাম আবু হানিফা ও ইমাম শাফেয়ী (রহ.) তারাবীহের নামায বিশ রাকাআত বলে মত ব্যক্ত করেন। ইমাম মালেক (রহ.) বলেন, তারাবীহের নামায (বিতিরসহ) ৩৯ রাকাআত।
.
উল্লেখ্য যে, ইমাম তিরমিযী (রহ.) উক্ত আলোচনায় ৮ রাকাআতের কোন উক্তি পেশ করেননি। এটা একথার প্রমাণ যে, ইমাম তিরমিযী (রহ.) এর যুগে বা তাঁর আগে ৮ রাকাআত তারাবীহ পড়া তো দূরের কথা ৮ রাকাআত তারাবীহ হওয়া ছিল কল্পনাতীত। ইমাম শাফিয়ী (রহ.) যেহেতু বিশ রাকাআত তারাবীহের পক্ষে ছিলেন তাই মক্কা-মদীনাসহ সারা বিশ্বে যেখানে যেখানে শাফিয়ী মাযহাবের অনুসারী ছিল, সেখানে তারাবীহের নামায ২০ রাকাআত হত। এভাবে ইরাক, কুফা ও বাসারা দেশে যেহেতু হযরত আলী (রাযি.)-এর দারুল হুকুমত ছিল তাই সেখানেও ২০ রাকাআতের ওপর আমল চালু ছিল। কুফাতে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাযি.)ও ২০ রাকাআত তারাবীহ পড়তেন।
হযরত আসওয়াদ ও মুয়াইদ ইবনে গফলা (রহ.) [যারা হযরত ওমর, হযরত মুয়ায, হযরত হুযায়ফা, হযরত বিলাল (রাযি.)সহ বহু কেবারে সাহাবাদের সান্নিধ্যপ্রাপ্ত ছিলেন] বিশ রাকাআত তারাবীহ পড়তেন বলে পাওয়া যায়। হযরত সাঈদ ইবনে জুবায়র, সুফিয়ান সাওরী, ইমাম আবু হানিফা, ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বাল সকলেই ২০ রাকাআত তারাবীহ পড়তেন এবং সকলকে পড়তে বলতেন।
.
এই আলোচনার দ্বারা প্রমাণ হল ইতিহাসের সোনালি যুগ থেকে শুরু করে শত শত বছর পর্যন্ত ৮ রাকাআত তারাবীহ পড়া তো দূরের কথা ২০ রাকাআতের কম তারাবীহ হওয়ার কল্পনাও ছিল না। এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে আমরা দেখতে পাচ্ছি মক্কা-মদীনাসহ সারা বিশ্বে প্রায় সকল মসজিদে ২০ রাকাআত তারাবীহের জামাআত অনুষ্ঠিত হয়। এটা মনগড়া নয়, বরং সহীহ হাদীস মুতাবেক আমল।
.
ইজমার আলোকে ২০ রাকাআত তারাবীহ পূর্বের আলোচনার দ্বারা সর্বসাধারণের সামনে দিবালোকের ন্যায় একথা স্পষ্ট হয়ে গেলো যে, সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে, হযরত ওমর (রাযি.)-এর যুগ থেকে মক্কা-মদীনা, কুফা-বাসারা, শাম-সিরিয়াসহ সারা বিশ্বে সাহাবা ও তাবেয়ীদের সর্বসম্মতিক্রমে জামাআতবদ্ধভাবে বিশ রাকাআত তারাবীহের আমল চালু রয়েছে। কোন একজন সাহাবী বা তাবেয়ী এতে কোন আপত্তি উত্থাপন করেননি। আর এটাই ইজমা।
.
জগত-বিখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন, একথা চিরসত্য যে, হযরত উবাই ইবনে কাআব (রাযি.) হযরত ওমর (রাযি.)-এর যুগে ২০ রাকাআত তারাবীহ ও তিন রাকাআত বিতির পড়তেন। আর এটা খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাতের দ্বারা প্রমাণিত। এ কাজে সকল মুহাজির আনসারগণ শরীক ছিলেন। কেউ অস্বীকার করেননি, বরং সাদরে বরণ করে নিয়েছেন।[৭]
.
মুহাদ্দিস ইবনে কুদামা (রহ.) বলেন, হযরত ওমর (রাযি.)-এর বিশ রাকাআত তারাবীহ আদায় করার ওপর সকল সাহাবার ইজমা সংঘটিত হয়েছে। এটা আমাদের সকলকে মানতে হবে।[৮]

.
বিখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা মোল্লা আলী আল কারী (রহ.) বলেন,
.
أَجْمَعَ الصَّحَابَةُ عَلَىٰ أَنَّ التَّرَاوِيْحَ عِشْرُوْنَ رَكْعَةً
.
অর্থাৎ সকল সাহাবায়ে কেরাম বিশ রাকাআত তারাবীহের ওপর একমত পোষণ করেছেন।[৯]
.
শায়খুল হাদীস আল্লামা যাকারিয়া (রহ.) বলেন, বিক্ষিপ্ততা বন্ধ করে এক ইমামের পিছনে ২০ রাকাতের ওপর ইজমা সংঘটিত করলেন।[১০]
.
মুহাদ্দিসদের শিরোমণি আল্লামা ইউসুফ বান্নূরী (রহ.) বলেন,
.
عشرون ركعات من التراويح هو قدرمتفق بين الأمة والأئمة من غيرخلاف
.
অর্থাৎ বিশ রাকাআত তারাবীহ এটা উম্মতে মুহাম্মদী বিশেষত সকল ইমামদের মধ্যে দ্বিধা বিভক্তি ছাড়া মিমাংসিত বিষয়।[১১]
.
তিনি আরও বলেন, পরবর্তী যুগে তারাবীহের নামায কেউ ২০ রাকাআতের অধিক আদায় করলেও হযরত ওমর (রাযি.) যা করেছেন তাঁর ওপর সাহাবাদের ইজমা সংঘটিত হয়েছে এটা সকলকে মানতে হবে। একথা ইমাম শা’রানী ও ইমাম সুয়ুতী উভয়েই স্বীকার করেছেন। অতএব কেউ যদি এর বিপরিত করে সেটা হবে ইজমার মাঝে ফাটল সৃষ্টি করা এবং আত্মপূঁজা মাত্র।[১২]
.
হযরত ওমর (রাযি.)সহ সকল সাহাবাদের আমল হাদীসে মারফূর মর্যাদা রাখে। কারণ হাদীসে মাওকুফ যদি কিয়াসী বিষয় না হয় আর তাঁর বিরুদ্ধে কোন হাদীস না থাকে সেটা হাদীসে মারফূর মতো দলীল হবে।[১৩]
.
বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মীরী (রহ.) বলেন,
.
ثم ماخوذ الأئمة الأربعة من عشرين ركعة هو عمل الفاروق الأعظم
.
অর্থাৎ চার ইমামগণ ২০ রাকাআত তারাবীহের মত গ্রহণ করা, এটা ফারুকে আযম ওমর (রাযি.) এর আমল। তিনি আরো বলেন,
.
وأما فعل الفاروق قد تلقاه الأمة بالقبول واستقر أمر التراويح في السنة الثانية في عهد عمر.
.
অর্থাৎ হযরত ওমর (রাযি.)-এর ২০ রাকাআত তারাবীহের আমল সকল উম্মত গ্রহণ করে নিয়েছেন। তারাবীহের বিষয়টি ওমর রাজি এর খিলাফতের দ্বিতীয় বছর ২০ রাকাআতের ওপর চির মিমাংসা হয়ে যায়।[১৪]
.
দীর্ঘ আলোচনার দ্বারা প্রমাণ হল ২০ রাকাআত তারাবীহের ওপর হযরত ওমর (রাযি.)-এর যুগে ইজমা সংঘটিত হয়েছে। এটা হযরত ওমর (রাযি.)-এর ব্যক্তিগত আমল নয়। সাহাবায়ে কেরামের কাছে অবশ্যই ২০ রাকাআতের ওপর দলীল ছিল। নতুবা সাহাবায়ে কেরাম যারা বিদআতকে একেবারে ঘৃণা করতেন তারা কেন প্রতিবাদ করলেন না। তারা সকলে নিচ্ছুপ থাকাটাই দলীল। উল্লেখ্য যে, পরবর্তী ওলামায়ে কেরামের কেউ বিশ রাকাআতের বেশি পড়লেও কোন সমস্যা নেই। কারণ ইজমায়ে আকসারী অর্থাৎ অধিকাংশের মত হিসেবেও ইজমা বলা যাবে।
.
আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মীরী (রহ.)-এর উক্তির অপব্যাখ্যা আমাদের লা মাযহাবী বন্ধুরা ৮ রাকাআত তারাবীহের পক্ষে জগতবিখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মীরী (রহ.)-এর উক্তি দ্বারা দলীল পেশ করে থাকেন। তারা বলেন, আল্লামা কাশ্মীরী (রহ.) বলেন, রাসূল (সা.)-এর যুগে তারাবীহের নামায আট রাকাআত ছিল ২০ রাকাতের হাদীস অত্যন্ত যয়ীফ ও আট রাকাতের হাদীসের সাথে সাংঘর্ষিক। এক্ষেত্রে আমরা বলবো রাসূল (সা.)-এর যুগে তারাবীহের নামায যে বিশ রাকাআত ছিল তা আমরা পূর্বে সহীহ হাদীসের আলোকে প্রমাণ করেছি। কোন ইমাম বা মুহাদ্দিসের উক্তির আলোকে নয়।
.
আল্লামা কাশ্মীরী (রহ.)-এর উক্তিই যদি আপনাদের দলীল হয় তাহলে তাঁর বাকী কথা আপনারা গ্রহণ করলেন না কেন? তিনি তো একথাও বলেছেন,
.
ثم ماخوذ الأئمة الأربعة من عشرين ركعة هو عمل الفاروق الأعظم
.
অর্থাৎ ইমাম চতুষ্ঠয়ের ২০ রাকাআত তারাবীহের মতগ্রহণ করা হযরত ফারুকে আযম (রাযি.)-এর আমল। তিনি আরও বলেন,
.
وأما فعل الفاروق قد تلقاه الأمة بالقبول واستقر أمر التراويح في السنة الثانية في عهد عمر
.
অর্থাৎ ওমর (রাযি.)-এর তারাবীহের ২০ রাকাতের আমল সকল উম্মত এক বাক্যে মেনে নিয়েছে। ওমর (রাযি.) এর খিলাফতের দ্বিতীয় বছর তারাবীহের নামায ২০ রাকাআতের ওপর মিমাংসা হয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন,
.
وقد صح في الحديث: «عليكم بسنتي وسنة الخلفاء الراشدين المهديين» فيكون فعل الفاروق الأعظم أيضًا سنة
.
অর্থাৎ সহীহ হাদীসে বর্ণিত আছে রাসূল (সা.) বলেন, তোমরা আমার সুন্নাতের অনুসরণ কর এবং খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাতের অনুসরণ কর। অতএব হযরত ওমর (রাযি.)-এর ২০ রাকাআত তারাবীহের আমলও সুন্নাত হবে।[১৫]
.
আপনারা তার পূর্বের কথাগুলি দলীল বানিয়ে পেশ করলেন। অথচ পরবর্তী কথাগুলি কেন গ্রহণ করলেন না। ওহ! আপনারা দইয়ের হাড়ি নিতে রাজি মুগুরের বাড়ি খেতে রাজি না। সহীহ হাদীসের চেয়ে একজন হানাফী মুহাদ্দিসের কথার যদি মূল্য আপনাদের কাছে বেশি হয় তাহলে তার পূর্ণ তাহকীক গ্রহণ করলেও সঠিক রাস্তা পেয়ে যেতেন। আল্লাহ পাক তাওফীক দান করুন।
.
আল্লামা শামীর নামে অপপ্রচারঃ
.
আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী ফতোয়ায়ে শামী গ্রন্থে তারাবীহের রাকাআত সংখ্যা সম্পর্কে বলেন,
.
(قَوْلُهُ وَهِيَ عِشْرُوْنَ رَكْعَةً) هُوَ قَوْلُ الْـجُمْهُورِ وَعَلَيْهِ عَمَلُ النَّاسِ شَرْقًا وَغَرْبًا
.
অর্থাৎ তারাবীহের নামায বিশ রাকাআত, এটাই জমহুরে ওলামার মত। সারা বিশ্বে এর ওপরই আমল চালু রয়েছে।[১৬]
.
কিন্তু জনৈক শায়খে আহলে হাদীস বলেন যে, আল্লামা শামী নাকি ফতোয়া শামীতে তারাবীহের নামায আট রাকাআত সুন্নাত বলেছেন। অথচ তিনি ফতোয়া শামীতে বলেন, ফতহুল কদীর কিতাবে তারাবীহের নামায আট রাকাআত সুন্নাত ও বাকি ১২ রাকাআত মুস্তাহাব বলা হয়েছে, আমি সে কিতাবের টিকাতে জোর প্রতিবাদ করেছি।[১৭]
.
এরপরেও যদি বলা হয় আল্লামা শামী (রহ.) তারাবীহের নামায আট রাকাআত সুন্নাত বলেছেন, এটা অপপ্রচার বৈ আর কিছু নয়।
.
আল্লামা লাখনবী সম্পর্কে ভুল ধারণাঃ
.
আহলে হাদীস নামধারীরা আল্লামা লাখনবী সম্পর্কে প্রচার করে যে, তিনি তারাবীহের নামায আট রাকাতের পক্ষে মত ব্যক্ত করেছেন। এটা সম্পূর্ণ বাজে কথা। কারণ মাজমুয়ায়ে ফতোয়া গ্রন্থে আল্লামা লাখনবী (রহ.) লিখেন, বুখারী শরীফে বর্ণিত হযরত আয়িশা (রাযি.)-এর হাদীস তাহাজ্জুদের নামায সম্পর্কে। আর এ ক্ষেত্রে রামাযান ও গায়রে রামাযান সমান।
সিহাহ সিত্তার কোন হাদীস দ্বারা তারাবীহের নামাযের রাকাআত সংখ্যা জানা যায় না। শুধু মুসলিম শরীফের এক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে হযরত আয়িশা (রাযি.) বলেন,
.
«كَانَ رَسُوْلُ اللهِ ^ يَجْتَهِدُ فِي الْعَشْرِ الْأَوَاخِرِ، مَا لَا يَجْتَهِدُ فِيْ غَيْرِهِ»
.
অর্থাৎ রাসূল (সা.) রামাযান মাসের শেষ দশদিন এত বেশী এবাদত করতেন যা অন্য সময় করতেন না।[১৮]
.
মুসান্নাফে ইবনে আবু শায়বা ও বায়হাকী শরীফে বর্ণিত হয়েছে,
.
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، «أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ كَانَ يُصَلِّيْ فِيْ رَمَضَانَ عِشْرِيْنَ رَكْعَةً»
.
‘হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাযি.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) রামাযান মাসে জামাআতের সাথে বিশ রাকাআত তারাবীহের নামায আদায় করেন।’[১৯]
.
সুনানে বায়হাকীতে সহীহ সনদে এসেছে,
.
عَنِ السَّائِبِ بْنِ يَزِيْدَ، قَالَ: «كَانُوْا يَقُوْمُوْنَ عَلَىٰ عَهْدِ عُمَرَ فِيْ شَهْرِ رَمَضَانَ بِعِشْرِيْنَ رَكْعَةً»
.
‘হযরত সায়িব ইবনে ইয়াযীদ (রাযি.) কর্তৃক বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, তারা রামাযান মাসে হযরত ওমর (রাযি.) এর যুগে বিশ রাকাআত তারাবীহ পড়তেন।’[২০]
.
অতএব প্রমাণ হল, আল্লামা লাখনবী (রহ.)ও তারাবীহের নামায বিশ রাকাআত হওয়ার পক্ষেই ছিলেন। এর পরেও আল্লামা লাখনবী (রহ.) ৮ রাকাআত তারাবীহের পক্ষে ছিলেন বলে মন্তব্য করা বোকামি ছাড়া আর কিছু নয়।
.
তারাবীহের রাকাআত সম্পর্কে আল্লামা আইনী (রহ.)-এর মত
হানাফী মাযহাবের ভাষ্যকার আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী (রহ.) সম্পর্কে বলা হচ্ছে, তিনি তারাবীহের নামায আট রাকাআত বলে মত ব্যক্ত করেছেন। অথচ তিনি বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ উমদাতুল কারী গ্রন্থে বলেন,
.
وَفِي «الْـمُغنِيْ» عَن عَليّ أَنَّهُ أَمَرَ رَجُلًا أَنْ يُصَلِّي بِهِمْ فِيْ رَمَضَان بِعشْرِيْنَ رَكْعَةً، قَالَ: وَهَذَا كَالْإِجْمَاعِ
.
অর্থাৎ আলমুগনী কিতাবে উল্লেখ রয়েছে, হযরত আলী (রাযি.) এক ব্যক্তিকে নির্দেশ দিলেন যে, সে যেন মুসুল্লীদেরকে নিয়ে বিশ রাকাআত তারাবীহ পড়ে। আল্লামা আইনী (রহ.) বলেন, তারাবীহ বিশ রাকাআত হওয়াটা ইজমার মতো।[২১]
.
অতএব বোঝা গেল আল্লামা আইনী (রহ.)-এর দৃষ্টিতেও তারাবীহের নামায বিশ রাকাআত।
.
শায়খুল হাদীস আল্লামা মুহাম্মদ যাকারিয়া (রহ.)-এর দৃষ্টিতে তারাবীহের রাকাআত সংখ্যা শায়খুল হাদীস আল্লামা জাকারিয়া (রহ.) আওজাযুল মাসালিক শরহে মুওয়াত্তা মালিক কিতাবে লিখেন,
.
ولا يمكن الإنكار عن ثبوته بفعل عمر وسكوت الصحابة علي ذلك وإجماعهم علي قبوله بمنزلة النص علي ان له اصلاً عندهم
.
‘একথা অনস্বীকার্য যে, তারাবীহের নামায বিশ রাকাআত হওয়াটা হযরত ওমর (রাযি.)-এর আমল দ্বারা প্রমাণিত এবং তখনকার সকল সাহাবায়ে কেরাম নিরবে-নির্দ্বিধায় গ্রহণ করা একথার প্রমাণ যে, তাদের কাছে অবশ্যই কোন দলীল ছিল।[২২]
.
আল্লামা যায়লায়ী (রহ.)-এর অভিমতঃ
.
আল্লামা যায়লায়ী (রহ.) হানাফী মাযহাবের ফিক্‌হ গ্রন্থ তাবয়ীনুল হাকায়িক শরহে কানযুদ দাকায়িক কিতাবে লিখেন, তারাবীহের নামায ২০ রাকাআত। দলীল হিসেবে তিনি ইমাম বায়হাকী কর্তৃক বর্ণিত সহীহ হাদীসটি বর্ণনা করেন। অতএব তিনি বলেন, তারাবীহের নামায বিশ রাকাআতের ওপর ইজমা সংঘটিত হয়েছে।[২৩]
.
এরপরেও আল্লামা যায়লায়ী সম্মর্কে একথা বলা যে, তিনি বিশ রাকাআতের হাদীস যয়ীফ বলেছেন, এটা সম্পূর্ণ অনর্থক কথা। মারাকিউল ফালাহ গ্রন্থের বর্ণনা
হানাফী মাযহাবের ফিকাহগ্রন্থ নুরুল ইযাহ কিতাবের ব্যাখ্যাগ্রন্থ মারাকিউল ফালাহে বলা হয়েছে,
.
وإنما ثبت العشرون بمواظبة الخلفاء الراشدين ما عدا الصديق رضي الله عنه
.
অর্থাৎ তারাবীহের নামায বিশ রাকাআত এটা আবু বকর (রাযি.) ব্যতীত খুলাফায়ে রাশিদার আমলের দ্বারা প্রমাণিত।[২৪]
.
মোটকথা,, যেসব হানাফী মুহাদ্দিসীনে কেরাম হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাযি.)-এর হাদীসটি যয়ীফ বলেছেন তারা সকলেই বিশ রাকাআত তারাবীহের পক্ষে হযরত সায়িব ইবনে ইয়াযীদ (রাযি.)-এর হাদীস দ্বারা দলীল পেশ করেছেন।
.
তথাকথিত আহলে হাদীস বন্ধুদেরকে বলবো, এ সকল মুহাদ্দিসবর্গের তাহকীকই যদি আপনাদের কাছে ভালো লাগে তাহলে তাদের তাহকীক পুরাটাই গ্রহণ করুন। যতটুকু আপনাদের স্বার্থ হাসিলের সহযোগী সেটুকুই গ্রহণ করবেন আর যা আপনাদের স্বার্থের পথে বাঁধা হবে তা গ্রহণ করবেন না এটা কেমন বিচার?
.
আল্লামা কামাল ইবনুল হুমাম হানাফী (রহ.)-এর অভিমতঃ
.
আল্লামা ইবনুল হুমাম হানাফী (রহ.) ফতহুল কদীর নামক গ্রন্থে বলেন, তারাবীহের নামায মোট ২০ রাকাআত। এর মধ্যে ৮ রাকাআত সুন্নাত বাকি ১২ রাকাআত মুস্তাহাব। তবে আল্লামা ইবনুল হুমামের এই তাহকীক কেউ গ্রহণ করেননি। বরং সকলেই প্রতিবাদ করেছেন। আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মিরী (রহ.) বলেন, আল্লামা ইবনুল হুমাম (রহ.) এমন কথা বলেছেন যা আর কেউ বলেনি, তাঁর একথা গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ রাসূল (সা.)-এর কথা বা কাজ যেমন সুন্নাত তদ্রুপ সাহাবায়ে কেরামের কাজও সুন্নাত। সেখানে রাসূলের সুন্নাতকে সুন্নাত বলা আর সাহাবাদের সুন্নাতকে মুস্তাহাব বলার কোনো অবকাশ নেই, এমনটি কেউ বলেননি। রাসূল (সা.) বলেন,
.
«فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِيْ وَسُنَّةِ الْـخُلَفَاءِ الرَّاشِدِيْنَ الْـمَهْدِيِّيْنَ»
.
‘তোমরা আমার সুন্নাত ও খুলাফায়ে রাশিদীনের সুন্নাতের অনুসরণ করবে।’[২৫]
.
এখানে রাসূল (সা.) খুলাফায়ে রাশিদীনের সুন্নাতকেও সুন্নাত বলেছেন। অতএব দু’য়ের মাঝে পার্থক্য করা যাবে না।[১৬]
.
আল্লামা ইবনে আবিদীন শামীও জোর প্রতিবাদ করেছেন।[২৭]
.
মুহাদ্দিস শায়খ ইবনে তাইমিয়া (রহ.)-এর দৃষ্টিতে বিশ রাকাআত তারাবীহ
বিশিষ্ট মুহাদ্দিস আল্লামা ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন,
.
فَإِنَّهُ قَدْ ثَبَتَ أَنَّ أُبَيْ بْنَ كَعْبٍ كَانَ يَقُوْمُ بِالنَّاسِ عِشْرِيْنَ رَكْعَةً فِيْ قِيَامِ رَمَضَانَ وَيُوتِرُ بِثَلَاثِ، فَرَأَىٰ كَثِيرٌ مِّنْ الْعُلَمَاءِ أَنَّ ذَلِكَ هُوَ السُّنَّةُ؛ لِأَنَّهُ أَقَامَهُ بَيْن الْـمُهَاجِرِيْنَ وَالْأَنْصَارِ وَلَـمْ يُنْكِرْهُ مُنْكِرٌ
.
‘সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে, হযরত উবাই ইবনে কাআব (রাযি.) মানুষদেরকে নিয়ে ২০ রাকাআত তারাবীহ ও তিন রাকাআত বিতির পড়তেন। অধিকাংশ ওলামায়ে কেরাম এটি সুন্নাত হিসেবে গ্রহণ করেছেন। কারণ হযরত উবাই ইবনেয কাআ’ব (রাযি.) সকল মুহাজির ও আনসার সাহাবীদের উপস্থিতিতেই ২০ রাকাআত তারাবীহ পড়েছেন। কোন সাহাবী তার প্রতিবাদ করেননি। অতএব এটা সুন্নাত হওয়ার প্রমাণ।[২৮]
.
শেষ কথাঃ
.
দীর্ঘ আলোচনার দ্বারা প্রমাণ হল, সহীহ-শুদ্ধ হাদীসের আলোকে তারাবীহের নামায বিশ রাকাআত। এটি সকল ওলামায়ে কেরাম গ্রহণ করেছেন। এমনকি অনেক আহলে হাদীস আলেমরাও স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন। যেমন আহলে হাদীসদের পক্ষ থেকে প্রকাশিত একটি লিফলেটে বলা হয়েছে, তারাবীহের নামায বিশ রাকাআত। ৮ রাকাআত সুন্নাত, ১২ রাকাআত মুস্তাহাব। এখানে তারা তাদের আত্মপূঁজার স্বার্থে যদিও বিশ রাকাআতকে ২ ভাগ করেছে, তবে একথা অবশ্যই প্রমাণ করলো যে, ২০ রাকাআত তারাবীহ সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। কারণ মুস্তাহাব তো হাদীস ছাড়া প্রমাণ হয় না।
বিশ রাকাআত তারাবীহ যখন হাদীস দ্বারা প্রমাণিত অতএব আসুন লিফলেটবাজি করে মানুষের মাঝে বিভক্তি সৃষ্টি না করে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বিশ রাকাআত তারাবীহ আদায় করে অধিক সাওয়াব অর্জন করি। ২০ রাকাআত বিদআত বলে গুনাহ কামাই থেকে বিরত থাকি। আল্লাহ তাআলা সকলকে তওফীক দান করুন। আমীন।
.
রেফারেন্সঃ
.
[১] ইবনে হাজর আল-আসকলানী, ফতহুল বারী শরহু সহীহ আল-বুখারী, দারুল মা’রিফা, বয়রুত, লেবনান (১৩৭৯ হি. = ১৯৫৯ খ্রি.), খ. ৪, পৃ. ২৫০
.
[২] আল-বায়হাকী, আস-সুনানুল কুবরা, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়া, বয়রুত, লেবনান, খ. ২, পৃ. ৬৯৯, হাদীস: ৪২৮৮
.
[৩] আল-বায়হাকী, প্রাগুক্ত, খ. ২, পৃ. ৬৯৯, হাদীস: ৪২৯০
.
[৪] আল-বায়হাকী, প্রাগুক্ত, খ. ২, পৃ. ৬৯৯, হাদীস: ৪২৯১
.
[৫] আল-কাশ্মীরী, আল-আরফুশ শাযী শরহু সুনানিত তিরমিযী, দারু ইয়াহইয়া আত-তুরাস আল-আরবি, বয়রুত, লেবনান (১৪২৫ হি. = ২০০৪ খ্রি.), খ. ২, পৃ. ২০৮
.
[৬] আশ-শা’রানী, আল-মিযান, খ. ১, পৃ. ২১৭
.
[৭] ইবনে তায়মিয়া, মজমূ‘উল ফাতাওয়া, বাদশাহ ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স, মদীনা শরীফ, সুউদি আরব, খ. ২৩, পৃ. ১১২
.
[৮] ইবনে কুদামা, আল-মুগনী, মাকতাবাতুল কাহিরা, কায়রো, মিসর, খ. ২, পৃ. ১২৩
.
[৯] মোল্লা আলী আল-কারী, মিরকাতুল মাফাতীহ শরহু মিশকাতিল মাসাবীহ, দারুল ফিকর, দামিস্ক, সিরিয়া, খ. ৩, পৃ. ৯৭৩
.
[১০] মুহাম্মদ যাকারিয়া আল-কান্ধলওয়ী, আওজাযুল মাসালিক ইলা মুওয়াত্তা মালিক, খ. ২, পৃ. ৫২৪
.
[১১] ইউসুফ আল-বান্নূরী, মাআরিফুস সুনান শরহু সুনানিত তিরমিযী, এইচ এম সাঈদ কোম্পানি, করাচি, পাকিস্তান (তৃতীয় সংস্করণ: ১৪১৩ হি. = ১৯৯২ খ্রি.), খ. ৫, পৃ. ৫৪৫
.
[১২] ইউসুফ আল-বান্নূরী, প্রাগুক্ত, খ. ৫, পৃ. ৫৪৬
.
[১৩] আবদুল হাই লাখনবী, যফরুল আমানী ফী মুখতসরিল জুরজানী, খ. ১, পৃ. ১৯৬
.
[১৪] ইউসুফ আল-বান্নূরী, মাআরিফুস সুনান শরহু সুনানিত তিরমিযী, খ. ২, পৃ. ২০৮-২০৯
.
[১৫] ইউসুফ আল-বান্নূরী, প্রাগুক্ত, খ. ২, পৃ. ২০৯
.
[১৬] ইবনে আবিদীন, রদ্দুল মুহতার আলাদ দুররিল মুখতার = হাশিয়াতু ইবনে আপবিদীন = ফতোয়ায়ে শামী, দারুল ফিকর, বয়রুত, লেবনান, খ. ২, পৃ. ৪৫
.
[১৭] ইবনে আবিদীন, প্রাগুক্ত, খ. ২, পৃ. ৪৫
.
[১৮] মুসলিম, আস-সহীহ, দারু ইয়াহইয়ায়িত তুরাস আল-আরবী, বয়রুত, লেবনান, খ. ২, পৃ. ৮৩২, হাদীস: ১১৭৫ (৮)
.
[১৯] (ক) ইবনে আবু শায়বা, আল-মুসান্নাফ ফীল আহাদীস ওয়াল আসার, মাকতাবাতুর রাশাদ, রিয়াদ, সুউদি আরব,
খ. ২, পৃ. ১৬৪, হাদীস: ৭৬৯২, (খ) আত-তাবারানী, আল-মু’জামুল কবীর, মাকতাবাতু ইবনে তায়মিয়া, কায়রো, মিসর, খ. ১১, পৃ. ৩৯৩, হাদীস: ১৬১০৬,
(গ) আত-তাবারানী, আল-মু’জামুল আওসাত, দারুল হারামইন, কায়রো, মিসর, খ. ১, পৃ. ২৪৩, হাদীস: ৭৮৯ ও খ. ৫, পৃ. ৩২৪, হাদীস: ৫৪৪০,
(ঘ) আবদ ইবনু হুমায়দ, আল-মুনতাখাব মিন মুসনদি আবদ ইবনি হুমায়দ, মাকতাবাতুস সুন্না, কায়রো, মিসর, পৃ. ২১৮, হাদীস: ৬৫৩
(ঙ) আল-বায়হাকী, প্রাগুক্ত, খ. ২, পৃ. ৬৯৮, হাদীস: ৪২৮৬
.
[২০] (ক) ইবনুল জা’দ, আল-মুসনদ, মুআস্সাসাতু নাদির, বয়রুত, লেবনান, পৃ. ৪১৩, হাদীস: ২৮২৫, (খ) আল-বায়হাকী, প্রাগুক্ত, খ. ২, পৃ. ৬৯৯, হাদীস: ৪২৮৮
.
[২১] বদরুদ্দীন আল-আইনী, উমদাতুল কারী শরহু সহীহিল বুখারী, দারু ইয়াহইয়ায়িত তুরাস আল-আরবি, বয়রুত, লেবনান, ক. ১৫, পৃ. ১৭৮
.
[২২] মুহাম্মদ যাকারিয়া আল-কান্ধলওয়ী, প্রাগুক্ত, খ. ২, পৃ. ৫৩৪
.
[২৩] আয-যায়লায়ী, তাবয়ীনুল হাকায়িক শরহু কনযিদ দাকায়িক, আল-মতবাআতুল কুবরা আল-আমীরিয়া বুলাক, কায়রো, মিসর (১৩১৩ হি. = ১৮৯৫), খ. ১, পৃ. ১৭৮
.
[২৪] আশ-শুররুমবুলালী, মারাকিউল ফালাহ শরহু নূরিল ঈযাহ, আল-মাকতাবাতুল মিসরিয়া, কায়রো, মিসর (প্রথম সংস্করণ: ১৪২৫ হি. = ২০০৫ খ্রি.), পৃ. ১৫৭
.
[২৫] আহমদ ইবনে হাম্বল, আল-মুসনদ, মুআসসিসাতুর রিসালা, বয়রুত, লেবনান, খ. ২৮, পৃ. ৩৭৩, হাদীস: ১৭১৪৪, হযরত ইরবায ইবনে সারিয়া ও থেকে বর্ণিত
.
[২৬] ইউসুফ আল-বান্নূরী, প্রাগুক্ত, খ. ২, পৃ. ২০৯
.
[২৭] ইবনে আবিদীন, প্রাগুক্ত, খ. ২, পৃ. ৪৫
.
[২৮] ইবনে তায়মিয়া, প্রাগুক্ত, খ. ২৩, পৃ. ১১২
.
.
তারাবীহ নামায বিশ রাকাতঃ একটি দলীলভিত্তিক পর্যালোচনা
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷
.
ভূমিকাঃ
———–
রাসূল সাঃ সাহাবায়ে কেরাম রা: তাবেয়ীন, তাবে তাবেয়ীগণ এবং মুজতাহিদ ইমামগণের আমল দ্বারা ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত যে, তারাবী নামায বিশ রাকাত।
.
কিন্তু ১২৮৪ হিজরীতে ভারতের আকবরাবাদ থেকে সর্বপ্রথম এক লা-মাযহাবী মৌলভী সাহেব আট রাকাত তারাবীর ফাতওয়া প্রদান করেন। এরপর ১২৮৫ হিজরীতে পাঞ্জাব সীমান্তে মাওলানা মুহাম্মদ হুসাইন বাটালবী আট রাকাত তারাবী নামায পড়া সুন্নত হওয়ার দাবি করেন।
.
কিন্তু কুরআন ও হাদীস সম্পর্কে তৎকালীন প্রাজ্ঞ হক্কানী উলামায়ে কেরাম উক্ত আট রাকাত তারাবীর ফাতওয়াকে ভুল হিসেবে প্রমাণিত করে তা প্রত্যাখ্যান করেন।
.
১৩৭৭ হিজরীতে আরবে শায়েখ নসীব রেফায়ী ও শায়েখ নাসীরুদ্দীন আলবানী রহ. সর্বপ্রথম আট রাকাত তারাবীর মত প্রকাশ করেন। তখন শায়েখ আতিয়্যা সালিমসহ আরবের জমহুর উলামায়ে কেরাম তাদের উক্ত রায়কে প্রত্যাখ্যান করেন এবং সাহাবায়ে কেরাম রা. এর যুগ থেকে চলে আসা হারামাইন শরীফাইন তথা বাইতুল্লাহ শরীফ ও মসজিদে নববীতে বিশ রাকাত তারাবীর আমলকে অব্যহত রাখেন। যা আজো অব্যাহত রয়েছে।
.
সুতরাং আট রাকাত তারাবী পড়ার মতকে অনুসরণের অর্থ হল, সাহাবা ও তাবেয়ীগণের অনুসৃত আমলকে প্রত্যাখ্যান করে নব্য সৃষ্ট বিদআতি দলের অনুসরণ করা।
.
তারাবীহ নামায বিশ রাকাতের প্রমাণ
———————————————————-
.

.
عن ابن عباس ان رسول الله صلى الله عليه وسلم كان يصلى فى رمضان عشرين ركعة والوتر
.
হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ রমজান মাসে বিশ রাকাত এবং বিতির পড়তেন। {মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-৫/২২৫, হাদীস নং- ৭৬৯২, মুসনাদে আব্দ বিন হুমাইদ-২১৮, আল মুজামুল কাবীর, হাদীস নং-১২১০২, মাজমাউজ যাওয়ায়েদ, হাদীস নং-১৭২, সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-৪৩৯১}
.

.
عن جابر بن عبد الله قال خرج النبى صلى الله عليه وسلم ذات ليلة فى رمضان فصلى الناس اربعة وعشرون ركعة واوتر بثلاثة
.
হযরত জাবের রাঃ বলেনঃ রমজান মাসের এক রাতে রাসূল সাঃ বাহিরে তাশরীফ নিয়ে এলেন। আর সাহাবায়ে কেরামকে ২৪ রাকাত [৪ রাকাত ঈশার, আর ২০ রাকাত তারাবীহের] নামায পড়ালেন। আর তিন রাকাত বিতির পড়ালেন। [তারীখে জুরজান-২৭}
.
যেহেতু কথিত আহলে হাদীস ভাইদের কাছে দলীল শুধু কুরআন ও সহীহ হাদীস। তথা আল্লাহ ও রাসূল সাঃ এর কথা। কোন ব্যক্তির মতামত তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। আর এ দু’টি হাদীসকে আল্লাহ এবং রাসূল সাঃ না সহীহ বলেছেন, না জঈফ বলেছেন। তাই গায়রে মুকাল্লিদরা এ দু’টি হাদীসকে না সহীহ বলতে পারবে, না জঈফ বলতে পারবে। এবার দেখার বিষয় হল, উম্মতের ঐক্যমত্বের আমল এর উপর আছে কি নেই? যদি দেখা যায় যে, উম্মতের আমল এর উপরই। তাহলে আমল হিসেবে গ্রহণযোগ্য হওয়ার দ্বারা উক্ত হাদীস সহীহ হয়ে যায়।
.
ওমর রাঃ এর আদেশ
———————————
.

عن يحيى بن سعيد ان عمر بن الخطاب امر رجلا يصلى بهم عشرين ركعة
.
হযরত ইয়াহইয়া বিন সাঈদ থেকে বর্ণিত। নিশ্চয় ওমর বিন খাত্তাব রাঃ এক ব্যক্তিকে বিশ রাকাত পড়ার হুকুম দিলেন। {মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-৫/২২৩}
.
হযরত ওমর রাঃ এর শাসনামল
————————————————–
.

.
وروى مالك من طريق يزيد بن خصيفة عن السائب بن يزيد عشرين ركعة
.
হযরত সায়েব বলেনঃ হযরত ওমর রাঃ এর সময়কালে বিশ রাকাত তারাবীহ ছিল। {ফাতহুল বারী-৪/৪৩৬} যার সনদ বুখারীতে দুই স্থানে আছে।
.

.
عن السائب بن يزيد ، قال : كنا نقوم في زمان عُمَر بن الخطاب رضي الله عنه بعشرين ركعة والوتر
.
হযরত সায়েব বিন ইয়াজিদ রাঃ বলেনঃ আমরা হযরত ওমর রাঃ এর শাসনামলে বিশ রাকাত তারাবীহ ও বিতির পড়তাম। {সুনানে সুগরা লিল বায়হাকী, হাদীস নং-৮৩৩, মারিফাতুস সুনান ওয়াল আসার, হাদীস নং-১৪৪৩}
.
ইমাম নববী রহঃ, সুবকী রহঃ [শরহুল মিনহাজ], মোল্লা আলী কারী রহঃ [শরহুল মুয়াত্তা] ও সুয়ুতী রহঃ এ বর্ণনাকে সহীহ বলেছেন।
.

.
محمد بن كعب القرظى كان الناس يصلون فى زمان عمر بن الخطاب فى رمضان عشرين ركعة ويوترون بثلاث
.
মুহাম্মদ বিন কাব কুরজী বলেনঃ ওমর ফারুক রাঃ এর শাসনামলে লোকেরা রমজান মাসে বিশ রাকাত তারাবীহ ও তিন রাকাত বিতির পড়তো। [মুসাান্নাফ ইবনে আবী শাইবা-৫/২২৩]
.

.
عن يزيد بن رومان ، أنه قال : « كان الناس يقومون في زمان عمر بن الخطاب في رمضان بثلاث وعشرين ركعة »
.
হযরত ইয়াজিদ বিন রূমান বলেনঃ লোকেরা হযরত ওমর রাঃ এর শাসনামলে বিশ রাকাত তারাবীহ এবং তিন রাকাত বিতির রমজান মাসে আদায় করতো। {মারিফাতুস সুনান ওয়াল আসার, হাদীস নং-১৪৪৩, মুয়াত্তা মালিক, হাদীস নং-৩৮০, সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-৪৩৯৪}
.

.
عن الحسن ان عمر بن الخطاب جمع الناس على ابى بن كعب فكان يصلى بهم عشرين ركعة
.
হযরত হাসান রাঃ থেকে বর্ণিত। হযরত ওমর রাঃ লোকদেরকে হযরত উবায় বিন কাব রাঃ এর কাছে একত্র করে দিলেন। আর তিনি লোকদের বিশ রাকাত তারাবীহ পড়াতেন। {সুনানে আবু দাউদ-১/২০২, সিয়ারু আলামিন নুবালা-১/৪০০}
.

.
عن ابى بن كعب ان عمر بن الخطاب امره ان يصلى باليل فى رمضان فصلى بهم عشرين ركعة
.
হযরত উবায় বিন কাব রাঃ বলেনঃ হযরত ওমর রাঃ আমাকে এই মর্মে আদেশ দিলেন যে, আমি যেন লোকদেরকে তারাবীহ পড়াই। তখন বিশ রাকাত পড়া হতো। {কানযুল উম্মাল-৮/২৬৪}
.
ইমাম বায়হাকী, আল্লামা বাজী, কাশতাল্লানী, ইবনে কুদামা, ইবনে হাজার মক্কী, তাহতাবী, ইবনে হুমাম, বাহরুর রায়েক প্রণেতা রহঃ প্রমুখগণ এ ব্যাপারে একমত হয়ে বলেনঃ হযরত ওমর ফরুক রাঃ এর শাসনামলে বিশ রাকাত তারাবীহের উপরই সকলের সিদ্ধান্ত স্থির হয়। এবং এভাবেই চলতে থাকে। ইংরেজ আমলের পূর্বে কোন একজন মুহাদ্দিস বা ফক্বীহ এটাকে অস্বিকার করেননি। আর সুন্নত হওয়ার জন্য সেটির নিরবচ্ছিন্ন হওয়া শর্ত। তাই এই বিশ রাকাত তারাবীহ সুন্নতে ফারূকী হয়েছে। এ সেই ওমর রাঃ, যার ব্যাপারে রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন যে, যদি আমার পর কোন নবী হতো তাহলে নবী হতো ওমর। তিনি আরো বলেছেনঃ দ্বীনের ব্যাপারে সবচে’ মজবুত হলেন ওমর রাঃ। যদি বিশ রাকাত তারাবীহ নামায বিদআত হয়, তাহলে হযরত ওমর রাঃ সহ সে সময়কার সমস্ত আনসার ও মুহাজির সাহাবীগণের বিদআতি হওয়ার আবশ্যক হয়। ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহঃ বলেনঃ উবাই বিন কাব রাঃ তারাবীহ মুহাজির ও আনসার সাহাবীদের মাঝে পড়াতেন। কোন একজনও এ ব্যাপারে আপত্তি উত্থাপন করেনি। {মাজমুআ ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়া-৩৩/১১২}
.
হযরত উসমান রাঃ এর শাসনামল
————————————————
.
১০
.
হযরত সায়েব বিন ইয়াজিদ বলেনঃ হযরত ওমর রাঃ এর শাসনামলে লোকেরা বিশ রাকাত তারাবীহ পড়তেন। আর হযরত উসমান রাঃ এর শাসনামলে লম্বা কেরাতের কারণে লাঠির উপর ভর দিতেন। {বায়হাকী-৪/২৯৬}
.
হযরত উসমান রাঃ এর শাসনামলের একজন ব্যক্তির নামও বলা যাবে না, যে ব্যক্তি আট রাকাত পড়ে জামাত থেকে বেরিয়ে যেত। কিংবা কেউ বিশ রাকাত তারাবীহকে বিদআত বলেছে এমন একজন ব্যক্তিও পাওয়া যাবে না।
.
আলী রাঃ এর শাসনামল
——————————————-
.
১১
.
عن ابى عبد الرحمن السلمى عن على قال دعى القراء فى رمضان فامر منهم رجلا يصلى بالناس عشرين ركعة قال وكان على يوتر بهم
.
হযরত আবু আব্দুর রহমান সুলামী বলেনঃ হযরত হযরত আলী রাঃ রমজান মাসে কারীদের ডাকতেন। তারপর তাদের মাঝে একজনকে বিশ রাকাত তারাবীহ পড়াতে হুকুম দিতেন। আর বিতিরের জামাত হযরত আলী নিজেই পড়াতেন। {বায়হাকী-৪/৪৯৬}
.
عن ابى الحسناء ان عليا امر رجلا ان يصلى بالناس خمس ترويحات عشرين ركعة
.
হযরত আবুল হাসনা বলেনঃ হযরত আলী রাঃ এক ব্যক্তিকে পাঁচ তারাবীহ এর সাথে বিশ রাকাত পড়াতে হুকুম দিয়েছেন। {সুনানে কুবরা লিলবায়হাকী, হাদীস নং-৪৮০৫, ৪৩৯৭, কানযুল উম্মাল, হাদীস নং-২৩৪৭৪}
.
হযরত আলী রাঃ নিজেই রাসূল সাঃ থেকে বর্ণনা করেন যে, যে ব্যক্তি বিদআতের উৎপত্তি করবে তার ফরজ, নফল কিছুই কবুল হয় না। {বুখারী-২/১০৮৪, মুসলিম-১/১৪৪}
.
হযরত আলী রাঃ আজানের পর ইশার নামাযের জন্য আবার ডাকতে শুনে বললেনঃ এ বেদআতিকে মসজিদ থেকে বের করে দাও। {বাহরুর রায়েক}
.
তিনি এক ব্যক্তিকে ঈদগাহে ঈদের নামাযের আগে নফল পড়তে দেখে খুবই ধমক দিলেন লোকটিকে। যদি বিশ রাকাত তারাবীহ বিদআত হতো, তাহলে এর হুকুম কেন দিলেন তিনি?
.
ইংরেজ শাসনের আগে একজন মুহাদ্দিস বা ফক্বীহের নাম বলা যাবে না, যারা আলী রাঃ এর শাসনামলের বিশ রাকাত তারাবীহ পড়াকে অস্বিকার করেছেন। কোন ব্যক্তি সেই জমানার একজন ব্যক্তির নামও বলতে পারবে না, যে ব্যক্তি আট রাকাত তারাবীহ পড়ে মসজিদ থেকে বেরিয়ে যেত। এটাও মনে রাখতে হবে যে, এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হল যে, বিশ রাকাতওয়ালী নামাযের নাম তারাবীহ হযরত আলী রাঃ বর্ণনা করেছেন। কোন খলীফায়ে রাশেদ বা কোন সাহাবী আট রাকাতের সাথে তারাবীহ শব্দ উচ্চারণ করেননি। হাদীস ভান্ডারে এর কোন প্রমাণ নেই।
.
১৩
.
عن زيد بن وهب قال كان عبد الله يصلي بنا في شهر رمضان فينصرف وعليه ليل قال الا  عمش كان يصلى عشرين ركعة ويوتر بثلث
.
হযরত জায়েদ বিন ওহাব বলেনঃ হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাঃ আমাদের তারাবীহ পড়িয়ে ফারিগ হতেন এমতাবস্থায় যে, তখনো রাত অনেক বাকি থাকতো, ইমাম আমাশ বলেনঃ তিনি বিশ রাকাত তারাবীহ আর তিন রাকাত বিতির পড়াতেন। {কিয়ামুল লাইল-১৫৭}
.
হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাঃ খোদ বলেছেন যে, সুন্নত ছেড়ে দেয়া উত্তম বেদআতের উপর মেহনত করার চেয়ে। {হাকেম-১/১,৩} যদি বিশ রাকাত তারাবীহ বিদআত হতো, তাহলে তিনি কেন পড়ালেন?
.
জমহুর সাহাবাগণ রাঃ
———————————–
.
১৪
.
ابو حنيفة عن حماد عن ابراهيم ان الناس كانوا يصلون خمس ترويحات فى رمضان
.
হযরত ইমাম আবু হানীফা রহঃ, হযরত ইবরাহীম [মৃত্যু-৯৬হিজরী] থেকে বর্ণনা করেন যে, নিশ্চয় লোকেরা [সাহাবী ও তাবেয়ীগণ] রমজান মাসে পাঁচ তারবীহার সাথে বিশ রাকাত তারাবীহ পড়তো। {কিতাবুল আসার লিআবী ইউসুফ}
.
১৫
.
عن عبد العزيز بن رفيع قال كان ابى بن كعب يصلى بالناس فى رمضان بالمدينة عشرين ركعة ويوتر بثلاثة
.
হযরত আব্দুল আজীজ বিন রফী থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ হযরত উবায় বিন কাব রাঃ লোকদেরকে রমজান মাসে মদীনা মুনাওয়ারায় বিশ রাকাত তারাবীহ এবং তিন রাকাত বিতির নামায পড়াতেন। {মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা-৫/২২৪}
.
১৬
.
عن عطاء قال ادركت الناس وهم يصلون ثلثة وعشرون ركعة بالوتر
.
হযরত আতা [মৃত্যু-১১৪হিজরী] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি লোকদের [সাহাবী ও তাবেয়ীগণ] বিশ রাকাত তারাবীহ এবং তিন রাকাত বিতির পড়তে দেখেছি। {মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা-৫/২২৪}
.
তাবেয়ীগণ রহঃ
——————————
.
হযরত সুয়াইদ বিন গাফালা যিনি বয়সে রাসূল সাঃ থেকে মাত্র তিন বছরের ছোট ছিলেন। তিনি ইমামতি করাতেন। হযরত আবুল হাজীব বলেনঃ
.
১৭
.
كان يؤمنا سويد بن غفلة فى رمضان فيصلى خمس ترويحات عشرين ركعة
.
হযরত সুইয়াইদ বিন গাফালা রমজান মাসে আমাদের জামাতের সাথে পাঁচ তারবিহায় বিশ রাকাত নামায পড়াতেন। {বায়হাকী-২/৪৯}
.
১৮
.
عن ابى البخترى انه كان يصلى خمس ترويحات فى رمضان ويوتر بثلاث
.
হযরত আবুল বুখতারী রহঃ বলেনঃ তিনি রমজানে পাঁচ তারবিহায় বিশ রাকাত ও তিন রাকাত বিতির পড়তেন। {মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-৭৬৮৬}
.
১৯
.
عن سعيد بن ابى عبيد ان على بن ربيعة كان يصلى بهم فى رمضان خمس ترويحات ويوتر بثلاث
.
হযরত সাঈদ বিন আবু উবায়েদ থেকে বর্ণিত। হযরত আলী বিন রাবীয়া পাঁচ তারবিহা তথা বিশ রাকাত তারাবীহ এবং তিন রাকাত বিতির জামাতের সাথে পড়তেন। {মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা-৫/২২৫}
.
এ সকল হাদীস দ্বারা বুঝা যায় যে, বিশ রাকাতের সাথে তারাবীহ শব্দ এবং বিশ রাকাত তারাবীহের আমল তাবেয়ীগণের মাঝে বিনা প্রতিবাদে নির্বিঘেœ প্রচলিত ছিল। আর পুরো খাইরুল কুরুনে কোন এক ব্যক্তির নাম উল্লেখ করা যাবে না, যে ব্যক্তি বিশ রাকাত তারাবীহকে অস্বিকার করেছেন বা অপছন্দ করেছেন। কিংবা বিশ রাকাত তারাবীহকে বিদআত বলেছেন, বা আট রাকাত জামাতের সাথে পড়ে মসজিদ থেকে বেরিয়ে গেছেন। পুরো খাইরুল কুরুনের মাঝে আট রাকাতের সাথে তারাবীহ শব্দ ব্যবহার করেছেন এরকম কোন প্রমাণ কোথাও বিদ্যমান নেই।
.
মসজিদে নববীতে বিশ রাকাত তারাবীহ
———————————————————
.
মদীনা তায়্যিবাহর মাঝে হযরত ওমর রাঃ, হযরত উসমান রাঃ, হযরত আলী রাঃ এর শাসনামলে বিশ রাকাত তারাবীহই পড়া হতো। আজো মদীনা মুনাওয়ারায় বিশ রাকাত তারবীহই পড়া হয়। হযরত আয়শা রাঃ ও মদীনা মুনাওয়ারায় অবস্থান করতেন। তিনিই রাসূল সাঃ এর এ ফরমান বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমার দ্বীনের মাঝে বেদআত বের করবে, তার কাজটি পরিত্যাজ্য। যদি বিশ রাকাত তারাবীহের নামায বিদআত ও নাজায়েজ হতো, তাহলে হযরত আয়শা রাঃ বছরের পর বছর এর উপর চুপ করে বসে থাকতেন না।
.
হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ রাঃ ও মদীনায় অবস্থান করছিলেন। তিনি ঐ হাদীসের রাবী। যাতে বলা হয়েছে যে, প্রত্যেকটি বিদআত গোমরাহী আর প্রত্যেক গোমরাহী জাহান্নামে নিক্ষেপকারী।
.
অথচ তারই সামনে অর্থ শতাব্দী পর্যন্ত মসজিদে নববীতে বিশ রাকাত তারাবীহ জামাতের সাথে পড়া হচ্ছিল, অথচ তিনি এর বিরুদ্ধে কোন কথা বলেন নি। এটা হতে পারে না।
.
বাইতুল্লাহ শরীফে বিশ রাকাত তারাবীহ
———————————————————
.
মক্কা মুকাররমায় হযরত আতা বিন আবী রাবাহ রহঃ [মৃত্যু ১১৪হিজরী] বলেনঃ ادركت الناس وهم يصلون ثلاثة وعشرون ركعة بالوتر তথা আমি লোকদের [সাহাবা ও তাবেয়ীগণ] বেতের নামাযসহ ২৩ রাকাত পড়তে দেখেছি। {মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা-২/৩৯৩}
.
আর ইমাম ইবনে আবী মালিকাহ [মৃত্যু ১১৭হিজরী] লোকদের মক্কায় বিশ রাকাত তারাবীহ পড়াতেন। {মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা-২/৩৯৩}
.
ইমাম শাফেয়ী রহঃ [মৃত্যু ২০৪হিজরী] বলেনঃ আমি স্বীয় শহর মক্কায় লোকদের বিশ রাকাত তারাবীহ পড়া অবস্থায়ই পেয়েছি। {তিরমিজী-১/১৬৬}
.
আর আজ পর্যন্ত মক্কা মুকাররমায় বিশ রাকাত তারাবীহই পড়া হচ্ছে।
.
কুফায় বিশ রাকাত তারাবীহ
——————————————–
.
কুফায় হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাঃ বিশ রাকাত তারাবীহ এবং তিন রাকাত বিতির পড়াতেন। {মুখতাসার কিয়ামুল লাইল-১৫৭}
.
ইমাম ইবরাহীম নাখয়ী রহঃ [মৃত্যু-৯৬হিজরী] বলেনঃ লোকেরা [সাহাবীগণ ও তাবেয়ীগণ] রমজান মাসে পাঁচ তারাবীহ [বিশ রাকাত] পড়তেন। {কিতাবুল আসার লিআবী ইউসুফ-৪১}
.
বসরায় বিশ রাকাত তারাবীহ
——————————————–
.
হযরত ইউনুস রহঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি আবুল আশআস [মৃত্যু ৮৩হিজরী] এর ফেতনার পূর্বে জামে মসজিদ বসরাতে দেখেছি যে, হযুরত আব্দুর রহমান বিন আবী বাকরা [মৃত্যু ৯১হিজরী] হযরত সাঈদ বিন আবীল হাসান [মৃত্যু ১০০হিজরী] এবং হযরত ইমরানুল আব্দী লোকদের পাঁচ তারাবীহ [বিশ রাকাত] পড়াতেন। {কিয়ামূল লাইল-১৫৮}
.
মোটকথা, পুরো খাইরুল কুরুনের মাঝে বিশ রাকাত তারাবীহকে অস্বিকারকারী একজনও ছিল না। কোন ইসলামী রাজত্বে এটাকে অস্বিকার করা হয়নি। এটাকে অস্বিকার করে সর্ব প্রথম ইংরেজরা উপমহাদেশে আসার পর কতিপয় নামধারী আহলে হাদীস গায়রে মুকাল্লিদ গ্রুপ।
.
চার ইমাম রহঃ এর বক্তব্য
———————————————
.
শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দেসে দেহলবী রহঃ বলেনঃ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত চার মাযহাবে সীমাবদ্ধ। এ চার ইমামের মাঝে প্রথম ইমাম হলেন ইমাম আবু হানীফা রহঃ [মৃত্যু ১৫০ হিজরী] ও বিশ রাকাত তারাবীহের প্রবক্তা। [ফাতাওয়া কাজীখান-১/১১২} ইমাম মালিক রহঃ এর একটি বক্তব্য বিশ রাকাতের পক্ষে, দ্বিতীয় বক্তব্য ৩৬ রাকাতের পক্ষে। [যাতে বিশ তারাবীহ আর ১৬ রাকাত নফল]  হেদায়াতুল মুজতাহিদ-১/১৬৭}
.
ইমাম শাফেয়ী রহঃ বিশ রাকাতের প্রবক্তা। {আলমুগনী-২/১৬৭}
.
ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহঃ এর মুখতার বক্তব্যও বিশ রাকাতের পক্ষে। [আলমুগনী-২/১৬৭}
.
চার মাযহাবের ফিক্বহের ইবারতের মাঝে কোন একটি ইবারতেও শুধু আট রাকাত তারাবীহকে সুন্নত আর বিশ রাকাততে বিদআত বলা হয়নি।
.
সাহাবাগণের নিরবচ্ছিন্ন আমল ও ইজমার আলোকে
———————————————————————————-
.
তারাবীহ নামায বিশ রাকাত। সাহাবায়ে কেরাম রাঃ থেকে এ আমলই সারা পৃথিবীতে চালু হয়েছে। যা আজো সারা পৃথিবীতে আমল হয়ে আসছে। নব্য ফিতনা কতিপয় আহলে হাদীস নামধারী ছাড়া মসজিদে নববী এবং বাইতুল্লাহসহ সারা পৃথিবীতে তা সকল মুসলমাগণ আমল করে আসছেন।
.
এ ব্যাপারে সাহাবায়ে কেরামের মাঝে আমলী ইজমা হয়েছিল।
.
ইবনে কুদামা হাম্বলী রহঃ [মৃত্যু ৫৯৫ হিজরী] আলমুগনী গ্রন্থের ২য় খন্ডের ১৬৭ নং পৃষ্ঠায়, আল্লামা কাশতাল্লানী শাফেয়ী রহঃ [মৃত্যু ৯২৩ হিজরী] “ইরশাদুস সারী” এর ৩য় খন্ডের ৫১৫ নং পৃষ্ঠায় বিশ রাকাতের উপর সাহাবাগণের ইজমার কথা উল্লেখ করেছেন।
.
মোল্লা আলী কারী হানাফী রহঃ [মৃত্যু ১০১৪হিজরী] “শরহুন নুকায়া” এর ২য় খন্ডের ২৪১ পৃষ্ঠায় এবং আল্লামা সাইয়্যেদ মুরতাজা জুবাইদী [মৃত্যু-১২০৫ হিজরী] সাহেব “ইতহাফুল সাদাতুল মুত্তাকীন” কিতাবের ৩য় খন্ডের ৭০০ নং পৃষ্ঠায় সাহাবাগণের এ ইজমাকে নকল করেছেন।
.
উম্মতে মুসলিমার ইজমা
—————————————-
.
১২৮৪ হিজরীর ইংরেজ আমলের আগে পৃথিবীর কোন মসজিদে রমজানের পুরো মাস মসজিদে আট রাকাত তারাবীহ জামাতের সাথে পড়ার কোন নজীর নেই। একটি মসজিদের নাম কোন কথিত আহলে হাদীস দেখাতে পারবে না। না মসজিদে নববীতে কোনদিন আট রাকাত তারাবীহ পড়া হয়েছে। না বাইতুল্লায়। না পৃথিবীর কোন মুসলিম পল্লিতে। রানী ভিক্টোরিয়ার আমলে সর্বপ্রথম এ বিদআতের সূচনা হয়।
.
এর আগে সমগ্র উম্মতে মুসলিমা ঐক্যমত্বের ভিত্তিতে ২০ রাকাত ও এর চেয়ে তারাবীহ পড়ে আসছেন। দেখুন-
.
১-   মিরকাত-৩/১৯৪।
.
২-   ইতহাফুল সাদাতিল মুত্তাকীন-৩/৪২২।
.
৩-  আনারাতুল মাসাবীহ-১৮।
.
৪-   হাশিয়ায়ে শরহে বেকায়া মাওলানা আব্দুল হাই লৌক্ষèবী রহঃ।
.
৫-   উমদাতুল কারী-৫/২৬৭।
.
৬-  ফাতাওয়ায়ে কাজীখান-১১০।
.
৭-   আলমুগনী-১/৮০৩।
.
৮-  শরহে মুকান্না’-১/৮৫২।
.
৯-   শরহুল বুখারী লিলকাসতাল্লানী।
.
১০-  আওযাজুল মাসালেক-১/৩৯০।
.
১১-  শরহে নুকায়া-১০৪।
.
১২-  আউনুল বারী-২/৩০৭।
.
১৩- কিতাবুল আজকার-৮৩।
.
১৪-  ফাতহুল কাদীর-১/৪০৭।
.
১৫-  আরফুশ শাজী-২৩০।
.
১৬- আলবাহরুর রায়েক-২/৬৬।
.
১৭-  ফাতাওয়ায়ে শামী-১/৫১১।
.
১৮- বাদায়েউস সানায়ে-১/২৮৮।
.
১৯-  আলমাসাবীহ-১৬।
.
২০-  হালবী শরহে মুনিয়্যা-৩৮৮।
.

৮ রাকাত তারবীহের কোন প্রমাণ সহীহ হাদীস নেই
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷
.
৮ রাকাত তারাবীহের পক্ষে গায়রে মুকাল্লিদদের দলিলসমূহ
.
১নং দলিল
.
عن أبي سلمة بن عبد الرحمن أنه أخبره : أنه سأل عائشة رضي الله عنها كيف كانت صلاة رسول الله صلى الله عليه و سلم في رمضان ؟ فقالت ما كان رسول الله صلى الله عليه و سلم يزيد في رمضان ولا في غيره على إحدى عشرة ركعة يصلي أربعا فلا تسل عن حسنهن وطولهن ثم يصلي أربعا فلا تسل عن حسنهن وطولهن ثم يصلي ثلاثا . قالت عائشة فقلت يارسول الله أتنام قبل أن توتر ؟ . فقال يا عائشة إن عيني تنامان ولا ينام قلبي  (صحيح البخارى- أبواب التهجد، باب قيام النبي صلى الله عليه و سلم بالليل في رمضان وغيره1/154
.
হযরত আবু সালমা বিন আব্দুর রহমান  থেকে বর্ণিত তিনি আয়েশা রাঃ এর কাছে জানতে চান নবীজী সাঃ এর নামায কেমন হত রামাযান মাসে? তিনি বললেন-রাসূল সাঃ রামাযান ও রামাযান ছাড়া ১১ রাকাত থেকে বাড়াতেন না। তিনি ৪ রাকাত পড়তেন তুমি এর সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে জানতে চেওনা। তারপর পড়তেন ৪ রাকাত তুমি এর সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা বিষয়ে জানতে চেওনা, তারপর পড়তেন ৩ রাকাত। হযরত আয়েশা রাঃ বলেন-তখন আমি বললাম-হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি বিতর পড়ার পূর্বে শুয়ে যান? তিনি বললেন-হে আয়েশা! নিশ্চয় আমার দু’চোখ ঘুমায় আমার কলব ঘুমায়না। (সহীহ বুখারী-১/১৫৪)
.
জবাব
.
১-
.
এই হাদিসে ইযতিরাব তথা অস্পষ্টতা ও পরস্পর বিরোধিতা থাকায় এ দিয়ে দলিল দেয়া ঠিক নয়। আল্লামা কুরতুবী রহঃ বলেন-আমি আয়েশা রাঃ এর এই বর্ণনাটি অনেক আহলে ইলমদের কাছে জিজ্ঞাসা করেছি অনেকেই এতে অস্পষ্টতা ও পরস্পর বিরোধিতা আছে বলে মত প্রকাশ করেছেন। (ফাতহুল বারী শরুহুল বুখারী-৩/১৭)
.
২-
.
খোদ হযরত আয়েশা রাঃ থেকে ১৩ রাকাত তারাবীহের কথা সহীহ সনদে বর্ণিত আছে। সুতরাং হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী অস্পষ্টতা ও পরস্পর বিরোধিতা দূর করতে এই পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন-“সঠিক কথা হল এ ব্যাপারে আমি যা উল্লেখ করেছি এগুলো সব ভিন্ন সময় ও ভিন্ন পরিস্থিতির উপর নির্ভরশীল” অর্থাৎ নবীজী একেক সময় একেক রাকাত নামায পড়েছেন তারাবীহের ক্ষেত্রে।(ফাতহুল বারী-৩/১৭)
.
এর মাধ্যমে কথিত আহলে হাদিসদের “৮ রাকাতের মাঝেই তারাবীহ নামায সীমাবদ্ধ এরচে’ বেশী তারাবীহ নামায নেই” এই দাবিটি বাতিল হয়ে যাচ্ছে। খোদ আহলে হাদিসদের আলেম মাওলানা আব্দুর রহমান মুবারকপুরী বলেন-নিশ্চয় একথা প্রমাণিত যে রাসূল সাঃ ১৩ রাকাত তারাবীহ পড়েছেন ফজরের দু’রাকাত সুন্নত ছাড়াই।(তুহফাতুল আহওয়াজী-২/৩)
.
৩-
.
এই হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হল নবীজী সাঃ এক সালামে ৪, ৪ রাকাত করে তারাবীহ আর শেষে এক সালামে ৩ রাকাত বিতর পড়েছেন, অথচ কথিত আহলে হাদিসদের আমল এর বিপরীত। তারা তারাবীহ দুই দুই রাকাত করে পড়েন। আর বিতর এক রাকাত বা তিন রাকাত দুই সালামে পড়েন। সুতরাং যেই হাদিস দলিলদাতাদের কাছে আমলহীন এর দ্বারা দলিল দেয়া যায়?
.
৪-
.
আসল কথা হল এই যে, এই হাদিসটি তাহাজ্জুদ নামাযের সাথে সংশ্লিষ্ট। এতে তারাবীহের কথা বর্ণিত নয়। নিম্নে এ ব্যাপারে কিছু প্রমাণ উপস্থাপন করা হল।
.
হাদিসটিতে মূলত তাহাজ্জুদের বর্ণনা এসেছে একথার দলিল
.
১-
.
হাদিসের শব্দ ما كان رسول الله صلى الله عليه و سلم يزيد في رمضان ولا في غيره (নবীজী সাঃ রামাযান ও রামাযান ছাড়া অন্য সময় বাড়াননা) এটাই বুঝাচ্ছে যে, প্রশ্নটি করা হয়েছিল রামাযান ছাড়া অন্য সময়ে যে নামায নবীজী পড়তেন তা রামযানে বাড়িয়ে দিতেন কিনা? এই প্রশ্নটি এজন্য করা হয়েছে যেহেতো বিভিন্ন বর্ণনায় এসেছে রাসূল সাঃ রামাযানে আগের তুলনায় অনেক নামায পড়তেন ও ইবাদত করতেন, তাই এই প্রশ্নটি করাটা ছিল স্বাভাবিক। আর রামযান ছাড়া কি তারাবীহ আছে? যে রামাযানের আগেই তারাবীহ আর বিতর মিলিয়ে ১৩ রাকাত নবীজী পড়তেন? নাকি ওটা তাহাজ্জুদ? তাহাজ্জুদ হওয়াটাই কি সঙ্গত নয়? সুতরাং এটাই স্পষ্ট বুঝা যায় তারাবীহ নয় প্রশ্ন করা হয়েছে তাহাজ্জুদ নিয়ে যে, নবীজী তাহাজ্জুদের নামায রামাযান ছাড়া যে ক’রাকাত পড়তেন তা থেকে রামাযানে বাড়িয়ে পড়তেন কিনা? এর জবাবে আয়েশা রাঃ বললেন-১৩ রাকাত থেকে বাড়াতেননা তাহাজ্জুদ নামায।
.
২-
.
এই হাদিসের শেষাংশে এই শব্দ আছে যে قالت عائشة فقلت يارسول الله أتنام قبل أن توتر ؟ (তারপর আয়েশা রাঃ বললেন-হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি বিতর পড়ার আগে ঘুমান?) এই বিষয়টি তারাবীহ এর ক্ষেত্রে কল্পনাতীত যে নবীজী সাঃ তারাবীহ নামায পড়ে ঘুমিয়ে পড়েন আর সাহাবীরা বিতর পড়ার জন্য নবীর জন্য অপেক্ষমাণ থাকেন। বরং এটি তাহাজ্জুদ এর ক্ষেত্রে হওয়াটাই যুক্তিসঙ্গত নয়কি?
.
৩-
.
মুহাদ্দিসীনে কিরাম এই হাদিসকে তারাবীহ এর অধ্যায়ে উল্লেখ করেননি। বরং তাহাজ্জুদ অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন। ইমাম মুহাম্মদ বিন নসর মারওয়াজী তার কিতাব “কিয়ামুল লাইল” এর  “عدد الركعات التى يقوم بها الامام للناس فى رمضان”(রামযানে ইমাম কত রাকাত তারাবীহ পড়বে) অধ্যায়ে অনেক হাদিস আনলেও আয়েশা রাঃ থেকে বর্ণিত এই হাদিসটি সহীহ হওয়া সত্বেও তিনি আনেননি। সাথে এদিকে কোন ইশারাও করেননি।
.
৪-
.
মুহাদ্দিসীনে কিরাম এই হাদিসকে তারাবীহ এর রাকাত সংখ্যার অধ্যায়ের পরিবর্তে তাহাজ্জুদের অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন। যেমন ইমাম বুখারী রহঃ তার প্রণিত বুখারী শরীফে এই হাদিসটি নিম্ন বর্ণিত অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন-
.
(ক) বিতর অধ্যায়-(১/১৩৫)
.
(খ) নবীজী সাঃ এর রাতে (নামাযের উদ্দেশ্যে) দান্ডয়মানতা রামযানে ও রামযান ছাড়া-(১/১৫৪)
.
(গ) রামযানে (নামাযের উদ্দেশ্যে) দান্ডয়মানতার ফযীলত অধ্যায়-(১/২৬৯)
.
(ঘ) নবীজী সাঃ এর দু’চোখ ঘুমায় মন ঘুমায়না-(১/৫০৩)
.
প্রথম অধ্যায়ে বিতরের রাকাত সংখ্যা আর দ্বিতীয় অধ্যায়ে তাহাজ্জুদ রামাযানে বেশি পড়তেন কিনা তা জানা আর তৃতীয় অধ্যায়ে রামাযানে বেশি বেশি নামাযের ফযীলত আর চতুর্থ অধ্যায়ে নবীজী ঘুমালে যে তার অযু ভাঙ্গেনা তার কারণ বর্ণনা জন্য হাদিস আনা হয়েছে। তারাবীহের রাকাত সংখ্যা বুঝানোর জন্য কোথায় এসেছে এই হাদিস?
.
৫-
.
আল্লামা হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী এই হাদিসের ব্যাক্ষায় বলেন-আর আমার কাছে এটি প্রকাশিত হয়েছে যে, ১১ রাকাতের থেকে না বাড়ানোর রহস্য এটি যে, নিশ্চয় তাহাজ্জুদ ও বিতরের নামায রাতের নামাযের সাথে খাস। আর দিনের ফরয যোহর ৪ রাকাত আর আসর সেটাও ৪ রাকাত আর মাগরীব হল ৩ রাকাত যা দিনের বিতর। সুতরাং সাযুজ্যতা হল-রাতের নামায দিনের নামাযরের মতই সংখ্যার দিক থেকে সংক্ষিপ্ত ও বিস্তারিতভাবে। আর ১৩ রাকাতের ক্ষেত্রে সাযুজ্যতা হল-ফযরের নামায মিলানোর মাধ্যমে কেননা এটি দিনের নামাযই তার পরবর্তী নামাযের জন্য।(ফাতহুল বারী শরহুল বুখারী-৩/১৭)
.
ইবনে হাজার রহঃ এর এই রহস্য বা হিকমত বর্ণনা কি বলছেনা এই হাদিস দ্বারা তাহাজ্জুদ উদ্দেশ্য তারাবীহ নামায নয়? এই বক্তব্যে তাহাজ্জুদের কথা স্পষ্টই উল্লেখ করলেন ইবনে হাজার রহঃ।
.
তাহাজ্জুদ ও তারাবীহের মাঝে পার্থক্য
———————————————————
.
কথিত আহলে হাদিসরা বলেন “তাহাজ্জুদ আর তারাবীহ একই” তাদের এই দাবিটি ভুল নিম্নবর্ণিত কারণে
.
১-
.
তাহাজ্জুদের মাঝে ডাকাডাকি জায়েজ নয় তারাবীহতে জায়েজ।
.
২-
.
তারাবীহের সময় ঘুমানোর আগে তাহাজ্জুদের সময় নির্ধারিত নয় তবে উত্তম ঘুমের পর।
.
৩-
.
মুহাদ্দিসীনে কিরাম তাহাজ্জুদ ও তারাবীহের অধ্যায় ভিন্ন ভিন্ন লিখেছেন।
.
৪-
.
তাহাজ্জুদ নামাযের হুকুম কুরআন দ্বারা প্রমাণিত যথা সূরা ইসারার ৭৯ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ তায়ালা  وَمِنَ اللَّيْلِ فَتَهَجَّدْ بِهِ نَافِلَةً لَّكَ عَسَى أَن يَبْعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامًا مَّحْمُودًا অর্থাৎ আর রাতে তাহাজ্জুদ পড় এটি তোমার জন্য নফল, অচিরেই তোমাকে তোমার রব প্রশংসিত স্থানে অধিষ্ঠিত করবেন।
.
আর তারাবীহের ব্যাপারে আল্লাহর নবী বলেন-নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা রামযানের রোযা তোমাদের উপর ফরয করেছেন আর আমি তোমাদের উপর এতে কিয়াম করাকে সুন্নত করেছি (সুনানে নাসায়ী-১/৩০৮)
.
সুতরাং বুঝা গেল তাহাজ্জুদ আল্লাহর আয়াত আর তারাবীহ নবীজীর বক্তব্য দ্বারা প্রমাণিত।
.
৫-
.
তাহাজ্জুদের হুকুম মক্কায় হয়েছে আর তারাবীহের হুকুম মদীনায় হয়েছে।
.
৬-
.
ইমাম আহমাদ রহঃ ও তারাবীহ তাহাজ্জুদ আলাদা বিশ্বাস করতেন(মাকনা’-১৮৪)
.
৭-
.
ইমাম বুখারী রহঃ এর ক্ষেত্রে বর্ণিত তিনি রাতের প্রথমাংশে তার সাগরীদদের নিয়ে তারাবীহ পড়তেন আর শেষ রাতে একাকি তাহাজ্জুদ পড়তেন। (ইমাম বুখারী রহঃ এর জীবনী)
.
৮-
.
তাহাজ্জুদ এর নির্দিষ্ট রাকাত সংখ্যা রাসূল সাঃ থেকে প্রমাণিত অর্থাৎ বিতরসহ বেশি থেকে বেশি ১৩ রাকাত আর কমপক্ষে ৭ রাকাত। আর তারাবীহ এর রাকাত সংখ্যার ক্ষেত্রে খোদ আহলে হাদিস ইমামদের স্বাক্ষ্য যে এর কোন নির্দিষ্ট সংখ্যা নবীজী সাঃ থেকে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত নয়।
.
স্মর্তব্য
———-
.
তারীখুল খুলাফা তথা খুলাফায়ে রাশেদীনের ইতিহাস অনুযায়ী হযরত ওমর রাঃ ১৫তম হিজরীতে তারাবীহ নামাযের জামাতের শুরু করেন। আর হযরত সাইয়্যেদা আয়শা রাঃ ৫৭হিজরীতে ইন্তেকাল করেছেন। পুরো ৪২ বছর আম্মাজান আয়শা রাঃ হুজরার নিকটবর্তী মসজিদে নববীতে ২০ রাকাত তারাবীহের বেদআত জারী হল, অথচ যেই আম্মাজান আয়শা সিদ্দিকা রাঃ নিজেই রাসূল সাঃ থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন যে, যে ব্যক্তি দ্বীনের মাঝে দ্বীন হিসেবে নতুন বিষয় উদ্ভাবন করবে তার সে বিষয় পরিত্যাজ্য। [বুখারী, মুসলিম] সেই আয়শা রাঃ থেকে একথা প্রমানিত নয় যে, তিনি ৪২ বছরের মাঝে কোন দিন তাহাজ্জুদওয়ালী হাদীসটিকে বিশ রাকাত তারাবীহের বিরুদ্ধে দলীল হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। এখন পথ দুইটি। হয়তো এটা মানা হবে যে, এ হাদীসের সাথে তারাবীহ বিশ রাকাতের কোন সম্পর্ক নেই। যা আয়শা রাঃ ভাল করেই বুঝতে পেরেছেন। তাই তিনি কোন কথাই বলেননি মসজিদে নববীতে বিশ রাকাত তারাবীহ হতে দেখে। কিংবা আম্মাজান আয়শা রাঃ তার বর্ণিত হাদীসটিকে বিশ রাকাত তারাবীহের বিরোধী মনে করতেন, কিন্তু তার মনে সুন্নতের মোহাব্বত আর বিদআতের প্রতি এতটুকু ঘৃণা ছিল না, যতটুকু আজকালের কথিত আহলে হাদীস নামধারী অতি ধার্মিক গায়রে মুকাল্লিদদের রয়েছে। এমনটি কেবলমাত্র রাফেজী শিয়ারাই বলতে পারে। অন্য কেউ এমন কথা বলতে পারে না।
.
২ নং দলিল
.
عن جابر بن عبد الله قال : صلى بنا رسول الله صلى الله عليه و سلم في رمضان ثمان ركعات والوتر فلما كان من القابلة اجتمعنا في المسجد ورجونا أن يخرج إلينا فلم نزل في المسجد حتى أصبحنا فدخلنا على رسول الله صلى الله عليه و سلم فقلنا له : يا رسول الله رجونا أن تخرج إلينا فتصل بنا فقال : كرهت أن يكتب عليكم الوتر  (قيام الليل-90)
.
হযরত জাবের রাঃ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন-রাসূল সাঃ আমাদের সাথে রামযানে ৮ রাকাত নামায ও বিতর নামায পড়লেন, তারপর যখন পরদিন হল আমরা মসজিদে একত্রিত হলাম এবং আকাংখা করলাম নবীজী সাঃ আমাদের কাছে আসবেন। আমরা মসজিদে অবস্থান করতে লাগলাম। প্রভাত হয়ে গেল। তখন আমরা গেলাম নবীজী সাঃ এর কাছে। তাকে বললাম-হে আল্লাহর রাসূল! আমরা আকাংখী ছিলাম আপনি আমাদের কাছে যাবেন এবং আমাদের নিয়ে নামায পড়বেন, তখন তিনি বললেন-আমি এটি পছন্দ করছিলামনা যে, তোমাদের উপর বিতর ফরয হয়ে যাক।(কিয়ামুল লাইল-৯০)
.
জবাব
.
এই হাদিসটি নিয়ে কথিত আহলে হাদিসরা সবচে’ বেশি খুশি হতে দেখা যায়। অথচ আশ্চর্যের বিষয় হল এই হাদিসটি দুর্বল। শুধু একজন নয় এই হাদিসের তিনজন রাবীর ক্ষেত্রে মুহাদ্দিসীনে কিরাম বলেছেন তারা গ্রহণযোগ্য নয়। দেখুন মুহাদ্দিসীনে কিরাম কি বলে এই হাদিসের বর্ণনাকারীদের ব্যাপারে।
.
ইবনে হুমাইদ রাজী
——————————
.
১. হাফেজ জাহাবী রহঃ বলেন-তিনি দুর্বল
.
২. ইয়াকুব বিন শি’বা রহঃ বলেন-তিনি অনেক অগ্রহণীয় হাদিস বর্ণনা করেন।
.
৩. ইমাম বুখারী রহঃ বলেন-এতে আপত্তি আছে।
.
৪. আবু জুরআ রহঃ বলেন-তিনি মিথ্যাবাদী।
.
৫. ইসহাক কু’সজ রহঃ বলেন-আমি স্বাক্ষ্য দিচ্ছি তিনি মিথ্যাবাদী।
.
৬. সালেহ জাযরাহ রহঃ বলেন-প্রত্যেক বিষয়ে সে হাদিস বর্ণনা করে। আল্লাহর উপর অধিক অপবাদ আরোপকারী আমি তাকে ছাড়া কাউকে দেখিনি। সে লোকদের হাদিস পরিবর্তন করে ফেলে।
.
৭. আল্লামা ইবনে খারাশ রহঃ বলেন-আল্লাহর কসম সে মিথ্যাবাদী
.
৮. ইমাম নাসায়ী রহঃ বলেন-সে গ্রহণযোগ্য নয়। (মিযানুল ই’তিদাল-৩/৪৯-৫০)
.
ইয়াকুব বিন আব্দুল্লাহ আশআরী
———————————————
.
ইমাম দারা কুতনী রহঃ বলেন-সে শক্তিশালী নয় (মিযানুল ই’তিদাল-৩/৩২৪)
.
ঈসা বিন জারিয়া
————————————-
.
১. আল্লামা ইয়াহইয়া বিন মায়ীন রহঃ বলেন-তার কাছে অগ্রহণীয় হাদিস আছে।
.
২. ইমাম নাসায়ী বলেন-তার হাদিস অগ্রহণীয়।
.
৩. ইমাম নাসায়ী বলেন-তার হাদিস পরিত্যাজ্য।
.
৪. আবু দাউদ রহঃ বলেন-তার হাদিস অগ্রহণীয়।
.
৫. আল্লামা জাহাবী বলেন-তিনি দুর্বলদের মাঝে শামীল (মিযানুল ই’তিদাল-২/৩১১)
.
এছাড়া এ হাদিসটি “বুলুগুল মারাম” কিতাবে হযরত জাবের রাঃ থেকেই বর্ণিত কিন্তু সেখানে রাকাত সংখ্যার কথা উল্লেখ নেই। দেখুন বুলুগুল মারাম-৪২-৪৩।
.
এছাড়াও এ হাদিসে আরেকটি সমস্যা আছে, তাহল-এই হাদিসে বিতর ফরয হবার আশংকার কথা বলা হয়েছে অথচ অন্য সহীহ হাদিসে তারাবীহ ফরয হয়ে যাবার আশংকা উল্লেখ করা হয়েছে। (মিযানুল ই’তিদাল-২/৪২-৪৩)
.
আরেকটি বিষয় হল,  এতে সর্বদা আট রাকাত পড়ার কোন কথা উল্লেখ নেই। যা সুন্নত হওয়ার জন্য শর্ত।
.
এছাড়া হযরত জাবের রাঃ ইন্তেকাল করেছেন ৭০ হিজরীর পর মদীনায়। কমপক্ষে ৫৫ বছর যাবত তার সামনে মদীনা মুনাওয়ারায় মসজিদে নববীতে বিশ রাকাতের কথিত বিদআত চালু ছিল। আর হযরত জাবের রাঃ নিজের জবানে রাসূল সাঃ থেকে হাদীস বর্ণিত যে, شر الأمور محداثاتها وكل محدثة بدعة وكل بدعة ضلالة وكل ضلالة فى النار তথা প্রত্যেক নব উদ্ভুত ধর্মীয় বিষয় বিদআত। আর প্রতিটি বিতআত পথভ্রষ্টতা, আর প্রতিটি পথভ্রষ্টতা জাহান্নামী। {নাসায়ী} কিন্তু তারপরও কমপক্ষে ৫৫ বছর যাবত হযরত জাবের রাঃ মসজিদে নববীতে এ বেদআত চলতে দেখেছেন। অথচ সুন্নতের হাদীস তার সামনে ছিল। যা তিনি প্রকাশ্যে না বলে কেবল ঈসা বিন জারিয়ার কানে কানে বলেছেন? আর তিনি এ আমানত এক শিয়া ইয়াকুব বিন আব্দুল্লাহর কাছে বলেছেন। ব্যস এতটুকুই?!
.
হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ রাঃ এর জঈফ হাদীসটি দিয়ে কী প্রমাণিত হয়? এর দ্বারা একাথাতো প্রমাণিত হয় না যে, হযরত জাবের রাঃ সকল লোকেরা যখন বিশ রাকাত তারাবীহ পড়তেন, তখন তিনি আট রাকাত পড়ে মসজিদ থেকে বেরিয়ে গেছেন। এরকম কোন বর্ণনা কি আছে? থাকলে গায়রে মুকাল্লিদ ভাইয়েরা পেশ করার সাহস রাখেন কি? সাহাবায়ে কেরাম রাঃ থেকে বড় আল্লামা হওয়ার দাবী করবেন না। আল্লাহ তাআলা রাসূল সাঃ এর সুন্নতের উপর আমল এবং তা প্রচারের তৌফিক সকলকে দান করুন। আমীন।
.
৩ নং দলিল
.
و حدثني عن مالك عن محمد بن يوسف عن السائب بن يزيد أنه قال أمر عمر بن الخطاب أبي بن كعب وتميما الداري أن يقوما للناس بإحدى عشرة ركعة ( موطأ مالك-98
.
মুহাম্মদ বিন ইউসুফ সায়েব বিন ইয়াজীদ রহঃ থেকে বর্ণনা করেন যে, নিশ্চয় ওমর রাঃ ওবাই বিন কাব রাঃ ও তামীমে দারী রাঃ কে মানুষের সাথে ১১ রাকাত নামায পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন।(মুয়াত্তা মালিক-৯৮)
.
জবাব
.
এই হাদিস দিয়েও দলিল দেয়া ঠিক নয়। কারণ-
.
১-
.
হাদিসটির শব্দে পরস্পর বিরোধীতা রয়েছে। যেমন এই হাদিসের সূত্রের একজন বর্ণনাকারী মুহাম্মদ বিন ইউসুফ তার সাগরীদ ৫ জন। তার মধ্যে ৩জন ১১ রাকাত আর ১জন ১৩ রাকাত ও ১জন ২১ রাকাতের বর্ণনা নকল করেন। এছাড়া যারা ১১রাকাতের কথা বর্ণনা তাদের বর্ণনার শব্দেও রয়েছে বিস্তর ফারাক। যথা-
.
ক.
.
ইমাম মালিক এনেছেন ওমর রাঃ ওবাই বিন কাব রাঃ ও তামীমে দারী রাঃ কে মানুষের সাথ ১১ রাকাত নামায পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
.
খ.
.
হযরত ইয়াহইয়া আল কাত্তান বর্ণনা করেন-ওমর রাঃ ওবাই বিন কাব ও তামিমে দারী এর কাছে লোকদের একত্র করেন আর তারা দু’জন ১১ রাকাত নামায পড়াতেন।
.
গ.
.
আব্দুল আজীজ বিন মুহাম্মদ রহঃ এর বর্ণনায় এসেছে-আমরা হযরত ওমর রাঃ এর আমলে ১১ রাকাত নামায পড়তাম।
.
বর্ণনাকারীর বর্ণনার ঠিক নেই, সেই সাথে এগার রাকাতের কথা বলেছেন তাদের বক্তব্যটিও পরস্পর বিরোধী। এমন বর্ণনা গ্রহণযোগ্য নয়, বরং পরিত্যাজ্য। (ইলাউস সুনান-৭/৪৮)
.
২-
.
এই বর্ণনাটি হযরত ওমর রাঃ থেকে আরেকটি সহীহ ও শক্তিশালী বর্ণনার বিপরিত। হযরত ওমর রাঃ থেকে ২০ রাকাত তারাবীহের কথা ইমাম মালিক রাহঃ তার মুয়াত্তার ৪০ নং পৃষ্ঠায় ও হাফেজ ইবনে হাজার ফাতহুল বারীর ৪ নং খন্ডের ২১৯ নং পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেন। সুতরাং বুঝা গেল এই বর্ণনাটি আমলযোগ্য নয়।
.
৩-
.
ইমাম মালিক রাহঃ নিজেই এই বর্ণনাটি আমলযোগ্য মনে করেননি, তাই তিনি নিজে ৮ রাকাতের কথা বলেননা।
.
৪-
.
যদি হযরত ওমর রাঃ থেকে ১১ রাকাতের বর্ণনাটি সহীহ হত তাহলে পরবর্তীতে হযরত উসমান রাঃ ও আলী রাঃ থেকে এরকম বর্ণনা ও আমল প্রমাণিত হত, অথচ তাদের থেকে এরকম বর্ণনা প্রমাণিত নয়।
.

.
এটাও হতে পারে যে, প্রথমে হযরত ওমর রাঃ এর কাছে নবীজী থেকে ৮ রাকাতের বর্ণনা এসেছিল কিন্তু পরবর্তীতে ২০ রাকাতের বর্ণনাটি পৌঁছলে তিনি ৮ রাকাতের বর্ণনাটি পরিত্যাগ করেন।
.
এই সকল কারণে এই হাদিসটি আমলযোগ্য হিসেবে বাকি থাকেনা।
.
তারাবীহ বিষয়ে কথিত আহলে হাদিস ভাইদের কাছে মানব্যর ব্যক্তিদের মতামত
.
১-
.
শায়েখ ইবনে তাইমিয়া রহঃ বলেন-আর যারা ধারণা করে যে, নিশ্চয় রামযানের দন্ডায়মানতার নির্দিষ্ট সংখ্যা প্রমাণিত আছে নবীজী সাঃ থেকে যার উপর বাড়ানো কমানো যাবেনা সে ভুলের মাঝে আছে।(ফাতওয়া ইবনে তাইমিয়া-২/৪০১)
.

.
আল্লামা ইবনে সুবকী রহঃ বলেন-জেনে রাখ! নিশ্চয় রাসূল সাঃ কি বিশ রাকাত তারাবীহ পড়েছেন না তার চে’ কম পড়েছেন তা তার থেকে বর্ণিত নেই (শরহুল মিনহাজ)
.

.
আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ুতী রহঃ বলেন-নিশ্চয় ওলামায়ে কিরাম মতান্যৈক্য করেছেন এর সংখ্যার ক্ষেত্রে, যদি তা নবীজী সাঃ থেকে প্রমাণিত বিষয় হত তাহলে তাতে মতবিরোধ হতনা।(আল মিসবাহ-৭৪)
.

.
মাওলানা ওয়াহীদুজ্জামান বলেন-তারাবীহ নামাযের নির্দিষ্ট রাকাত নেই।( নুজুলুল আবরার-১/১২৬)
.

.
আবুল খায়ের নুরুল হাসান খাঁ বলেন-মোটকথা হল নির্দিষ্ট সংখ্যা নবী থেকে প্রমাণিত নয়।( আল আরফুল জাদি-৮৪)
.

.
নওয়াব সিদ্দীক হাসান খান বলেন-নিশ্চয় তারাবীহ নামায সুন্নত মৌলিকভাবে। যেহেতো নবীজী সাঃ তা রাতে পড়তেন তার পর তা ছেড়ে দিয়েছেন উম্মতের প্রতি দরদে যেন তা ফরয না হয়ে যায়, আর এর কোন নির্দিষ্ট রাকাতের কথা সহীহ হাদিসে নেই, কিন্তু নবীজী সাঃ এর একথা জানা যায় যে, তিনি রামাযানে এত ইবাদত করতেন যা অন্য সময়ে করতেননা।(আল ইনতিকাদুর রাজী’-৬১)
.
ঠান্ডা মাথায় উল্লেখিত আলোচনা পড়লে আশা করি সবার কাছে স্পষ্ট হবে ৮ রাকাত তারাবীহের দাবিটি একটি ভুল দাবি। আল্লাহ তায়ালা আমাদের রামাযানের এই পবিত্র আমল তারাবীহ ২০ রাকাত আদায় করে তার নৈকট্য হাসিল করা তৌফিক দান করুন।
.
তারাবীহ নামায আট রাকাত দাবিদারদের কাছে আমাদের কয়েকটি প্রশ্ন
.
রমজানুল মুবারকের বরকত থেকে বঞ্চিত থাকা এবং অন্যদের বঞ্চিত রাখাকে হাদীসের উপর আমল নাম দিয়েছে। আপনি তাদের সাথে কথা বলে দেখুন, পরিস্কার ভাষায় আপনাকে বলে দিবে যে, “আমরা নবীজী সাঃ কে ছাড়া কাউকে মানি না। আমরা শুধুমাত্র মুহাম্মদী, আমরা না আবু বকরী, না ওমরী, না হানাফী না শাফেয়ী। আমাদের প্রতিটি কাজের উপর রাসূল সাঃ এর সিল মারা আছে”। এরকম স্লোগানধারী আট রাকাত দাবিদার ভাইদের কাছে আমাদের জিজ্ঞাসা-
.

.
রাসূল সাঃ সারা জীবনের মাঝে শুধুমাত্র তিন রাত এবং তাও রমজানের শেষ দশদিনের মাঝে জামাতের সাথে তারাবীহ নামায পড়েছেন। এরপর আর পড়েননি। আপনারা রমজানের চাঁদ উঠা থেকে নিয়ে প্রতি বছর পুরো রমজান মাস তারাবীহ নামায আদায় করে থাকেন, এটাতো হাদীসের খেলাফ। এ বিষয়েতো আপনারা মুহাম্মদী রইলেন না। কারণ, এর উপর সর্বদা আমল করার বিষয়টি সাহাবায়ে কেরাম থেকে প্রমাণিত। রাসূল সাঃ থেকে নয়। তাই আপনারা জীবনে শুধু তিন রাত তারাবীহ জামাতের সাথে পড়ে সারা জীবন ঘরে আরামে বসে থাকুন। যেন বাকি লোকেরা শান্তির সাথে রমজানের বরকত হাসীল করতে পারে। কিন্তু আপনারা এক্ষেত্রে রাসূল সাঃ এর অনুসরণ ছেড়ে দেন কেন?
.

.
আপনারা প্রত্যেক বছর পুরো মাস মসজিদে এসে তারাবীহ নামায পড়ে থাকেন। এটাতো আপনাদের তরীকা অনুযায়ী মুহাম্মদী পদ্ধতি নয়। কেননা, রাসূল সাঃ তারাবীহ নামায তিন দিন পড়ার পর তৃতীয় দিন বলেছেনঃ
.
অর্থাৎ লোকেরাঃ তোমরা নিজেদের ঘরে নামায পড়, নিশ্চয় ফরজ নামায ছাড়া বাকি নামায স্বীয় ঘরে পড়া উত্তম। {বুখারী-১/১০১, মুসলিম-১/২৬৬}
.
তাই ঘর রেখে আপনারা মসজিদে কেন?
.

.
এ নামাযের নাম তারাবীহ বলে রাসূল সাঃ রেখেছেন না সাহাবায়ে কেরাম? এ নামাযকে তারাবীহ যারা বলে থাকেন, তারা কি মুহাম্মদী না অন্য কিছু?
.

.
আপনারা সারা মাস ইশার নামাযের পরপরই তারাবীহ নামায পড়ে থাকেন। এর কোন প্রমাণতো হাদীসে নেই। এ আমলের দ্বারাও আপনারা না মুহাম্মদী থাকেন, না আহলে হাদীস থাকেন। তাহলে আপনারা কি?
.

.
পুরো রমজান মাসে আপনারা তারাবীহ নামাযের পর জামাতের সাথে বিতির নামায পড়ে থাকেন, এক্ষেত্রেওতো আপনারা না মুহাম্মদী না আহলে হাদীস। কারণ কি?
.

.
রাসূল সাঃ তারাবীহ নামাযে না নিজে পুরো কুরআন খতম করেছেন, না অন্যদের হুকুম দিয়েছেন। আপনাদের কিছু মসজিদে যে, তারাবীহের মাঝে পুরো কুরআনের খতম হয়, শুধু তাই নয়, কিছু মসজিদেতো কুরআন খতমের জন্য নামাযে কুরআন শরীফ উঠিয়ে দেখে দেখে পর্যন্ত পড়া হয়, এ আমলের ক্ষেত্রে না আপনারা মুহাম্মদী, না আহলে হাদীস। কারণ কি?
.

.
আপনারা যে রমজানের সারা মাস আট রাকাত তারাবীহ আর এক রাকাত বিতির পড়ে থাকেন এ নয় রাকাতের কোন হাদীস আছে?
.

.
আপনারা যেহেতু বলে থাকেন যে, তারাবীহ আর তাহাজ্জুদ একই নামাযের দু’টি নাম। এ দুই নাম মূলত এক নামাযের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য এরকম বক্তব্য নির্ভর একটি সহীহ হাদীস পেশ করুন।
.
এক্ষেত্রে আপনারা না কোন হাদীস পেশ করেন, না রমজান ছাড়া এ তারাবীহ/তাহাজ্জুদ নামায এতটা গুরুত্ব দিয়ে পড়ে থাকেন। রমজান ও রমজান ছাড়া একই নামাযের এ পার্থক্য কোন সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত?
.

.
আপনারা যে বলে থাকেন যে, এগার মাস এ নামায নফল থাকে। আর বারতম মাস তথা রমজানে এসে সেটা সুন্নতে মুআক্কাদা হয়ে যায়। এগার মাস এ নামাযের সময় হল শেষ রাত, আর বারতম মাসে এর সময় শুরু রাতেও হয়।
.
এগার মাস এটাকে ঘরে পড়া উত্তম, আর বারতম মাসে এসে এটাকে মসজিদে পড়া উত্তম। এগার মাসে এ নামায একা একা পড়া উত্তম আর রমজান মাসে এসে তা জামাতের সাথে পড়া উত্তম।
.
এসব বক্তব্য কি আপনাদের মনগড়া হাদীস থেকে প্রমাণিত না রাসূল সাঃ এর হাদীস থেকে?
.
এসব বক্তব্যকে যখন আপনারা রাসূল সাঃ এর হাদীস থেকে প্রমাণ করতে পারেন না, তাহলে আপনারা না মুহাম্মদী, না আহলে হাদীস। বরং আহলে নফস সাব্যস্ত হচ্ছেন না?
.
১০
.
আপনারা আট রাকাত তারাবীহকে জামাতের সাথে পুরো মাসে মসজিদের মাঝে ইশার পরপর পড়াকে যে সুন্নতে মুআক্কাদা বলে থাকেন, আর বিশ রাকাত তারাবীহকে বেদআত  ও হারাম বলে থাকেন, এ ব্যাপারেও আপনাদের কাছে কোন হাদীস নেই। বরং আজ পর্যন্ত ‘সুন্নতে মুআক্কাদা’, ‘বিদআত’, ‘হারাম’, ‘সহীহ’, ‘হাদীসে সহীহ’, ‘হাদীসে জঈফ’ এর কোন পূর্ণাঙ্গ সংজ্ঞা আপনারা কুরআন ও হাদীস থেকে দেখাতে পারেননি। প্রয়োজনের সময় উম্মতীদের থেকে ঊসুলে ফিক্বহ বা উসুলে হাদীস থেকে চুরি করে নিয়ে থাকেন। তারপরও আপনারা কি করে মুহাম্মদী আর আহলে হাদীস বাকি থাকেন?
.
যদি একথা মেনেও নেই যে, আপনাদের কাছে বিশ রাকাত তারবীহ আদায় করা বেদআতি কর্ম ও হারাম কাজ হওয়ার উপর কোন দলীলও থাকে, তবুও প্রশ্ন হল, আপনারা যেখানে তারাবীহ বিষয়ে ৯/১০টি পয়েন্টে মুহাম্মদী নয়, ৯/১০টি পয়েন্টে আহলে হাদীস নয়। এ দশ দশটি বিষয়ে আপনারা নিজেরা মুহাম্মদী বা আহলে হাদীস বাকি থাকেন না, সেখানে নিজেদের নাম আহলে হাদীস রাখা বা হাদীসের উপর আমলকারী বলাটা একটি মিথ্যাচার হিসেবেই প্রকাশ পায়। হ্যাঁ, তবে আপনাদের যদি নফসের হাদীসের পূজারী বলা হয়, তবে একথা অবশ্য সঠিক হয়।
.
এই সকল ১০টি বিষয়ে রাসূল সাঃ থেকে একটি সহীহ হাদীস পেশ করে নিজেদের খাঁটি আহলে হাদীস হিসেবে প্রমাণ করুন।
.
যদি না পারেন, তাহলে ২০ রাকাত তারাবীহকে বিদআত বলার মিথ্যাচার থেকে বিরত থাকুন।
.
আল্লাহ তাআলা আমাদের ইবাদতের মাসে ধোঁকাবাজদের ধোঁকায় পড়ে ইবাদত থেকে গাফিল হয়ে আট রাকাত পড়ে মসজিদ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার বে-আদবী কর্ম থেকে মুসলিম উম্মাহকে হিফাযত করুন। আমীন। ছুম্মা আমীন।
.
এ বিষয়ে বিস্তারিত তাহকীক জানতে পড়ুন-

হুজ্জাতুল্লাহি ফিল আরদ মুনাজিরে ইসলাম মাওলানা মুহাম্মদ আমীন সফদর ওকারবী রহঃ এর সংকলিত ‘তাযাল্লিয়াতে সফদর- ৩/১৫২-৩৪২, ৭/১৬৯-১৮০।
.
.
বিশ রাকাত ধারাবাহিক ইজমাঃ
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷
.
হযরত ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম রহ. এর উস্তাদ আবু বকর ইবনে শাইবা রহ. এর কিতাব আল মুসান্নাফ পৃঃ ২/১৬৬, হাদীস নং ৭৬৯১, এছাড়া হাদীসের প্রসিদ্ধ কিতাব বাইহাকী পৃঃ ২/৬৯৮-৬৯৯, হাদীস নং ৪৬১৫, ৪৬১৭, তাবারানী পৃঃ ১১/২৬১, হাদীস নং ৭৭৩৩,
.
“হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত বিশুদ্ধ হাদীসের রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আমল দ্বারা ২০ রাকা‘আত তারাবীহ নামায প্রমাণিত।” (আন-নুকাত আলা মুকাদ্দামাতি ইবনিস সালাহ-১/৩৯০, আন-নুকাত আলা কিতাবি ইবনিস সালাহ-১/৪৯৪)
.
দ্বিতীয় খলীফা হযরত উমর রাযি. তার খেলাফত আমলে মসজিদে নববীর মধ্যে তারাবীহ নামাযের অনেকগুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জামা‘আতকে একত্র করে হযরত উবাই বিন কাআব রাযি. এর ইমামতীতে ২০ রাকা‘আত তারাবীহ নামাযের হুকুম দিয়েছিলেন। সকল সাহাবায়ে কেরাম রাযি. তাঁর সমর্থন করেছিলেন। তারাবীহ নামায যদি নবী আলাইহিস সালাম থেকে ২০ রাকা‘আত প্রমাণিত না হতো তাহলে সাহাবায়ে কেরাম রাযি. অবশ্যই আপত্তি তুলতেন (বাইহাকী পৃঃ ২/৪৯৭, হাদীস নং ৪৬১৭,৪৬২০, ৪৬২১, মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক পৃঃ ৪/২৬১, হাদীস নং ৭৭৩২, বুখারী পৃঃ ১/৪৭৪, হাদীস নং ২০১০, মাজামাউ ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়া- ২৩/১১২-১১৩ বাদায়েউস সানায়ে-১/৬৪৪)
.
তৃতীয় খলীফা হযরত উসমান গনী রাযি., চতুর্থ খলীফা হযরত আলী রাযি. সহ সাহাবায়ে কিরামের রাযি. ঐক্যমতে, উম্মাতে মুসলিমার ১৪০০ শত বছর পর্যন্ত ধারাবাহিক আমল তারাবীহ নামায বিশ রাকা‘আত চলে আসছে। যা আজ পর্যন্ত বাইতুল্লাহ শরীফ ও মসজিদে নববীতে চালু আছে (বাইহাকী কুবরা পৃঃ ২/৪৯৬, হাদীস নং ৪৬১৭, পৃঃ ২/৪৯৭, হাদীস নং ৪৬২০, ৪৬২১, শরহুল মুহাজ্জাব পৃঃ ৩/৩৬৩-৩৬৪)
.
ইমাম আ’জম আবু হানীফা রহ., ইমাম মালেক রহ., ইমাম শাফেয়ী রহ., ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহ. যারা প্রত্যেকে স্বীয় যামানায় সব চেয়ে বড় কুরআন ও হাদীস বিশারদ ও ফকীহ ছিলেন তাদের সকলের মতে তারাবীহ নামায ২০ রাকা‘আত, ৮ রাকা‘আত নয়। (আলমাবসূত পৃঃ ২/১৯৬, ই‘লাউস সুনান পৃঃ ৭/৬৯/৭১, আত্তামহীদ পৃঃ ৩/৫১৮, আলমুদাউওয়ানাতুল কুবরা পৃঃ ১/২৮৭, শরহুস্ সুন্নাহ পৃঃ ২/৫১১, মুগনী পৃঃ ২/৬০৪)
.
আট রাকা‘আত তারাবীহ নামায পড়া রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আমল ও সাহাবায়ে কেরাম রাযি.-এর ইজমা পরিপন্থী এবং খুলাফায়ে রাশেদীনের আমলের বিপরীত, অথচ নবী করীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুলাফায়ে রাশেদীনের অনুসরণের জন্য তাকীদ করে গেছেন। (আবু দাউদ হাদীস নং ৪৬০৭, তিরমিযী হাদীস নং ২৬৭৬, ইবনে মাজাহ হাদীস নং ৪২-৪৩)
.
আট রাকা‘আত নামাযের হাদীসটি ইমাম বুখারী, ইমাম মুসলিমসহ অন্যান্য মুহাদ্দেসীনে কিরামের মতে একান্তভাবে তাহাজ্জুদের জন্য প্রযোজ্য। কোন অবস্থায় তা তারাবীহ নামাযের জন্য প্রযোজ্য নয়, এ জন্য তাঁরা এ হাদীসটি তাদের কিতাবে তাহাজ্জুদের অধ্যায় এনেছেন, তারাবীহ অধ্যায়ে তারাবীহ নামাযের রাকা‘আতের সংখ্যা প্রমাণের জন্য আনেননি। তাছাড়া উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়িশা রাযি. থেকে বর্ণিত হাদীসটি এমন এক ব্যক্তির প্রশ্নের উত্তর যার ধারণা ছিল নবী ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানে অন্য মাসের তুলনায় তাহাজ্জুদ নামায অনেক বেশি পড়তেন, তার প্রশ্নের জবাবে বলেছেন যে, “নবী করীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমযানে ও রমাযানের বাইরে অন্যান্য মাসে আট রাকাআতের বেশী তাহাজ্জুদ নামায পড়তেন না।”
.
এখানে তিনি এমন নামাযের কথা আলোচনা করেছেন যা রমাযান শরীফে এবং রমাযান ছাড়া অন্য মাসেও পড়া যায়। আর তারাবীহ নামায রমাযান ছাড়া অন্য মাসে পড়া যায় না। কাজেই এ হাদীস দ্বারা কস্মিনকালেও তিনি তারাবীহ নামায ৮ রাকা‘আত বুঝাননি। বরং তাহাজ্জুদের নামায ৮ রাকা‘আত বুঝিয়েছেন। যা রমাযান ও রমাযানের বাইরেও পড়া যায়।
.
অত্যন্ত দুঃখজনক যে জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করার জন্য কতক লোক যারা হাদীসের মর্ম সম্পর্কে অজ্ঞ তারা এ হাদীসের দ্বারা তারাবীহ নামায ৮ রাকা‘আত প্রমাণ করে, যা নিতান্তই বোকামী। (বুখারী পৃঃ হাদীস নং ১১৪৭, বুখারী হাদীস নং ২০১৩)
.
তারাবীহ নামায মাত্র ৮ রাকা‘আত মনে করে পড়লে তা একাধারে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আমল খুলাফায়ে রাশেদীন এর আমল এবং সাহাবায়ে কিরাম রাযি. এর ইজমা বা ঐক্যমতের পরিপন্থী হওয়ায় জঘন্য বিদ‘আত এবং মনগড়া ইবাদত হবে। যা নবী করীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীস অনুযায়ী গোমরাহী এবং জাহান্নামের আমল। এর থেকে বেঁচে থাকা সকল মুমিনের ঈমানী দায়িত্ব। (বুখারী হাদীস নং ২৬৯৭, মুসলিম হাদীস নং ১৭১৮, আবু দাউদ হাদীস নং ৪৬০৬, ইবনে মাজাহ হাদীস নং ১৪)
.
তারাবীহ নামাযে বিতর সহ ৪ রাকা‘আত পর পর ৫ টি বিরতি। (বাইহাকী হাদীস নং ৪৬২১, হিদায়া পৃঃ১/১৫০, ফাতাওয়ায়ে তাতারখানিয়া পৃঃ ১/৬৫৪)
.
তারাবীহা অর্থ বিশ্রাম করা, তার বহুবচন তারাবীহ। শব্দটি বহু বচন হওয়াটা দলীল যে এ নামাযে দু’এর অধিক বিরতি বিশ্রাম হওয়া জরুরী। তারাবীহ ৮ রাকা‘আত হলে তা কখনো সম্ভব হবে না।
তারাবীহ সহ সকল প্রকার নামাযে তাজবীদের সাথে তিলাওয়াত করা জরুরী। তাজবীদ বিহীন অস্পষ্ট অতি দ্রুত তিলাওয়াত শরী‘আতে নিষেধ। (সূরায়ে মযযাম্মিল ৪ তাফসীরে মাজহারী পৃঃ৯/১০, তালীফাতে রশীদিয়া পৃঃ২৬৯)
.
.

তারাবীহ সম্পর্কে বায়হাকী শরীফের হাদিসটা সম্পূর্ণ সহিহ
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷
.
কিছুদিন আগে সম্মানিত মরহুম আলেম ডঃ আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর স্যার রাহঃ এর একটি আলোচনা শুনছিলাম। আহলে হাদীসদের ব্যাপারে আলোচনায় স্যার বলছিলেন তারা নিজেদের মতের  বিপরীতে হাদীস পেলে সেটাকে জয়ীফ বা জাল বানিয়ে অস্বীকার করে বসে। এ জন্য স্যার বেশ আফসোসও করেছেন।  এরকমই একটি উদাহারণ আপনারা এখন দেখতে পারবেন। এমন হাদিসকে  মানুষ কিভাবে জাল বলতে পারে যার সনদ সহীহ!! আসাবিয়াতের চরম পর্যায়ে পৌছলেই কেবল এরকটা করা সম্ভব। এবার হাদিসটি দেখি।
.
২০ রাকায়াত তারাবীহ্‌র বর্ণনা সায়েব বিন ইয়াযীদ রাযিঃ থেকে সহীহ সনদে বর্ণিত
—————————————————————————————————————————
.
ইয়াযীদ ইবনে খুসাইফার ২০ রাকাতের হাদীস সহীহ হওয়ার প্রমাণ
.
ইমাম বাইহাকী ‘আস্ সুনানুল কুবরা’ গ্রন্থে বর্ণনা করেন,
.
أَخْبَرَنَا أَبُو عَبْدِ اللهِ الْحُسَيْنُ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ الْحُسَيْنِ بْنِ فَنْجَوَيْهِ الدِّيْنَوَرِيُّ بِالدَّامَغَانِ، ثنا أَحْمَدُ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ إِسْحَاقَ السُّنِّيُّ، أنبأنا عَبْدُ اللهِ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ عَبْدِ الْعَزِيزِ الْبَغَوِيُّ، ثنا عَلِيُّ بْنُ الْجَعْدِ، أنبأ ابْنُ أَبِي ذِئْبٍ، عَنْ يَزِيدَ بْنِ خُصَيْفَةَ، عَنِ السَّائِبِ بْنِ يَزِيدَ قَالَ: > كَانُوا يَقُومُونَ عَلَى عَهْدِ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ فِي شَهْرِ رَمَضَانَ بِعِشْرِينَ رَكْعَةً
.
অর্থ: সাহাবী সায়েব ইবনে ইয়াযীদ রা. থেকে ইয়াযীদ ইবনে খুসাইফা বর্ণনা করেন, তাঁরা (সাহাবা ও তাবেয়ীন) উমর ইবনুল খাত্তাব রা. এর যুগে রমযান মাসে বিশ রাকাত পড়তেন।
(আস সুনানুল কুবরা, বাইহাক্বীঃ ২/৪৯৬, সনদ সহীহ)
.
এ ছাড়াও এটি ভিন্ন সনদে মা’রিফাতুস সুনান অল আসার, বাইহাক্বীঃ ; আস সুনানুল কুবরা, বাইহাক্বীঃ ১/২৬৭-২৬৮ এ বর্ণিত হয়েছে যার সনদ সহীহ।
.
আস্ সুনানুল কুবরা বাইহাকী এর উক্ত সনদ ছাড়াও হাদীসটি আরো তিনটি সহীহ সনদে বর্ণিত হয়েছে।
যথা:
.
ক. মুসনাদে আলি ইবনুল জা‘আদ এর বর্ণনা:
.
أخبرنَا ابْنُ أَبِي ذِئْبٍ، عَنْ يَزِيدَ بْنِ خُصَيْفَةَ، عَنِ السَّائِبِ بْنِ يَزِيدَ قَالَ: >كَانُوا يَقُومُونَ عَلَى عَهْدِ عُمَرَ فِي شَهْرِ رَمَضَانَ بِعِشْرِينَ رَكْعَةً
.
এ বর্ণনা বিলকুল সহীহ। কারণ, এ বর্ণনায় ইমাম আলী ইবনুল জা‘দ ও সাহাবী সায়েব ইবনে ইয়াযীদ এর মাঝে মাত্র দুইজন রাবী। ইবনু আবি যীব ও ইয়াযীদ ইবনে খুসাইফা। উভয়ে সহীহ বুখারী ও মুসলিম এর রাবী। দেখুন, মুসনাদে ইবনুল জা‘দ পৃষ্ঠা নং ১০০৯ (২/১০০৯), হাদীস নং ২৯২৬ (২৩৮৭)
.
খ. কিতাবুস সিয়াম ফিরয়াবী এর বর্ণনা:
.
حَدَّثَنَا تَمِيمُ بْنُ الْمُنْتَصِرِ، أَخْبَرَنَا يَزِيدُ بْنُ هَارُونَ، حَدَّثَنَا ابْنُ أَبِي ذِئْبٍ، عَنِ ابْنِ خُصَيْفَةَ، عَنِ السَّائِبِ بْنِ يَزِيدَ قَالَ >كَانُوا يَقُومُونَ عَلَى عَهْدِ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ فِي رَمَضَانَ عِشْرِينَ رَكْعَةً
.
দেখুন: আস সিয়াম, ফিরয়াবী হাদীস নং ১৭৬।
.
এ হাদীসের সনদও সহীহ। এতে তামীম ইবনু মুনতাসির ছাড়া বাকী সকলেই সহীহ বুখারী ও মুসলিম এর রাবী। আর তামীম ইবনুল মুনতাসিরও সিকা ও নির্ভরযোগ্য।
দেখুন, তাকরীবুত তাহযীব; মাশিখাতুন নাসাঈ ১/ ৮৪; তারিখুল ইসলাম যাহাবী ৫/ ১০৯৫
.
গ. মারিফাতুস সুনানি ওয়াল আসার বাইহাকী এর বর্ণনা:
.
أَخْبَرَنَا أَبُو طَاهِرٍ الْفَقِيهُ قَالَ: أَخْبَرَنَا أَبُو عُثْمَانَ الْبَصْرِيُّ قَالَ: حَدَّثَنَا أَبُو أَحْمَدَ مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ الْوَهَّابِ قَالَ: أَخْبَرَنَا خَالِدُ بْنُ مَخْلَدٍ قَالَ: حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ جَعْفَرٍ قَالَ: حَدَّثَنِي يَزِيدُ بْنُ خُصَيْفَةَ، عَنِ السَّائِبِ بْنِ يَزِيدَ قَالَ: >كُنَّا نَقُومُ فِي زَمَانِ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ بِعِشْرِينَ رَكْعَةً وَالْوِتْرِ
.
দেখুন: মারিফাতুস সুনান, বাইহাকী, হাদীস নং ৫৪০৯।
.
এ সনদকে সহীহ বলেছেন,
.
১. ইমাম নববী, খুলাসাতুল আহকাম ১/৫৭৬ গ্রন্থে
.
২. ইমাম জামালুদ্দীন যায়লায়ী, নসবুর রায়া ২/১৫৪ গ্রন্থে
.
৩. ইমাম তকী উদ্দিন সুবকী শরহুল মিনহাজ গ্রন্থে। তুহফাতুল আহওয়াযী ৩/ ৪৪৬
.
৪. মুল্লা আলী ক্বারী, শরহুল মুআত্তা ও মিরকাতুল মাফাতিহ ৩/ ৯৭২ গ্রন্থে
ইমাম বাইহাকী রাহ. এর উভয় সনদ সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন, দলীলসহ নামাযের মাসায়েল পৃষ্ঠা ৪০৪-৪০৮
.
এ হাদীসটিকে হাদীস ও ফিকহ শাস্ত্রের যে সকল ইমাম সহীহ বলেছেনঃ
—————————————————————————————————-
.
১. ইমাম নববী, আল মাজমু (৪/৩২)
.
২. ইমাম ওলী উদ্দিন ইরাকী, তারহুত তাসরীব (৩/ ৯৭)
.
৩. ইমাম বদরুদ্দীন আইনী, উমদাতুল কারী (৭/১৭৮) ও আল-বিনায়া শরহুল হিদায়া (২/৫৫১)
.
৪. ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী, ‘আল মাসাবীহ ফি সালাতিত তারাবীহ’- আল-হাভী ২/৭৪ (১/৩৩৫-৩৩৬)
.
৫. জহীর আহসান নিমাভী, আসারুস সুনান পৃষ্ঠা ৩৯৩ (২০২)
.
৬. শিহাবুদ্দীন ক্বাসতাল্লানী রহ. ‘ইরশাদুস সারী’ ৩/ ৪২৬
.
৭. আল্লামা আব্দুল হাই লখনভী রহ. ‘তুহফাতুল আখয়ার’ পৃষ্ঠা ১০৩
.
৮. সিদ্দিক হাসান কিন্নাউজী ‘আওনুল বারী’ ৩/৩৭৮ (২/৮৬১)
.
তাসহীহ নং ৬, ৭, ও ৮ অনুবাদকের পক্ষ থেকে সংযোজন করা হয়েছে। ইমাম নববীর ‘খুলাসা’ গ্রন্থের তাসহীহ, ইমাম যায়লায়ী ও সুবকী রহ. এর তাসহীহ মারিফাতুস সুনানের বর্ণনা সংক্রান্ত হওয়ায় তা মূল কিতাবে উল্লেখ থাকলেও টীকায় ‘মারিফাতুস সুনানের’ বর্ণনার সাথে নিয়ে আসা হয়েছে।
.
হাদীস ও ফিক্হের এ সকল ইমাম কর্তৃক হাদীসটি সহীহ আখ্যায়িত হওয়া সত্ত্বেও আলবানী রহ. তাঁর ‘সালাতুত্ তারাবীহ’ নামক পুস্তিকায় তারাবীহ এর রাকাত সংখ্যা ১১ রাকাত থেকে বেশী (তথা ২০ রাকাত) প্রমাণিত হওয়াকে অস্বীকার করেছেন। এ ক্ষেত্রে তিনি ‘তুহফাতুল আহওয়াযী’ গ্রন্থের লেখক আব্দুর রহমান মুবারকপুরী রহ. এর অনুকরণ করেছেন এবং হাদীসটিকে যঈফ বা দুর্বল সাব্যস্ত করার অপচেষ্টা করেছেন।
.
আমাদের লা-মাযহাবী বন্ধুদের আস্থাভাজন শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. ‘মজমূউ ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়া’ গ্রন্থে ২৩/১১২, হাফেজ ইবনুল কায়্যিম রহ. তার ফাতাওয়ায় (আওনুল বারী, সিদ্দিক হাসান কিন্নাউজী ২/৮৬৪) এবং শাইখ বিন বায রহ. ‘মজমূউ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাত মুতানাওবিআহ’ গ্রন্থে ১১/৩২৫ সুস্পষ্ট ভাষায় বলেছেন ২০ রাকাত তারাবীহ হযরত উমর রা. থেকে প্রমাণিত এবং এটি খুলাফায়ে রাশিদীন এর সুন্নত। এরূপ স্বীকারোক্তি আরব বিশ্বের সমসাময়িক সর্বজন স্বীকৃত আরো অনেক আলেমও দিয়েছেন, যা আমরা অনুবাদকের ভূমিকায় আলোচনা করেছি।
সৌদি আরবের কেন্দ্রীয় দারুল ইফতা ‘আল লাজনাতুদ দাইমা লিল বুহুসিল ইলমিইয়্যাতি ওয়াল ইফতা’ থেকে প্রকাশিত ‘ফাতাওয়াল লাজনাতিদ দাইমা’ এর ৭/১৯৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
‘কেউ যদি তারাবীহ নামাজ ২০ রাকাত পড়ে তাহলে তার উপর আপত্তি করা যাবে না … কারণ, হযরত উমর রা. সহ সাহাবায়ে কেরাম কোন কোন রাতে বিতর ছাড়া ২০ রাকাত তারাবীহ পড়েছেন। আর এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নাহ সম্পর্কে তারাই অধিক অবগত।’ এ ফতওয়ার শেষে স্বাক্ষর করেছেন, প্রধান মুফতী আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায, নায়েবে মুফতী আব্দুর রাজ্জাক আফিফী, সদস্য আব্দুল্লাহ বিন কায়ূদ।
.
উল্লেখ্য যে, পিস পাবলিকেশন-ঢাকা থেকে প্রকাশিত ‘কুরআন ও সহীহ্ হাদীসের আলোকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্র্যাকটিক্যাল নামায’ বইয়ের ‘তারাবীর সালাত’ অধ্যায়ে তারাবীহ সালাতের রাকাত সংখ্যা পর্যালোচনা করতে গিয়ে ২০ রাকাতের মতকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। লেখক তাতে তারাবীহ সালাতের ইতিহাসকে চার স্তরে আলোচনা করে লিখেছেন, ‘সুতারাং ২০ রাকাতের অভিন্ন মত গ্রহণ করাই যুক্তিসঙ্গত’। (দেখুন পৃষ্ঠা নং ২২০-২২৩)
.
সারকথাঃ
শায়খ নাসির উদ্দিন আলবানী ও আব্দুর রহমান মুবারকপুরী এর পূর্বের যত মুহাদ্দিস ও ফক্বীহ এর বক্তব্য আমরা পেয়েছি তারা সকলেই এ হাদীসকে সহীহ বলেছেন। এ দুজনের পূর্বে কেউ এটিকে যঈফ বলেছেন বলে আমাদের জানা নেই। তাই নির্দ্বিধায় বলা যায়, এ হাদীসকে যঈফ বলা আলবানী ও মুবারকপুরী সাহেবের সুস্পষ্ট ভুল। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল, আমাদের দেশের গাইরে মুকাল্লিদ বন্ধুগণ এ ভুলের ক্ষেত্রে শায়খ আলবানী ও মুবারকপুরী রহ. এর তাকলীদ করছেন। এভাবে সতর্ক করার পরও তা অব্যাহত রয়েছে।
.
কিন্তু মুযাফফর বিন মুহসিন সাহবে সম্পূর্ণ জালিয়াতির সাথে আর আল্লামা আলবানি রাহঃ এর কথার কপিপেস্ট করে সাথে অনেক মিথ্যাচার করে এটাকে জাল বলেছে। আল্লাহর জমিনে এরকম ধোকাবাজ আর কতটা আছে আল্লাহই ভালো যানে যে আলেম হয়ে সহীহ হাদীসকে জাল বলতে পারে।
.
সামনে তার সবগুলো আপত্তি ইনশাআল্লাহ বিস্তারিত ভাবে আলোচনা হবে ইনশাআল্লাহ। আমরা এখন বায়হাক্বীর ‘সুনান আল কুবরা’ বা ‘মারেফাতুস সুনান’ এর রেওয়ায়েত সম্পর্কে প্রকৃত মুহাদ্দিসীনগণ এবং প্রকৃত সলফে সালেহীনগণ কি বলেছেন তার প্রতি দৃষ্টি দিব।
.
এর সনদ সম্পর্কে মুহাদ্দীসদের মত
——————————————————
.
এর কিছু উদ্ধৃতি ইমাম বায়হাক্বীর ‘সুনান আল কুবরা’ কিতাবের সংক্ষিপ্ত ভার্সনে পাওয়া যায় যার শুরু হয়েছে নিম্নোক্ত শব্দগুলো দ্বারাঃ
كانوا يقومون على عهد عمر بن الخطّاب
.
১। ইমাম আল নববী (মৃঃ ৬৭৬ হিঃ ) তার ‘আল মাজমু শরহ আল মুহাযযাব’ কিতাবে বায়হাক্বীর ‘সুনান আল কুবরা’ এর সনদকে সহীহ বলেছেন। ( ৪র্থ খণ্ড/ পৃ-৩২, আল রাফী এর ‘ফাতহ আল আযিয’ এবং ইবনে হাজার আল আসক্বালানী এর ‘তালখীস আল হাবির’ এর সাথে ছাপানো )
.
ইমাম নববী তার ‘খুলাসাতুল আহকাম’ কিতাবেও (১/৫৭৬) বায়হাক্বীর সনদকে সহীহ বলেছেন।
.
২। ইমাম ফখরুদ্দীন আল যায়লাই (মৃঃ ৭৪৩ হিঃ) তার ‘তাবেয়ীণ আল হাক্বাইক’ কিতাবে বায়হাক্বীর রেওয়ায়েতের সনদকে সহীহ বলেছেন। ( ১/১৭৮, দারুল কুতুব আল ইসলামি, কায়রো থেকে ছাপানো, ১৩১৩হিঃ )
.
৩। ইমাম তক্বীউদ্দীন আল সুবকী (মৃঃ ৭৫৬ হিঃ) বায়হাক্বীর ‘মারেফাতুস সুনান’ এ উল্লেখিত সনদটিকে সহীহ বলেছেন। ইমাম আল সুয়ুতী তার কিতাব ‘আল মাসাবিহ ফি সালাতুল তারাবীহ’ তে তারাবীহ নামাযের রাকাআত সংক্রান্ত আলোচনাতে আল সুবকীর কিতাব ‘শরহ আল মিনহাজ’ থেকে উদ্ধৃতিটি নকল করেন।
.
৪। শাফী মাযহাবের হাফেজ, ইবনে আল মুলাক্কীনও (মৃঃ ৮০৪ হিঃ) তার ‘আল বদর আল মুনির’ কিতাবে (৪/৩৫০) বায়হাক্বীর এই সনদকে সহীহ বলেছেন। এই কিতাবের ৫ জন সম্পাদক ৯ নং পাদটীকায় এই রেওয়ায়তকে বায়হাক্বীর ‘সুনান আল কুবরা’র (২/৪৯৬) দিকে নিসবত করেছেন।
.
৫। শাফি মাযহাবের হাফেজ, ওয়ালিউদ্দীন আল ইরাক্বীও (মৃঃ ৮২৬ হিঃ) তার ‘তারহিল তাতরীব ফি শরহিল তাকরীব’ কিতাবে বায়হাক্বীর সনদকে সহীহ বলেছেন। ( ২/৩৬৫, এই শরাহতে তার পিতা শায়খ যয়নুদ্দীন আল ইরাকীর মতামতও রয়েছে। )
.
৬। সহীহ আল বুখারীর ভাষ্যকার শাফি মাযহাবের ইমাম আল ক্বাসতাল্লানীও (মৃঃ ৯২৩ হিঃ) তার কিতাব ‘ইরশাদ আল সারী’ তে হাফিয ওয়ালীউদ্দীন আল ইরাক্বীর উদ্ধৃতি উল্লেখ করে বলেছেন যে, সুনানে আল বায়হাক্বীর সনদটি সহীহ। ( ৩/৪২৬, ইমাম আল নববীর ‘শরহে মুসলিম’ এর সাথে বুলাক্ব প্রেস, মিশর থেকে ছাপানো, ১৩০৪ হিঃ )
.
৭। ইমাম বদরুদ্দীন আল আইনী আল হানাফী (মৃঃ ৮৫৫ হিঃ) তার ‘আল বিনায়া’ কিতাবে (১/১৬০) ইমাম বায়হাক্বীর ‘সুনান আল কুবরা’ তে উল্লেখিত হাদীসের সনদকে সহীহ বলেছেন।
আল আইনী বায়হাক্বীর (সুনানে আল কুবরা) সনদটিকে শুধুমাত্র সহীহ – এটুকু বলেছেন তা নয়, বরং এটিকে আমাদের ইমামগণ (হানাফী), শাফি এবং হাম্বলীরা প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করেছেন তাও উল্লেখ করেছেন।
.
৮। শাফি মাযহাবের ইমাম জালালুদ্দীন আল সুয়ুতীও (মৃঃ ৯১১ হিঃ) তার ‘আল মাসাবিহ ফি সালাতুল তারাবীহ’ কিতাবে বায়হাক্বীর সনদকে সহীহ বলেছেন। ( তার কিতাব ‘আল হাওয়ী লিল ফাতাওয়ী’ এর সাথে ছাপানো, ১/৩৮৭ )
.
৯। হাফিয ইবনে হাজার আল আসক্বালানী এর একজন স্বনামধন্য ছাত্র এবং শাফি মাযহাব কর্তৃক শায়খুল ইসলাম উপাধি প্রাপ্ত, শীর্ষস্থানীয় ফক্বীহ, শায়খ যাকারিয়া আল আনসারি (মৃঃ ৯২৬ হিঃ)। তার ‘ফাতহ আল ওয়াহহাব বি মিনহাজ আল তুল্লাব’ কিতাবে (১/৬৮) তিনি শুধুমাত্র ২০ রাকাআত এর পক্ষে মত দিয়েছেন তা নয়, বরং বায়হাক্বীর রেওয়ায়েতের একটি সনদকে সহীহও বলেছেন।
শায়খ যাকারিয়া আল আনসারি তার ‘আসনা আল মাতালিব ফি শরহ রাওদ আল তালিব’ কিতাবেও একে সহীহ বলেছেন। ( ১/২০১, দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বৈরুত, ১ম সংস্করণ, ২০০০ খ্রিঃ )
.
১০। হানাফী ফক্বীহ ইবরাহীম আল হালাবি (মৃঃ ৯৫৬হিঃ) তার ‘গুনিয়াতুল মুতামাল্লি’, যা ‘কাবিরি’ নামে সুপ্রসিদ্ধ, কিতাবে (পৃঃ ৩৮৮) ‘সুনান আল কুবরা’ তে উল্লেখিত বায়হাক্বীর সনদটিকে সহীহ বলেছেন।
.
১১। শাফী মাযহাবের ফক্বীহ, খতীব আল শিরবিনি (মৃঃ ৯৭৭ হিঃ) তাঁর ‘মুগনী আল মুহতাজ’ কিতাবে ২০ রাকাআতের সমর্থনে বায়হাক্বীর সনদটিকে সহীহ বলে রায় দিয়েছেন।(১/২২৬, দারুল ফিকর, বৈরুত)
.
১২। হানাফী ইমাম আলি আল ক্বারীও (মৃঃ ১০১৪ হিঃ) বায়হাক্বীর এই সনদকে তার ‘শরহ আল নুক্বাইয়াহ’ কিতাবে (১/২৫০) সহীহ বলেছেন।
.
১৩ । হাদীসের হাফিয হানাফী ইমাম মুহাম্মদ মুরতাযা আল যাবিদী (মৃঃ ১২০৫ হিঃ) তার রচিত ইমাম আল গাযালীর ‘ইয়াহইয়া উলুম উদ দ্বীন’ কিতাবের অত্যন্ত মূল্যবান ব্যাখ্যাগ্রন্থ, যা ‘ইতহাফুস সাদাতুল মুত্ত্বাকী’ নামে পরিচিত, কিতাবে (৩/৪১৫) বায়হাক্বীর সনদকে সহীহ বলেছেন।
.
১৪। শায়খ সুলাইমান আল বুজাইরমি আল শাফি (মৃঃ ১২২১ হিঃ) ‘শরহ মিনহাজ আল তুল্লাব’ এর হাশিয়াতে বায়হাক্বীর সনদকে সহীহ বলেছেন। ( ১/৩৭০, মাকতাবা ইসলামিয়্যা, দিয়ার বকর, তুরস্ক )
.
১৫। শাফী মাযহাবের মুফতী শায়খ আবু বকর আল দিমইয়াতি (মৃঃ ১৩১০ হিঃ) তার ‘ইয়ানাতুল তালিবিন’ কিতাবে বায়হাক্বীর সনদকে সহীহ বলেছেন। ( ১/২৬৫, দারুল ফিকর, বৈরুত )
.
সমকালীন আলেমগণ যারা বায়হাক্বীর সনদকে সহীহ বলেছেন
———————————————————————————————-
.
১। হানাফী মুহাদ্দিস, শায়খ শুয়াইব আল আরনাউত্ব, ইমাম বাগাবী এর কিতাব ‘শরহ আল সুন্নাহ’এর সম্পাদনাতে (৪/১২০) ইমাম বায়হাক্বীর ‘সুনান আল কুবরা’ তে উল্লেখিত সনদটিকে সহীহ বলেছেন ( এবং এর সমস্ত রাবীকে তিনি ন্যায়বান ও বিশ্বস্ত বলেছেন)।
ইমাম হাফিয যাহাবীর ‘সিয়ারু আলামিন নুবালা’ কিতাবের সম্পাদনাতে(১/৪০১, ১ নং পাদটীকা) শায়খ শুয়াইব এই সনদকে সহীহ এবং এর সমস্ত রাবীকে ন্যায়বান এবং বিশ্বস্ত বলেছেন।
.
সালাফী স্কলারবৃন্দ যারা এই হাদীসকে সহীহ বলেছেন অথবা গ্রহণ করেছেন
———————————————————————————————————
.
২। আব্দুর রহমান আল মুয়াল্লিমি আল ইয়ামানী (মৃঃ১৩৮৬ হিঃ) তার ‘কিতাব কিয়াম রমাদ্বান’ এ (দেখুনঃ পৃ – ৫৭,মাকতাবা আল মাক্কীয়া, প্রথম সম্পাদনা, মক্কা, ১৯৯৭) বায়হাক্বীর ‘সুনান আল কুবরা’ তে বর্ণিত রেওয়ায়েতটিকে সহীহ বলেছেন এবং ন্যায়বিচার করেছেন।
.
৩। সাম্প্রতিক কালের একজন সালাফী যিনি আলবানী এর প্রতিপক্ষ, ইসমাঈল আল আনসারী (মৃঃ ১৯৯৬ খ্রিঃ / ১৪১৭ হিঃ), তার ‘তাসহীহ হাদীস সালাতিল তারাবীহ ইশরীন রাকা’আ ওয়াল রাদ আলা আল আলবানী ফি তাদ’ইফিহি’ কিতাবে (পৃঃ ৭, মাকতাবা আল ইমাম আল শাফী, রিয়াদ, ২য় সম্পাদনা, ১৯৮৮) ইমাম বায়হাক্বীর ‘সুনান আল কুবরা’ তে বর্ণিত রেওয়ায়েতটির কথা উল্লেখ করেছেন এবং উল্লেখ করেছেন যে, এই হাদীসকে ইমাম আল নববী তার ‘আল খুলাসা’ এবং ‘আল মজমু’ কিতাবে আল যায়লাই (নাসবুর রায়াহ এর লিখক) এর সাথে সম্মতিক্রমে, তক্বীউদ্দীন আল সুবকী তার ‘শরহে আল মিনহাজ’ কিতাবে, ইবনে আল ইরাক্বী তার ‘তারহীল তাতরীব’ কিতাবে, আল আইনী তার ‘উমদাতুল ক্বারী’ কিতাবে, আল সুয়ুতী তার ‘আল মাসাবিহ’ কিতাবে, আলি আল ক্বারী তার শরাহ মুয়াত্তাতে এবং আল নীমাভী তার ‘আছারুস সুনান’ কিতাবে সহীহ বলেছেন।
.
৪। দামেস্ক এর সাম্প্রতিককালের সালাফী আব্দুল ক্বাদীর আল আরনাউতও (মৃঃ ২০০৪ খ্রিঃ / ১৪২৫ হিঃ) ইমাম ইবনে আল আসির আল জাযারী (মৃঃ ৬০৬ হিঃ) এর ‘জামি আল উসুল ফি আহাদিস আল রসুল’ কিতাবের সম্পাদনাতে (৬/১২৩-১২৪) বায়হাক্বীর ‘সুনান আল কুবরা’ তে উল্লেখিত রেওয়ায়েতকে সহীহ বলেছেন।
.
৫। সালাফী দলের একজন লিখক হলেন সৌদী পন্থী আবদুল্লাহ আল দুয়াইশ (মৃঃ ১৪০৭ হিঃ)। তার ‘তানবীহ আল ক্বারী লি তাকবিয়া মাদু’য়াফা আল আলবানী’ কিতাবে (পৃঃ৪৭-৪৮), এই সনদের সমস্ত রাবীকে ছিকাহ (বিশ্বস্ত) বলেছেন।
.
৬। হামুদ আল তুবাইযিরি (মৃঃ ১৯৯২ খ্রিঃ) যিনিও একজন সৌদী সালাফী লেখক হিসেবে খুবই বিখ্যাত, তার ‘আল রাদ আলাল কাতিব আল মাফতুন’ কিতাবে (পৃঃ ১৩২) ইমাম আল বায়হাক্বীর সনদকে সহীহ বলেছেন।
.
সংক্ষেপে মূলত এই হল বায়হাক্বীর এর রেওয়ায়েত সম্পর্কে সলফে সালেহীন এবং মুহাদ্দিসীনদের রায়। আহলে হাদীস ভাইয়েরা দেখুন আপনাদের তথাকথিত শায়খ এবং ইমামরা কি করেছেন এসব হাদীস নিয়ে !! কতজন বড় বড় মুহাদ্দিসীনদের তারা উম্মতের সাথে প্রতারণা করেছেন বলে অভিযুক্ত করে ফেলেছেন !! দেখুন, আপনাদের শায়খদের আসল চেহারা নিজের চোখে !! কি ধরণের মিথ্যাচার, ধোঁকাবাজি আর প্রতারণা তারা নিজেরা করেছেন উম্মতের সাথে !!
তাই আপনাদের কাছে বিনীত অনুরোধ, আসুন, সত্য পথে আসুন, ন্যায় পথে আসুন, ৮ রাকাআত তারাবীহ এর বিদয়াতী পথ পরিহার করে সাহাবাদের ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে যে ২০ রাকাআত তারাবীহ প্রমাণিত তা গ্রহণ করুন এবং সে অনুযায়ী আমল করুন। আপনাদের সত্যের দাওয়াত দিচ্ছি, গ্রহণ করুন। আর মনে রাখবেন একদিন আপনাকে এই সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে, আপনাকে সত্যের পথে দাওয়াত দেওয়া হয়েছিল, আপনি গ্রহণ করেছিলেন কি না ? যদি গ্রহণ না করে থাকেন তবে এর উপযুক্ত জবাব আপনার কাছে আছে কি ? ভেবে দেখুন আর একটিবার !
.
.
তারাবিহ সম্পর্কে শক্তিশালী রেওয়ায়েত সমূহঃ
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷
.
প্রথম হাদিসঃ
——————–
.
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল(সাঃ) রমজান মাসে বিশ রাকাআত তারাবীহ ও বিতির আদায় করতেন।  (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা-  ৫/২২৫,সুনানে বায়হাকী-  ৪/৬০) 
.
সনদ বিশ্লেষণঃ
.
হাদীসটি ছেকাহ রাবীদের  অবিচ্ছিন্ন সূত্রে বর্ণিত হওয়ার  কারণে হাদীসটি সম্পূর্ণ সহীহ।  আবার হাদীসটি শাজ ও মুআল্লালও নয়,ফলে হাদীসটি  গ্রহণযোগ্য হওয়াতে কোন আপত্তির লেশমাত্র নেই।  হাদীসটির সনদে ৪জন রাবী রয়েছে।
.
প্রথম রাবী হলেনঃ
.
ইয়াজিদ ইবনে হারুন।তিনি ছেকাহ। (তাকরীবুত তাহযীব২/৩৩৩, তাহযীবুত তাহযীব১১/৩৬৬) 
.
দ্বিতীয় রাবী হলেনঃ
.
আবু শায়বা ইব্রাহীম ইবনে ওসমান। তিনি আদেল ও হাফিজুল  হাদীস। (তাহযীবুত তাহযীব১/১৪৫, তাজাল্লিয়াতে সফদর৩/১৭৩, আর রফউ ওয়াত তাকমীল ৩০৬ ও ৩৮৩, মুকাদ্দামায়ে ইবনে সালাহ৮৬)
.
তৃতীয় রাবী হলেনঃ
.
হাকাম ইবনে উতায়বাহ।তিনি  ছিকাহ। (তাহযীবুল কামাল ৩/৫০, তাকরীবুত তাহযীব ১/২৩২)
.
চতুর্থ রাবী হলেনঃ
.
মিকসাম রহঃ। তিনি বুখারী শরীফের রাবী,ছদুক এবং ছিকাহ। (তাহযীবুল কামাল১০/৮৬, তাকরীবুত তাহযীব২/২১১, মীযানুল ই’তিদাল৬/৫০৮)। 
.
২য় হাদীসঃ
—————–
.
হযরত সাইব ইবনে ইয়াযীদ রাঃ  বলেছেন,তাঁরা ওমর রাঃ এর যুগে  রমজান মাসে ২০রাকাত পড়তেন এবং নামাজে বড় বড় সূরাগুলি  পড়তেন।আর ওসমান রাঃ এর যুগে দীর্ঘ নামাজের কারণে তাঁদের (কেউ কেউ)লাঠি ভর দিয়ে দাঁড়াতেন।
(সুনানে কুবরা৪/৬১; বায়হাকী ২/৪৯৬) হাদীসটি সহীহ  (ইলাউস সুনান৭/ ৭৩; আছারুস সুনান২৮৯) 
.
সনদ বিশ্লেষণ: 
.
প্রথম রাবী হলেনঃ 
.
আবু আব্দুল্লাহ হুসাইন। তিনি ছিকা ও ছদুক (সিয়ারু আলামিন  নুবালা ১৩/২৪৫; তারীখুল  ইসলাম ২৮/২০৪; তুহফাতুল  আহওয়াজী-৩/৪৪৭)।
.
দ্বিতীয় রাবী হলেনঃ
.
আহমাদ ইবনে মুহাম্মাদ।তিনি হাফেজ ও ছিকা  (সিয়াঃনুবালা১২/৩৫৪)
.
তৃতীয় রাবী হলেনঃ
.
আব্দুল্লাহ ইবনে মুহাম্মাদ।তিনি  ছিকা ও ছদুক  (প্রাগুক্ত১১/৪১৩)
.
চতুর্থ রাবী হলেনঃ
.
আলী ইবনে জায়াদ।তিনি ছিকাওছদুক (তাহযীবুত তাহযীব৭/২৯০,২৯১)
.
পঞ্চম রাবী হলেনঃ
.
ইবনে আবি যিব।তিনি ছিকা,  ফকীহ,বুজুর্গ (তাকরীবুত তাহযীব২/১০৫)
.
ষষ্ঠ রাবী হলেনঃ
.
ইয়াযীদ ইবনে খুছায়ফা। তিনি ছিকা (তাকরীবুত তাহযীব২/৩২৭; তাহযীবুত তাহযীব১১/৩৪০) 
.
সপ্তম রাবী হলেনঃ
.
সাইব ইবনে ইয়াযীদ রাঃ। তিনি  সাহাবী (মীযানুল ইতিদাল৭/২৫০)। 
.
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণ হল ইমাম বায়হাকী কর্তৃক বর্ণিত  হাদীসটি সম্পূর্ণ সহীহ এবং অবিচ্ছিন্ন সূত্রে বর্ণিত।
.
৩য় হাদীসঃ
—————-
.
ইয়াযীদ ইবনে রহঃ বলেন, ওমর রাঃ এর যুগে রমজান মাসে ২৩রাকাত পড়তেন।  (মুয়াত্তা মালেক৪০;সুনানে  কুবরা,বায়হাকী২/৪৯৬)
.
বর্ণিত হাদীসটি মুরছাল এবং  হাদীসটি গ্রহণযোগ্য  (মুকাদ্দামায়ে ইবনে ছলাহ৪৯; উসূলে সারাখছী ১/৩৭০; মুকাদ্দামায়ে ফাতহুল মুলহিম৭৯, ৮০)
.
সনদ বিশ্লেষণঃ
.
প্রথম রাবী হলেনঃ
.
ইমাম মালেক রহঃ। তিনি মুহাদ্দীস হিসেবে সর্ব মহলে স্বীকৃত।
.
দ্বিতীয় রাবী হলেনঃ
.
ইয়াযীদ ইবনে রুমান রহঃ।তিনি ছিকা (তাহযীবুত তাহযীব ১১/৩২৫; তাকরীবুত তাহযীব ২/৩২৩; তাহযীবুল কামাল১১/ ২৬)
.
৪র্থ হাদীসঃ
——————
.
আব্দুর রহমান ইবনে হরমুজ  বলেন, আমি রমজান মাসে  মুসল্লিদেরকে দেখতাম কাফিরদের  উপর অভিশাপ দিতে।কারী সাহেব  তারাবীর প্রথম ৮রাকাতে সূরা  বাকারা পড়তেন।যখন ১২  রাকাত পড়া হত তখন দেখতাম আস্তে আস্তে ছোট সূরা পড়ছেন  (মুয়াত্তা মালেক৪০) 
.
সনদ বিশ্লেষণঃ 
.
প্রথম রাবী হলেনঃ  ইমাম মালেক রহঃ।
.
দ্বিতীয় রাবী হলেনঃ 
.
দাউদ ইবনে হুসাইন।তিনি ছিকা  (তাকরীবুত তাহযীব১/২৭৮;  তাহযীবুত তাহযীব৩/১৮২)। 
.
তৃতীয় রাবী হলেনঃ
.
আব্দুর রহমান ইবনে হরমুজ আল  আ’রাজ। তিনি ছিকাহ এবং সিহাহ  ছিত্তার রাবী (তাকরীবুত তাহযীব  ১/৫৯৪; তাহযীবুত তাহযীব ৬/২৯০) 
.
৫ম হাদীসঃ
——————
.
আব্দুল আজিজ ইবনে রুফাই রহঃ  বলেন,উবাই ইবনে কাআব রাঃ রমজান মাসে মদিনাতে লোকদের নিয়ে ২০রাকাত তারাবী এবং ৩রাকাত বিতর পড়তেন (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা ২/২৮৫) 
.
সনদ বিশ্লেষণঃ
.
প্রথম রাবী হলেনঃ
.
হুমাইদ ইবনে আব্দুর রহমান। তিনি ছিকা (তাকরীবুত তাহযীব  ১/২৪৫) 
.
দ্বিতীয় রাবী হলেনঃ 
.
হাসান ইবনে সালিহ।তিনি ছিকা,  ফকীহ ও আবিদ  (তাহযীবুত তাহযীব২/২৮৫)।
.
তৃতীয় রাবী হলেনঃ
.
আব্দুল আজীজ ইবনে রুফাই। তিনি ছিকা  (তাকরীবুত তাহযীব ১/৬০৩;  তাহযীবুত তাহযীব ৬/৩৩৭; সিয়ারু আলামিন নুবালা ৬/৫৮; তারীখুল ইসলাম৮/১০২)
.
৬ষ্ঠ হাদীসঃ
——————
.
আমাশ রহঃ বলেন,আব্দুল্লাহ ইবনে  মাসউদ রাঃ ২০রাকাত তারাবী ও ৩ রাকাত বিতর পড়তেন । (তুহফাতুল আহওয়াজী  ৩/৪৪৫)
.
হাদীসটি মুরসাল তাই হুজ্জাত হবে।
.
৭ম হাদীসঃ
.
সুতাইর ইবনে শাকাল বলেন, তিনি ২০রাকাত তারাবী ও বিতর পড়তেন  (মুছনাদে ইবনে আবি শায়বা ৫/২২২)
.
সনদ বিশ্লেষণঃ
.
প্রথম রাবী হলেনঃ
.
ওয়াকি ইবনুল জাররাহ। তিনি ছিকা (তাহযীবুত তাহযীব  ২/২৮৪)।
.
দ্বিতীয় রাবী হলেনঃ
.
সুফিয়ান ইবনে উয়াইনাহ।তিনি ছিকা, হাফিজ, ইমাম, হুজ্জাত (প্রাগুক্ত১/৩৭১)
.
তৃতীয় রাবী হলেনঃ
.
আবু ইসহাক আমর।তিনি ছিকা  (প্রাগুক্ত১/৭৩৯)
.
চতুর্থ রাবী হলেনঃ
আব্দুল্লাহ ইবনে কাইস। তিনি  আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাসের রাঃ ছাত্র (মুকাদ্দামায়ে ইবনে সালাহ ৯০)
.
৮ম হাদীসঃ
—————-
.
ইয়াহইয়া ইবনে সাঈদ আল-  আনসারী বলেন,ওমর রাঃ এক  ব্যক্তিকে ২০রাকাত তারাবী  পড়ানোর জন্য নিযুক্ত করলেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা  ৫/২২৩)।
.
সনদ বিশ্লেষণঃ
.
এই হাদীসের সকল রাবী ছিকাহ। আর হাদীসটি গ্রহণযোগ্য মুরসাল।
.
৯ম হাদীসঃ
—————–
.
তাবেয়ী আবুল বাখতারী রমজান মাসে ৫ তারবিয়া অর্থাৎ ২০ রাকাত তারাবী এবং ৩রাকাত বিতর পড়তেন।  (মুসনাদে ইবনে আবী শায়বা  ৫/২২৪)
.
সনদ বিশ্লেষণঃ
.
আবুল বাখতারী ছিকা ও ছবত (তাকরীবুত তাহযীব১/৩৬২)
.
১০ম হাদীসঃ
——————-
.
সাইব ইবনে ইয়াযীদ রহঃ বলেন, আমরা ওমর রাঃএর যুগে তারাবীর নামাজ আদায় করে যখন ঘরে ফিরতাম তখন সুবহে সাদিক উদিত হওয়ার উপক্রম হত। ওমর রাঃ এর যুগে তারাবী (বিতরসহ) ২৩রাকাত ছিল।  (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক  ৪/২৬১)
.
সনদ বিশ্লেষণঃ
.
বর্ণিত হাদীসের তৃতীয় রাবী  হারেস ইবনে আব্দুর রহমান।তাঁর  হাদীস গ্রহণযোগ্য (কিতাবুল জরহে ওয়াত তা’দীল ৩/৮৯)
.
উপসংহারঃ
.
যারা ৮রাকাত তারাবীর দাবিদার এবং বলেন ২০ রাকাত তারাবীর পক্ষে কোন সহীহ হাদীস নেই, তাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখানোর জন্যই এখানে ১০টি  সহীহ এবং গ্রহণযোগ্য হাদীস  উল্লেখ করা হল। এছাড়াও অনেক  সহীহ হাদীস আছে ২০রাকাতের  পক্ষে। কিন্তু, সত্যাণ্বেষীদের জন্য এগুলিই যথেষ্ট।
.
.
আহলে হাদিসদের তারাবি আট রাকাত হওয়ার দলিল ও আমাদের খন্ডনঃ
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷
.
নবীজির (সা) প্রাণ প্রিয় খলিফা হযরত উমর (রা) এর আমলে তারাবির নামায বিশ রাকাত হওয়ার উপর সমস্ত সাহাবাদের ঐকমত বা ইজমাহ হয়েছে। এরপর হতে অদ্যাবধি মক্কার হারাম শরিফ এবং মদিনার মসজিদে নববীতে তারাবির নাম বিশ রাকাত পড়া হচ্ছে।
সমগ্র দুনিয়ায় চারো মাযহাবের অনুসারীরা বিশ রাকাত তারাবির উপর আমল করে যাচ্ছেন। শুধুমাত্র আহলে হাদিস নামধারী বৃটিশ সৃষ্ট এ নতুন ফেরকার অনুসারীরা, যাদের উৎপত্তি- ইতিহাস গত ১৮১৮ খ্রিষ্টাব্দের পরের; তারাই সহিহ হাদিসের চটকদার স্লোগানের অন্তরালে সম্প্রতি তারাবীহ আট রাকাত হওয়ার কথা বলে জনমনে চরম বিভ্রান্তি ছড়িয়ে অশান্তি সৃষ্টি করে চলেছে। অথচ তারাবীহ আট রাকাত হওয়ার পক্ষে কোনো সহিহ হাদিস নেই, যা এখানে আপনাদের সম্মুখে বিশদভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করব, ইনশাআল্লাহ।
.
কথিত আহলে হাদিসরা তারাবি আট রাকাত হওয়ার পক্ষে নিচের হাদিস দ্বারা দলিল দিতে চায়।
.
হাদিস :
.
ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﺳﻠﻤﺔ ﺑﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺃﻧﻪ ﺳﺄﻝ ﻋﺎﺋﺸﺔ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﺎ ﻛﻴﻒ ﻛﺎﻧﺖ ﺻﻼﺓ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓﻲ ﺭﻣﻀﺎﻥ؟ ﻓﻘﺎﻟﺖ : ﻣﺎ ﻛﺎﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳﺰﻳﺪ ﻓﻲ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﻭﻻ ﻓﻲ ﻏﻴﺮﻩ ﻋﻠﻰ ﺇﺣﺪﻯ ﻋﺸﺮﺓ ﺭﻛﻌﺔ ﻳﺼﻠﻲ ﺃﺭﺑﻌﺎ ﻓﻼ ﺗﺴﻞ ﻋﻦ ﺣﺴﻨﻬﻦ ﻭﻃﻮﻟﻬﻦ ﺛﻢ ﻳﺼﻠﻲ ﺃﺭﺑﻌﺎ ﻓﻼ ﺗﺴﻞ ﻋﻦ ﺣﺴﻨﻬﻦ ﻭﻃﻮﻟﻬﻦ ﺛﻢ ﻳﺼﻠﻲ ﺛﻼﺛﺎ فقلت يا رسول الله أ تنام قبل أن توتر ؟ قال يا عائشة ان عيني تنامان ولا ينام قلبي
.
অনুবাদ : আবু সালামা ইবনে আব্দুর রহমান থেকে বর্ণিত, তিনি হযরত আয়েশা রা. কে জিজ্ঞাসা করেন যে, রমযানে নবীজীর নামায কেমন হত? তিনি উত্তরে বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানে এবং রমযানের বাইরে এগার রাকাতের বেশি পড়তেন না। প্রথমে চার রাকাত পড়তেন, যার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করো না! এরপর আরও চার রাকাত পড়তেন, যার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা তো বলাই বাহুল্য! এরপর তিন রাকাত (বিতর) পড়তেন।
উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা (রা) [আরো] বলেন, আমি রাসূল (সা)- কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহ’র রাসুল! আপনি কি বিতিরের নামায আদায়ের পূর্বে ঘুমিয়ে পড়েন? উত্তরে তিনি বললেন, হে আয়েশা, আমার চোখ ঘুমায়, কিন্তু আমার অন্তর ঘুমায় না।” [এ পর্যন্ত হাদিসের অনুবাদ সমাপ্ত হল] –
{সহীহ বুখারী ১/১৫৪, হাদীস ১১৪৭; সহীহ মুসলিম ১/২৫৪, হাদীস ৭৩৮; সুনানে নাসায়ী ১/২৪৮, হাদীস ১৬৯৭; সুনানে আবু দাউদ ১/১৮৯, হাদীস ১৩৩৫; মুসনাদে আহমদ ৬/৩৬, হাদীস ২৪০৭৩}
.
দলিলের অযুক্তিকতা ও খণ্ডনঃ
————————————————-
.
উল্লিখিত হাদিসকে কয়েকটি কারণে আট রাকাতের দলিল বানানো যুক্তিসংগত নয়। বিস্তারিত নিম্নরূপঃ
.
১- “তারাবীহ” (تراويح) শব্দটি বহুবচন। তার একবচন হল “তারবীহ” (ترويح) । কিন্তু আভিধানিক অর্থে “তারবীহ” (ترويح) বলা হয় একবার বিশ্রাম নেয়াকে। শরিয়তের পরিভাষায় রামাদ্বানের রাতে তারাবীর প্রতি চার রাকাত বা’দ বিশ্রাম নেয়াকে (একবচনে) “তারবীহ” (ترويح) বলা হয়। পরবর্তীকালে এটিই তার আভিধানিক অর্থে রূপান্তরিত হয়ে যায়।
[সূত্র— মেসবাহুল লুগাত, পৃষ্ঠা ৩২২]
.
বুখারি শরিফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ “ফাতহুল বারী” কিতাবে আল্লামা হাফেজ ইবনে হাজার (রহ) তিনিও লিখেছেন :
.
ﺗﻌﺮﻳﻒ ﺍﻟﺘﺮﺍﻭﻳﺢ ﻫﻲ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﺍﻟﺘﻲ ﺗﺼﻠﻰ ﺟﻤﺎﻋﺔ ﻓﻲ ﻟﻴﺎﻟﻲ ﺭﻣﻀﺎﻥ، ﻭﺍﻟﺘﺮﺍﻭﻳﺢ ﺟﻤﻊ ﺗﺮﻭﻳﺤﺔ، ﺳﻤﻴﺖ ﺑﺬﻟﻚ ﻷﻧﻬﻢ ﻛﺎﻧﻮﺍ ﺃﻭﻝ ﻣﺎ ﺍﺟﺘﻤﻌﻮﺍ ﻋﻠﻴﻬﺎ ﻳﺴﺘﺮﻳﺤﻮﻥ ﺑﻴﻦ ﻛﻞ ﺗﺴﻠﻴﻤﺘﻴﻦ، ﻛﻤﺎ ﻗﺎﻝ ﺍﻟﺤﺎﻓﻆ ﺍﺑﻦ ﺣﺠﺮ ﺭﺣﻤﻪ ﺍﻟﻠﻪ، ﻭﺗﻌﺮﻑ ﻛﺬﻟﻚ ﺑﻘﻴﺎﻡ ﺭﻣﻀﺎﻥ
.
অনুবাদ : “তারাবীহ’র সংজ্ঞা হল, রামাদ্বানের রজনীতে জামাতে যে নামায আদায় করা হয়, তাই তারাবীহ। তারাবীহ বহুবচন, একবচনে তারবিয়াহ। তারাবীহ বলে নাম রাখার কারণ, মুসল্লিগণ প্রতি দুই সালামের মধ্যখানে বিশ্রাম নেয়।”
.
তাই বলা যায়, যেহেতু তারাবীহ (تراويح) বহুবচন শব্দ, তার একবচন “তারবীহ” (ترويح)। তার মানে হবে একবার বিশ্রাম নেয়া। সে হিসেবে দুই বার বিশ্রাম নেয়াকে “তারবিহাতান” বা “তারবিহাতাঈন” বলা হবে।
.
এখন বুঝুন, আরবীতে বচন হয় তিনটি। একবচন, দ্বিবচন ও বহুবচন। রামাদ্বানে প্রত্যেক চার রাকাত বা’দ আরাম করা হয়। যদি তারাবির নামায আট রাকাত হত, তাহলে ৪+৪= ৮ রাকাত তারাবির ক্ষেত্রে শুধুমাত্র দুই বারই বিশ্রাম নেয়ার সুযোগ থাকে। যা বচনের ক্ষেত্রে দ্বিবচন হয়। ফলে তাকে আরবী ভাষায় (বহুবচনে) তারাবীহ (تراويح) বলা যাবেনা, বরং দুই বার বিশ্রাম নেয়ার কারণে (দ্বিবচনে) “তারবিহাতান” বা “তারবিহাতাঈন” ترويحتان او ترويحتين বলা যেতে পারে।অথচ আরবী ভাষায় (বহুবচনে) তারাবীহ ( ﺗﺮﺍﻭﻳﺢ) হতে হলে তিনের অধিক বার বিশ্রাম নিতে হয়। তাই অভিধান অনুসারে তিনবার বা ততোধিক বার বিশ্রাম নিতে হলে তখন তারাবির রাকাত সংখ্যা আট রাকাত হওয়ার মোটেই সুযোগ থাকেনা, বরং তখন তারাবির রাকাত সংখ্যা বারো অথবা তার চেয়েও অধিক তথা বিশ রাকাতই হতে হয়, যা যুক্তিক ও বিবেকগ্রাহ্য। অতএব তারাবির রাকাত সংখ্যা আট রাকাত নয়, বরং তার চেয়েও অধিক তথা বিশ রাকাত।
.
২- মূলত তাহাজ্জুদ নামাযের সাথেই উক্ত হাদিসটির সম্পর্ক। কারণ হযরত আয়েশা (রা) রামাদ্বান এবং অন্যান্য মাস তথা পুরো বছরের কথা উল্লেখ করেছেন।
উনার ভাষ্য হল : ﻓﻲ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﻭﻻ ﻓﻲ ﻏﻴﺮﻩ অর্থাৎ “রামাদ্বান এবং অন্যান্য মাসে এগার রাকাতের বেশি পড়তেন না”। তার মানে রাসূল (সা) রামাদ্বান ছাড়াও পুরো বছর ব্যাপী এ এগার রাকাত আদায় করতেন। অথচ তারাবির সম্পর্ক তো শুধু মাহে রামাদ্বানের সাথে। যার বাহিরে অন্যান্য মাসে তা পড়া হয় না। ফলে বুঝা গেল, হাদিসটিতে উল্লিখিত বিতির সহ মোট এগার রাকাতের সম্পর্ক তারাবির সাথে নয়, বরং তাহাজ্জুদের নামাযের সাথেই সম্পর্ক। সুতরাং প্রমাণিত হল যে তারাবির রাকাত সংখ্যা আট নয়, বরং বিশ রাকাত।
.
৩- তারাবির নামায রাসূল (সা) থেকে এশার পর আদায় করার কথা যেমন উল্লেখ রয়েছে, তেমনি উল্লেখ রয়েছে শেষ রাতে বিতির সহ তাহাজ্জুদের নামায আদায় করার কথা। হাদিসে এ বাক্যটি রয়েছে এরকম যে ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺍ ﺗﻨﺎﻡ ﻗﺒﻞ ﺃﻥ ﺗﻮﺗﺮ؟ অর্থাৎ হে আল্লাহ’র রাসূল! আপনি কি বিতির পড়ার আগেই ঘুমিয়ে পড়েন? এ বাক্যাংশটি দ্বারাও এ কথা প্রমাণ হল যে, উক্ত হাদিসটির সম্পর্ক তাহাজ্জুদের সাথে, তারাবির সাথে নয়। কারণ ঘুমিয়ে পড়লে তাহাজ্জুদের ওয়াক্ত পেরিয়ে যাওয়ার আশংকা থাকতে পারে। তাই রাতের শেষাংশে রাসূলের বিতির পড়ার যে নিয়ম, তা উপেক্ষা করে রাতের প্রথমাংশে তিনি ঘুমিয়ে পড়েন কিনা এ ব্যাপারে সতর্ক করাই উক্ত বাক্যাংশের প্রকৃত উদ্দেশ্য। সামগ্রিক ভাবে প্রমাণ হল, উল্লিখিত হাদিসে বিতির সহ এগার রাকাতের সম্পর্ক তারাবির সাথে নয়। কেননা রাসূল (সা) তিনি রাত্রের প্রথমাংশে ঘুমাতেন এবং বিতিরের নামায তাহাজ্জুদের সাথে আদায় করতেন। বুখারি শরিফে এ কথার সমর্থনে গোটা এক খানা হাদিসই উল্লেখ রয়েছে।
যেমনঃ
.
সহিহ বুখারির অপর আরেকটি হাদিসে এসেছে :
.
ﻭﻓﻲ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ ﻋﻦ ﺍﻷﺳﻮﺩ ﻗﺎﻝ ﺳﺄﻟﺖ ﻋﺎﺋﺸﺔ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﺎ ﻛﻴﻒ ﻛﺎﻧﺖ ﺻﻼﺓ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺑﺎﻟﻠﻴﻞ؟ ﻗﺎﻟﺖ : ﻛﺎﻥ ﻳﻨﺎﻡ ﺃﻭﻟﻪ ﻭﻳﻘﻮﻡ ﺁﺧﺮﻩ ﻓﻴﺼﻠﻲ ﺛﻢ ﻳﺮﺟﻊ ﺇﻟﻰ ﻓﺮﺍﺷﻪ . ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ
.
অনুবাদ : বিশিষ্ট তাবেয়ি হযরত আসওয়াদ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি হযরত আয়েশা (রা) -কে জিজ্ঞেস করলাম, রাসূলের (সা) রাত্রিকালীন নামায কেমন ছিল? তিনি উত্তরে বললেন, রাসূল (সা) তিনি রাত্রের প্রথমাংশে ঘুমাতেন আর শেষাংশে কিয়ামুল লাইল করতেন তথা তাহাজ্জুদ পড়তেন। এরপর সালাত আদায় শেষে তিনি বিছানায় তাশরিফ নিতেন।
সূত্র — সহিহ বুখারি শরিফ।
.
৪- হাদিসটির খন্ডাংশ “ ﻭﻻ ﻓﻲ ﻏﻴﺮﻩ অর্থাৎ অন্য মাসেও” হযরত আয়েশা (রা) -এর এ জবাবটি দ্বারা রাসূলের পুরো বছর তাহাজ্জুদ পড়া প্রমাণিত।প্রশ্নকারীর প্রশ্নের উদ্দেশ্য ছিল, আল্লাহ’র রাসূল (সা) মাহে রামাদ্বানেও তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করেন, নাকি তারাবির কারণে তা ছেড়ে দেন? প্রশ্নকারীর প্রশ্নের উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে তিনি জ্ঞানগর্ভ জবাব দিয়েছেন।
হযরত আয়েশা (রা)- এর জ্ঞানগর্ভ জবাবটি হল : “আল্লাহ’র রাসূল (সা) রামাদ্বান এবং রামাদ্বানের বাহিরে বিতিরের নামায সহ এগার রাকাত আদায় করতেন। চার চার রাকাত করে মোট আট রাকাত আর তিন রাকাত বিতিরের নামায আদায় করতেন।
.
কথিত আহলে হাদিস নামধারী গায়রে- মুকাল্লিদরা মানুষকে ধোঁকা দেয়ার উদ্দেশ্যে বুখারি শরিফের উক্ত হাদিসটি দ্বারা তারাবির আট রাকাতের পক্ষে দলিল (?) দেয়। এটি ছাড়া তাদের মেরুদণ্ডহীন মতবাদটির পক্ষে দ্বিতীয় আর কোনো দলিল নেই।
.
মজার ব্যাপার হল, বুখারি শরিফের উক্ত হাদিসটিতে রাসূলেপাকের (সা) উক্ত আট রাকাত দু সালামে চার চার রাকাত করে পড়ার কথাই উল্লেখ পাওয়া যায়। বিতিরের নামাযের রাকাত সংখ্যা “তিন” হওয়ার কথাও প্রমাণিত।
.
৫- হযরত আয়েশা (রা)- এর উক্ত রেওয়ায়েত দ্বারা যদি তারাবিই বুঝানো উদ্দেশ্য হত, তাহলে হযরত উমর (রা)-এর খেলাফত আমলে যখন বিশ রাকাতের উপর উম্মাহ’র ইজমা হল, তখন হযরত আয়েশা (রা) তার বিরুধিতা করেননি কেন?হক্বকথা বলা থেকে তিনি চুপ ছিলেন কেন? অথচ তিনি তখনো জীবিত ছিলেন। হযরত আয়েশা (রা) নবীজি (সা) থেকে মোট ২২১১টি হাদিস রেওয়ায়েত করেছিলেন এবং ৫৭ বা ৫৮ হিজরীতে ইন্তিকাল করেছিলেন।
.
৬- আল্লামা হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী এই হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন- “আর আমার কাছে এটি প্রকাশিত হয়েছে যে, ১১ রাকাতের থেকে না বাড়ানোর রহস্য এটি যে, নিশ্চয় তাহাজ্জুদ ও বিতরের নামায রাতের নামাযের সাথে খাস। আর দিনের ফরয যোহর ৪ রাকাত আর আসর সেটাও ৪ রাকাত আর মাগরীব হল ৩ রাকাত, যা দিনের বিতর। সুতরাং সমতা-বিধান হল রাতের নামায দিনের নামাযের মতই সংখ্যার দিক থেকে সংক্ষিপ্ত ও বিস্তারিত হওয়া। আর ১৩ রাকাতের ক্ষেত্রে সমতা- বিধান হল, ফযরের নামায মিলানোর মাধ্যমে। কেননা এটি দিনের নামাযই তার পরবর্তী নামাযের মত। (ফাতহুল বারী শরহুল বুখারী-৩/১৭)
.
ইবনে হাজার (রহ) এর এই রহস্য বা হিকমত বর্ণনা কি বলছেনা, এই হাদিস দ্বারা তাহাজ্জুদ উদ্দেশ্য, কিন্তু তারাবীহ উদ্দেশ্য নয়?
এই বক্তব্যে তাহাজ্জুদের কথা স্পষ্টই উল্লেখ করলেন ইবনে হাজার (রহ)।
.
তাহাজ্জুদ ও তারাবীহের মাঝে পার্থক্য :
.
কথিত আহলে হাদিসরা ইদানীং বুল পাল্টে বলেন, “তাহাজ্জুদ আর তারাবীহ একই”। নিম্নবর্ণিত কারণে তাদের এই দাবিটি ভুল ।
.
১- তাহাজ্জুদের মাঝে ডাকাডাকি জায়েজ নয়, কিন্তু তারাবীহতে জায়েজ।
.
২- তারাবীহের সময় ঘুমানোর আগে তাহাজ্জুদের সময় নির্ধারিত নয় তবে উত্তম ঘুমের পর।
.
৩- মুহাদ্দিসীনে কিরাম তাহাজ্জুদ ও তারাবীহের অধ্যায় ভিন্ন ভিন্ন লিখেছেন।
.
৪- তাহাজ্জুদ নামাযের হুকুম কুরআন দ্বারা প্রমাণিত যথা সূরা ইসারার ৭৯ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
.
ﻭَﻣِﻦَ ﺍﻟﻠَّﻴْﻞِ ﻓَﺘَﻬَﺠَّﺪْ ﺑِﻪِ ﻧَﺎﻓِﻠَﺔً ﻟَّﻚَ ﻋَﺴَﻰ ﺃَﻥ ﻳَﺒْﻌَﺜَﻚَ ﺭَﺑُّﻚَ ﻣَﻘَﺎﻣًﺎ ﻣَّﺤْﻤُﻮﺩًﺍ
.
অর্থাৎ আর রাতে তাহাজ্জুদ পড় এটি তোমার জন্য নফল, অচিরেই তোমাকে তোমার রব প্রশংসিত স্থানে অধিষ্ঠিত করবেন। আর তারাবীহের ব্যাপারে আল্লাহর নবী বলেন-নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা রামযানের রোযা তোমাদের উপর ফরয করেছেন আর আমি তোমাদের উপর এতে কিয়াম করাকে সুন্নত করেছি। (সুনানে নাসায়ী-১/৩০৮) ।
.
সুতরাং বুঝা গেল তাহাজ্জুদ আল্লাহর আয়াত আর তারাবীহ নবীজীর বক্তব্য দ্বারা প্রমাণিত।
.
৫- তাহাজ্জুদের হুকুম মক্কায় হয়েছে আর তারাবীহের হুকুম মদীনায় হয়েছে।
.
৬- ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহঃ তিনিও তারাবীহ আর তাহাজ্জুদ আলাদা আলাদা বিশ্বাস করতেন। (মাকনা’-১৮৪) ।
.
৭- ইমাম বুখারী (রহ)- এর ক্ষেত্রে বর্ণিত আছে, তিনি রাতের প্রথমাংশে তার সাগরীদদের নিয়ে তারাবীহ পড়তেন আর শেষ রাতে একাকি তাহাজ্জুদ পড়তেন। (ইমাম বুখারী রহঃ এর জীবনী দ্রষ্টব্য )।
.
৮- যদি “সালাতুল- লাইল” দ্বারা তাহাজ্জুদ এবং তারাবীহ দুটি মিলে একই নামায উদ্দেশ্য হত, তাহলে হযরত আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত নিচের সহিহ হাদিসগুলোর জবাব কী? যেমন— সহিহ বুখারীতে রয়েছে, হযরত আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত, “রাসূল (সা)-এর “সালাতুল-লাইল” বা রাতের নামায ৭/৯/১১ রাকাত হতো, ফজরের সুন্নত ব্যতীত”।
[সূত্র : সহিহ বুখারী ১/৩৪৫ হাদীস নং ১১৩৯] ৷
.
আয়েশা (রা) থেকে অপর আরেক বর্ণনায় রয়েছে, “রাসূল (সা) ফজরের সুন্নত ব্যতীতই ১৩ রাকাত পড়তেন ৷” [ সূত্র : বুখারী ১/৩৫৪, হাদীস নং ১১৭০]৷
.
এবার লামাযহাবি কথিত আহলে হাদিসের নিকট জবাব চাই, যদি “সালাতুল-লাইল” বা রাতের নামায দ্বারা তাহাজ্জুদ এবং তারাবীহ দুটি মিলে একটি উদ্দেশ্য হয়; তাহলে যেখানে হযরত আয়েশা (রা) থেকেই ৭/৮/৯/১১/১৩ রাকাত বর্ণিত, সেখানে তারাবীহ’র রাকাত সংখ্যা শুধুই আট রাকাতের মধ্যে সীমাবদ্ধ করেন কেন?এটি কোন ধরণের সহিহ হাদিসের আমল! ! আফসোস! কথিত আহলে হাদিস নামধারীরা তারাবির নামায চার চার রাকাত করে মোট দুই সালামে আদায় করার বিপরীরে দুই দুই রাকাত করে মোট চার সালামে তা আদায় করে। বিতির আদায় করে শুধু এক রাকাত। যা সুস্পষ্টভাবে তাদেরই উদ্ধৃত সহিহ হাদিসের খেলাফ এবং চরম বিভ্রান্তিকর। অতএব আবারো প্রমাণিত হল, উক্ত হাদিসটি মোটেও কথিত আহলে হাদিসের দাবির পক্ষে নয়, বরং তদ্দারা বিতির সহ মোট এগার রাকাত তাহাজ্জুদের নামাযই প্রমাণিত। আহলে হাদিস নামধারীরা মানুষকে ধোঁকা দেয়ার জন্য রামাদ্বানের বাহিরে এর নাম দিয়ে থাকে “তাহাজ্জুদ” আর মাহে রামাদ্বানের তারাবিকে কখনো “ক্বেয়ামে রামাদ্বান” আবার কখনো “ক্বেয়ামুল লাইল” নাম দিয়ে থাকে। আসলে তারা এরকম দোটানা আচরণ করে কি বুঝাতে চাচ্ছে যে, তারাবির নামায বলতে কিছুই নেই??
.
তারাবি নামায ২০ রাকাতঃ
.
তারাবি নামায ২০ রাকাতের পক্ষে যুক্তি হচ্ছে, প্রখ্যাত সাহাবায়ে কেরামগণ (রা:) তারাবি নামায ২০ রাকাতের পক্ষে বর্ণনা করেছেন। আর তাঁরা হলেন, খলিফা হযরত উমর ফারুক (রা:) ।
.
তাফসিরে ইবনে কাসির প্রণেতা উল্লেখ করেছেন,
রাসূল (সা:) উনার চাচা
√ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা:),
√ হযরত আবুযর গিফারী,
√ হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা:),
√ হযরত হাসান (রা:),
√ হযরত ইয়াজিদ ইবনে রুমান (রা:),
√ হযরত ইবনে আবিল হাসনা (রা:),
√ হযরত আবদুল আজিজ ইবনে রুফাহ (রা:) প্রমূখ সাহাবায়ে কেরামগণ (রা:)-ও তারাবি নামায ২০ রাকাতের পক্ষে বর্ণনা করেছেন ।
.
মোল্লা আলী ক্বারী (রা:) তাঁর পূর্বের ইমামগণ হতে সংগৃহীত একটি হাদিস মিরকাত শরহে মিশকাতের ২য় খণ্ডের১৩৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন।
.
হাদিসটি হচ্ছে “রাসূল (সা:)-এর এরশাদ হচ্ছে, সাহাবায়ে কেরামের (রা:) ঐক্যমতের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত শরয়ী বিধান নিঃশর্তভাবে অনুসরণ করা উম্মতের জন্য আবশ্যক”।
.
সুতরাং এরূপ ক্ষেত্রে দ্বিমত পোষণ করা ইমান নষ্ট হওয়ার জন্য যথেষ্ট। রাসূল (সা:) ২০ রাকাত তারাবি নামাজ আদায় করতেন, এ সম্পর্কিত হাদিসসমূহ হচ্ছে
.
√ আল সুনানুল কুবরা বায়হাকীর ২য় খণ্ডের ৬৯৮ পৃষ্ঠার ৪২৮৬ নং হাদিস,
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা:) বলেন, রাসূল (সা:) রমজান মাসে ২০ রাকাত তারাবি ও বিতির নামাজ আদায় করতেন।
.
√ মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বাহ-এর ২য় খণ্ডের ১৬৩ পৃষ্ঠায় ৭৬৮০ নং হাদিসে হযরত শুতাইর ইবনে শাকাল (রা:) এবং হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রা:), তারীখু জুয়জান হামযাহ সাহমী (রা:) গ্রন্থের ১৩১৭ পৃষ্ঠায় ৫৫৭নং হাদিসটিতেও একই রকম বর্ণনা রয়েছে।
.
এ ছাড়া হযরত আবু যার গিফারী (রা:) হতে বর্ণিত সুনান তিরমিজির ৩য় খণ্ডের ১৬১ ও ১৬৯ পৃষ্ঠায় উল্লিখিত ৮০৬ নং হাদিসটিতে তিনি উল্লেখ করেন। তারাবির নামাজে রাসূল (সা:) কিয়ামুল লাইলও করতেন বলে উল্লেখ করেছেন। খোলাফায়ে রাশেদা হযরত উমর ফারুক (রা:), হযরত উসমান (রা:), হযরত আলী (রা:), ২০ রাকাত তারাবি নামাজ আদায় করতেন। আর এ সম্পর্কিত হাদিসসমূহ হলো:
.
√ ছিয়া- ছিত্তাহ হাদিস গ্রন্থসমূহের অন্যতম আবু দাউদ শরীফ-এর ২য় খণ্ডের ১৪২৯নং পৃষ্ঠায় হযরত হাসান (রা:) বলেন, হযরত উমর খাত্তাব (রা:) সকলকে হযরত উবাই ইবনে কাআব (রা:) এর পেছনে একত্র করলেন, তখন ইবনে কাআব (রা:) তাদের ইমামতি করে ২০ রাকাত নামাজ আদায় করলেন।
.
√ সুনানু বাইহাকীর ২য় খণ্ডের ৬৯৯ পৃষ্ঠায় উল্লিখিত ৪২৮৯ নং হাদিসে হযরত সায়ীব ইবনে ইয়াজিদ (রা.) বলেন, হযরত উসমান ইবনে আফকান (রা:) এর খিলাফতের সময়ে নামাজিরা দাঁড়ানোর কষ্টে লাঠিতে ভর দিতেন তবুও ২০ রাকাত তারাবির নামাজ কম পড়তেন না।
.
√ মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বাইর ২য় খণ্ডের ১৬৩ পৃষ্ঠায় উল্লিখিত ৭৬৮১ নং হাদিসে হযরত ইবনে আবিল হাসনা (রা:) বলেন, হযরত আলী (রা:) এক ব্যক্তিকে নির্দেশ দিলেন রমজানে ২০ রাকাত তারাবির নামাজ পড়তে।
এ প্রসঙ্গে আরো হাদীস:

২- জামে তিরমিযী, হাদীস নং ৮০৬।
.
৩- মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস নং ৭৬৮০, ৭৬৮১, ৭৬৮২, ৭৬৮৩, ৭৬৮৪, ৭৬৮৫।
.
৪- সুনানে কুবরা লিল বায়হাকী, হাদীস নং ৪২৯০, ৪২৯১, ৪২৯২।
.
৫- মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, হাদীস নং ৭৭৩৩।
.
৬- আল-মু’জামুল কাবীর লিত- তাবারানী, হাদীস নং ১২১০২।
.
৭- আল-মু’জামুল আওসাত লিত-তাবারানী, হাদীস নং ৭৯৮।
.
৮- কিতাবুল উম্ম ১/১৬৭।
.
এ ছাড়াও আরো অসংখ্য দলীল রয়েছে। সংক্ষেপে অল্প কিছু সংখ্যক দলীল উল্লেখ করা হলো। [বি: দ্র: হাদীস নাম্বার ও রেফারেন্সের ক্ষেত্রে “মাকতাবায়ে শামিলা” অনুসরণ করা হয়েছে।]
.
প্রিয় পাঠক! যে হাদিসের উপর তাদের নিজেদেরই আমাল নেই, সে হাদিসটি আমাদের আহলে সুন্নাহ’র মুসলিমদের বিপরীতে এবং তাদের স্বপক্ষে দলিল হতে পারে কিভাবে, তা কি একটু বলবেন? ?
অবশেষে বলা যায়, নবীজির (সা) প্রাণ প্রিয় খলিফা হযরত উমর (রা) এর আমলে তারাবির নামায বিশ রাকাত হওয়ার উপর সমস্ত সাহাবাদের ঐকমত বা ইজমা হয়েছে। এরপর হতে অদ্যাবধি মক্কার হারাম শরিফ এবং মদিনার মসজিদে নববীতে তারাবির নাম বিশ রাকাত পড়া হচ্ছে। সমগ্র দুনিয়ায় চার মাযহাবের অনুসারীরা বিশ রাকাত তারাবির উপর আমল করে যাচ্ছেন। শুধুমাত্র আহলে হাদিস নামধারী বৃটিশ সৃষ্ট এ নতুন ফেরকার অনুসারীরা, যাদের উৎপত্তি- ইতিহাস গত ১৮১৮ খ্রিষ্টাব্দের পরের; তারাই সহিহ হাদিসের চটকদার স্লোগানের অন্তরালে সম্প্রতি তারাবীহ আট রাকাত হওয়ার কথা বলে জনমনে চরম বিভ্রান্তি ছড়িয়ে অশান্তি সৃষ্টি করে চলেছে। অথচ তারাবীহ আট রাকাত হওয়ার পক্ষে কোনো সহিহ হাদিস নেই, যা ইতিপূর্বে আপনাদের সম্মুখে বিশদভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করলাম।
.
.
আল্লামা আনওয়ার শাহ কাশ্মীরী (রহঃ) এবং তারাবীহঃ
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷
.
১. আল্লামা আনওয়ার শাহ কাশ্মিরী (রহঃ) বলেন-
.
.


অর্থাৎ যে ব্যক্তি (তারাবীহ) ৮ রাকাতের উপর অটল থাকলো সে সাওয়াদ এ আযম (আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম’আত) থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লো, আর যে আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম’আত (অর্থাৎ যারা ২০ রাকাত পড়ে) ওয়ালাদের বিদ’আতী মনে করে তার উচিত আপন করুণ পরিণতি সম্পর্কে চিন্তা করা।।


[ফায়যুল বারী শরহে সহিহ বোখারী -৩/৩৭৫]


.


২. আল্লামা আনওয়ার শাহ কাশ্মিরী (রহঃ) থেকে আরো বর্ণনা করা হয় –


.


وقال ابن همام: إن ثمانية ركعات سنة مؤكدة وثنتي عشر ركعة مستحبة، وما قال بهذا أحد، أقول: إن سنة الخلفاء الراشدين أيضاً تكون سنة الشريعة لما في الأصول أن السنة سنة الخلفاء وسنته، وقد صح في الحديث: «عليكم بسنتي وسنة الخلفاء الراشدين المهديين» فيكون فعل الفاروق الأعظم أيضاً سنة


.


ففي التاتار خانية: سأل أبو يوسف أبا حنيفة: أن إعلان عمر بعشرين ركعة هل كان له عهد منه؟ قال أبو حنيفة ما كان عمر مبتدعاً، أي لعله يكون له عهد فدل على أن عشرين ركعة لا بد من أن يكونلها أصل منه


.


واستقر الأمر على عشرين ركعة


.


অর্থাৎ ৪ মাযহাবের ঈমামদের (হানাফী-মালেকী-শাফেঈ-হানবলী) কেউ-ই বলেন নি তারাবীহ এর নামাযের রাকাত সংখ্যা ২০ এর কম।। আর এটার উপর জমহুর সাহাবী (রাঃ) দের জামাতের আমল।।

আর ইবনে হুমাম (রহঃ) যা বলেছেন- “যা তারাবীর ৮ রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা এবং বাকী ১২ রাকাত মুস্তাহাব”- এটা আর কেউ সমর্থন করেন নি।।
.
আমি (আনওয়ার শাহ কাশ্মিরী) বলছিঃ
.
খুলাফায়ে রাশেদীন এর সুন্নাত হল শরীয়াতের-ও সুন্নাত।। এটা উসূল (মূলনীতি) এ আছে যে রাসূল(সঃ) এর সুন্নাত এবং খুলাফায়ে রাশেদীন এর সুন্নাত উভয়টিই সুন্নাত।। আর সহিহ হাদিসেও আছে রাসূল(সঃ) বলেছেন ” আমার ও আমার খুলাফায়ে রাশীদীনের সুন্নাত মেনে চল।।” তাই ফারুক এ আযম (উমর) (রাঃ) এর প্রচলিত আমল-ও সুন্নাত।।
.
ফাতাওয়া তাতারখানিয়া তে আছে-
.
ঈমাম আবু ইউসুফ (রহঃ) তার উস্তাদ ঈমাম আবু হানিফা (রহঃ) কে প্রশ্ন করেছিল- “উমর (রাঃ) যে ২০ রাকাত তারাবীহ এর জামাত চালু করেছিল সেটার ইলম উনি কি রাসূল(সঃ) থেকে পেয়েছিলেন??”
.
ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) উত্তরে বলেছিলেন- “উমর (রাঃ) কখনো বিদাতী ছিলেন না,(অর্থাৎ এটা সুন্নাতের জ্ঞান হিসেবেই তিনি করেছিলেন)।। “
.
(আমি আরো বলছি) এই কথা এই দলিল বহন করে ২০ রাকাত তারাবীহ এর মূল সিদ্ধান্ত রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর সিদ্ধান্ত থেকেই হয়েছে।।
[আল আরফুশ শাযী শরহে সুনান তিরমিযী – ২/২০৮-০৯]
.
আল্লাহ সকলকে সহিহ বুঝ দান করুন।।
আল্লামা আনওয়ার শাহ কাশ্মিরী (রহঃ) এর নাম নিয়ে নিয়ে ধোকা দেয়া থেকে উম্মতকে হিফাযত করুক।।
.
বিশ রাকাত তারাবীহ, পৃথিবীর বিখ্যাত ১৫ জন ইমামের মত
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷
.
🇧🇩 🇧🇩 তারাবীহ সালাত ২০ রাকাত 🇸🇦🇸🇦
.
👉 ইমাম তিরমিজি রাহ.
👉ইমাম ইবনে তাইমিয়া রাহ.
👉 ইমাম নববী রাহ.
👉শাইখ ইবনে বায রাহ.
👉শাইখ ইবনে উসাইমিন রাহ.
👉শাইখ ইবনে ইবরাহীম আলে শাইখ রাহ.
👉সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ফতোয়া বোর্ড 
👉মিশর আল-আযহার ফতোয়া বোর্ড
👉নজদের উলামায়ে কেরামের ফতোয়া 
👉হানাফি মাজহাব
👉হাম্বলি মাজহাব
👉মালিকী মাজহাব 
👉শাফেয়ী মাজহাব
👉শাইখ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ হাফি.
.
🚩 ইমাম তিরমিজি রাহ. বলেনঃ
.
قال الإمام الترمذي رحمه الله في سننه (3/169) :
” وَأَكْثَرُ أَهْلِ الْعِلْمِ عَلَى مَا رُوِيَ عَنْ عُمَرَ وَعَلِيٍّ وَغَيْرِهِمَا مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عِشْرِينَ رَكْعَةً وَهُوَ قَوْلُ الثَّوْرِيِّ وَابْنِ الْمُبَارَكِ وَالشَّافِعِيِّ 
.
অধিকাংশ আহলে ইলমদের অভিমত হচ্ছে, ২০ রাকাত তারাবীহ পড়তে হবে যা বর্ণিত হয়েছে হযরত উমর ও আলী রা. এবং অন্যান্য সাহাবীদের থেকে। ইমাম সুফিয়ান সাওরী, ইবনুল মুবারক ও ইমাম শাফেয়ী রাহ. এই অভিমত পোষণ করেন। [জামে তিরমিজি -৩/১৬৯ ]

🚩 আহলে হাদিসদের সবচে বড় আস্থাভাজন ইমাম ইবনে তাইমিয়া রাহ. বলেন-
.
ﺇﻧﻪ ﻗﺪ ﺛﺒﺖ ﺃﻥ ﺃﺑﻲ ﺑﻦ ﻛﻌﺐ ﻛﺎﻥ ﻳﻘﻮﻡ ﺑﺎﻟﻨﺎﺱ ﻋﺸﺮﻳﻦ ﺭﻛﻌﺔ ﻓﻲ ﻗﻴﺎﻡ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﻭﻳﻮﺗﺮ ﺑﺜﻼﺙ .
.
এটা প্রমাণিত যে, উবাই ইবনে কা’ব রা. লোকদের নিয়ে রমযানের রাতে বিশ রাকাত পড়তেন এবং তিন রাকাত বিতর আদায় করতেন। -[মাজমুউল ফাতাওয়া ২৩/১১২]
.
২০ রাকাত সম্পর্কে তিনি বলেছেন-
.
ﺛﺒﺖ ﻣﻦ ﺳﻨﺔ ﺍﻟﺨﻠﻔﺎﺀ ﺍﻟﺮﺍﺷﺪﻳﻦ ﻭﻋﻤﻞ ﺍﻟﻤﺴﻠﻤﻴﻦ .
.
এটি খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাহ ও মুসলিম উম্মাহর কর্মধারা দ্বারা প্রমাণিত। -[মাজমুউল ফাতাওয়া ২৩/১১২]

🚩 ফাতাওয়া বিন বায –এ শাইখ বিন বায রাহ. বলেন, সাহাবাদের থেকে উমর রা.-এর নির্দেশে তেইশ রাকাত (বিতির সহ) প্রমানিত। তার বক্তব্যের আরবি পাঠ দেখুন-
.
ﻭﺛﺒﺖ ﻋﻨﻬﻢ ﺃﻧﻬﻢ ﺻﻠﻮﺍ ﺑﺄﻣﺮﻩ ﺛﻼﺛﺎ ﻭﻋﺸﺮﻳﻦ .
.
[ফাতাওয়া শাইখ বিন বায ৭/১৭৩]
.
🚩 মুহাম্মাদ ইবনে ইবরাহীম আলে শাইখ রাহ. তার ফাতাওয়ার মাঝে বলেন-
.
. ﺫﻫﺐ ﺃَﻛﺜﺮ ﺃَﻫﻞ ﺍﻟﻌﻠﻢ ﻛﺎﻹِﻣﺎﻡ ﺃَﺣﻤﺪ ﻭﺍﻟﺸﺎﻓﻌﻲ ﻭﺃَﺑﻲ ﺣﻨﻴﻔﺔ ﺇِﻟﻰ ﺃَﻥ ﺻﻼﺓِ ﺍﻟﺘﺮﺍﻭﻳﺢ ﻋﺸﺮﻭﻥ ﺭﻛﻌﺔ؛ ﻷَﻥ ﻋﻤﺮ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻟﻤﺎ ﺟﻤﻊ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻋﻠﻰ ﺃُﺑﻲ ﺑﻦ ﻛﻌﺐ ﻛﺎﻥ ﻳﺼﻠﻲ ﺑﻬﻢ ﻋﺸﺮﻳﻦ ﺭﻛﻌﺔ، ﻭﻛﺎﻥ ﻫﺬﺍ ﺑﻤﺤﻀﺮ ﻣﻦ ﺍﻟﺼﺤﺎﺑﺔ، ﻓﻴﻜﻮﻥ ﻛﺎﻹِﺟﻤﺎﻉ، ﻭﻋﻠﻰ ﻫﺬﺍ ﻋﻤﻞ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﺍﻟﻴﻮﻡ ﺍﻵﻥ . ﻓﻼ ﻳﻨﺒﻐﻲ ﺍﻻﻧﻜﺎﺭ ﻋﻠﻴﻬﻢ ﺑﻞ ﻳﺘﺮﻛﻮﻥ ﻋﻠﻰ ﻣﺎ ﻫﻢ ﻋﻠﻴﻪ؛ ﻷَﻧﻪ ﻗﺪ ﻳﻨﺸﺄ ﻣﻦ ﺍﻹِﻧﻜﺎﺭ ﻋﻠﻴﻬﻢ ﻭﻗﻮﻉ ﺍﻻﺧﺘﻼﻑ ﻭﺍﻟﻨﺰﺍﻉ ﻭﺗﺸﻜﻴﻚ ﺍﻟﻌﻮﺍﻡ ﻓﻲ ﺳﻠﻔﻬﻢ، ﻭﻻ ﺳﻴﻤﺎ ﻓﻲ ﻫﺬﻩ ﺍﻟﻤﺴﺄَﻟﺔ ﺍﻟﺘﻲ ﻫﻲ ﻣﻦ ﺍﻟﺘﻄﻮﻉ، ﻭﺍﻷَﻣﺮ ﻓﻴﻬﺎ ﻭﺍﺳﻊ، ﻭﺯﻳﺎﺩﺓ ﺍﻟﺘﻄﻮﻉ ﺃَﻣﺮ ﻣﺮﻏﻮﺏ ﻓﻴﻪ
.
অধিকাংশ আহলে ইলমগন যেমন ইমাম আহমাদ, ইমাম শাফেয়ী, ইমাম আবু হানীফার মতে তারাবীহ নামায বিশ রাকাত। কেননা উমর রা. উবাই ইবনে কাআবের ইমামতিতে সকলকে একত্রিত করলেন, তখন উবাই ইবনে কাআব রা. সবাইকে নিয়ে বিশ রাকাত পড়তেন । আর এটা সকল সাহাবাগনের উপস্থিতিতে হয়েছে। তাই এক্ষেত্রে ইজমা হয়ে গেছে । আজ পর্যন্ত এর উপরই আমল চলছে। তাই বিশ রাকাতের উপর আপত্তি করা উচিৎ নয় । বরং আদায়কারীদেরকে তাদের উবস্থায়ই ছেড়ে দিবে । কারন এই বিষয়ে আপত্তি করার দ্বারা বিভেদ ও ঝগড়া সালাফের প্রতি সাধারন লোকদের সন্দেহ তৈরি হয়। বিশেষ করে এই ধরনের নফল ইবাদতে ।
-[ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইলে মুহাম্মাদ ইবনে ইবরাহীম আলে শাইখ 7/88]
.
🚩 নাজদের উলামাগনের বক্তব্য দেখুন-
.
ﻭﺃﻣﺎ ﺻﻔﺔ ﺻﻼﺓ ﺍﻟﺘﺮﺍﻭﻳﺢ ﻭﻋﺪﺩﻫﺎ، ﻓﺎﻟﺬﻱ ﺫﻛﺮﻩ ﺍﻟﻌﻠﻤﺎﺀ ﺃﻥ ﺍﻟﺘﺮﺍﻭﻳﺢ ﻋﺸﺮﻭﻥ ﺭﻛﻌﺔ، ﻭﺃﻥ ﻻ ﻳﻨﻘﺺ ﻋﻦ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﻌﺪﺩ ﺇﻻ ﺇﻥ ﺃﺭﺍﺩ ﺃﻥ ﻳﺰﻳﺪ ﻓﻲ ﺍﻟﻘﺮﺍﺀﺓ ﺑﻘﺪﺭ ﻣﺎ ﻳﻨﻘﺺ ﻣﻦ ﺍﻟﺮﻛﻌﺎﺕ؛ ﻭﻟﻬﺬﺍ ﺍﺧﺘﻠﻒ ﻋﻤﻞ ﺍﻟﺴﻠﻒ ﻓﻲ ﺍﻟﺰﻳﺎﺩﺓ ﻭﺍﻟﻨﻘﺼﺎﻥ، ﻭﻋﻤﺮ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻟﻤﺎ ﺟﻤﻊ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻋﻠﻰ ﺃﺑﻲ ﺑﻦ ﻛﻌﺐ ﻛﺎﻧﺖ ﺻﻼﺗﻬﻢ ﻋﺸﺮﻳﻦ ﺭﻛﻌﺔ .
ﺍﻟﻜﺘﺎﺏ : ﻣﺠﻤﻮﻋﺔ ﺍﻟﺮﺳﺎﺋﻞ ﻭﺍﻟﻤﺴﺎﺋﻞ ﺍﻟﻨﺠﺪﻳﺔ ‏( ﺍﻟﺠﺰﺀ ﺍﻷﻭﻝ ‏)
ﺍﻟﻤﺆﻟﻒ : ﺑﻌﺾ ﻋﻠﻤﺎﺀ ﻧﺠﺪ ﺍﻷﻋﻼﻡ
.
উমর রা. উবাই ইবনে কাআবের ইমামতিতে সকল সাহাবাদের একত্রিত করলেন, তখন উবাই ইবনে কাআব রা. সবাইকে নিয়ে বিশ রাকাত পড়তেন ।
-[ মাজমুআতুর রাসাইল ওয়াল মাসাইলিন নাজদিয়াহ ১/৯৫]
.
🚩 মিসর আল আযহারে ফাতাওয়া দেখুন-
.
ﻟﻜﻦ ﺻﺢ ﺃﻥ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻛﺎﻧﻮﺍ ﻳﺼﻠﻮﻥ ﻋﻠﻰ ﻋﻬﺪ ﻋﻤﺮ ﻭﻋﺜﻤﺎﻥ ﻭﻋﻠﻰ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠَّﻪ ﻋﻨﻬﻢ ﻋﺸﺮﻳﻦ ﺭﻛﻌﺔ، ﻭﻫﻮ ﺭﺃﻯ ﺟﻤﻬﻮﺭ ﺍﻟﻔﻘﻬﺎﺀ ﻣﻦ ﺍﻟﺤﻨﻔﻴﺔ ﻭﺍﻟﺤﻨﺎﺑﻠﺔ ﻭﺩﺍﻭﺩ . ﺩﺍﺭ ﺍﻹﻓﺘﺎﺀ ﺍﻟﻤﺼﺮﻳﺔ
.
সহীহ সনদে প্রমানিত যে, লোকেরা উমর রা., উসমান রা. ও উসমান রা.-এর যমানায় বিশ রাকাত পড়তেন। এটাই সকল ফকীহ আবু হানীফা, আহমাদ ও দাউদ রাহ.- এরমত। –[ফাতাওয়াল আযহার ৮/৪৬৪ ]
.
🚩 শাইখ সালিহ আল উছাইমীন রাহ. উবাই ইবনে কাআবের রেওয়ায়েতটি উল্লেখ করে বলেন-
.
ﻫﺬﺍ ﻳﺪﻝ ﻋﻠﻰ ﺃﻥ ﺃﻣﻴﺮ ﺍﻟﻤﺆﻣﻨﻴﻦ ﻋﻤﺮ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ – ﻭﻫﻮ ﺃﻋﻠﻢ ﻣﻨﺎ ﺑﺎﻟﺴﻨﺔ ﻭﺃﺧﺸﻰ ﻣﻨﺎ ﻟﻠﻪ – ﻳﺮﻯ ﺃﻧﻪ ﻻ ﺑﺄﺱ ﺃﻥ ﻳﺰﻳﺪ ﺍﻹﻧﺴﺎﻥ ﻋﻠﻰ ﺇﺣﺪﻯ ﻋﺸﺮﺓ ﺭ
ﻛﻌﺔ .
.
এটা প্রমান করে যে, আমীরুল মু’মিনীন উমর রা. –যিনি আমাদের চেয়ে সুন্নাহ সম্পর্কে বেশি জ্ঞান রাখেন ও আমাদের চেয়ে আল্লাহকে বেশি ভয় করতেন। তিনি অভিমত এগারো রাকাতের চেয়ে বেশি (বিশ রাকাত) পড়তে কোন সমস্যা নেই ।
-[লিকাউল বাবিল মাফতুহ ১০/৫৯
.
🚩 আরবের সর্বোচ্চ ফাতাওয়া বোর্ড ‘আল্লাজনাতুদ দাইমা লিল বুহুছিল ইলমিয়াহ ওয়াল ইফতা’-এর মধ্যে তারাবীহ সম্পর্কে এক প্রশ্নের উত্তরে উলামাগন বলেন,
.
ﻋﻤﺮ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻭﺍﻟﺼﺤﺎﺑﺔ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﻢ ﺻﻠﻮﻫﺎ ﻓﻲ ﺑﻌﺾ ﺍﻟﻠﻴﺎﻟﻲ ﻋﺸﺮﻳﻦ ﺳﻮﻯ ﺍﻟﻮﺗﺮ، ﻭﻫﻢ ﺃﻋﻠﻢ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﺑﺎﻟﺴﻨﺔ .
.
উমর রা. ও সাহাবাগন রা. কোন কোন রাতে বিতির ছাড়া বিশ রাকাত পরেছেন। সাহাবাগণ সুন্নতের ক্ষেত্রে সকল মানুষের চেয়ে বেশি জ্ঞানী -. 
[আল্লাজনাতুদ দাইমা লিল বুহুছিল ইলমিয়াহ ওয়াল ইফতা ৭/১৯৯]
.
উল্লেখ্য, এই বোর্ডের প্রধান হলেন বিন বায রাহ.।
.
🚩 হানাফী মাজহাবের আলেম ইমাম আস্‌সারখাসী হানাফী রাহ. বলেনঃ
.
قال السرخسي وهو من أئمة المذهب الحنفي :
فإنها عشرون ركعة سوى الوتر عندنا .
” المبسوط ” ( 2 / 145 ) .
.
আমাদের মতে বিতির ছাড়া তারাবী ২০ রাকাত । [আল্‌মাবসুত (২/১৪৫)]
.
🚩 ইবনে ক্বুদামাহ হাম্বলী রাহ. বলেন: 
.
وقال ابن قدامة :
والمختار عند أبي عبد الله ( يعني الإمام أحمد ) رحمه الله ، فيها عشرون ركعة ، وبهذا قال الثوري ، وأبو حنيفة ، والشافعي ، وقال مالك : ستة وثلاثون .
” المغني ” ( 1 / 457 ) .
.
“ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল” (রাহিমাহুল্লাহ) এর কাছে পছন্দনীয় মত হলো তারাবী ২০ রাকাত। এই মতে আরো রয়েছেন ইমাম ছাওরী, ইমাম আবু-হানীফা ও ইমাম শাফেয়ী। আর ইমাম মালেক বলেছেন: “তারবীহ ৩৬ রাকাত। [আলমুগনী- ১/৪৫৭]
.
🚩 ইমাম শাফেয়ী রাহ. বলেনঃ
.
وقَالَ الشَّافِعِيُّ وَهَكَذَا أَدْرَكْتُ بِبَلَدِنَا بِمَكَّةَ يُصَلُّونَ عِشْرِينَ رَكْعَةً وقال ابن عبد البر في “الاستذكار” (2/69) 
.
এমনিভাবে আমাদের মক্কা নগরীতে তাদেরকে ২০ রাকাত তারাবীহ পড়তে পেয়েছি। 
[ আল-ইযতিযকার- ২/৬৯ ]
.
🚩 ইমাম নববী শাফেয়ী রাহ. বলেছেন:
.
وقال النووي :
صلاة التراويح سنة بإجماع العلماء ، ومذهبنا أنها عشرون ركعة بعشر تسليمات وتجوز منفردا وجماعة .
” المجموع ” ( 4 / 31 ) .
.
“আলেমগণের ইজমা অনুযায়ী তারাবীর সালাত পড়া সুন্নত। আর আমাদের মাজহাব হচ্ছে- তারাবীর নামায ১০ সালামে ২০ রাকাত। একাকী পড়াও জায়েয, জামাতের সাথে পড়াও জায়েয। [আলমাজমূ-৪/৩১]
.
🚩 শাইখ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ– উপরোক্ত হানাফি, শাফেয়ী, হাম্বলীদের ফতোয়া লিখার পর বলেনঃ
.
وبعد فلا تعجب أخي السائل من صلاة التراويح عشرين ركعة وقد سبقوا من أولئك الأئمة جيلا قبل جيل ، وفي كلٍّ خير 
.
অতএব প্রশ্নকারী ভাই, আপনি তারাবীর সালাত ২০ রাকাত হওয়ার ব্যাপারে অবাক হবেন না। কারণ এর আগে ইমামগণ প্রজন্মের পর প্রজন্ম তা পালন করেছেন। আর তাঁদের সবার মধ্যেই কল্যাণ রয়েছে।
.
https://www.google.com/amp/s/islamqa.info/amp/ar/answers/9036?espv=1
.
অতেব, কথিত আহলে হাদিসরা যদি বাস্তবিক হাদিসের অনুসারী হয়ে থাকে, তাহলে আশা করি আল্লাহ তাদের হেদায়েত দিবেন। আর মুসলিম উম্মাহ তাদের ফেতনা থেকে বেঁচে যাবে। আল্লাহ আপনি কবুল করুন। আমীন।।

তারাবীহ আট রাকাত নিয়ে আহলে হাদিসদের ভয়ংকর ষড়যন্ত্রঃ
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷

রাসুল (স) এরশাদ করেছেন : তোমরা আমার ও খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নত সমূহ কে মজবুত করে ধরো। (আল-হাদিস )
.
রাসুল (স) এর তারাবীহ পড়া নিয়ে হাদিসে মতবেদ পাওয়া যায়। কিন্তু খলিফায়ে রাশেদ, আমিরুল মোমিনীন হজরত উমর (র:) সকল সাহাবাদের সমন্বয়ে তারাবীর নামাজ ২০ রাকাত পড়েছেন। ঐ যুগ থেকে অদ্যাবধি পবিত্র মক্কা -মদীনা সহ সারা মুসলিম জাহানে তারাবীর নামজ ২০ রাকাত-ই চালু আছে।
.
বিশ রাকাত তারাবীহ হজরত উমর (র:) চালু করেছেন। শিয়া (Shiya) সম্প্রদায়ের লোকেরা যেহেতু হজরত উমর (র:) এর চরম শত্রু। তাই তারা ২০ রাকাত তারাবীর ও গোর বিরুধীতা করে আসছে।
.
ভারত বর্ষে অধিকাংশ মুসলিম গন সুন্নী (Sunni) হওয়ার কারণে হজরত উমর (র:) এর বিরুদ্ধে কিছু বলা শিয়াদের পক্ষে সম্ভব ছিল না।
.
তাই শিয়া জায়দী ফেরকার ইমাম শাওকানী ইয়েমেনী তার এক শিষ্য– আব্দুল হক বেনারসী– কে যুক্তি দিলো যে, তুমি এমন কিছু কর — যাতে হজরত উমর কে মোসলমানদের মন থেকে দুরে সরানো যায়।
.
উক্ত শিয়া ইমামের যুক্তিতে, আব্দুল হক বেনারসী (Abdul Haque Benarasi) হাদিসের বাহানা তুলে ২০ রাকাত তারাবীহ কে অস্বীকারের প্রচার কায্য শুরু করে।
.
মূল উদ্দেশ্শ্য ২০ রাকাত তারাবীহ নয়। বরং ২০ রাকাত তারাবীহ যিনি শুরু করেছেন তাকে টার্গেট বানানো।
.
অর্থাত; বিশ রাকাত তারাবীহ থেকে যদি মোসলমানদের কে ফেরানো যায়, তাহলে এ কথা বুঝানো সহজ হবে যে, হজরত উমর বিশ (২০) তারাবীহ নির্ধারন করে ঠিক করেন নাই। এ ভাবে মুসলিমদের মন থেকে হজরত উমরের মহাব্বত বের হয়ে গেলে সুন্নিদের কে শিয়া বানানোর পথ সুগম হবে।
.
মুসলিমদের প্রতি অনুরোধ:- আহলে হাদিস (La—MAJHABI) গ্রুপটি শিয়াদের চক্রান্ত বাস্তবায়ন করার কাজ করছে।
.
তাই সতর্ক থাকুন।
.
.
এখন দেখুন..…

মুহাদ্দিসগনের দৃষ্টিতে তারাবির রাকাত সংখ্যা কত??
.
ইমাম ইবনু আব্দিল বার রহ. (মৃত : ৪৬৩) বলেন,
.
ﻭَﻫُﻮَ – ﻋِﺸْﺮُﻭﻥَ ﺭَﻛْﻌَﺔ – ﺍﻟﺼَّﺤِﻴﺢُ ﻋَﻦْ ﺃُﺑَﻲِّ ﺑْﻦِ ﻛَﻌْﺐٍ ﻣِﻦْ ﻏَﻴْﺮِ ﺧِﻠَﺎﻑٍ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺼَّﺤَﺎﺑَﺔِ .
.
অর্থ: এটাই সহীহ যে, হযরত উবাই ইবনে কা‘ব ২০ রাকাত তারাবীহ পড়িয়েছেন। আর তাতে কোন সাহাবী দ্বিমত করেননি। [আল ইসতিযকার ৫/১৫৭]
.
ﻗَﺎﻝَ ﺍﺑْﻦُ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟْﺒَﺮِّ ﻭَﻫُﻮَ ﻗَﻮْﻝُ ﺟُﻤْﻬُﻮﺭِ ﺍﻟْﻌُﻠَﻤَﺎﺀِ ﻭَﻫُﻮَ ﺍﻟِﺎﺧْﺘِﻴَﺎﺭُ ﻋِﻨْﺪَﻧَﺎ
.
অর্থ: তিনি আরো বলেন, এটিই (২০ রাকাত তারাবীহ) অধিকাংশ উলামায়ে কেরামের মত এবং আমাদের নিকট এটিই পছন্দনীয়।
.
[তারহুত তাছরীব ৩/৯৭]
.
ইমাম তিরমিযী রহ. (মৃত : ২৬৯) বলেন,
.
ﻭَﺃَﻛْﺜَﺮُ ﺃَﻫْﻞِ ﺍﻟﻌِﻠْﻢِ ﻋَﻠَﻰ ﻣَﺎ ﺭُﻭِﻱَ ﻋَﻦْ ﻋُﻤَﺮَ، ﻭَﻋَﻠِﻲٍّ، ﻭَﻏَﻴْﺮِﻫِﻤَﺎ ﻣِﻦْ ﺃَﺻْﺤَﺎﺏِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻋِﺸْﺮِﻳﻦَ ﺭَﻛْﻌَﺔً، ﻭَﻫُﻮَ ﻗَﻮْﻝُ ﺍﻟﺜَّﻮْﺭِﻱِّ، ﻭَﺍﺑْﻦِ ﺍﻟﻤُﺒَﺎﺭَﻙِ، ﻭَﺍﻟﺸَّﺎﻓِﻌِﻲِّ ﻭﻗَﺎﻝَ ﺍﻟﺸَّﺎﻓِﻌِﻲُّ > : ﻭَﻫَﻜَﺬَﺍ ﺃَﺩْﺭَﻛْﺖُ ﺑِﺒَﻠَﺪِﻧَﺎ ﺑِﻤَﻜَّﺔَ ﻳُﺼَﻠُّﻮﻥَ ﻋِﺸْﺮِﻳﻦَ ﺭَﻛْﻌَﺔً
.
অর্থ: সংখ্যাগরিষ্ঠ উলামায়ে কেরামের মত সেটাই যা বর্ণিত আছে হযরত উমর, হযরত আলী রা. ও অন্যান্য সাহাবায়ে কেরাম থেকে। অর্থাৎ ২০ রাকাত। এটিই ইমাম সুফয়ান সাওরী, ইবনুল মুবারক ও শাফেয়ী রহ. এর মত। ইমাম শাফেয়ী বলেন, আমাদের শহর মক্কা মুর্কারামায় আমি এমনটিই পেয়েছি যে, তারা ২০ রাকাত তারাবীহ পড়তেন।
.
[জামে তিরমিযী ৩/১৬০]
.
ইবনে রুশদ মালেকী রহ. (মৃত : ৫৯৫) বলেন,
.
ﺍﺧْﺘَﺎﺭَ ﻣَﺎﻟِﻚٌ ﻓِﻲ ﺃَﺣَﺪِ ﻗَﻮْﻟَﻴْﻪِ، ﻭَﺃَﺑُﻮ ﺣَﻨِﻴﻔَﺔَ، ﻭَﺍﻟﺸَّﺎﻓِﻌِﻲُّ، ﻭَﺃَﺣْﻤَﺪُ، ﻭَﺩﺍﻭﺩ : ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻡَ ﺑِﻌِﺸْﺮِﻳﻦَ ﺭَﻛْﻌَﺔً ﺳِﻮَﻯ ﺍﻟْﻮِﺗْﺮِ
.
অর্থ: ইমাম মালেক রহ. এর এক বক্তব্য অনুযায়ী এবং ইমাম আবু হানীফা, ইমাম শাফিয়ী, ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল ও ইমাম দাঊদ এর বক্তব্য হচ্ছে বিতর ছাড়া তারাবীহ ২০ রাকাত।
.
[বিদায়াতুল মুজতাহিদ : ১/২১৯]
.
ওয়ালী উদ্দিন ইরাকী রহ. (মৃত : ৮২৬) বলেন,
.
ﻭَﺑِﻬَﺬَﺍ ﺃَﺧَﺬَ ﺃَﺑُﻮ ﺣَﻨِﻴﻔَﺔَ ﻭَﺍﻟﺜَّﻮْﺭِﻱُّ ﻭَﺍﻟﺸَّﺎﻓِﻌِﻲُّ ﻭَﺃَﺣْﻤَﺪُ ﻭَﺍﻟْﺠُﻤْﻬُﻮﺭُ ﻭَﺭَﻭَﺍﻩُ ﺍﺑْﻦُ ﺃَﺑِﻲ ﺷَﻴْﺒَﺔَ ﻓِﻲ ﻣُﺼَﻨَّﻔِﻪِ ﻋَﻦْ ﻋُﻤَﺮَ ﻭَﻋَﻠِﻲٍّ ﻭَﺃُﺑَﻲٍّ ﻭَﺷُﺘَﻴْﺮِ ﺑْﻦِ ﺷَﻜَﻞٍ ﻭَﺍﺑْﻦِ ﺃَﺑِﻲ ﻣُﻠَﻴْﻜَﺔَ ﻭَﺍﻟْﺤَﺎﺭِﺙِ ﺍﻟْﻬَﻤْﺪَﺍﻧِﻲُّ ﻭَﺃَﺑِﻲ ﺍﻟْﺒَﺨْﺘَﺮِﻱِّ
.
অর্থ: ২০ রাকাত তারাবীর মতই গ্রহণ করেছেন ইমাম আবু হানীফা, ইমাম সাওরী, ইমাম শাফেয়ী, ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল এবং অধিকাংশ উলামা। ইমাম ইবনে আবি শাইবা রহ. ‘আল মুসান্নাফ’ গ্রন্থে এ মতই বর্ণনা করেছেন হযরত উমর, হযরত আলী, হযরত উবাই ইবনে কা‘ব, শুতাইর ইবনে শাকাল, ইবনে আবী মুলাইকা, হারেস আল হামদানী ও আবুল বাখতারী থেকে।
.
[তরহুত তাসরীব ৩/৯৭]
.
আব্দুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওয়াহ্হাব রহ. (মৃত : ১২৪২) বলেন,
.
ﻭﻋﻤﺮ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻟﻤﺎ ﺟﻤﻊ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻋﻠﻰ ﺃﺑﻲ ﺑﻦ ﻛﻌﺐ ﻛﺎﻧﺖ ﺻﻼﺗﻬﻢ ﻋﺸﺮﻳﻦ ﺭﻛﻌﺔ
.
অর্থ: উমর রা. যে তারাবীহ নামাজে উবাই ইবনে কা‘ব রা. এর পিছনে সকলকে একত্রিত করেছিলেন তা ছিল ২০ রাকাত।
.
[মাজমুআতুর রাসাইল ওয়াল মাসাইলিন নাজদিয়্যাহ ১/৯৫]
.
ইবনে তাইমিয়া রহঃ বলেন,
.
ﻓﺈﻧﻪ ﻗﺪ ﺛﺒﺖ ﺃﻥ ﺃﺑﻲ ﺑﻦ ﻛﻌﺐ ﻛﺎﻥ ﻳﻘﻮﻡ ﺑﺎﻟﻨﺎﺱ ﻋﺸﺮﻳﻦ ﺭﻛﻌﺔ ﻓﻲ ﻗﻴﺎﻡ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﻭﻳﻮﺗﺮ ﺑﺜﻼﺙ ﻓﺮﺃﻯ ﻛﺜﻴﺮ ﻣﻦ ﺍﻟﻌﻠﻤﺎﺀ ﺃﻥ ﺫﻟﻚ ﻫﻮ ﺍﻟﺴﻨﺔ ﻷﻧﻪ ﺃﻗﺎﻡ ﺑﻴﻦ ﺍﻟﻤﻬﺎﺟﺮﻳﻦ ﻭﺍﻷﻧﺼﺎﺭ ﻭﻟﻢ ﻳﻨﻜﺮﻩ ﻣﻨﻜﺮ
.
অর্থ, একথা প্রমাণিত যে, উবাই ইবনে কায়াব রাঃ রমযানে তারাবী লোকদের নিয়ে ২০ রাকাত পড়াতেন। এবং তিন রাকাত বিতির পড়তেন। তাই অনেক ওলামায়ে কিরামের সিদ্ধান্ত এটাই সুন্নাত। কেননা, ওমর রাঃ তা অনেক মুহাজির এবং আনসার সাহাবীদের (রাঃ) সামনে করেছিলেন। কেউ তাতে কোন আপত্তি করে নাই।
.
(মাজমুউল ফাতওয়াঃ ২/৩৮৬) ৷
.
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যা (রহঃ) এ প্রসঙ্গেই বলেছেন-
.
ﺇِﻧَّﻪُ ﻗَﺪْ ﺛــَـﺒَﺖَ ﺃﻥ َّ ﺃُﺑَﻰ َّ ﺑـْﻦ َ ﻛَﻌْﺐٍ ﻛَﺎﻥ َ ﻳَﻘُﻮْﻡُ ﺑِﺎﻟﻨَّﺎﺱِ ﻋِﺸْﺮِ ﻳـْﻦ ﺭَﻛَﻌَﺔً ﻓِﻰ ﻗِﻴَﺎﻡِ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥ ﻭَ ﻳُـﻮْ ﺗـِﺮُ ﺑِﺜـــَﻼَﺙٍ
.
“এ বিষয়টি প্রমাণিত যে, উবাই ইবনে কা’ব (রঃ) রমাদানের তারাবীতে মুসল্লীদেরকে নিয়ে বিশ রাকাআত পড়তেন এবং তিন রাকাআত বিতর পড়তেন।”
.
(মাজমূউল ফাতাওয়াঃ ২৩/১১২-১১৩)
.
বিশ রাকাআত তারাবীর ব্যাপারে তিনি আরো বলেছেন-
.
ﺛـَـﺒَﺖَ ﻣِﻦ ْ ﺳُﻨـَّﺔِ ﺍﻟﺨُـﻠَـﻔَﺎﺀِ ﺍﻟﺮَّﺍﺷِﺪِ ﻳـْﻦ َ ﻭَﻋَﻤَﻞِ ﺍﻟﻤُﺴْﻠِﻤِﻴْﻦ َ
.
“খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নত এবং মুসলিম জাতির সম্মিলিত কর্ম দ্বারা এটি প্রমাণিত।”
.
(মাজমূউল ফাতওয়াঃ ২৩/১১৩)
.
ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহ. (মৃত : ৭২৮) বলেন,
.
ﺇِﻧَّﻪُ ﻗَﺪْ ﺛَﺒَﺖَ ﺃَﻥَّ ﺃﺑﻲ ﺑْﻦَ ﻛَﻌْﺐٍ ﻛَﺎﻥَ ﻳَﻘُﻮﻡُ ﺑِﺎﻟﻨَّﺎﺱِ ﻋِﺸْﺮِﻳﻦَ ﺭَﻛْﻌَﺔً ﻓِﻲ ﻗِﻴَﺎﻡِ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ﻭَﻳُﻮﺗِﺮُ ﺑِﺜَﻠَﺎﺙِ . ﻓَﺮَﺃَﻯ ﻛَﺜِﻴﺮٌ ﻣِﻦْ ﺍﻟْﻌُﻠَﻤَﺎﺀِ ﺃَﻥَّ ﺫَﻟِﻚَ ﻫُﻮَ ﺍﻟﺴُّﻨَّﺔُ؛ ﻟِﺄَﻧَّﻪُ ﺃَﻗَﺎﻣَﻪُ ﺑَﻴْﻦ ﺍﻟْﻤُﻬَﺎﺟِﺮِﻳﻦَ ﻭَﺍﻟْﺄَﻧْﺼَﺎﺭِ ﻭَﻟَﻢْ ﻳُﻨْﻜِﺮْﻩُ ﻣُﻨْﻜِﺮٌ
.
অর্থ: নিশ্চয় এ কথা প্রমাণিত আছে যে, হযরত উবাই ইবনে কা‘ব রা. লোকদের (সাহাবা ও তাবিয়ীদের) নিয়ে রমজান মাসে ২০ রাকাত তারাবীহ ও ৩ রাকাত বিতর পড়তেন। এ জন্যই সংখ্যাগরিষ্ঠ উলামায়ে কেরামের মত হচ্ছে এটিই সুন্নত। কারণ, তিনি এ নামাজ পড়িয়েছেন আনসার ও মুহাজির সাহাবীদেরকে নিয়ে, তাদের কেউ এর উপর কোন আপত্তি উত্থাপন করেননি।
.
[মজমূউ ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়া ২৩/১২।
.
আল্লামা ইবনে নুজাইম মিসরী রহঃ বলেন,
.
ﻭَﻫُﻮَ ﻗَﻮْﻝُ ﺍﻟْﺠُﻤْﻬُﻮﺭِ ﻟِﻤَﺎ ﻓِﻲ ﺍﻟْﻤُﻮَﻃَّﺈِ ﻋَﻦْ ﻳَﺰِﻳﺪَ ﺑْﻦِ ﺭُﻭﻣَﺎﻥَ ﻗَﺎﻝَ ﻛَﺎﻥَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ ﻳَﻘُﻮﻣُﻮﻥَ ﻓِﻲ ﺯَﻣَﻦِ ﻋُﻤَﺮَ ﺑْﻦِ ﺍﻟْﺨَﻄَّﺎﺏِ ﺑِﺜَﻠَﺎﺙٍ ﻭَﻋِﺸْﺮِﻳﻦَ ﺭَﻛْﻌَﺔً ﻭَﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻋَﻤِﻞَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ ﺷَﺮْﻗًﺎ ﻭَﻏَﺮْﺑًﺎ
.
অর্থ, তারাবীহের নামায বিশ রাকাআত, এটাই জমহুরে ওলামার মত। কেননা, মুয়াত্তা মালেকে ইয়াজিদ ইবনে রুম্মান রহঃ থেকে বর্ণিত আছে, লোকেরা হযরত ওমর রাঃ এর যামানায় ২৩ রাকাত নামায পড়তো। সারা বিশ্বে পূর্বে পশ্চিমে সকল মানুষের এর উপরই আমল চালু রয়েছে।
(বাহরুর রায়েক শরহে কানযুদ্দাকায়েকঃ ৪/৩১৩)
.
হাম্বলী মাযহাবের প্রসিদ্ধ আলেম ইবনে কুদামা রহঃ বলেন,
.
ﻭﻋﻦ ﻋﻠﻲ ﺃﻧﻪ ﺃﻣﺮ ﺭﺟﻼ ﻳﺼﻠﻲ ﺑﻬﻢ ﻓﻲ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﻋﺸﺮﻳﻦ ﺭﻛﻌﺔ ﻭﻫﺬﺍ ﻛﺎﻹﺟﻤﺎﻉ
.
অর্থ, হযরত আলী রাঃ এক ব্যক্তিকে নির্দেশ দিলেন যে, সে যেন মুসুল্লীদেরকে নিয়ে বিশ রাকাআত তারাবীহ পড়ে। তারাবীহ বিশ রাকাআত হওয়াটা ইজমার মতো।
.
(আল-মুগনীঃ ১/৮৩৩, শরহুল কবীর লিল ইবনে কুদামাঃ ১/৭৪৮)
.
ফকীহুন নফছ মাওলানা রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী রহ রহঃ বলেন,
.
ﺍﻟﺤﺎﺻﻞ ﺛﺒﻮﺕ ﺑﺴﺖ ﺭﮐﻌﺖ ﺑﺎﺟﻤﺎﻉ ﺻﺤﺎﺑﮧ ﺭﺿﯽ ﺍﻟﻠﮧ ﻋﻨﮧ ﺩﺭﺍٓﺧﺮ ﺯﻣﺎﻥ ﻋﻤﺮﺭﺿﯽ ﺍﻟﻠﮧ ﻋﻨﮧ ﺛﺎﺑﺖ ﺷﺪ ﭘﺲ ﺳﻨﺖ ﺑﺎﺷﺪ ﻭﮐﺴﮯ ﮐﮧ ﺍﺯ ﺳﻨﺖ ﺍٓﮦ ﺍﻧﮑﺎﺭ ﺩﺍﺭﺩﺧﻄﺎﺳﺖ
.
অর্থ, মোট কাথা হলো, বিশ রাকাত ওিমর রাঃ এর শেষ সাহাবায়ে কিরামদের ইজমা দ্বারা প্রমানিত। যে তার বিরোধিতা করবে সে ভুল করবে।
.
(আল হক্কুছ ছরীহঃ ১৪ নং পৃঃ )
.
আল্লামা মুহাম্মদ ইবনে মুহাম্মদ আয যুবাইদী রহঃ বলেনন,
.
ﻭﺑﺎﻻﺟﻤﺎﻉ ﺍﻟﺬﯼ ﻭﻗﻊ ﻓﯽ ﺯﻣﻦ ﻋﻤﺮ ﺍﺧﺬ ﺍﺑﻮﺣﻨﯿﻔۃ ﻭﺍﻟﻨﻮﻭﯼ ﻭﺍﻟﺸﺎﻓﻌﯽ ﻭﺍﺣﻤﺪ ﻭﺍﻟﺠﻤﮭﻮﺭ ﻭﺍﺧﺘﺎﺭﮦ ﺍﺑﻦ ﻋﺒﺪﺍﻟﺒﺮ
.
অর্থ, ওমরা রাঃ এর যামানায় (২০ রাকাতের উপর) যে ইজমা হয়েছে তা গ্রহন করেছেন আবু হানীফা রহঃ, ইমাম নববী রহঃ, ইমাম শাফেয়ী রহঃ, ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহঃ এবং জমহুর উলামাগণ। এবং আল্লামা ইবনে আব্দুল বার রহঃ ও তা গ্রহন করেছেন।
.
(এত্তেহাফুস সাদাতুল মতীন শরহে এহইয়ায়ু উলূমিদ্দীনঃ ৩/৪২২) ৷
.
বিশ রাকাত তারাবির ও ওমর রাঃ এর আমল সম্পর্কে ইমাম আবূ হানীফা রহঃ এর সুন্দর একটি জাবাব দেখুন………
.
ﻭَﺭَﻭَﻯ ﺃَﺳَﺪُ ﺑْﻦُ ﻋَﻤْﺮٍﻭ ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﻳُﻮﺳُﻒَ ﻗَﺎﻝَ : ﺳَﺄَﻟْﺖُ ﺃَﺑَﺎ ﺣَﻨِﻴﻔَﺔَ ﻋَﻦِ ﺍﻟﺘَّﺮَﺍﻭِﻳﺢِ ﻭَﻣَﺎ ﻓَﻌَﻠَﻪُ ﻋُﻤَﺮُ؟ ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﺍﻟﺘَّﺮَﺍﻭِﻳﺢُ ﺳُﻨَّﺔٌ ﻣُﺆَﻛَّﺪَﺓٌ ﻭَﻟَﻢْ ﻳَﺘَﺨَﺮَّﺻْﻪُ ﻋُﻤَﺮُ ﻣِﻦْ ﺗِﻠْﻘَﺎﺀِ ﻧَﻔْﺴِﻪِ ﻭَﻟَﻢْ ﻳَﻜُﻦْ ﻓِﻴﻪِ ﻣُﺒْﺘَﺪِﻋًﺎ، ﻭَﻟَﻢْ ﻳَﺄْﻣُﺮْ ﺑِﻪِ ﺇِﻟَّﺎ ﻋَﻦْ ﺃَﺻْﻞٍ ﻟَﺪَﻳْﻪِ ﻭَﻋَﻬْﺪٍ ﻣِﻦْ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪِ – ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ، ﻭَﻟَﻘَﺪْ ﺳَﻦَّ ﻋُﻤَﺮُ ﻫَﺬَﺍ ﻭَﺟَﻤَﻊَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱَ ﻋَﻠَﻰ ﺃُﺑَﻲِّ ﺑْﻦِ ﻛَﻌْﺐٍ ﻓَﺼَﻠَّﺎﻫَﺎ ﺟَﻤَﺎﻋَﺔً ﻭَﺍﻟﺼَّﺤَﺎﺑَﺔُ ﻣُﺘَﻮَﺍﻓِﺮُﻭﻥَ ﻣِﻨْﻬُﻢْ ﻋُﺜْﻤَﺎﻥُ ﻭَﻋَﻠِﻲٌّ ﻭَﺍﺑْﻦُ ﻣَﺴْﻌُﻮﺩٍ ﻭَﺍﻟْﻌَﺒَّﺎﺱُ ﻭَﺍﺑْﻨُﻪُ ﻭَﻃَﻠْﺤَﺔُ ﻭَﺍﻟﺰُّﺑَﻴْﺮُ ﻭَﻣُﻌَﺎﺫٌ ﻭَﺃُﺑَﻲٌّ ﻭَﻏَﻴْﺮُﻫُﻢْ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻤُﻬَﺎﺟِﺮِﻳﻦَ ﻭَﺍﻟْﺄَﻧْﺼَﺎﺭِ، ﻭَﻣَﺎ ﺭَﺩَّ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺍﺣِﺪٌ ﻣِﻨْﻬُﻢُ، ﺑَﻞْ ﺳَﺎﻋَﺪُﻭﻩُ ﻭَﻭَﺍﻓَﻘُﻮﻩُ ﻭَﺃَﻣَﺮُﻭﺍ ﺑِﺬَﻟِﻚَ .
.
অর্থ, আসাদ ইবনে আমের রহঃ আবূ ইউছুফ রহঃ থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, আমি ইমাম আযম আবূ হানীফাকে (রহঃ) তারাবী এবং ওমর রাঃ এর কর্ম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বলেন, তারাবী হলো সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। হযরত ওমর রাঃ নিজের পক্ষ থেকে অনুমান করে এটা করেননি। এবং ওমর রাঃ এটা কোন নতুন কাজ করেন নাই। তিনি তার কাছে থাকা ও রাসূল সাঃ এর থেকে প্রাপ্ত কোন নির্দেশনার ভিত্তিতে এই আদেশ প্রদান করেন। এবং ওমর রাঃ যখন এই কাজ করলেন এবং লোকদের উবাই ইবনে কায়াব রাঃ এর ইমামতীতে সবাইকে একাত্রীত করলেন তখন অনেক সাহাবী বিদ্যমান ছিলো। তাদের মধ্যে হযরত ওসমান রাঃ, হযরত আলী রাঃ , হযরত ইবনে মাসউদ রাঃ, হযরত আব্বাস রাঃ, হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ, হযরত তালাহা রাঃ, হযরত যোবাইর রাঃ, এবং হযরত মুয়ায ইবনে জাবাল রাঃ সহ আরো অনেক মুহাজির এবং আনসারী সাহাবী উপিস্থিত ছিলেন। তাদের কেউ এর প্রতিবাদ করেন নাই। বরং তারা তাকে সহযোগীতা করেছেন। তার সাথে এক মত পোষন করেছেন। এবং অন্যদের আদেশ করেছেন।
.
(আল ইখতিয়ার লি তালীল মুখতারঃ ১/৭০, বাহরুর রায়েক শরহে কানযুদ্দাকায়েকঃ ৪/৩১২, ফাতওয়ায়ে শামীঃ ২/৪৬, মারাকিউল ফালাহঃ ১/১৮৩)
.
দেখছেন কত সুস্পস্ট বর্ণনা তারপরও কি মদসকল সলফে সালেহিনদের ছেড়ে নব্য সৃষ্ট কতিপয় ফেতনাবাজের সাথে তাল মিলিয়ে ৮ রাকাত বলবেন??
.
বিখ্যাত তাবেয়ী ইমাম আতা ইবনে আবী রাবাহ মক্কী (রহঃ) (২৭-১১৪ হিঃ) বলেন-
.
ﺃَﺩْﺭَﻛْﺖُ ﺍﻟﻨَّﺎﺱَ ﻭَﻫُﻢْ ﻳُﺼَﻠُّﻮﻥ َ ﺛــَﻼَ ﺛًﺎ ﻭَّﻋِﺸْﺮِﻳـْﻦ َ ﺭَﻛَﻌَﺔً ﺑِﺎﻟْﻮِﺗِﺮِ
.
“আমি লোকদেরকে (সাহাবা-প্রথম সারির তাবেয়ীনকে) দেখেছি, তাঁরা বিতরসহ তেইশ রাকাআত পড়তেন। ”
.
(মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবাঃ ২/২৮৫ )
.
আর আতা ইবনে আবী রাবাহ (রহঃ) তো নিজেই বলেছেন, আমি দুইশ সাহাবীর সাক্ষাৎ পেয়েছি।
.
(তাহযীবুল কামালঃ ১৩/৪৯ )
.
অন্যান্য তাবেয়ী থেকেও এরূপ বিবরণ আছে। এই বাস্তবতাকেই ইমাম ইবনে আব্দুল বার (রহঃ) ‘আলইসতিযকার’ কিতাবে নিম্নোক্ত শব্দে উল্লেখ করেছেন-
.
َﻭﻫُﻮَ ﺍﻟﺼَّﺤِﻴْﺢُ ﻋَﻦ ْ ﺃُﺑَﻰِّ ﺑْﻦِ ﻛَـﻌْﺐٍ ﻣِﻦْ ﻏَﻴْﺮِ ﺧِﻼَﻑٍ ﻣِﻦ َ ﺍﻟﺼَّﺤَﺎﺑَﺔِ
.
“এটিই উবাই ইবনে কা’ব (রঃ) থেকে বিশুদ্ধরূপে প্রমাণিত এবং এতে সাহাবীগণের কোন ভিন্নমত নেই।”
.
(আলইসতিযকারঃ ৫/১৫৭ )
.
ইমাম আবু বকর কাসানী (রহঃ) তারাবীর নামায বিশ রাকাআত না তারচেয়ে বেশি-যেমনটি ‘হাররা’ এর হৃদয়বিদারক ঘটনার আগ থেকে মদীনাবাসীর আমল ছিল-এর আলোচনা প্রসঙ্গে বলেন-
.
ﻭَﺍﻟﺼَّﺤِﻴْﺢُ ﻗَﻮْﻝُ ﻋَﺎﻣَّﺔِ ﺍﻟِْﻌُﻠَﻤَﺎﺀِ , ﻟﻤﺎ ﺭُﻭِﻯَ ﺃَﻥ َّ ﻋُﻤَﺮَ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﺟَﻤَﻊَ ﺃَﺻْﺤَﺎﺏَ ﺭَﺳُﻮْﻝِ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓِﻰ ﺷَﻬْﺮِ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥ ﻋَﻠﻰَ ﺃُﺑَﻰِّ ﺑْﻦِ ﻛَـْﻌﺐٍ , ﻓَﺼَﻠَّﻰ ﺑِﻬِﻢْ ﻓِﻰ ﻛُﻞِّ ﻟَﻴْﻠَﺔٍ ﻋِﺸْﺮِﻳْﻦ ﺭَﻛَﻌَﺔً ﻭِﻟَﻢْ ﻳُﻨْﻜِﺮْ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺃَﺣَﺪٌ . ﻓَﻴَﻜُﻮْﻥ ُ ﺇِﺟْﻤَﺎﻋًﺎ ﻣِﻨْﻬُﻢْ ﻋَﻠَﻰ ﺫَﺍﻟِـﻚَ
.
“অধিকাংশ উলামায়ে কেরাম যা বলেছেন, তা-ই ঠিক। কেননা হযরত উমর (রঃ) রমাদান মাসে সাহাবায়ে কেরামকে উবাই ইবনে কা’ব (রঃ) এর ইমামতিতে একত্র করেন এবং উবাই ইবনে কা’ব তাদেরকে নিয়ে প্রতিরাতে বিশ রাকাআতই পড়তেন এবং তাদের একজনও এ ব্যাপারে আপত্তি উত্থাপন করেননি। সুতরাং এ ব্যাপারে তাদের সকলের ইজমা সম্পন্ন হয়েছে।”
.
(বাদায়েউস সানায়েঃ ১/৬৪৪ )
.
ইমাম ইবনে কুদামা মাকদেসী (রহঃ) বলেন-
.
ﻣَﺎ ﻓَﻌَﻠَﻪُ ﻋُﻤَﺮُ ﻭَﺃَﺟْﻤَﻊَ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺍﻟﺼَّﺤَﺎﺑَﺔَ ﻓِﻰ ﻋَﺼَﺮِﻩِ ﺃَﻭْﻟَﻰ ﺑِﺎْﻻ ﺗِّﺒَﺎﻉِ
.
“উমর (রঃ) যা করেছেন এবং তাঁর খেলাফতকালে অন্যান্য সাহাবীগণ যে ব্যাপারে একমত হয়েছে, তা-ই অনুসরণের অধিক উপযুক্ত। ”
.
(আলমুগনীঃ ২/৬০৪ ) ।
.
ইমাম নববী রহঃ বলেন,
.
ﺇﻋﻠﻢ ﺃﻥ ﺻﻼﺓ ﺍﻟﺘﺮﺍﻭﻳﺢ ﺳﻨﺔ ﺑﺎﺗﻔﺎﻕ ﺍﻟﻌﻠﻤﺎﺀ ، ﻭﻫﻲ ﻋﺸﺮﻭﻥ ﺭﻛﻌﺔ ، ﻳﺴﻠﻢ ﻣﻦ ﻛﻞ ﺭﻛﻌﺘﻴﻦ
.
অর্থ, জানিয়ে রাখ, নিশ্চয় তারাবির নামায সুন্নাত সমস্ত উলামায়ে কিরামের ঐক্যমতে। এবং তারাবির নামায হলো ২০ রাকাত। এবং প্রতি দুই রাকাতের মাথায় সালাম দিবে।
.
(কিতাবুল আযকারঃ ২২৬ নং পৃঃ)
.
ইমাম নববী রহঃ তার অন্য কিতাবে বলেন,
.
ﻓﺼﻼﺓ ﺍﻟﺘﺮﺍﻭﻳﺢ ﺳﻨﺔ ﺑﺎﺟﻤﺎﻉ ﺍﻟﻌﻠﻤﺎﺀ ﻭﻣﺬﻫﺒﻨﺎ ﺃﻧﻬﺎ ﻋﺸﺮﻭﻥ ﺭﻛﻌﺔ ﺑﻌﺸﺮ ﺗﺴﻠﻴﻤﺎﺕ
.
অর্থ, সুতরাং তারাবির নামায সুন্নাত ওলামা কিরামের ইজমা দ্বারা। আমাদের মাযহাব হলো, তারাবী ২০ রাকাত দশ সালামে।
.
(আল মাজমুঃ ৪/৩১)
.
আল্লামা ইবনে আব্দুল বার রহঃ বলেন,
.
ﻭﻫﻮ ﻗﻮﻝ ﺟﻤﻬﻮﺭ ﺍﻟﻌﻠﻤﺎﺀ ﻭﺑﻪ ﻗﺎﻝ ﺍﻟﻜﻮﻓﻴﻮﻥ ﻭﺍﻟﺸﺎﻓﻌﻲ ﻭﺃﻛﺜﺮ ﺍﻟﻔﻘﻬﺎﺀ ﻭﻫﻮ ﺍﻟﺼﺤﻴﺢ ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﺑﻦ ﻛﻌﺐ ﻣﻦ ﻏﻴﺮ ﺧﻼﻑ ﻣﻦ ﺍﻟﺼﺤﺎﺑﺔ
.
অর্থ, (বিশ রাকাত তারাবী) এটা জুমহুর উলামায়ে কিরামের মত। এবং এটা কুফার ওলামায়ে কিরাম এবং ইমাম শাফেয়ী রহঃ এবং অধিকাংশ ফুকাহাদের মত। এবং উবাই এবনে কায়াব রাঃ থেকে ২০ রাকাতের কথা ছহীহ।এতে কোন সাহাবীদের মতানৈক্য ছিলো না।
.
(উমদাতুল কারী শরহে বুখারী লিল আইনীঃ ২১/২৯৪)
.
আল্লামা শামী রহঃ বলেন,
.
ﻗَﻮْﻟُﻪُ ﻭَﻫِﻲَ ﻋِﺸْﺮُﻭْﻥَ ﺭَﻛْﻌَﺔً ﻫُﻮَ ﻗَﻮْﻝُ ﺍﻟْـﺠُﻤْﻬُﻮﺭِ ﻭَﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻋَﻤَﻞُ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ ﺷَﺮْﻗًﺎ ﻭَﻏَﺮْﺑًﺎ
.
অর্থ, তারাবীহের নামায বিশ রাকাআত, এটাই জমহুরে ওলামার মত। সারা বিশ্বে পূর্বে পশ্চিমে সকল মানুষের এর উপরই আমল চালু রয়েছে।
.
(ফাতওয়ায়ে শামীঃ ৫/২৪৬)
.
চার মাযহাবের উপর লিখিত কিতাব মাউসূয়াতুল ফিকহিয়্যাতে আছে,
.
ﻓﺬﻫﺐ ﺟﻤﻬﻮﺭ ﺍﻟﻔﻘﻬﺎﺀ ﻣﻦ ﺍﻟﺤﻨﻔﻴّﺔ ، ﻭﺍﻟﺸّﺎﻓﻌﻴّﺔ ، ﻭﺍﻟﺤﻨﺎﺑﻠﺔ ، ﻭﺑﻌﺾ ﺍﻟﻤﺎﻟﻜﻴّﺔ ﺇﻟﻰ ﺃﻥّ ﺍﻟﺘّﺮﺍﻭﻳﺢ ﻋﺸﺮﻭﻥ ﺭﻛﻌﺔً
.
অর্থ, হানাফী মাযহাবের, শাফেয়ী মাযহাবের, হাম্বলী মাযহাবের সকল উলামায়ে কিরাম এবং মালেকী মাযহাবের কিছু উলামায়ে কিরামের মতে তারাবির নামায ২০ রাকাত।
.
(মাউসূয়াতুল ফিকহিয়্যাতঃ ২৮/১৪৪)
.
ইমাম রাফেয়ী রহঃ বলেন,
.
ﺻﻼﺓ ﺍﻟﺘﺮﺍﻭﻳﺢ ﻋﺸﺮﻭﻥ ﺭﻛﻌﺔ ﺑﻌﺸﺮ ﺗﺴﻠﻴﻤﺎﺕ ﻭﺑﻪ ﻗﺎﻝ ﺃﺑﻮ ﺣﻨﻴﻔﺔ ﻭﺍﺣﻤﺪ
.
অর্থ, তারাবির নামায ২০ রাকাত দশ সালামে। আবূ হানীফা রহঃ এবং ইমাম আহমদ রহঃ এর মত এটাই।
.
(ফতহুল আজীজঃ ৪/১৫৭)
.
ইমাম ইবনু আব্দিল বার রহ. (মৃত : ৪৬৩) বলেন,
.
ﻭَﻫُﻮَ – ﻋِﺸْﺮُﻭﻥَ ﺭَﻛْﻌَﺔ – ﺍﻟﺼَّﺤِﻴﺢُ ﻋَﻦْ ﺃُﺑَﻲِّ ﺑْﻦِ ﻛَﻌْﺐٍ ﻣِﻦْ ﻏَﻴْﺮِ ﺧِﻠَﺎﻑٍ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺼَّﺤَﺎﺑَﺔِ .
.
অর্থ: এটাই সহীহ যে, হযরত উবাই ইবনে কা‘ব ২০ রাকাত তারাবীহ পড়িয়েছেন। আর তাতে কোন সাহাবী দ্বিমত করেননি। [আল ইসতিযকার ৫/১৫৭]
.
ﻗَﺎﻝَ ﺍﺑْﻦُ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟْﺒَﺮِّ ﻭَﻫُﻮَ ﻗَﻮْﻝُ ﺟُﻤْﻬُﻮﺭِ ﺍﻟْﻌُﻠَﻤَﺎﺀِ ﻭَﻫُﻮَ ﺍﻟِﺎﺧْﺘِﻴَﺎﺭُ ﻋِﻨْﺪَﻧَﺎ
.
অর্থ: তিনি আরো বলেন, এটিই (২০ রাকাত তারাবীহ) অধিকাংশ উলামায়ে কেরামের মত এবং আমাদের নিকট এটিই পছন্দনীয়।
.
[তারহুত তাছরীব ৩/৯৭]
.
ইমাম তিরমিযী রহ. (মৃত : ২৬৯) বলেন,
.
ﻭَﺃَﻛْﺜَﺮُ ﺃَﻫْﻞِ ﺍﻟﻌِﻠْﻢِ ﻋَﻠَﻰ ﻣَﺎ ﺭُﻭِﻱَ ﻋَﻦْ ﻋُﻤَﺮَ، ﻭَﻋَﻠِﻲٍّ، ﻭَﻏَﻴْﺮِﻫِﻤَﺎ ﻣِﻦْ ﺃَﺻْﺤَﺎﺏِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻋِﺸْﺮِﻳﻦَ ﺭَﻛْﻌَﺔً، ﻭَﻫُﻮَ ﻗَﻮْﻝُ ﺍﻟﺜَّﻮْﺭِﻱِّ، ﻭَﺍﺑْﻦِ ﺍﻟﻤُﺒَﺎﺭَﻙِ، ﻭَﺍﻟﺸَّﺎﻓِﻌِﻲِّ ﻭﻗَﺎﻝَ ﺍﻟﺸَّﺎﻓِﻌِﻲُّ > : ﻭَﻫَﻜَﺬَﺍ ﺃَﺩْﺭَﻛْﺖُ ﺑِﺒَﻠَﺪِﻧَﺎ ﺑِﻤَﻜَّﺔَ ﻳُﺼَﻠُّﻮﻥَ ﻋِﺸْﺮِﻳﻦَ ﺭَﻛْﻌَﺔً
.
অর্থ: সংখ্যাগরিষ্ঠ উলামায়ে কেরামের মত সেটাই যা বর্ণিত আছে হযরত উমর, হযরত আলী রা. ও অন্যান্য সাহাবায়ে কেরাম থেকে। অর্থাৎ ২০ রাকাত। এটিই ইমাম সুফয়ান সাওরী, ইবনুল মুবারক ও শাফেয়ী রহ. এর মত। ইমাম শাফেয়ী বলেন, আমাদের শহর মক্কা মুর্কারামায় আমি এমনটিই পেয়েছি যে, তারা ২০ রাকাত তারাবীহ পড়তেন।
.
[জামে তিরমিযী ৩/১৬০]
.
ইবনে রুশদ মালেকী রহ. (মৃত : ৫৯৫) বলেন,
.
ﺍﺧْﺘَﺎﺭَ ﻣَﺎﻟِﻚٌ ﻓِﻲ ﺃَﺣَﺪِ ﻗَﻮْﻟَﻴْﻪِ، ﻭَﺃَﺑُﻮ ﺣَﻨِﻴﻔَﺔَ، ﻭَﺍﻟﺸَّﺎﻓِﻌِﻲُّ، ﻭَﺃَﺣْﻤَﺪُ، ﻭَﺩﺍﻭﺩ : ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻡَ ﺑِﻌِﺸْﺮِﻳﻦَ ﺭَﻛْﻌَﺔً ﺳِﻮَﻯ ﺍﻟْﻮِﺗْﺮِ
.
অর্থ: ইমাম মালেক রহ. এর এক বক্তব্য অনুযায়ী এবং ইমাম আবু হানীফা, ইমাম শাফিয়ী, ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল ও ইমাম দাঊদ এর বক্তব্য হচ্ছে বিতর ছাড়া তারাবীহ ২০ রাকাত।
.
[বিদায়াতুল মুজতাহিদ : ১/২১৯]
.
ওয়ালী উদ্দিন ইরাকী রহ. (মৃত : ৮২৬) বলেন,
.
ﻭَﺑِﻬَﺬَﺍ ﺃَﺧَﺬَ ﺃَﺑُﻮ ﺣَﻨِﻴﻔَﺔَ ﻭَﺍﻟﺜَّﻮْﺭِﻱُّ ﻭَﺍﻟﺸَّﺎﻓِﻌِﻲُّ ﻭَﺃَﺣْﻤَﺪُ ﻭَﺍﻟْﺠُﻤْﻬُﻮﺭُ ﻭَﺭَﻭَﺍﻩُ ﺍﺑْﻦُ ﺃَﺑِﻲ ﺷَﻴْﺒَﺔَ ﻓِﻲ ﻣُﺼَﻨَّﻔِﻪِ ﻋَﻦْ ﻋُﻤَﺮَ ﻭَﻋَﻠِﻲٍّ ﻭَﺃُﺑَﻲٍّ ﻭَﺷُﺘَﻴْﺮِ ﺑْﻦِ ﺷَﻜَﻞٍ ﻭَﺍﺑْﻦِ ﺃَﺑِﻲ ﻣُﻠَﻴْﻜَﺔَ ﻭَﺍﻟْﺤَﺎﺭِﺙِ ﺍﻟْﻬَﻤْﺪَﺍﻧِﻲُّ ﻭَﺃَﺑِﻲ ﺍﻟْﺒَﺨْﺘَﺮِﻱِّ
.
অর্থ: ২০ রাকাত তারাবীর মতই গ্রহণ করেছেন ইমাম আবু হানীফা, ইমাম সাওরী, ইমাম শাফেয়ী, ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল এবং অধিকাংশ উলামা। ইমাম ইবনে আবি শাইবা রহ. ‘আল মুসান্নাফ’ গ্রন্থে এ মতই বর্ণনা করেছেন হযরত উমর, হযরত আলী, হযরত উবাই ইবনে কা‘ব, শুতাইর ইবনে শাকাল, ইবনে আবী মুলাইকা, হারেস আল হামদানী ও আবুল বাখতারী থেকে।
.
[তরহুত তাসরীব ৩/৯৭]
.
আব্দুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওয়াহ্হাব রহ. (মৃত : ১২৪২) বলেন,
.
ﻭﻋﻤﺮ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻟﻤﺎ ﺟﻤﻊ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻋﻠﻰ ﺃﺑﻲ ﺑﻦ ﻛﻌﺐ ﻛﺎﻧﺖ ﺻﻼﺗﻬﻢ ﻋﺸﺮﻳﻦ ﺭﻛﻌﺔ
.
অর্থ: উমর রা. যে তারাবীহ নামাজে উবাই ইবনে কা‘ব রা. এর পিছনে সকলকে একত্রিত করেছিলেন তা ছিল ২০ রাকাত।
.
[মাজমুআতুর রাসাইল ওয়াল মাসাইলিন নাজদিয়্যাহ ১/৯৫]
.
ফিকহে হানাফীর নির্ভরযোগ্য কিতাব ‘আলইখতিয়ার লি-তালীলিল মুখতার’ এর বরাতে পূর্ণ কথাটি উল্লেখ করছি-
.
ﺭَﻭَﻯ ﺃَﺳَﺪُﺑْﻦ ُ ﻋَﻤْﺮٍﻭ , ﻋَﻦ ْ ﺃَﺑِﻰ ﻳُﻮْﺳُﻒَ ﻗَﺎﻝَ : ﺳَﺄَ ﻟَﺖُ ﺃَﺑَﺎﺣَﻨِﻴْﻔَﺔَ ﺭَﺣِﻤَﻪُ ﺍﻟﻠﻪُ , ﻋَﻦِ ﺍﻟﺘــَّﺮَﺍﻭِﻳْﺢِ ﻭَﻣَﺎ ﻓَﻌَﻠَﻪُ ﻋُﻤَﺮﺭَﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ , ﻓَﻘﺎَﻝَ : ﺍﻟﺘــَّﺮَﺍﻭِﻳْـﺢُ ﺳُﻨَّﺔٌ ﻣُﺆَﻛّـَﺪَﺓٌ ﻭَﻟَﻢْ ﻳَﺘــَﺨَﺮَّﺻْﻪُ ﻋُﻤَﺮ ﻣِﻦ ْ ﺗِﻠْﻘَﺎﺀِ ﻧَﻔْﺴِﻪِ , ﻭَﻟَﻢْ ﻳَﻜُﻦْ ﻓِﻴْﻪِ ﻣُﺒْﺘَﺪِﻋًﺎ ﻭَﻟَﻢْ ﻳـَﺄْﻣُﺮُ ﺑِﻪِ ﺇِﻻَّ ﻋَﻦ ْ ﺃَﺻْﻞٍ ﻟَﺪَﻳْﻪِ ﻭَﻋَﻬْﺪٍ ﻣِﻦ ْﺭَﺳُﻮْﻝِ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ , ﻭَﻟَﻘَﺪْ ﺳَﻦ َّ ﻋُﻤَﺮ ﻫَﺬَﺍ ﻭَﺟَﻤَﻊَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱَ ﻋَﻠَﻰ ﺃُﺑَﻰ ِّ ﺑْﻦِ ﻛَﻌْﺐ ﻓَﺼَﻼَّﻫَﺎ ﺟَﻤَﺎﻋَﺔً ﻭَﺍﻟﺼَّﺤَﺎﺑَﺔَ ﻣُﺘــَﻮَﺍﻓِﺮُﻭْﻥ َ , ﻣِﻨْﻬُﻢْ ﻋُﺜـﻤَﺎﻥ ُ , ﻭَﻋَﻠِﻰ , ﻭَﺍْﺑﻦ ُ ﻣَﺴْﻌُﻮْﺩٍ ﻭَﺍﻟْﻌَﺒَّﺎﺱُ , ﻭَﺍﺑْﻨُﻪُ , ﻭَﻃَﻠـْﺤَﺔُ , ﻭَﺍﻟﺰُّﺑَﻴْﺮُ , ﻭَﻣَﻌَﺎﺫٌ , ﻭَﺃُﺑَﻰٌّ ﻭَﻏَﻴْﺮُﻫُﻢْ ﻣِﻦ ﺍﻟـْﻤُﻬَﺎﺟِﺮِﻳْـﻦ َ ﻭَﺍﻷَﻧْﺼَﺎﺭِ , ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﻢ ﺃﺟﻤﻌﻴﻦ , ﻭَﻣَﺎ ﺭَﺩَّ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺍﺣِﺪٌ ﻣِﻨْﻬُﻢْ , ﺑَﻞْ ﺳَﺎﻋَﺪُﻭْﻩُ ﻭَﻭَﺍﻓَﻘُﻮْﻩُ ﻭَﺃَﻣَﺮُﻭْﺍ ﺑِﺬَﺍﻟـِﻚَ
.
“ আসাদ ইবনে আমর ইমাম আবু ইউসুফ (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, আমি আবু হানীফা (রহঃ) কে তারাবীহ সুন্নতে মুয়াক্কাদা এবং উমর (রঃ) তা নিজের পক্ষ থেকে অনুমান করে নির্ধারণ করেননি। তিনি এ ব্যাপারে নতুন কিছুর আবিষ্কারও করেননি। তিনি দলীলের ভিত্তিতে এবং নবীজী থেকে প্রাপ্ত কোন নির্দেশনার ভিত্তিতে এই আদেশ করেছেন। তাছাড়া উমর (রঃ) এই নিয়ম চালু করেন এবং উবাই ইবনে কা’ব (রঃ) এর ইমামতিতে সকল মানুষকে একত্র করে দেন। ফলে তাঁরা সবাই এই নামাযটি জামাআতের সাথে আদায় করতে থাকেন। তখন সাহাবায়ে কেরামের সংখ্যাও ছিল প্রচুর। যাদের মধ্যে উসমান, আলী, ইবনে মাসউদ, ইবনে উমর, তলহা, যুবায়ের, মুআজ ও উবাই (রঃ) প্রমুখ বড় বড় মুহাজির ও আনসারী সাহাবী ছিলেন। তাঁদের কেউই এ বিষয়টিকে প্রত্যাখান করেননি; বরং সবাই তাঁর সমর্থন করেছেন এবং তাঁর সাথে একমত পোষণ করেছেন এবং অন্যদেরকে এই আদেশই করেছেন। “
.
(আলইখতিয়ার লি-তালীলল মুখতার, ইমাম আবুল ফযল মাজদুদ্দীন আলমাওসিলীঃ ১/৭৪ ) .
.
প্রখ্যাত মুহাদ্দিস মোল্লা আলী কারী রহঃ
বলেন,
.
ﺃﺟﻤﻊ ﺍﻟﺼﺤﺎﺑﺔ ﻋﻠﻰ ﺃﻥ ﺍﻟﺘﺮﺍﻭﻳﺢ ﻋﺸﺮﻭﻥ ﺭﻛﻌﺔ
.
অর্থ, তারাবিহর নামাজ ২০ রাকাতের ওপর সাহাবায়ে কেরাম ঐক্যমত হয়েছে।
.
(মিরকাত শরহে মিশকাতঃ ৪/৪৪১)
.
তিনি আরো অন্য কিতাবে বলেন,
.
ﻓﺼﺎﺭﺍﺟﻤﺎﻋﺎﻟﻤﺎﺭﻭﯼ ﺍﻟﺒﯿﮭﻘﯽ ﺑﺎﺳﻨﺎﺩ ﺻﺤﯿﺢ : ﺍﻧﮭﻢ ﮐﺎﻧﻮﺍﯾﻘﯿﻤﻮﻥ ﻋﻠﯽ ﻋﮭﺪ ﻋﻤﺮ ﺑﻌﺸﺮﯾﻦ ﺭﮐﻌۃ ﻭﻋﻠﯽ ﻋﮩﺪ ﻋﺜﻤﺎﻥ ﻭﻋﻠﯽ ﺭﺿﯽ ﺍﻟﻠﮧ ﻋﻨﮩﻤﺎ
.
অর্থ, সুতরাং, ২০ রাকাতের উপর ইজমা হয়ে
গেছে। কেননা, ইমাম বাইহাকী রহঃ ছহীহ
সনদে র্বণনা করেছে যে, সাহাবীগণ ওমর রাঃ
এর যামানায় ২০ রাকাত তারাবী পড়তেন।
তেমনিভাবে হযরত ওসমান এবং হযরত আলী রাঃ এর যামানায়ও ২০ রাকাত হতো।
.
(শরহুন নেকায়াহঃ ১/৩৪২) ৷
.
মোটকথা, সাহাবায়ে কেরামের পুণ্যযোগে তারাবীর ব্যাপারে ‘সাবীলিল মুমিনীন’-মুমিনদের সকলের অনুসৃত পথ এই ছিল যে, তাঁরা বিশ রাকাআত তারাবীহ পড়তেন এবং কেই তার উপর আপত্তি করতেন না। কেউ এটাকে না জায়েযও বলতেন না কিংবা বেদআত বা হাদীস ও সুন্নাহর খেলাফও আখ্যা দিতেন না।
এজন্য যারা বিশ রাকাআত তারাবীর উপর আপত্তি করে এবং তাকে সুন্নাহ বা হাদীসের খেলাফ বলে তারা সাবীলুল মুমিনীন থেকে বিচ্যুতিই গ্রহণ করে নিয়েছে।
.
কুরআনে কারীমের নিম্নোক্ত আয়াতটি তাদের স্মরণে রাখা উচিত-
.
ﻭَﻣَﻦ ْ ﻳُﺸَﺎﻗِﻖِ ﺍﻟﺮَّﺳُﻮﻝَ ﻣِﻦ ْ ﺑَﻌْﺪِ ﻣَﺎ ﺗَﺒَﻴَّﻦَ ﻟَﻪُ ﺍﻟﻬْـُﺪَﻯ ﻭَ ﻳَﺘَّﺒِﻊْ ﻏَﻴْﺮَ ﺳَﺒِﻴْﻞِ ﺍﻟﻤُﺆﻣِﻨِﻴْﻦَ ﻧُﻮَ ﻟِّﻪِ ﻣَﺎ ﺗَﻮَ ﻟَّﻰ ﻭَ ﻧُﺼْـﻠِﻪِ ﺟَﻬَـﻨَّﻢَ ﻭَﺳَﺎﺋَـﺖْ ﻣَﺼِﻴﺮًﺍ
.
“যে কেউ রসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে, তার কাছে সরল পথ প্রকাশিত হওয়ার পর এবং সকল মুমিনদের অনুসৃত পথের বিরুদ্ধে চলে, আমি তাকে ওই দিকেই ফেরাব যেদিক সে অবলম্বন করেছে এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব। আর তা নিকৃষ্টতর গন্তব্যস্থান। ”
.
(সূরা নিসাঃ ১১৫ ) .
.
এখন আমরা সাহাবাদের অনুসরন করবো নাকি বতর্মানের তথা কিথিত আহলে হাদিস ফিরকার অনুসরন করবো…..??? এটা আপনারাই ঠিক করুন।
.
আল্লাহ তায়ালা সকল মুসলিমকে কুরআন হাদিসের সঠিক জ্ঞান দান করুক। আমিন।
.
.
আট রাকাত তারাবীহ এর পোস্টমর্টেম, একটি চ্যালেঞ্জ ও প্রশ্ন
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷
.
১। জাবির (রা.) এর আট রাকাতের হাদিস।
.
١٠٧٠ – ﻧﺎ ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﺍﻟﻌﻼﺀ ﺑﻦ ﻛﺮﻳﺐ، ﻧﺎ ﻣﺎﻟﻚ ﻳﻌﻨﻲ ﺍﺑﻦ ﺇﺳﻤﺎﻋﻴﻞ، ﻧﺎ ﻳﻌﻘﻮﺏ، ﺡ ﻭﺛﻨﺎ ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﻋﺜﻤﺎﻥ ﺍﻟﻌﺠﻠﻲ، ﻧﺎ ﻋﺒﻴﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﻳﻌﻨﻲ ﺍﺑﻦ ﻣﻮﺳﻰ، ﻧﺎ ﻳﻌﻘﻮﺏ ﻭﻫﻮ ﺍﺑﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﻘﻤﻲ، ﻋﻦ ﻋﻴﺴﻰ ﺑﻦ ﺟﺎﺭﻳﺔ، ﻋﻦ ﺟﺎﺑﺮ ﺑﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﻗﺎﻝ : ﺻﻠﻰ ﺑﻨﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓﻲ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﺛﻤﺎﻥ ﺭﻛﻌﺎﺕ ﻭﺍﻟﻮﺗﺮ، ﻓﻠﻤﺎ ﻛﺎﻥ ﻣﻦ ﺍﻟﻘﺎﺑﻠﺔ ﺍﺟﺘﻤﻌﻨﺎ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﺴﺠﺪ ﻭﺭﺟﻮﻧﺎ ﺃﻥ ﻳﺨﺮﺝ ﺇﻟﻴﻨﺎ، ﻓﻠﻢ ﻧﺰﻝ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﺴﺠﺪ ﺣﺘﻰ ﺃﺻﺒﺤﻨﺎ، ﺇﻟﻰ ﺁﺧﺮ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ .
.
হযরত জাবির রা. বলেন, রাসূল (সা.) আমাদেরকে নিয়ে রমযানে আট রাকাত ও বেতের পড়লেন। পরের রাতে আমরা মসজিদে সমবেত হলাম এবং আশা করলাম তিনি বেরিয়ে আমাদের কাছে আসবেন। কিন্তু সকাল পর্যন্ত আমরা মসজিদে (অপেক্ষা করতেই) থাকলাম। (অর্থাৎ তিনি আর বের হননি)। সহীহ ইবনে খুজায়মাহ- ১০৭০ নং হাদিস।
.
২।
.
জাবির (রা.) এর আট রাকাতের অপর আরেকটি হাদিস। জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ রা. বলেন,
.
ﺟﺎﺀ ﺃﺑﻲ ﺑﻦ ﻛﻌﺐ ﺇﻟﻰ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓﻘﺎﻝ ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺇﻥ ﻛﺎﻥ ﻣﻨﻲ ﺍﻟﻠﻴﻠﺔ ﺷﻴﺊ ﻳﻌﻨﻲ ﻓﻲ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﻗﺎﻝ : ﻭﻣﺎﺫﺍ ﻳﺎ ﺃﺑﻲ؟ ﻗﺎﻝ ﻧﺴﻮﺓ ﻓﻲ ﺩﺍﺭﻱ ﻗﻠﻦ ﺇﻧﺎ ﻻ ﻧﻘﺮﺃ ﺍﻟﻘﺮﺁﻥ ﻓﻨﺼﻠﻲ ﺑﺼﻼﺗﻚ ﻗﺎﻝ : ﻓﺼﻠﻴﺖ ﺑﻬﻦ ﺛﻤﺎﻥ ﺭﻛﻌﺎﺕ ﺛﻢ ﺃﻭﺗﺮﺕ
.
উবাই ইবনে কাব রা.রাসুল (সা.)এর নিকট এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! গত রাতে : তার উদ্দেশ্য হলো রমযানে- আমার থেকে একটি ব্যাপার ঘটে গেছে। রাসূল (সা.) বললেন, উবাই! সেটা কি?
.
তিনি বললেন,আমার ঘরের নারীরা বললো যে, আমরা তো কুরআন পড়তে পারিনা (অর্থাৎআমাদের কুরআন মুখস্থ নেই)। তাই আমরাও তোমার পেছনে নামায পড়বো। আমি তাদের নিয়ে আট রাকাত পড়লাম। এবং পরে বেতেরও পড়লাম। মুসনাদে আবূ ইয়ালা ১৮০১ নং হাদিস। কিয়ামুল লাইল, ১/২৭৪; মুজামুল আওসাত তাবারানী ৩৭৩১ নং হাদিস।
.
উভয় হাদিসের সনদে ঈসা ইবনে জারিয়া আছেন, তিনি যয়ীফ।
.
১। তার সম্পর্কে ইবনে মাঈন র. বলেছেন, ﻭﺣﺪﻳﺜﻪ ﻟﻴﺲ ﺑﺬﺍﻙ . অর্থাৎ তার হাদীস মজবুত নয়।
তারিখে ইবনে মাঈন রাওয়াতুদ দুয়ারী ৪৮১০ নং রাবী, আল কামেল লি ইবনে আদী ১৩৯২ নং রাবী।
আল জারহু ওয়াত্তাদীল ১৫১৩ নং রাবী।
.
২। অন্য বর্ণনায় ইবনে মাঈন বলেছেন, ﻟﻴﺲ ﺑﺸﻴﺊ অর্থাৎ তিনি কোন বস্তুই নন। সাওয়ালাত ইবনুল জনাইদ-১১৭ নং রাবী।
.
৩। অপর এক বর্ণনায় ইবনে মাঈন বলেছেন ﻋﻨﺪﻩ ﻣﻨﺎﻛﻴﺮ অর্থাৎ তার নিকট মুনকার হাদীস আছে। তারীখে ইবনে মাঈন রাওয়াতুদ দুয়ারী ৪৭২৫ নং রাবী, তাহযীবুত তাহযীব ৩৮৪ নং রাবী।
.
৪। ইমাম নাসায়ী বলেছেন, ﻣﻨﻜﺮ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ অর্থাৎ তিনি মুনকার তথা আপত্তিকর হাদীস বর্ণনাকারী। আয যুয়াফা লিন নাসাঈ-৪২৩ নং রাবী।
.
৫। ইমাম ইবনে আদী বলেছেন, ﺃﺣﺎﺩﻳﺜﻪ ﻏﻴﺮ ﻣﺤﻔﻮﻇﺔ ، তার হাদিস সমুহ গায়রে মাহফুজ। আল কামেল ফিদ দুয়াফা ১৩৯৮ নং রাবী। তাহযীবুত তাহযীব-৩৮৪ নং রাবী।
.
৬।ইবনে হাজার আসকালানী বলেছেন
ﻓﻴﻪ ﻟﻴﻦ
হাদিসের ক্ষেত্রে তার মধ্যে দুর্বলতা আছে। তাকরীবুত তাহযীব, ৫২৮৮ নং রাবী।
.
৭। ইমাম জাওযি তার আয যুয়াাফা ওয়াল মাতরুকাইন গ্রন্থে ইমাম ইবনে মাইন ও ইমাম নাসাঈ এর যেরাসহ উল্লেখ করেছেন,কিন্তু কাহারো তাওসিক পেশ করেন না। ২৬৩৭ নং রাবী।
.
৮। ইমাম উকায়লীও তার আয যুয়াফায় ইমাম ইবনে মাঈন এর যেরাসহ তাকে উল্লেখ করেছেন,কিন্তু কাহারো তাওসীক পেশ করেন না। ১৪২১ নং রাবী।
.
৯। সাজী (রহ.) তাকে যয়ীফদের কাতারে গণ্য করেছেন। অবশ্য সাজী র. এর আয যুয়াফা এর কপি হাতে না থাকার রাবী নং পেশ করতে পারছিনা।
.
১০। ইমাম যাহাবী তার দিওয়ানুয যুয়াফায় ইমাম নাসাঈ এর যেরাসহ উল্লেখ করেছেন। ৩২৭০ নং রাবী।
.
১১। ইমাম যাহাবী তার আল মুগনী ফিদ দুয়াফা গ্রন্থে তাকে উল্লেখ করেছেন। সেখানে বলেছেন ﻋﻦ ﺟﺎﺑﺮ ﻣﺨﺘﻠﻒ ﻓﻴﻪ জাবির থেকে তার হাদিসে ইখতিলাফ রয়েছে। এ হাদিসটি জাবির থেকেই বর্ণনা করেছেন। ৪৭৮৭ নং রাবী।
.
১২। আহমদ ইবনে আলী (মৃঃ ৮৪৫) তার মুখতাসারুল কামেল ফীয যুয়াফায় ইমাম ইবনে মাঈন এর যেরা সহ তাকে উল্লেখ করেছেন।
১৩৯২ নং রাবী।
.
১৩। ঈসা ইবনে জারিয়া’র এ হাদিস সম্পর্কে আল্লামা নিমাভী বলেছেন, ﻭﻓﻲ ﺍﺳﻨﺎﺩﻩ ﻟﻴﻦ এর সনদে দুর্বলতা আছে। আসারুস সুনান ৭৭৩ নং হাদিস।
.
১৪। শায়েখ শুয়াইব আরনাউত (রহ.) সুনানে ইবনে মাযাহ এর ৪২৪১ নং হাদিসের আলোচনায় ঈসা ইবনে জারিয়া সম্পর্কে বলেন- ﺇﺳﻨﺎﺩﻩ ﺿﻌﻴﻒ ﻟﻀﻌﻒ ﻋﻴﺴﻰ ﺑﻦ ﺟﺎﺭﻳﺔ ঈসা ইবনে জারিয়া যঈফ হওয়ার এর সনদ যঈফ।তবে শাওয়াহেদের কারনে হাসান।
.
১৫। শায়েখ হুসাইন সালিম আসাদ ঈসা ইবনে জারিয়ার আট রাকাতের হাদিসসহ তার সকল হাদিসকেই যঈফ/দুর্বল বলেছেন।
.
মুসনাদে আবী ইয়ালা ১৭৯৫, ১৭৯৬, ১৭৯৭,১৭৯৮,১৭৯৯,১৮০০, ১৮০১,১৮০২,১৮০৩,
১৮০৪ নং হাদিস।
.
ঈসা ইবনে জারিয়ার প্রতি তাদিল ও তার জবাবঃ
.
১। আবু জুরা বলেন, ﻻ ﺑﺄﺱ ﺑﻪ “তার মধ্যে কোন সমস্যা নেই”। ইবন হিব্বান তাকে “সিকাহ” গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন।
.
জবাবঃ
.
উল্লেখিত বারজন মুহাদ্দিসের জার্হ এর বিপরীতে শুধু আবূ যুরআ র.ও ইবনে হিব্বান (রহ.) এর তাদীল অগ্রহণযোগ্য। অতএব জার্হ কার্যকর।
তাছাড়া হাদীস শাস্ত্রের মূলনীতি অনুসারে ব্যাখ্যা সম্বলিত র্জাহ বা সমালোচনা অগ্রগণ্য হয়ে থাকে। ফলে ঈসা যয়ীফ প্রমাণিত হন।
.
সাখাবী র. বলেছেন,
ﻣﻨﻜﺮ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﻭﺻﻒ ﻓﻲ ﺍﻟﺮﺟﻞ ﻳﺴﺘﺤﻖ ﺑﻪ ﺗﺮﻙ ﺣﺪﻳﺜﻪ
.
অর্থাৎ ‘মুনকারুল হাদীস’ হওয়া ব্যক্তির এমন একটি দোষ যার কারণে তার হাদীস বর্জনযোগ্য হয়ে যায়। মুগীসিস সাখাবী ১/৪০১। নাসায়ী ও আবূ দাউদ র. যে বলেছেন ‘মুনকারুল হাদীস’- এটি সম্পর্কে লা মাযহাবীদের বিশিষ্ট গুরু খোদ মোবারকপুরী সাহেবও তার “আবকারুল মিনান” গ্রন্থে সাখাবী র. এর উক্ত বক্তব্য নকল করেছেন।
.
এই কারণেই ইবনে হাজার ‘তাকরীবে’ তার সম্পর্কে বলেছেন, ﻓﻴﻪ ﻟﻴﻦ তার মধ্যে দুর্বলতা আছে। (তাকরীব-৫২৮৮ নং রাবী)।
সুতরাং আবূ যুরআ ও ইবনে হিব্বানের উপর নির্ভরকরে হায়ছামী ও বুসায়রি সাহেব হাসান বললেই এটা হাসান হয়ে যাবে না।
.
২। ইমাম যাহাবী তার বর্ণনাকৃত হাদীসকে বলেন, ﺇﺳﻨﺎﺩﻩ ﻭﺳﻂ “এর সনদ উত্তম”।
.
জবাবঃ
.
এটা ভুল অর্থ। ﺇﺳﻨﺎﺩﻩ ﻭﺳﻂ এর অনুবাদ হবে এর সনদ মধ্যম স্তর। আর এই বক্তব্যও সঠিক নয়, কেননা ইতিপূর্বে ইমাম যাহাবীর দুই যুয়াফা গ্রন্থ থেকে জর্হ পেশ করেছি। আর ইমাম যাহাবী রহ. এটিকে হাদিসের পরিচিত পরিভাষা – সহীহ, হাসান, জায়্যিদ ইত্যাদি না বলে নতুন শব্দ ﻭﺳﻂ ‘ওয়াসাত’ বলাই প্রমাণ করে এতে দূর্বলতা রয়েছে।এ ছাড়া আর ১২জন মুহাদ্দিসের যেরাই বলে দিচ্ছে তা সঠিক না। বিশেষত যারা মুনকার বলেছেন, তাদের জর্হ কার্যকর।
.
৩। ইবন খুজায়মাহ তার বর্ণনাকৃত হাদীসকে সহীহ বলেছেন। সহীহ ইবন খুজায়মাহ, হাদীস নং ১০৭০।
.
জবাবঃ
.
আমরা বলব কথা এভাবে বলা উচিত ছিলো যে, ইবনে খুজায়মাহ তার সহীহ গ্রন্থে ঈসা ইবনে জারিয়ার হাদিস উল্লেখ করায় বুঝা যাচ্ছে সে ইবনে খুজায়মার নিকট গ্রহণযোগ্য।
.
৪। হাফিজ মুনজিরী তার বর্ণনাকৃত একটি হাদীসকে বলেন, ﺑﺈﺳﻨﺎﺩﻩ ﺟﻴﺪ ”সনদ ভাল” [আল তারগীব ওয়াল তারহীব ১৫০৭]
.
জবাবঃ
.
ডাহা মিথ্যাচার, হাফেজ মুনজারী তার তারগীব গ্রন্থে ১৫০৭ নং হাদিসের সনদকে ﺟﻴﺪ বলাতো দুরের কথা,সনদে তার নামই নেই। এখানে সনদসহ পুর্ণ হাদিসটি দেখুন-
١٥٠٧ – ﻭﺭﻭﻯ ﺃﺣﻤﺪ ﻣﻦ ﻃﺮﻳﻖ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﻋﻘﻴﻞ ﻋﻦ ﻋﻤﺮﻭ ﺑﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﻋﻦ ﻋﺒﺎﺩﺓ ﺑﻦ ﺍﻟﺼﺎﻣﺖ ﻗﺎﻝ ﺃﺧﺒﺮﻧﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻋﻦ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻘﺪﺭ ﻗﺎﻝ ﻫﻲ ﻓﻲ ﺷﻬﺮ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﻓﻲ ﺍﻟﻌﺸﺮ ﺍﻷﻭﺍﺧﺮ ﻟﻴﻠﺔ ﺇﺣﺪﻯ ﻭﻋﺸﺮﻳﻦ ﺃﻭ ﺛﻼﺙ ﻭﻋﺸﺮﻳﻦ ﺃﻭ ﺧﻤﺲ ﻭﻋﺸﺮﻳﻦ ﺃﻭ ﺳﺒﻊ ﻭﻋﺸﺮﻳﻦ ﺃﻭ ﺗﺴﻊ ﻭﻋﺸﺮﻳﻦ ﺃﻭ ﺁﺧﺮ ﻟﻴﻠﺔ ﻣﻦ ﺭﻣﻀﺎﻥ
ﻣﻦ ﻗﺎﻣﻬﺎ ﺍﺣﺘﺴﺎﺑﺎ ﻏﻔﺮ ﻟﻪ ﻣﺎ ﺗﻘﺪﻡ ﻣﻦ ﺫﻧﺒﻪ ﻭﻣﺎ ﺗﺄﺧﺮ ﻭﻣﺎ ﺗﻘﺪﻣﺖ ﻫﺬﻩ ﺍﻟﺰﻳﺎﺩﺓ ﻓﻲ ﺣﺪﻳﺚ ﺃﺑﻲ ﻫﺮﻳﺮﺓ ﻓﻲ ﺃﻭﻝ ﺍﻟﺒﺎﺏ
.
এমনকি আত তারগীবে অনেক খুঁজাখুঁজি করার পরেও ঈসা ইবনে জারিয়ার নামই পেলাম না, । কেহ পেলে জানানোর অনুরুদ থাকল।
.
৫। ইমাম বুখারী তার “তারীখুল কাবীরে” তার কোন সমালোচনা করেননি [তারীখুল কাবীর ২/৩৮৫, রাবী নং ২৭২১]
.
জবাবঃ
.
সমালোচনা করেননি কথা ঠিক আছে। তবে তার প্রশংসাও তো করেননি।
.
৭। ইবন হাজার আসকালানী তার বর্ণনাকৃত হাদীসের প্রতি নিরব থেকেছেন। [ফাতহুল বারী ৩/১০, হাদীস ১১২৯]
.
জবাবঃ
.
ফতহুল বারীতে নিরব থাকলেও তাকরীব গ্রন্থে বলেছেন ﻓﻴﻪ ﻟﻴﻦ অর্থাৎ হাদিসের ক্ষেত্রে তার মধ্যে দুর্বলতা আছে।তাকরীবুত তাহযীব- ৫২৮৮ নং রাবী।
.
৮। আবু হাতিম আল রাযী তাকে উল্লেখ করেছেন কিন্তু কোনরুপ সমালোচনা করেননি। [আল জারাহ ওয়াল তাদীল ৬/২৭৩] এবং দেওবন্দী মত অনুযায়ী যে কোন রাবীর প্রতি আবু হাতিম আল রাযীর নিরবতা তার কাছে সেই রাবী সিকাহ বলেই বিবেচিত হয়। [দেখুন কাওয়েদ ফি উলুমিল হাদীস, পৃঃ ২৪৭]
.
জবাবঃ
.
আবু হাতিম তাকে সমালোচনা করেননি। তো প্রশংসাও করেন নি। আর দেওবন্দী মত পেশ করেছে। মাশাল্লাহ। লা মাযহাবীদের মতে দেওবন্দীরা মুশরিক,বেদায়াত
ি, মাযহাবী গুমরাহী। অবশেষে মুশরিক বেদায়াতিরা হলো দলিল। নিজেদের পক্ষে গেলে মাযহাবী বেদাতিরাও দলিল! বাহ দলিলের কি বাহার।
.
৯। নিমাভী হানাফী তার বর্ণনাকৃত হাদীসকে “সহীহ” বলেছেন। [আসারুল সুনান ৯৬০]
.
জবাবঃ
.
জি, আমরাও বলি আসারুস সুনানের ৯৬০নং হাদিসটি সহীহ। এর সমর্থনে অনেক সহীহ হাদিস থাকায়। একক ভাবে নিমাভী এর মতেও সহীহ নয়।
.
কেননা স্বয়ং ৮ রাকাত তারাবীর হাদিস সম্পর্কে আল্লামা নিমাভী বলেছেন, ﻭﻓﻲ ﺍﺳﻨﺎﺩﻩ ﻟﻴﻦ এর সনদে দুর্বলতা আছে। আসারুস সুনান ৭৭৩ নং হাদিস।
আর যদি ধরেও নেই তার হাদিস সহীহ।তারপরেও এ হাদিসদ্বয় দ্বারা তারাবী প্রমানিত নয়। কেননা প্রথম হাদীস থেকে বোঝা যায়, এটা কেবল এক রাতের ঘটনা ছিল। যেহেতু সে সময় তারাবী নামায জামাতের সঙ্গে পড়ার প্রচলন ছিল না। তাই এ হাদিস দ্বারা তারাবী প্রমান নিতান্ত মুর্খতা ছাড়া আর কিছুই নয়।
.
আর দ্বিতীয় হাদিসে উবাই বলেন, ﻓﺼﻠﻴﺖ ﺑﻬﻦ ﺛﻤﺎﻥ ﺭﻛﻌﺎﺕ আমি তাদের নিয়ে আট রাকাত পড়লাম। পড়তাম বলেননি, এতে স্পষ্ট বুঝাযায় এটা মাত্র একবার ঘটেছে। এটা রাতের না দিনের এই কথাও নেই। তাছাড়া এ হাদিসের মুল পাঠে রমজানের কথাই নেই। তাহলে তারাবীহ হলো কি করেছে?
.
৩। মুহাম্মাদ ইবনে ইউসুফ এর আট রাকাত তারাবীর হাদিসটি তার ছয়জন ছাত্র বর্ণনা করেছেন। চারজন ১১, একজন ১৩ ও অপর একজন ২১ রাকাতের কথা বর্ণনা করেছেন। অর্থাৎ ইবনে ইউসুফের বর্ণনায় ইযতিরাব, স্বয়ং ১১ রাকাতের বর্ণনায়ও। কিভাবে তা পেশ করছি-
.
ক. মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফ থেকে মালেকের বর্ণনা-
.
٣٧٩ – ﻣﺎﻟﻚ، ﻋﻦ ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﻳﻮﺳﻒ، ﻋﻦ ﺍﻟﺴﺎﺋﺐ ﺑﻦ ﻳﺰﻳﺪ؛ ﺃﻧﻪ ﻗﺎﻝ : ‏[ ﺹ : ١٥٩ ‏] ﺃﻣﺮ ﻋﻤﺮ ﺑﻦ ﺍﻟﺨﻄﺎﺏ ﺃﺑﻲ ﺑﻦ ﻛﻌﺐ ﻭﺗﻤﻴﻤﺎ ﺍﻟﺪﻳﺮﻱ ‏( ١ ‏) ﺃﻥ ﻳﻘﻮﻣﺎ ﻟﻠﻨﺎﺱ ﺑﺈﺣﺪﻯ ﻋﺸﺮﺓ ﺭﻛﻌﺔ
.
উমর রা. উবাই ইবনে কা‘ব ও তামীম দারী রা.কে সকলকে নিয়ে ১১ রাকাত নামাজ পড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন( এ হাদিসে উমর রা. এর নির্দেশটি পালিত হয়েছে কিনা এতে এ কথা বলা নেই)।
মুআত্তা মালেক ৩৭৯ নং হাদিস।
.
এহাদিসটি ইমাম মালেক বর্ণনা করলেও এর উপর তিনি আমল করতেন না। তাছাড়া ইমাম মালেক সায়েব ইবনে ইয়াজিদ থেকে ২০ রাকাতের পক্ষে ২টি রেওয়ায়েত বর্ণনা করেছেন।বর্ণিত হাদীসটি সে ২রেওয়ায়েতের খেলাফ।
.
খ. মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফ থেকে ইয়াহইয়া ইবনে সাঈদ আল কাত্তানের বর্ণনা-
.
٧٦٧١ – ﺣﺪﺛﻨﺎ ﺃﺑﻮ ﻣﺤﻤﺪ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﻳﻮﻧﺲ، ﻗﺎﻝ : ﺛﻨﺎ ﺑﻘﻲ ﺑﻦ ﻣﺨﻠﺪ، ﺭﺣﻤﻪ ﺍﻟﻠﻪ، ﻗﺎﻝ : ﺛﻨﺎ ﺃﺑﻮ ﺑﻜﺮ، ﻗﺎﻝ : ﺛﻨﺎ ﻳﺤﻴﻰ ﺑﻦ ﺳﻌﻴﺪ ﺍﻟﻘﻄﺎﻥ، ﻋﻦ ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﻳﻮﺳﻒ، ﺃﻥ ﺍﻟﺴﺎﺋﺐ ﺃﺧﺒﺮﻩ : ‏« ﺃﻥ ﻋﻤﺮ ﺟﻤﻊ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻋﻠﻰ ﺃﺑﻲ ﻭﺗﻤﻴﻢ ﻓﻜﺎﻧﺎ ﻳﺼﻠﻴﺎﻥ ﺇﺣﺪﻯ ﻋﺸﺮﺓ ﺭﻛﻌﺔ
.
উমর রা. উবাই ও তামীম রা.এর নিকট লোকদের একত্রিত করলেন। তারা দুজন ১১ রাকআত পড়তেন। (এতে উমর রা. এর নির্দেশ দেওয়ার কথা নেই।) মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা- ৭৬৭১নং হাদিস।
.
গ. মুহাম্মাদ ইবনে ইউসুফ থেকে আব্দুল আযীয ইবনে মুহাম্মদ এর বর্ণনা- আমরা উমর রা.এর যুগে ১১ রাকআত পড়তাম। (এতে উমর রা.এর নির্দেশের উল্লেখ নেই। উবাই ও তামীম রা.এরও উল্লেখ নেই)।
(সুনানে সাঈদ ইবনে মানসুর)।
.
ঙ. মুহাম্মাদ ইবনে ইউসুফ থেকে ইসমাঈল ইবনে জাফর এর বর্ণনা-
.
٤٤٠ – ﺣﺪﺛﻨﺎ ﻋﻠﻲ، ﺛﻨﺎ ﺇﺳﻤﺎﻋﻴﻞ، ﺣﺪﺛﻨﺎ ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﻳﻮﺳﻒ ﺑﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﻳﺰﻳﺪ ﺍﻟﻜﻨﺪﻱ، ﻋﻦ ﺍﻟﺴﺎﺋﺐ ﺑﻦ ﻳﺰﻳﺪ ‏« ﺃﻧﻬﻢ ﻛﺎﻧﻮﺍ ﻳﻘﻮﻣﻮﻥ ﻓﻲ ﺯﻣﻦ ﻋﻤﺮ ﺑﻦ ﺍﻟﺨﻄﺎﺏ ﺑﺈﺣﺪﻯ ﻋﺸﺮﺓ ﺭﻛﻌﺔ ﻳﻘﺮﺀﻭﻥ ﻓﻲ ﺍﻟﺮﻛﻌﺔ ﺑﺎﻟﻤﺎﺋﺘﻴﻦ ﺣﺘﻰ ﺇﻧﻬﻢ ﻟﻴﻌﺘﻤﺪﻭﻥ ﺑﺎﻟﻌﺼﻲ »
.
তারা উমর রা.এর যুগে ১১ রাকআত পড়তেন।( এতে উমর রা. এর নির্দেশও নেই, উবাই ও তামীম রা. এর কথাও উল্লেখ নেই)। আহাদীসু ইসমাইল ইবনে জাফর, ৪৪০ নং হাদিস।
.
মুহাম্মদ বিন ইউসুফের এই চার ছাত্র ১১ রাকাতের সংখ্যা বর্ণনার ক্ষেত্রে এক হলেও এদের বক্তব্যের মাঝে বিভিন্নতা তথা ইযতিরাব রয়েছে। বাকি রইলো ১৩ ও ২১ রাকাতের বর্ণনা।
.
চ. মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফ থেকে ইবনে ইসহাক এর ১৩ রাকাতের বর্ণনা-
.
ﺣﺪﺛﻨﻲ ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﻳﻮﺳﻒ ﻋﻦ ﺍﻟﺴﺎﺋﺐ ﻓﻘﺎﻝ : ﺛﻼﺙ ﻋﺸﺮﺓ .
.
ইবনে ইসহাক বলেন, আমাকে মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফ সায়েব ইবনের ইয়াযীদ থেকে ১৩ রাকাতের কথা বর্ণনা করেছেন। (এতেও নির্দেশের উল্লেখ নেই। উবাই ও তামীম রা.এরও উল্লেখ নেই। আবার এতে ১১ এর স্থলে ১৩ এর কথা এসেছে।)
.
ফাতহুল বারী ৪/২৫৩; ক্বিয়ামু রমযান মুহাম্মদ ইবনে নসর আল মারওয়াযী পৃ : ২২০।এখানে স্পষ্ট বুঝাই যাচ্ছে ইবনে ইউসুফ এর বর্ণনায় ইযতিরাব। ছ. মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফ থেকে দাউদ ইবনে কায়স আরো অন্যান্যদের বর্ণনা-
.
٧٧٣٠ – ﻋﻦ ﺩﺍﻭﺩ ﺑﻦ ﻗﻴﺲ، ﻭﻏﻴﺮﻩ، ﻋﻦ ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﻳﻮﺳﻒ، ﻋﻦ ﺍﻟﺴﺎﺋﺐ ﺑﻦ ﻳﺰﻳﺪ، ” ﺃﻥ ﻋﻤﺮ : ﺟﻤﻊ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻓﻲ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﻋﻠﻰ ﺃﺑﻲ ﺑﻦ ﻛﻌﺐ، ﻭﻋﻠﻰ ﺗﻤﻴﻢ ﺍﻟﺪﺍﺭﻱ ﻋﻠﻰ ﺇﺣﺪﻯ ﻭﻋﺸﺮﻳﻦ ﺭﻛﻌﺔ
.
উমর রা. রমজান মাসে উবাই ইবনে কা‘ব এবং তামীমে দারী রা. এর পিছনে সকলকে ২১ রাকাত তারাবীহ নামাজের উপর ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। (এতে ১১ এর পরিবর্তে ২১ এর কথা এসেছে।) মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক। ৭৭৩০ নং হাদীস। আর স্পষ্ট হলো যে, ইবনে ইউসুফ এর বর্ণনায়ই ইযতিরাব ।
.
ইবনে ইউসুফের ১১ রাকাতের বর্ণনাকে ইযতিরাব মুক্ত প্রমাণ করতে দাউদ ইবনে কায়েসের ২১ রাকাতের বর্ণনায় আলবানী সাহেবের আপত্তিঃ
.
আব্দুর রাজ্জাক ও মুহম্মদ ইবনে ইউসুফ এর মধ্যবর্তী বর্ণনাকারী(দাউদ ইবনে কায়েস) যদিও ত্রুটিমুক্ত, তথাপি এ বর্ণনার ত্রুটি মূলত স্বয়ং আব্দুর রাজ্জাক এর মধ্যেই। কারণ তিনি সিকাহ হাফেজ এবং প্রসিদ্ধ লেখক হলেও শেষ বয়সে অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন, তাঁর স্মৃতিশক্তি পরিবর্তন হয়ে গিয়েছিল। আর এ কথা জানা নেই যে, এ বর্ণনা তার পরিবর্তনের আগের না পরের? তাই এ বর্ণনা গ্রহণযোগ্য নয়।
.
জবাবঃ.
.
আসরাম এর সূত্রে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল বলেন,
.
ﻣﻦ ﺳﻤﻊ ﻣﻨﻪ ﺑﻌﺪ ﻣﺎ ﻋﻤﻲ ﻓﻠﻴﺲ ﺑﺸﻲﺀ ﻭﻣﺎ ﻛﺎﻥ ﻓﻲ ﻛﺘﺒﻪ ﻓﻬﻮ ﺻﺤﻴﺢ ﻭﻣﺎ ﻟﻴﺲ ﻓﻲ ﻛﺘﺒﻪ ﻓﺈﻧﻪ ﻛﺎﻥ ﻳﻠﻘﻦ ﻓﻴﺘﻠﻘﻦ
.
অর্থ: ইমাম আব্দুর রাজ্জাক রহ. রচনাবলীতে যা আছে তা সঠিক। তবে যারা তাঁর অন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে শুনেছে এবং তা তাঁর রচনাবলীতে নেই তা গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, তখন তাঁকে যা বলা হত তিনি তাই বলতেন। [হাদয়ুস সারী ফাতহুল বারী সহ ১/৪১৯]
.
দাউদ ইবনে কায়স সূত্রে বর্ণিত আলোচ্য ২১ তাকাতের হাদীসটি আব্দুর রাজ্জাক রহ. এর ‘আল মুসান্নাফ’ গ্রন্থে রয়েছে। তাই তাতে তার শেষ বয়সের স্মৃতিশক্তিজনিত দুর্বলতার কোন প্রভাব পড়েনি।
.
নচেৎ বলতে হবে আব্দুর রাজ্জাক এর ‘মুসান্নাফ’ গ্রন্থ পুরোটাই অগ্রহণযোগ্য ও সন্দেহপূর্ণ । যা গোটা উম্মতে মুসলিমার চিন্তা ও আমল বিরোধী। আর আলবানী সাহেব এমন আপত্তি উত্থাপন করে জরাহ-তাদীল বিষয়ে জ্ঞান স্বল্পতার একটি দৃষ্টান্ত পেশ করলেন।যা উম্মাহের বিজ্ঞজনের জ্ঞানের চুড়ায় আঘাত হেনেছেন।
.
আসল কথা হলো মুহাম্মাদ ইবনে ইউসুফ, যার বর্ণনা ১১ রাকাত, এর থেকে ২১ রাকাত প্রমাণিত হবে তা আলবানী সাহেব মেনে নিতে পারেননি,তাই এমন আপত্তি করে বসে নিজেই আপত্তিকর সাবস্ত হয়ে গেলেন।
.
শায়খ আলবানী রহ. তার ‘সালাতুত তারাবীহ’ গ্রন্থের ৫০ নং পৃষ্ঠায় ইয়াযীদ ইবনে খুসাইফার ২০রাকাতের বর্ণনায় ইযতিরাব প্রমাণ করতে গিয়ে লিখেছেন,
.
ﻗﺎﻝ ﺇﺳﻤﺎﻋﻴﻞ ﺑﻦ ﺃﻣﻴﺔ ﺃﻥ ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﻳﻮﺳﻒ ﺍﺑﻦ ﺃﺧﺖ ﺍﻟﺴﺎﺋﺐ ﺑﻦ ﻳﺰﻳﺪ ﺃﺧﺒﺮﻩ ‏( ﻗﻠﺖ : ﻓﺬﻛﺮ ﻣﺜﻞ ﺭﻭﺍﻳﺔ ﻣﺎﻟﻚ ﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﻳﻮﺳﻒ ﺛﻢ ﻗﺎﻝ ﺍﺑﻦ ﺃﻣﻴﺔ ‏) : ﻗﻠﺖ : ﺃﻭ ﻭﺍﺣﺪ ﻭﻋﺸﺮﻳﻦ ؟ ﻗﺎﻝ :
‏( ﻳﻌﻨﻲ ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﻳﻮﺳﻒ ‏) : ﻟﻘﺪ ﺳﻤﻊ ﺫﻟﻚ ﻣﻦ ﺍﻟﺴﺎﺋﺐ ﺑﻦ ﻳﺰﻳﺪ – ﺍﺑﻦُ ﺧﺼﻴﻔﺔ، ﻓﺴﺄﻟﺖُ ‏( ﺍﻟﺴﺎﺋﻞ ﻫﻮ ﺍﺳﻤﺎﻋﻴﻞ ﺑﻦ ﺃﻣﻴﺔ ‏) ﻳﺰﻳﺪ ﺑﻦ ﺧﺼﻴﻔﺔ؟ ﻓﻘﺎﻝ : ﺣﺴﺒﺖُ ﺃﻥ ﺍﻟﺴﺎﺋﺐ ﻗﺎﻝ : ﺃﺣﺪ ﻭﻋﺸﺮﻳﻦ . ﻗﻠﺖُ : ﻭﺳﻨﺪﻩ ﺻﺤﻴﺢ .
.
অর্থ: মুহাম্মাদ ইবনে ইউসুফ থেকে ১১ রাকাতের বর্ণনা শুনে ইসামাঈল ইবনে উমাইয়া তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, এ বর্ণনায় রাকাত সংখ্যা ১১ নাকি ২১? তিনি উত্তরে বললেন, ‘সায়েব ইবনে ইয়াযীদ থেকে ২১ রাকাতের বিষয়টি শুনেছে ইয়াযীদ ইবনে খুসাইফা। এরপর আমি (ইসমাঈল ইবনে উমাইয়া) ইয়াযীদ ইবনে খুসাইফাকে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, আমি ধারণা করছি যে, সায়েব রা. বলেছেন ২১ রাকাত’। আমি (আলবানী রহ.) বলি, এই বর্ণনাটির সনদ সহীহ।
.
লক্ষ করুন, এখানে স্বয়ং মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফ (আলবানী সাহেব যার সূত্রে ১১ রাকাত সহীহ বলে দাবী করেছেন) সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, ইয়াযীদ ইবনে খুসাইফা সায়েব ইবনে ইয়াযীদ থেকে ২১ রাকাতের বর্ণনা শুনেছেন। আর এ বর্ণনা উল্লেখ করে আলবানী রহ. বলেছেন, এর সনদ সহীহ।
.
তাহলে ফলাফল দাঁড়াল এই, মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফের সাক্ষ্য অনুযায়ী ইয়াযীদ ইবনে খুসাইফার ২১ রাকাতের বর্ণনা সহীহ এবং সেটি আলবানী রহ. এর নিকটেও সহীহ।
.
২০ রাকাতের হাদীস ইয়াযিদ ইবনে খুসাইফা থেকে বর্ণনা করেছেন দু‘জন। ইবনু আবী যীব ও মুহাম্মদ ইবনে জাফর। আর এখানে ইসমাঈল ইবনে উমাইয়্যা একা বলেন ২১ রাকাত। তাদের দু‘জনের বর্ণনা এসেছে নিশ্চয়তাবোধক শব্দে।
.
আর ইসমাঈলের বর্ণনায় এসেছে ﺣَﺴِﺒْﺖُ(আমি ধারণা করেছি) তথা অনিশ্চয়তাবোধক শব্দ। ইবনে উমাইয়া এর অনিশ্চয়বোধক শব্দে ২১ রাকাতের বর্ণনা যখন শায়েখ আলবানী সাহেবের নিকট সহীহ, তাহলে ইবনু আবী যীর ও মুহাম্মদ ইবনে জাফর এর নিশ্চয়তা বোধক শব্দে ২০ রাকাতের বর্ণনা সন্দেহাতীতভাবেই সহীহ,তা আর বুঝিয়ে বলার অপেক্ষা রাখেনা।
.
আলবানী রহ. মূলত ইয়াযীদ ইবনে খুসাইফার বর্ণনায় ইযতিরাব প্রমাণ করতে গিয়ে বর্ণনাটি উল্লেখ করেছেন। কিন্তু এটি যে তাঁর মতের বিরুদ্ধে এভাবে দলীল হয়ে দাঁড়াবে তিনি হয়তো সেটা টের পাননি।
.
শায়েখ আলবানী সাহেব মনে করেন, ইয়াযীদ ইবনে খুসাইফার বর্ণনায় তারাবীহ এর রাকাত সংখ্যার ক্ষেত্রে ‘ইযতিরাব’ (বর্ণনার বিভিন্নতা) রয়েছে।
.
তার কোন বর্ণনায় ২১ এবং কোন বর্ণনায় ২০ (বিতরসহ ২৩) রাকাতের কথা এসেছে। পক্ষান্তরে মুহাম্মদ বিন ইউসুফ এর বর্ণনা ‘ইযতিরাব’মুক্ত।
.
আলবানী সাহেবের জন্মের শত শত বসর আগেই ইবনে হাজার আসকালানী এর জবাব দিয়েছেন, ইবনে হাজার বলেন,
.
ﻭﺍﻻﺧﺘﻼﻑ ﻓﻴﻤﺎ ﺯﺍﺩ ﻋﻦ ﺍﻟﻌﺸﺮﻳﻦ ﺭﺍﺟﻊ ﺇﻟﻰ ﺍﻻﺧﺘﻼﻑ ﻓﻲ ﺍﻟﻮﺗﺮ ﻭﻛﺄﻧﻪ ﻛﺎﻥ ﺗﺎﺭﺓ ﻳﻮﺗﺮ ﺑﻮﺍﺣﺪﺓ ﻭﺗﺎﺭﺓ ﺑﺜﻼﺙ
.
অর্থ: তারাবীহর নামাজ ২০ রাকাতের উপরে বর্ণনার যে বিভিন্নতা রয়েছে তা মূলত বিতর নামাজের কারণে। কারণ, বিতর কখনও এক রাকাত কখনো ৩ রাকাত পড়া হত। [ফাতহুল বারী ৪/২৫৩]
.
আর ২১ রাকাতের বর্ণনাটি তো লা-মাযহাবী বন্ধুদের মতানুসারে ২৩ রাকাতের বর্ণনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয় না।
.
কারণ, তারা বলে থাকেন বিতর এক রাকাতও পড়া যায়, তিন রাকাতও পড়া যায়। তাহলে মূল তারাবীহ ২০ রাকাতই প্রমাণিত হলো। ফলে হাদীসটি মুযতারিব থাকল না। দলীলসহ নামাযের মাসায়েল বার্ধিত সংস্করণ পৃ ৪০০। আর আলবানী সাহেব যে বলেছেন, মুহাম্মদ বিন ইউসুফ এর বর্ণনা ‘ইযতিরাব’মুক্ত। এ দাবী যে সঠিক নয় তা আমরা ইতোপূর্বে প্রমান করেছি।
.
আরবের বিখ্যাত সালাফী আলেম শায়খ মুহাম্মদ ইবনে ইবরাহিম আততুওয়াইজিরী তারাবীর রাকাত সংখ্যা পর্যালোচনা করতে গিয়ে মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফের বর্ণনার তুলনায় ইবনে খুসাইফার ২০ রাকাতের বর্ণনাকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। তিনি মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফের বর্ণনার বিভিন্নতার কথা উল্লেখ করে লিখেছেন, ‘মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফ উপরোক্ত কথাগুলোর বর্ণনাকারী।
.
হাদীসের মৌল সূত্র অনুসারে একই রাবীর একই বিষয়ে পৃথক পৃথক মত প্রকাশ করা বিশুদ্ধ হওয়ার অন্তরায়। সুতরাং ২০ রাকাতের অভিন্ন মত গ্রহণ করাই যুক্তিসঙ্গত।’
.
(দেখুন, পিস পাবলিকেশন-ঢাকা থেকে প্রকাশিত ‘কুরআন ও সহীহ্ হাদীসের আলোকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্র্যাকটিক্যাল নামায’ পৃষ্ঠা নং ২২২)
.
মুহাম্মুদ ইবনে ইউসুফের বর্ণনায় এতো এতো ইযতিরাব থাকার পরেও আমাদের ঐ বন্ধুরা কি করে তার হাদিস দ্বারা তারাবীহ ৮ বিতরসহ ১১ রাকাতের দলিল পেশ করে!? ইযতিরাব ১১ রাকাতের বর্ণনায় অথচ আপত্তি করে ২০ রাকাতের বর্ণনায়। বাহ বুঝের কি বাহার।
.
যেহেতু তারাবী ৮ রাকাত,বিতরসহ ১১ রাকাতের হাদিসগুলোর খণ্ড করা হচ্ছে। তাই ২০ রাকাতের দলিল সমুহ এখানে পেশ করলাম না। শুধু প্রাসঙ্গিক কারনে কিছু আলোচনা করেছি মাত্র।
.
ঈসা ইবনে জারিয়া বর্ণিত হাদিসদ্বয় ও সায়েব ইবনে ইয়াজিদের ছাত্র মুহাম্মাদ ইবনে ইউসুফ এর ১১ রাকাতের বর্ণনা সঠিক না হওয়ার আরো একটি কারণ এই যে, সহীহ মারফু হাদীস সমূহে একাধিক সাহাবী কর্তৃক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তারাবী পড়ার ঘটনা বর্ণিত হয়েছে।
.
১। আয়েশা (রা.) থেকে বুখারী শরীফের ৮২৪ নং হাদিস।
.
ﺃﻥ ﻋﺎﺋﺸﺔ، ﺃﺧﺒﺮﺗﻪ : ﺃﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺧﺮﺝ ﺫﺍﺕ ﻟﻴﻠﺔ ﻣﻦ ﺟﻮﻑ ﺍﻟﻠﻴﻞ، ﻓﺼﻠﻰ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﺴﺠﺪ، ﻓﺼﻠﻰ ﺭﺟﺎﻝ ﺑﺼﻼﺗﻪ، ﻓﺄﺻﺒﺢ ﺍﻟﻨﺎﺱ، ﻓﺘﺤﺪﺛﻮﺍ، ﻓﺎﺟﺘﻤﻊ ﺃﻛﺜﺮ ﻣﻨﻬﻢ، ﻓﺼﻠﻮﺍ ﻣﻌﻪ، ﻓﺄﺻﺒﺢ ﺍﻟﻨﺎﺱ، ﻓﺘﺤﺪﺛﻮﺍ، ﻓﻜﺜﺮ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﻤﺴﺠﺪ ﻣﻦ ﺍﻟﻠﻴﻠﺔ ﺍﻟﺜﺎﻟﺜﺔ، ﻓﺨﺮﺝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ، ﻓﺼﻠﻮﺍ ﺑﺼﻼﺗﻪ، ﻓﻠﻤﺎ ﻛﺎﻧﺖ ﺍﻟﻠﻴﻠﺔ ﺍﻟﺮﺍﺑﻌﺔ ﻋﺠﺰ ﺍﻟﻤﺴﺠﺪ ﻋﻦ ﺃﻫﻠﻪ ﺣﺘﻰ ﺧﺮﺝ ﻟﺼﻼﺓ ﺍﻟﺼﺒﺢ، ﻓﻠﻤﺎ ﻗﻀﻰ ﺍﻟﻔﺠﺮ ﺃﻗﺒﻞ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻨﺎﺱ، ﻓﺘﺸﻬﺪ، ﺛﻢ ﻗﺎﻝ : ‏« ﺃﻣﺎ ﺑﻌﺪ، ﻓﺈﻧﻪ ﻟﻢ ﻳﺨﻒ ﻋﻠﻲ ﻣﻜﺎﻧﻜﻢ، ﻟﻜﻨﻲ ﺧﺸﻴﺖ ﺃﻥ ﺗﻔﺮﺽ ﻋﻠﻴﻜﻢ، ﻓﺘﻌﺠﺰﻭﺍ ﻋﻨﻬﺎ »
.
২। যায়েদ ইবনে সাবিত (রা.) থেকে বুখারী ৭৩১ নং হাদিস।
.
ﻋﻦ ﺯﻳﺪ ﺑﻦ ﺛﺎﺑﺖ : ﺃﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺍﺗﺨﺬ ﺣﺠﺮﺓ – ﻗﺎﻝ : ﺣﺴﺒﺖ ﺃﻧﻪ ﻗﺎﻝ ﻣﻦ ﺣﺼﻴﺮ – ﻓﻲ ﺭﻣﻀﺎﻥ، ﻓﺼﻠﻰ ﻓﻴﻬﺎ ﻟﻴﺎﻟﻲ، ﻓﺼﻠﻰ ﺑﺼﻼﺗﻪ ﻧﺎﺱ ﻣﻦ ﺃﺻﺤﺎﺑﻪ، ﻓﻠﻤﺎ ﻋﻠﻢ ﺑﻬﻢ ﺟﻌﻞ ﻳﻘﻌﺪ، ﻓﺨﺮﺝ ﺇﻟﻴﻬﻢ ﻓﻘﺎﻝ : ‏« ﻗﺪ ﻋﺮﻓﺖ ﺍﻟﺬﻱ ﺭﺃﻳﺖ ﻣﻦ ﺻﻨﻴﻌﻜﻢ، ﻓﺼﻠﻮﺍ ﺃﻳﻬﺎ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻓﻲ ﺑﻴﻮﺗﻜﻢ، ﻓﺈﻥ ﺃﻓﻀﻞ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﺻﻼﺓ ﺍﻟﻤﺮﺀ ﻓﻲ ﺑﻴﺘﻪ ﺇﻻ ﺍﻟﻤﻜﺘﻮﺑﺔ »
.
৩। আনাস (রা.) থেকে মুসলিম- ১১০৪ নং হাদিস।
.
ﻋﻦ ﺃﻧﺲ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ، ﻗﺎﻝ : ﻛﺎﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ، ﻳﺼﻠﻲ ﻓﻲ ﺭﻣﻀﺎﻥ، ﻓﺠﺌﺖ ﻓﻘﻤﺖ ﺇﻟﻰ ﺟﻨﺒﻪ ﻭﺟﺎﺀ ﺭﺟﻞ ﺁﺧﺮ، ﻓﻘﺎﻡ ﺃﻳﻀﺎ ﺣﺘﻰ ﻛﻨﺎ ﺭﻫﻄﺎ ﻓﻠﻤﺎ ﺣﺲ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺃﻧﺎ ﺧﻠﻔﻪ ﺟﻌﻞ ﻳﺘﺠﻮﺯ ﻓﻲ ﺍﻟﺼﻼﺓ، ﺛﻢ ﺩﺧﻞ ﺭﺣﻠﻪ، ﻓﺼﻠﻰ ﺻﻼﺓ ﻻ ﻳﺼﻠﻴﻬﺎ ﻋﻨﺪﻧﺎ ،
.
৪। আবু যর রা. থেকে আবু দাউদ ১৩৭৫ নং হাদিস।
.
ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﺫﺭ، ﻗﺎﻝ : ﺻﻤﻨﺎ ﻣﻊ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺭﻣﻀﺎﻥ، ﻓﻠﻢ ﻳﻘﻢ ﺑﻨﺎ ﺷﻴﺌﺎ ﻣﻦ ﺍﻟﺸﻬﺮ ﺣﺘﻰ ﺑﻘﻲ ﺳﺒﻊ، ﻓﻘﺎﻡ ﺑﻨﺎ ﺣﺘﻰ ﺫﻫﺐ ﺛﻠﺚ ﺍﻟﻠﻴﻞ، ﻓﻠﻤﺎ ﻛﺎﻧﺖ ﺍﻟﺴﺎﺩﺳﺔ ﻟﻢ ﻳﻘﻢ ﺑﻨﺎ، ﻓﻠﻤﺎ ﻛﺎﻧﺖ ﺍﻟﺨﺎﻣﺴﺔ ﻗﺎﻡ ﺑﻨﺎ ﺣﺘﻰ ﺫﻫﺐ ﺷﻄﺮ ﺍﻟﻠﻴﻞ، ﻓﻘﻠﺖ : ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ، ﻟﻮ ﻧﻔﻠﺘﻨﺎ ﻗﻴﺎﻡ ﻫﺬﻩ ﺍﻟﻠﻴﻠﺔ، ﻗﺎﻝ : ﻓﻘﺎﻝ : ‏« ﺇﻥ ﺍﻟﺮﺟﻞ ﺇﺫﺍ ﺻﻠﻰ ﻣﻊ ﺍﻹﻣﺎﻡ ﺣﺘﻰ ﻳﻨﺼﺮﻑ ﺣﺴﺐ ﻟﻪ ﻗﻴﺎﻡ ﻟﻴﻠﺔ ‏» ، ﻗﺎﻝ : ﻓﻠﻤﺎ ﻛﺎﻧﺖ ﺍﻟﺮﺍﺑﻌﺔ ﻟﻢ ﻳﻘﻢ، ﻓﻠﻤﺎ ﻛﺎﻧﺖ ﺍﻟﺜﺎﻟﺜﺔ ﺟﻤﻊ ﺃﻫﻠﻪ ﻭﻧﺴﺎﺀﻩ ﻭﺍﻟﻨﺎﺱ، ﻓﻘﺎﻡ ﺑﻨﺎ ﺣﺘﻰ ﺧﺸﻴﻨﺎ ﺃﻥ ﻳﻔﻮﺗﻨﺎ ﺍﻟﻔﻼﺡ، ﻗﺎﻝ : ﻗﻠﺖ : ﻭﻣﺎ ﺍﻟﻔﻼﺡ؟ ﻗﺎﻝ : ﺍﻟﺴﺤﻮﺭ، ﺛﻢ ﻟﻢ ﻳﻘﻢ ﺑﻘﻴﺔ ﺍﻟﺸﻬﺮ ‏[ ﺣﻜﻢ ﺍﻷﻟﺒﺎﻧﻲ ‏] : ﺻﺤﻴﺢ
.
৫। নুমান ইবনে বাশীর থেকে নাসাঈ ১৬০৬ নং হাদিস।
.
ﺍﻟﻨﻌﻤﺎﻥ ﺑﻦ ﺑﺸﻴﺮ، ﻋﻠﻰ ﻣﻨﺒﺮ ﺣﻤﺺ ﻳﻘﻮﻝ : ‏« ﻗﻤﻨﺎ ﻣﻊ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓﻲ ﺷﻬﺮ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﻟﻴﻠﺔ ﺛﻼﺙ ﻭﻋﺸﺮﻳﻦ ﺇﻟﻰ ﺛﻠﺚ ﺍﻟﻠﻴﻞ ﺍﻷﻭﻝ، ﺛﻢ ﻗﻤﻨﺎ ﻣﻌﻪ ﻟﻴﻠﺔ ﺧﻤﺲ ﻭﻋﺸﺮﻳﻦ ﺇﻟﻰ ﻧﺼﻒ ﺍﻟﻠﻴﻞ، ﺛﻢ ﻗﻤﻨﺎ ﻣﻌﻪ ﻟﻴﻠﺔ ﺳﺒﻊ ﻭﻋﺸﺮﻳﻦ ﺣﺘﻰ ﻇﻨﻨﺎ ﺃﻥ ﻻ ﻧﺪﺭﻙ ﺍﻟﻔﻼﺡ ‏» ، ﻭﻛﺎﻧﻮﺍ ﻳﺴﻤﻮﻧﻪ ﺍﻟﺴﺤﻮﺭ
‏[ ﺣﻜﻢ ﺍﻷﻟﺒﺎﻧﻲ ‏] ﺻﺤﻴﺢ
.
দীর্ঘ হওয়ার ভয়ে অনুবাদ লিখলাম না। উল্লেখ্য তাদের কারো বর্ণনাতেই তারাবীর রাকাত-সংখ্যা ৮ উল্লেখ আসেনি। এসেছে শুধু হযরত জাবির রা. ও মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফ এর বর্ণনায় মাউকুফ হিসেবে। তাও আবার ঈসা ইবনে জারিয়ার মতো দুর্বল বর্ণনাকারীর সূত্রে আর মুহাম্মাদ ইবনে ইউসুফ এর বর্ণনায় তো প্রচুর ইযতিরাব রয়েছে।প্রমানিত হয়ে গেলো যে, উল্লেখিত এর ৮ রাকাতের বর্ণনাগুলো সহীহ হাদিসের খেলাফ।
.
৪। আয়েসা (রা.) এর বর্ণিত বিতরসহ এগারা রাকাতের কথা বলবেন? রাতের নামাজ সম্পর্কে রাসুল(সা.) এর আদেশ দুই রাকাত করে(বুখারী-৯৯০ নং হাদিস)। আয়েশা (রা.) এর বর্ণিত হাদিস চার রাকাত করে(বুখারী ১১৪৭ নং হাদিস)।
.
উভয় নামাজকে এক ভাবার কোন সুযোগ এখানে নেই। কেননা কোন সাহাবী/মুজতাহিদ ইমাম/ফকিহ/
মুহাদ্দিস তারাবী চার রাকাত করে পড়েছেন এমন কোন প্রমান নেই।
.
মুহাদ্দিসগণ এই হাদীসকে তারাবীর ক্ষেত্রে নয়, তাহাজ্জুদের ক্ষেত্রেই মনে করতেন। ইমাম মুসলিম, আবূ দাউদ, তিরমিযী, নাসায়ী, ইমাম মালেক, আব্দুর রাযযাক, দারিমী, আবূ আওয়ানা ও ইবনে খুযায়মা র. প্রমুখ সকলেই এই হাদীসকে তাহাজ্জুদ অধ্যায়ে উদ্ধৃত করেছেন; তারাবী বা কিয়ামে রামাযান অধ্যায়ে উল্লেখ করেননি।এমনকি ইমাম মুহাম্মদ ইবনে নাসর মারওয়াযী র. তার ‘কিয়ামুল লাইল’ গ্রন্থে “রমযানে লোকদেরকে নিয়ে ইমাম যে নামায পড়বেন তার রাকাত-সংখ্যা নামক উক্ত অনুচ্ছেদে তিনি তারাবীর রাকাত-সংখ্যা সম্পর্কে বহু হাদীস উল্লেখ করেছেন।
.
অথচ হযরত আয়েশা রা. এর এ হাদীস উল্লেখ করা তো দূরের কথা, এর প্রতি কোন ইশারা-ইংগিতও করেননি।
.
মুহাদ্দিসগণের মধ্যে শুধু ইমাম বুখারী র. এ হাদীস তারাবী ও তাহাজ্জুদ উভয় অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন। ইমাম বুখারীর নীতি সকলের জানা। তিনি সামান্য সম্পর্কের কারণেই হাদীস পুনরুল্লেখ করেন। তিনি একথাও বুঝিয়ে থাকতে পারেন, রমযানে তারাবী পড়া হলেও শেষে তাহাজ্জুদও পড়ে নেয়া উচিৎ ।
.
বুখারী র. নিজেও তারাবী পড়ে শেষরাতে উঠে তাহাজ্জুদ পড়তেন। ফাতহুল বারীর মুকাদ্দিমা, পৃ ৬৪৫। (দলিলসহ নামাজের মাসায়েল)।
.
এই নামায যদি তারাবী সম্পর্কেই হতো, তবে ফকীহগণের কেউ না কেউ এগারো রাকাতের মত পোষণ করতেন। অথচ চার মাযহাবের ইমামসহ কোন মুজতাহিদ ইমাম, উম্মার কোন ফকিহ তারাবী আট রাকাতের পক্ষে কোন ফতুয়া দেননি। আর সাহাবায় কেরাম থেকে নিয়ে ১২০০ হিজরী পর্যন্তু দুনিয়ায় কোন মসজিদেও আট রাকাত তারাবীর জামায়াত হয় নি। এর কোন প্রমাণও কোন লা মাযহাবী দেখাতে পারবে না, আলবানী ওয়ালা কবর থেকে উঠে এসেও পারবেনা।এটা আমার পক্ষথেকে ওপেন চ্যালেঞ্জ।
.
এই জন্যেই ইমাম তিরমিযী র. জানায়েয অধ্যায়ে লিখেছেন,
.
ﻛﺬﻟﻚ ﻗﺎﻝ ﺍﻟﻔﻘﻬﺎﺀ ﻭﻫﻢ ﺃﻋﻠﻢ ﺑﻤﻌﺎﻧﻲ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ
.
অর্থাৎ ফকীহগণ অনুরূপ বলেছেন, আর হাদীসের মর্ম সম্পর্কে তারাই অধিক জ্ঞাত। ৯৯০ নং হাদিসের আলোচনা।
.
তাই ইম্মাহর ফকীহগণ আট রাকাতের হাদিসের মর্ম যা বুঝেছেন সে বুঝ নিজেদের মধ্যে সৃষ্টি করুন।
.
রাতের নামাজ সম্পর্কে রাসুল (সা.) বলেন-
.
ﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﻋﻤﺮ : ﺃﻥ ﺭﺟﻼ ﺳﺄﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻋﻦ ﺻﻼﺓ ﺍﻟﻠﻴﻞ، ﻓﻘﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺴﻼﻡ : ‏« ﺻﻼﺓ ﺍﻟﻠﻴﻞ ﻣﺜﻨﻰ ﻣﺜﻨﻰ ،
.
ইবনু ‘উমার (রাযি.) হতে বর্ণিত। এক ব্যক্তি নাবী (সা.) -এর নিকট রাতের নামাজ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করল। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ রাতের সালাত দুই’ রাকাত দুই’ রাকাত করে। বুখারী শরীফ -৯৯০ নং হাদিস।
.
এ হাদিসে বলা হয়েছে, দুই দুই রাকাত করে রাতের (লা মাযহাবীদের মতে তারাবীর) নামাজ, আয়শা রা. এর হাদিসে চার রাকাত করে। এখানে তারাবী আট রাকাত বলা তো দূরের কথা, কোন সংখ্যাই বলে দেননি। তাহলে লা মাযহাবীদের আট কোথায় গেলো?
.
তাছাড়া (লা মাযহাবীদের মতে) রাতের নামাজ তারাবীর নামাজ এক,আর রাকাত সংখ্যা আট ।
কিন্তু সহীহ বুখারীর হাদিসে আছে আরো অধিক-
.
ﻋﻦ ﻋﺎﺋﺸﺔ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﺎ، ﻗﺎﻟﺖ : ‏« ﻛﺎﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳﺼﻠﻲ ﺑﺎﻟﻠﻴﻞ ﺛﻼﺙ ﻋﺸﺮﺓ ﺭﻛﻌﺔ، ﺛﻢ ﻳﺼﻠﻲ ﺇﺫﺍ ﺳﻤﻊ ﺍﻟﻨﺪﺍﺀ ﺑﺎﻟﺼﺒﺢ ﺭﻛﻌﺘﻴﻦ ﺧﻔﻴﻔﺘﻴﻦ »
.
আয়িশাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল (সা.) রাতে ১৩ রাক‘আত সালাত/নামাজ আদায় করতেন, অতঃপর সকালে আযান শোনার পর সংক্ষিপ্তভাবে দু’রাক‘আত সালাত/নামাজ আদায় করতেন।
বুখারী শরীফ – ১১৭০ নং হাদিস, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১০৯৬, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ১১০১।
.
এ হাদিসে পরিষ্কার বলা হয়েছে রাতের নামাজ ১৩ রাকাত, লা মাযহাবীদের মতে বিতর নামাজ এক রাকাত,দুই রাকাত, তিন রাকাত, পাঁচ রাকাত ও সাত রাকাত। বিতর যদি এক রাকাত হয়, তারাবী বার, বিতর দুই রাকাত হলে তারাবী এগার, বিতর তিন রাকাত হলে তারাবী দশ, বিতর পাঁচ রাকাত হলে তারাবী আট, বিতর সাত রাকাত হলে তারাবী ছয় রাকাত। তাদের মত অনুযায়ী তারাবীর রাকাত সংখ্যা পাঁচটির সম্ভবনা দেখা দিয়েছে। তারপরেও শুধু আট রাকাতে সিমাবদ্ধ করা স্ববিরুধী নীতি। তাদের ব্যাপারটা এমন যে, বিচার মানি তালগাছ আমার।
.
কিন্তু তাতেও তারা পরিপুর্ণ ব্যর্থ হয়েছে, কেননা সহীহ বুখারীর অপর হাদিসে বর্ণিত হলেছে-
.
ﺃﻥ ﺍﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ ﺃﺧﺒﺮﻩ : ﺃﻧﻪ ﺑﺎﺕ ﻋﻨﺪ ﻣﻴﻤﻮﻧﺔ ﻭﻫﻲ ﺧﺎﻟﺘﻪ ﻓﺎﺿﻄﺠﻌﺖ ﻓﻲ ﻋﺮﺽ ﻭﺳﺎﺩﺓ ‏« ﻭﺍﺿﻄﺠﻊ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻭﺃﻫﻠﻪ ﻓﻲ ﻃﻮﻟﻬﺎ، ﻓﻨﺎﻡ ﺣﺘﻰ ﺍﻧﺘﺼﻒ ﺍﻟﻠﻴﻞ – ﺃﻭ ﻗﺮﻳﺒﺎ ﻣﻨﻪ – ﻓﺎﺳﺘﻴﻘﻆ ﻳﻤﺴﺢ ﺍﻟﻨﻮﻡ ﻋﻦ ﻭﺟﻬﻪ، ﺛﻢ ﻗﺮﺃ ﻋﺸﺮ ﺁﻳﺎﺕ ﻣﻦ ﺁﻝ ﻋﻤﺮﺍﻥ، ﺛﻢ ﻗﺎﻡ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺇﻟﻰ ﺷﻦ ﻣﻌﻠﻘﺔ، ﻓﺘﻮﺿﺄ، ﻓﺄﺣﺴﻦ ﺍﻟﻮﺿﻮﺀ، ﺛﻢ ﻗﺎﻡ ﻳﺼﻠﻲ ‏» ، ﻓﺼﻨﻌﺖ ﻣﺜﻠﻪ، ﻓﻘﻤﺖ ﺇﻟﻰ ﺟﻨﺒﻪ، ‏« ﻓﻮﺿﻊ ﻳﺪﻩ ﺍﻟﻴﻤﻨﻰ ﻋﻠﻰ ﺭﺃﺳﻲ ﻭﺃﺧﺬ ﺑﺄﺫﻧﻲ ﻳﻔﺘﻠﻬﺎ، ﺛﻢ ﺻﻠﻰ ﺭﻛﻌﺘﻴﻦ، ﺛﻢ ﺭﻛﻌﺘﻴﻦ ﺛﻢ ﺭﻛﻌﺘﻴﻦ، ﺛﻢ ﺭﻛﻌﺘﻴﻦ، ﺛﻢ ﺭﻛﻌﺘﻴﻦ، ﺛﻢ ﺭﻛﻌﺘﻴﻦ، ﺛﻢ ﺃﻭﺗﺮ، ﺛﻢ ﺍﺿﻄﺠﻊ ﺣﺘﻰ ﺟﺎﺀﻩ ﺍﻟﻤﺆﺫﻥ، ﻓﻘﺎﻡ، ﻓﺼﻠﻰ ﺭﻛﻌﺘﻴﻦ، ﺛﻢ ﺧﺮﺝ، ﻓﺼﻠﻰ ﺍﻟﺼﺒﺢ »
.
ইবনে আববাস (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি তাঁর খালা উম্মুল মু‘মিনীন মাইমূনাহ (রাযি.)-এর ঘরে রাত কাটান। (তিনি বলেন) আমি বালিশের প্রস্থের দিক দিয়ে শয়ন করলাম এবং রাসুল (সা.)ও তাঁর পরিবার সেটির দৈর্ঘ্যের দিক দিয়ে শয়ন করলেন। নাবী (সা.) রাতের অর্ধেক বা তার কাছাকাছি সময় পর্যন্ত ঘুমালেন। অতঃপর তিনি জাগ্রত হলেন এবং চেহারা হতে ঘুমের রেশ দূর করলেন। পরে তিনি সূরাহ্ আলু-ইমরানের (শেষ) দশ আয়াত তিলাওয়াত করলেন। অতঃপর রাসুল (সা.) একটি ঝুলন্ত মশ্কের নিকট গেলেন এবং উত্তমরূপে উযূ করলেন। অতঃপর তিনি নামাজে দাঁড়ালেন। আমিও তাঁর মতই করলাম এবং তাঁর পাশেই দাঁড়ালাম। তিনি তাঁর ডান হাত আমার মাথার উপর রাখলেন এবং আমার কান ধরলেন। অতঃপর তিনি দু’ রাক‘আত নামাজ আদায় করলেন। অতঃপর দু’ রাক‘আত, অতঃপর দু‘ রাকা’আত, অতঃপর দু‘ রাক‘আত, অতঃপর দু‘ রাক‘আত, অতঃপর দু’ রাক‘আত। অতঃপর বিতর আদায় করলেন। অতঃপর তিনি শুয়ে পড়লেন। অবশেষে মুআয্যিন তাঁর নিকট এলো। তখন তিনি দাঁড়িযে দু‘ রাক‘আত নামাজ আদায় করলেন। অতঃপর বের হয়ে ফজরের নামাজ আদায় করলেন।
বুখারী শরীফ -৯৯২ নং হাদিস। আধুনিক প্রকাশনীঃ ৯৩৩, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৯৩৮।
.
এ হাদিসে স্পষ্ট বলা হয়েছে যে, নবী (সা.) ঘুম থেকে উঠলেন, তার ইশার সুন্নাত আগেই আদায় করেছেন। তারপর ছয় বার দুই রাকাত করে অর্থাৎ ৬×২=১২ রাকাত পড়লেন। তারপর বিতর পড়লেন। এরপর মুয়াজ্জিন এলে দুই রাকাত(ফজরের সুন্নাত) পড়লেন, তারপর বের হয়ে ফজরের নামাজ আদায় করলেন।
.
এখানে স্পষ্ট প্রমানিত হয়ে গেলো যে, এশার সুন্নাত, বিতর ও ফজরের সুন্নাত ছাড়াই রাতের/তারাবীর সালাত/নামাজ ১২ রাকাত।
.
এখন লা মাযহাবীদের নিকট জিজ্ঞাসাঃ আপনারা তারাবীর নামাজকে শুধু আট রাকাতে সিমাবদ্ধ করেছেন। এখন বলুন!
.
আপনাদের আট কোথায় গেলো….?
.
এর জবাবের অপেক্ষায় থাকলাম, লা মাযহাবী কোন সাহসী বন্ধু আছে কি, এর জবাব দেওয়ার? সময় কেয়ামতের দিন সকাল পর্যন্ত।।
.
.
ইয়াযীদ ইবনে খুসাইফা এর হাদীস দুর্বল আখ্যায়িত করার ব্যাপারে আলবানী রহ. এর দলীল
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷
.
নাসির উদ্দিন আলবানী রহ. দলীল সমূহঃ
—————————————————————-
.
ইয়াযীদ ইবনে খুসাইফা এর হাদীস দুর্বল আখ্যায়িত করার ব্যাপারে আলবানী রহ. এর দলীল
.
১ নং দলীল : মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফ এর বর্ণনা
.
ইমাম মালেক ‘মুআত্তা’ গ্রন্থে বর্ণনা করেন,
.
عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ يُوسُفَ، عَنِ السَّائِبِ بْنِ يَزِيدَ، أَنَّهُ قَالَ: أَمَرَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ أُبَيَّ بْنَ كَعْبٍ وَتَمِيمًا الدَّارِيَّ أَنْ يَقُومَا لِلنَّاسِ بِإِحْدَى عَشْرَةَ رَكْعَةً
.
অর্থ: সাহাবী সায়েব ইবনে ইয়াযীদ রা. থেকে মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফ বর্ণনা করেন, হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রা. সাহাবী উবাই ইবনে কা‘ব রা. ও তামীমে দারী রা.কে সকলকে নিয়ে ১১ রাকাত নামাজ পড়ার নির্দেশ দেন।
.
আলবানী রহ. মনে করেন, সায়েব থেকে ইয়াযীদ ইবনে খুসাইফার ২০ রাকাতের বর্ণনার তুলনায় মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফের ১১ রাকাতের এই বর্ণনাটি অগ্রগণ্য। কারণ:
.
ক. ইয়াযীদ ইবনে খুসাইফাকে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহ. ‘মুনকারুল হাদীস’ বলেছেন। (আর মুনকারুল হাদীস রাবী কোন নির্ভরযোগ্য রাবীর বিরোধিতা করলে তার বর্ণনা গ্রহণযোগ্য হয় না। এখানে যেহেতু ‘মুনকারুল হাদীস’ রাবী ইয়াযীদ ইবনে খুসাইফা ২৩ রাকাত বর্ণনা করে নির্ভরযোগ্য রাবী মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফ এর ১১ রাকাতের বর্ণনার বিরোধিতা করেছেন, তাই তার ২৩ রাকাতের বর্ণনাটি গ্রহণযোগ্য নয়। (দেখুন, সালাতুত তারাবীহ, আলবানী পৃষ্ঠা নং ৫০)
.
খ. ইয়াযীদ ইবনে খুসাইফাকে ইমাম যাহাবী রহ. ‘মিযানুল ই‘তিদাল’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। (আর এ কথা সকলের জানা যে, তিনি তার এ গ্রন্থে শুধু ‘মুতাকাল্লাম ফিহ’ তথা সমালোচিত বর্ণনাকারীদের আলোচনা করেছেন। – (সালাতুত্ তারাবীহ, আলবানী পৃষ্ঠা : ৫০)
.
গ. ইয়াযীদ ইবনে খুসাইফার বর্ণনায় তারাবীহ এর রাকাত সংখ্যার ক্ষেত্রে ‘ইযতিরাব’ (বিভিন্নতা) রয়েছে। তার কোন বর্ণনায় ২১ এবং কোন বর্ণনায় ২০ (বিতরসহ ২৩) রাকাতের কথা এসেছে। পক্ষান্তরে মুহাম্মদ বিন ইউসুফ এর বর্ণনা ‘ইযতিরাব’মুক্ত।
.
ঘ. মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফ সাহাবী সায়েব ইবনে ইয়াযীদ রা. এর ভাগিনা। তাই তিনি তার বর্ণনা সম্পর্কে অন্যদের তুলনায় অধিক অবগত ও সংরক্ষণকারী হবেন বৈ কি।
.
ঙ.হাফেজ ইবনে হাজর আসকালানী তার ‘তাক্বরীবুত্ তাহযীব’ কিতাবে মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফকে ‘সিকাতুন সাব্তুন’ বলেছেন। পক্ষান্তরে ইয়াযীদ ইবনে খুসাইফাকে শুধু ‘সিকাতুন’ বলেছেন।
.
২ নং দলীল :
.
হযরত উবাই ইবনে কা‘ব রা. এর ইমামতির ঘটনা ও নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সমর্থন
.
মুহাম্মদ ইবনে নসর ও আবু ই‘য়ালা বর্ণনা করেন,
.
عن جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ: جَاءَ أُبَيُّ بْنُ كَعْبٍ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنْ كَانَ مِنِّي اللَّيْلَةَ شَيْءٌ يَعْنِي فِي رَمَضَانَ، قَالَ: وَمَا ذَاكَ يَا أُبَيُّ؟ ، قَالَ: نِسْوَةٌ فِي دَارِي، قُلْنَ: إِنَّا لَا نَقْرَأُ الْقُرْآنَ فَنُصَلِّي بِصَلَاتِكَ، قَالَ: فَصَلَّيْتُ بِهِنَّ ثَمَانَ رَكَعَاتٍ، ثُمَّ أَوْتَرْتُ، قَالَ: فَكَانَ شِبْهُ الرِّضَا وَلَمْ يَقُلْ شَيْئًا
.
অর্থ: জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ রা. বলেন, উবাই ইবনে কা‘ব রা. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে এসে বললেন, ইয়া রাসূলল্লাহ! আজ রাতে অর্থাৎ রমযান মাসে আমার থেকে একটি বিষয় সংঘটিত হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কি ঘটনা? তিনি বললেন, আমার ঘরে কয়েকজন মহিলা রয়েছে। তারা বলল, আমরা কুরআন পড়তে জানি না, তাই আপনার পিছনে নামাজ পড়তে চাই। তাদের অনুরোধের প্রেক্ষিতে আমি তাদেরকে ৮ রাকাত নামাজ ও বিতর পড়িয়েছি। বর্ণনাকারী বলেন, এ কথা শুনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিছু বললেন না। সুতরাং তা সন্তুষ্টির মতই। [মুখতাসারু ক্বিয়ামিল লাইল, পৃ: ২১৭; মুসনাদে আবু ইয়ালা, হাদীস নং : ১৮০১]
.
৩ নং দলীল :
.
জুরী রহ. এর সূত্রে বর্ণিত ইমাম মালেক রহ. এর মাযহাব সর্বোচ্চ ১৩ রাকাত
.
ইমাম সুয়ূতী বর্ণনা করেন,
.
قَالَ الجوري مِنْ أَصْحَابِنَا: عَنْ مالك أَنَّهُ قَالَ: الَّذِي جَمَعَ عَلَيْهِ النَّاسَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ أَحَبُّ إِلَيَّ، وَهُوَ إِحْدَى عَشْرَةَ رَكْعَةً، وَهِيَ صَلَاةُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قِيلَ لَهُ: إِحْدَى عَشْرَةَ رَكْعَةً بِالْوَتْرِ؟ قَالَ: نَعَمْ وَثَلَاثَ عَشْرَةَ قَرِيبٌ، قَالَ: وَلَا أَدْرِي مِنْ أَيْنَ أُحْدِثَ هَذَا الرُّكُوعُ الْكَثِيرُ؟
.
অর্থ: আমাদের শাফিঈ মাযহাবের অনুসারী জুরী বর্ণনা করেন যে, ইমাম মালেক রহ. বলেছেন, উমর রা. সকলকে যে বিষয়ের উপর ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন সেটি আমার খুবই পছন্দনীয়। তা হচ্ছে ১১ রাকাত। এটিই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নামাজ। তাকে (ইমাম মালেক কে) জিজ্ঞাসা করা হল, ১১ রাকাত কি বিতর সহ? তিনি বললেন হ্যাঁ, ১৩ রাকাতও কাছাকাছি, তবে আমার জানা নেই যে, (এর অতিরিক্ত) এত বেশি রাকাত কোথা থেকে আবিষ্কার হল? [আলহাভী লিল্ ফাতাওয়া ১/৪১৭]
.
আলবানী রহ. মনে করেন, এর মাধ্যমে ইমাম মালেক রহ. যে ২০ রাকাত তারাবীহ অস্বীকার করেছেন তা সুস্পষ্ট। তদ্রƒপ মালেকী মাযহাবের ইবনুল আরাবী রহ.ও এ বিষয়ে তাঁর অনুসরণ করেছেন। দেখুন ‘আরিযাতুল আহওয়াযী’ ৪/১৯
.
৪ নং দলীল :
.
২০ রাকাত এর মতকে ইমাম শাফিয়ী ও তিরমিযী রহ. দূর্বলতাবোধক শব্দে উল্লেখ করা
.
শাফেয়ী ও ইমাম তিরমিযী রহ. তারাবীহ ২০ রাকাতের উক্তিটি رُوِيَ শব্দ (কর্মবাচ্যমূলক ক্রিয়া অর্থাৎ ‘বর্ণিত হয়েছে’ ধরণের শব্দ) দ্বারা উল্লেখ করেছেন।
.
ইমাম শাফেয়ী বলেন,
رَأَيْتهمْ بِالْمَدِينَةِ يَقُومُونَ بِتِسْعٍ وَثَلَاثِينَ وَأَحَبُّ إلَيَّ عِشْرُونَ؛ لِأَنَّهُ رُوِيَ عَنْ عُمَرَ، وَكَذَلِكَ يَقُومُونَ بِمَكَّةَ وَيُوتِرُونَ بِثَلَاثٍ
.
অর্থ: আমি তাদেরকে মদীনা মুনাওয়ারায় ৩৯ রাকাত পড়তে দেখেছি। তবে আমার নিকট অধিক পছন্দনীয় হচ্ছে ২০ রাকাত। কারণ, এটি হযরত উমর রা. থেকে বর্ণিত। তারা মক্কাতেও এরূপ পড়ত এবং ৩ রাকাত বিতর পড়ত। [মুখতাসারুল মুযানী ৮/১১৪]
.
ইমাম তিরমিযী বলেন,
.
وَأَكْثَرُ أَهْلِ العِلْمِ عَلَى مَا رُوِيَ عَنْ عُمَرَ، وَعَلِيٍّ، وَغَيْرِهِمَا مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عِشْرِينَ رَكْعَةً، وَهُوَ قَوْلُ الثَّوْرِيِّ، وَابْنِ المُبَارَكِ، وَالشَّافِعِيِّ وقَالَ الشَّافِعِيُّ: >وَهَكَذَا أَدْرَكْتُ بِبَلَدِنَا بِمَكَّةَ يُصَلُّونَ عِشْرِينَ رَكْعَةً
.
অর্থ: অধিকাংশ উলামায়ে কেরামের মত সেটাই যা বর্ণিত আছে হযরত উমর, হযরত আলী রা. ও অন্যান্য সাহাবায়ে কেরাম থেকে। অর্থাৎ ২০ রাকাত। এটিই ইমাম সাওরী, ইবনুল মুবারক ও শাফেয়ী রহ. এর মত। ইমাম শাফেয়ী রহ. বলেন, আমাদের শহর মক্কা মুর্কারামায় আমি এমনটিই পেয়েছি যে, তারা ২০ রাকাত তারাবীহ পড়তেন। [জামে তিরমিযী ৩/১৬০]
.
আলবানী রহ. মনে করেন, ইমাম শাফেয়ী ও ইমাম তিরমিযী ২০ রাকাত তারাবীহ এর উক্তিটি মাজহুল সীগা (কর্মবাচ্যমূলক ক্রিয়া অর্থাৎ বর্ণিত হয়েছে ধরণের শব্দ) দ্বারা উল্লেখ করেছেন। এটাই এ কথার প্রমাণ যে, এ উক্তিটি তাদের মতে দুর্বল। কারণ নববী রহ. বলেন, মুহাক্কিক উলামায়ে কিরামের নিকট رُوِيَ (বর্ণিত আছে) তথা মাজহুল শব্দে বর্ণনা করা দুর্বলতা বুঝানোর জন্য ব্যবহার হয়।
.
৫ নং দলীল :
.
আলী রা. এর আমল সম্পর্কে ইবনে তাইমিয়া রহ. এর বক্তব্য
.
জনৈক রাফেযী এর বক্তব্য (আলী রা. দিন রাতে হাজার রাকাত নামাজ পড়তেন) এর খন্ডনে ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন, আলী রা. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুন্নত সম্পর্কে অবগত ও তার অনেক বেশি অনুগত ছিলেন। দিন-রাতে হাজার রাকাত নামাজ পড়া সম্ভব হলেও তা করে তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বিরোধিতা করতে পারেন না। (কারণ এটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নত নয়)।
.
আলবানী রহ. বলেন, চিন্তা করে দেখুন- ‘ইবনে তাইমিয়া কিভাবে হযরত আলী রা. কে রাসূলের সুন্নতের তুলনায় অতিরিক্ত নামাজ পড়া থেকে পবিত্র ঘোষণা করলেন।’ এর দ্বারা আলবানী রহ. বুঝাতে চান যে, আলী রা. ২০ রাকাত তারাবীহর ব্যাপারেও সন্তুষ্ট নন। কারণ, তা (আলবানী রহ. এর দৃষ্টিতে) সুন্নাহ পরিপন্থী।
.
৬ নং দলীল :
.
আয়েশা রা. এর ১১ রাকাতের বর্ণনা
.
বুখারী ও মুসলিম শরীফে হযরত আয়েশা রা. এর হাদীস:
.
عَنْ أَبِي سَلَمَةَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، أَنَّهُ سَأَلَ عَائِشَةَ، كَيْفَ كَانَتْ صَلَاةُ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي رَمَضَانَ؟ قَالَتْ: مَا كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَزِيدُ فِي رَمَضَانَ، وَلَا فِي غَيْرِهِ عَلَى إِحْدَى عَشْرَةَ رَكْعَةً
.
অর্থ: আবু সালামা ইবনে আব্দুর রহমান থেকে বর্ণিত তিনি হযরত আয়েশা রা.কে জিজ্ঞাসা করলেন, রমজান মাসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নামাজ কেমন ছিল? উত্তরে তিনি বললেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমযানে ও রমযান ছাড়া অন্য মাসসমূহে ১১ রাকাতের বেশি পড়তেন না। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং : ১১৪৭, ২০১৩, ৩৫৬৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং : ৭৩৮]
৭ নং দলীল: জাবির রা. এর ৮ রাকাতের মারফু বর্ণনা
.
ইমাম তাবারানী হযরত জাবির রা. থেকে বর্ণনা করেন,
.
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: صَلَّى بِنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّمَ فِي شَهْرِ رَمَضَانَ ثَمَانَ رَكَعَاتٍ وَأَوْتَرَ، فَلَمَّا كَانَتِ الْقَابِلَةُ اجْتَمَعْنَا فِي الْمَسْجِدِ وَرَجَوْنَا أَنْ يَخْرُجَ ، فَلَمْ نَزَلْ فِيهِ حَتَّى أَصْبَحْنَا ، ثُمَّ دَخَلْنَا، فَقُلْنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ ، اجْتَمَعْنَا الْبَارِحَةَ فِي الْمَسْجِدِ، وَرَجَوْنَا أَنْ تُصَلِّيَ بِنَا ، فَقَالَ: إِنِّي خَشِيتُ أَنْ يُكْتَبَ عَلَيْكُمْ
.
অর্থ: হযরত জাবির রা. বলেন, রমজান মাসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে নিয়ে ৮ রাকাত তারাবীহ ও বিতর পড়লেন। পরের রাতে আমরা মসজিদে সমবেত হলাম এবং আশা করলাম তিনি বেরিয়ে আমাদের কাছে আসবেন। কিন্তু সকাল পর্যন্ত আমরা মসজিদে অপেক্ষায় থাকলাম। এরপর আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে গিয়ে বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ আমরা গত রাতে মসজিদে সমবেত হয়েছিলাম এবং আশা করেছিলাম আপনি আমাদের নিয়ে নামাজ পড়বেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আমি তোমাদের উপর তারাবীহ ফরজ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করেছি। (তাই বের হইনি।)
[আল মুজামুস্ সগীর, তাবারানী ৫২৫; সহীহ ইবনে খুযাইমা ১০৭০; সহীহ ইবনে হিব্বান ২৪০৯, ২৪১৫; মুসনাদে আবু ইয়ালা আল মাউসিলী ১৮০২; ক্বিয়ামু রমাযান মুহাম্মদ ইবেন নসর পৃষ্ঠা ২১৭]
.
সকল ইমামদের নিকট সহীহ বলে প্রমাণিত ইয়াযীদ ইবনে খুসাইফার হাদীসকে অগ্রহণযোগ্য প্রমাণ করার জন্য আলবানী রহ. এ সকল দলীলের আশ্রয় গ্রহণ করেছেন। সামনের অধ্যায়ে আমরা সেগুলোর শুদ্ধাশুদ্ধি যাচাইয়ের প্রয়াস পাব ইনশাআল্লাহ।
.
.
নাসির উদ্দিন আলবানী রহ. এর দলীলের জবাবঃ
——————————————————————–
.
আলবানী রহ. যে দলীলগুলো উল্লেখ করেছেন আমরা তার দুটি জবাব দিব। সংক্ষিপ্ত ও বিস্তারিত।
.
সংক্ষিপ্ত জবাবঃ
————————
.
কোন হাদীসের বক্তব্য যদি সাহাবা যুগ থেকে নিয়ে গোটা উম্মতের আমলের মাধ্যমে অনুসৃত হয়ে আসে তাহলে হাদীস শাস্ত্রের মূলনীতির আলোকে তার সনদ তালাশ করার প্রয়োজন হয় না। কারণ, হাদীসটি গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য এভাবে অনুসৃত হওয়াটাই বড় প্রমাণ। আমাদের আলোচ্য ইয়াযীদ ইবনে খুসাইফার হাদীসটিও তেমনি। নিম্নে এ সংক্রান্ত মুহাদ্দিসীনে কেরামের কিছু উক্তি পেশ করা হল।
.
১. হযরত মুআয রা. কে বিচারক হিসাবে প্রেরণের হাদীস সম্পর্কে খতিব বাগদাদী রহ. বলেন,
.
إِنَّ أَهْلَ الْعِلْمِ قَدْ تَقَبَّلُوهُ وَاحْتَجُّوا بِهِ ، فَوَقَفْنَا بِذَلِكَ عَلَى صِحَّتِهِ عِنْدَهُمْ كَمَا وَقَفْنَا عَلَى صِحَّةِ قَوْلِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَا وَصِيَّةَ لِوَارِثٍ ، وَقَوْلِهِ فِي الْبَحْرِ: هُوَ الطَّهُورُ مَاؤُهُ والْحِلُّ مَيْتَتُهُ ، وَقَوْلِهِ: إِذَا اخْتَلَفَ الْمُتَبَايِعَانِ فِي الثَّمَنِ وَالسِّلْعَةُ قَائِمَةٌ تَحَالَفَا وَتَرَادَّا الْبَيْعَ ، وَقَوْلِهِ: الدِّيَةُ عَلَى الْعَاقِلَةِ
.
وَإِنْ كَانَتْ هَذِهِ الْأَحَادِيثُ لَا تَثْبُتُ مِنْ جِهَةِ الْإِسْنَادِ ، لَكِنْ لَمَّا تَلَقَّتْهَا الْكَافَّةُ عَنِ الْكَافَّةِ غَنَوْا بِصِحَّتِهَا عِنْدَهُمْ عَنْ طَلَبِ الْإِسْنَادِ لَهَا، فَكَذَلِكَ حَدِيثُ مُعَاذٍ ، لَمَّا احْتَجُّوا بِهِ جَمِيعًا غَنَوْا عَنْ طَلَبِ الْإِسْنَادِ لَهُ
.
অর্থ: উলামায়ে কেরাম ব্যাপকভাবে (আমলের মাধ্যমে) এই হাদীসকে গ্রহণ করেছেন এবং এর দ্বারা প্রমাণ পেশ করেছেন। এটাই প্রমাণ যে, এ হাদীসটি তাঁদের নিকট সহীহ। এরূপ আরো কিছু হাদীস যেমন,
.
ক. لَا وَصِيَّةَ لِوَارِثٍ (ওয়ারিশদের জন্য কোন অসিয়ত প্রযোজ্য নয়)
.
খ. সমুদ্রের ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাদীস : هُوَ الطَّهُورُ مَاؤُهُ والْحِلُّ مَيْتَتُهُ (তার পানি পবিত্র এবং (কোন কারণবশত) মৃত প্রাণী (মাছ) হালাল)
.
গ. إِذَا اخْتَلَفَ الْمُتَبَايِعَانِ فِي الثَّمَنِ وَالسِّلْعَةُ قَائِمَةٌ تَحَالَفَا وَتَرَادَّا الْبَيْعَ (পণ্য অক্ষত থাকা অবস্থায় যদি ক্রেতা-বিক্রেতা মূল্য নির্ধারণে এক মতে পৌঁছতে না পারে, তাহলে উভয়ে হলফ করবে এবং বিক্রয়চুক্তি বাতিল করবে)
.
ঘ. الدِّيَةُ عَلَى الْعَاقِلَةِ (নিহত ব্যক্তির রক্তপন হত্যাকারী ব্যক্তির আকেলার উপর বর্তাবে)
.
এ হাদীসগুলো যদিও বাহ্যত সনদের আলোকে প্রমাণযোগ্য বলে বিবেচিত হয় না, কিন্তু সকলেই আমলের মাধ্যমে যুগযুগ ধরে এগুলো সহীহ হিসাবে অনুসরণ করে এ কথার প্রমাণ করেছেন যে, এগুলোর সনদ তালাশ করার প্রয়োজন নেই। অনুরূপ হযরত মুআজ রা. এর আলোচ্য হাদীসকে সকলেই প্রমাণযোগ্য বিবেচনা করে দলীল হিসাবে গ্রহণ করেছেন। তাই এর সনদ তালাশ করার প্রয়োজন নেই। [আলফক্বিহ ওয়াল মুতাফাককিহ ১/৪৭১]
.
ইবনুল কায়্যিম রহ.ও এ বিষয়টি ‘ই‘লামুল মুওয়াক্কিঈন’ গ্রন্থে (১/২০২-২০৩) উল্লেখ করে এর প্রতি নিজের সমর্থন ব্যক্ত করেছেন।
.
২. ইমাম সুয়ূতি রহ. বলেন,
.
يُحْكَمُ لِلْحَدِيثِ بِالصِّحَّةِ إِذَا تَلَقَّاهُ النَّاسُ بِالْقَبُولِ وَإِنْ لَمْ يَكُنْ لَهُ إِسْنَادٌ صَحِيحٌ. قَالَ ابْنُ عَبْدِ الْبَرِّ فِي الِاسْتِذْكَارِ: لِمَا حُكِيَ عَنِ التِّرْمِذِيِّ أَنَّ الْبُخَارِيَّ صَحَّحَ حَدِيثَ الْبَحْرِ: >هُوَ الطَّهُورُ مَاؤُهُ ، وَأَهْلُ الْحَدِيثِ لَا يُصَحِّحُونَ مِثْلَ إِسْنَادِهِ، لَكِنَّ الْحَدِيثَ عِنْدِي صَحِيحٌ؛ لِأَنَّ الْعُلَمَاءَ تَلَقَّوْهُ بِالْقَبُولِ. وَقَالَ فِي التَّمْهِيدِ: رَوَى جَابِرٌ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: الدِّينَارُ أَرْبَعَةٌ وَعِشْرُونَ قِيرَاطًا ، قَالَ: وَفِي قَوْلِ جَمَاعَةِ الْعُلَمَاءِ وَإِجْمَاعِ النَّاسِ عَلَى مَعْنَاهُ غِنًى عَنِ الْإِسْنَادِ فِيهِ
.
অর্থ: কোন হাদীসের সহীহ সনদ না পাওয়া গেলেও যদি সকলের আমলের মাধ্যমে হাদীসের বক্তব্য অনুসৃত হয় তাহলে সে হাদীসটি সহীহ বলে গণ্য হবে। যেমন, তিরমিযী রহ. থেকে বর্ণিত আছে যে, বুখারী রহ. ‘সমুদ্রের হাদীস’ (তার পানি পবিত্র এবং তার মৃত প্রাণী হালাল) কে সহীহ বলেন। হাফেজ ইবনু আব্দিল বার রহ. ‘আল ইসতিযকার’ গ্রন্থে এ হাদীস সম্পর্কে বলেন, হাদীস বিশারদগণ এ ধরণের সূত্রকে সহীহ বলেন না, কিন্তু হাদীসটি আমার নিকট সহীহ। কারণ, সকল আলেম এটিকে আমলের মাধ্যমে অনুসরণ করে আসছে। তিনি ‘আত তামহীদ’ গ্রন্থে আরো বলেছেন, ‘২৪ ক্বিরাতে ১ দিনার’ এ হাদীসটির বক্তব্যের ব্যাপারে সকলে ঐক্যবদ্ধ হওয়ায় এর সনদ তালাশ করার প্রয়োজন নেই। [তাদরীবুর রাবী ১/৬৬]
.
৩. মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল সানআনী রহ. বলেন,
.
قال الحافظ ابن حجر: من جملة صفات القبول التي لم يتعرض لها شيخنا، – يريد زين الدين في منظومته وشرحها – أن يتفق العلماء على العمل بمدلول الحديث فإنه يقبل حتى يجب العمل به، وقد صرح بذلك جماعة من أئمة الأصول، ومن أمثلته قول الشافعي رحمه الله : وما قلت من أنه إذا غير طعم الماء وريحه ولونه يروى عن النبي صلى الله عليه وسلم من وجه لا يثبت أهل الحديث مثله، ولكنه قول العامة، لا أعلم منهم فيه خلافا. وقال في حديث لا وصية لوارث : لا يثبته أهل العلم بالحديث ولكن العامة تلقته بالقبول وعملت به
.
অর্থ: হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহ. বলেন, যে বৈশিষ্ট্যের কারণে হাদীস গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হয় তার মধ্যে একটি হল (যা আমার শায়খ যাইনুদ্দীন ইরাকী রহ. তার ‘আলফিয়া’ ও তার ব্যাখ্যাগ্রন্থে উল্লেখ করেননি), কোন হাদীসের বক্তব্য অনুযায়ী আমল করার ব্যাপারে সকল আলেম ঐক্যবদ্ধ হওয়া। তাহলে সে হাদীসটি গ্রহণযোগ্য এবং তার বক্তব্য অনুযায়ী আমল করা আবশ্যক হয়ে পড়ে। উসূল শাস্ত্রের অনেক ইমাম এই নীতিটি সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন। এর একটি উদাহরণ হচ্ছে ইমাম শাফেয়ী রহ. এর বক্তব্য, ‘কোন পানির যদি স্বাদ, গন্ধ ও রং পরিবর্তন হয়ে যায় তাহলে তা ব্যবহার যোগ্য নয়।’ এ হাদীসটির সনদকে যদিও হাদীস বিশারদগণ সহীহ মনে করেন না, তথাপি এটিই সকলের বক্তব্য, এ ব্যাপারে কারো দ্বিমত আছে বলে আমার জানা নেই। তদ্রপ, ‘ওয়ারিশদের জন্য কোন অসিয়ত প্রযোজ্য নয়’ এ হাদীসটিও উলামায়ে কেরাম প্রমাণিত বলে মনে করেন না। কিন্তু সকলে আমলের মাধ্যমে এটির অনুসরণ করেছে। [তাউযীহুল আফকার ১/২৫৭-২৫৮]
.
ইমাম ইবনে খুযাইমা রহ. তার ‘সহীহ’ গ্রন্থের
.
إِمَامَةِ الْمُسَافِرِ الْمُقِيمِينَ، وَإِتْمَامِ الْمُقِيمِينَ صَلَاتَهُمْ بَعْدَ فَرَاغِ الْإِمَامِ
.
অধ্যায়ে আলী ইবনে যায়েদ ইবনে জুদআন থেকে একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন। হাদীসটি বর্ণনা করার পূর্বে শিরোনামে তিনি লিখেছেন,
.
إِنْ ثَبَتَ الْخَبَرُ؛ فَإِنَّ فِي الْقَلْبِ مِنْ عَلِيِّ بْنِ زَيْدِ بْنِ جُدْعَانَ، وَإِنَّمَا خَرَّجْتُ هَذَا الْخَبَرَ فِي هَذَا الْكِتَابِ؛ لِأَنَّ هَذِهِ مَسْأَلَةٌ لَا يَخْتَلِفُ الْعُلَمَاءُ فِيهَا
.
অর্থ: হাদীসটি সনদের দিক থেকে প্রমাণিত হওয়া নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। কারণ, আলী ইবনে যায়দ ইবনে জুদআন সম্পর্কে মনে খটকা (দুর্বলতা) রয়েছে। তারপরও হাদীসটি আমি এই গ্রন্থে উল্লেখ করেছি। কারণ, এ মাসআলায় উলামায়ে কেরামের কোন মতভেদ নেই; তারা সকলেই এ ব্যাপারে একমত। দেখুন, সহীহ ইবেন খুযাইমা, হাদীস নং ১৬৪৩।
.
হাদীস শাস্ত্রের ইমামদের এসকল বক্তব্য থেকে এ কথা স্পষ্ট যে, কোন হাদীসের বক্তব্য যদি উম্মাহর আমলের মাধ্যমে অনুসৃত হয় তাহলে তার সনদ তালাশ করার প্রয়োজন হয় না।
.
সম্প্রতি শায়খ বিন বায ও ইবনে উসাইমিন রহ. এর বিশিষ্ট শাগরিদ শায়খ আতিফ ইবনুল হাসান ফারুকী এর أحاديثُ ضِعاف وعليها العمل بغير خلاف নামে একটি রচনা প্রকাশিত হয়েছে। এতে কিছু হাদীসের ব্যাপারে তিনি প্রমাণ করেছেন যে, হাদীসগুলো সনদের বিচারে দুর্বল হলেও এর বক্তব্য অনুযায়ী উম্মাহর সর্বসম্মত আমল রয়েছে।
.
আর ২০ রাকাত তারাবীহ যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগ থেকে এ পর্যন্ত সকলের আমলের মাধ্যমে অনুসৃত হয়ে আসছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। এ সম্পর্কে কিছু প্রমাণ উল্লেখ করছি।
.
.
ইয়াযীদ ইবনে খুসাইফার হাদীস সংশ্লিষ্ট ৫টি আপত্তির জবাব
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷
.
১ নং আপত্তি:
.
ইয়াযীদ ইবনে খুসাইফাকে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহ. ‘মুনকারুল হাদীস’ বলেছেন।
(সালাতুত তারাবীহ আলবানী পৃষ্ঠা নং ৫০)
.
জবাব:
.
ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহ. থেকে ইয়াযীদ ইবনে খুসাইফা সম্পর্কে বক্তব্য বিভিন্ন রকম রয়েছে। আছরাম এর বর্ণনা অনুযায়ী ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল রহ. তাঁকে ‘সিকা’ তথা নির্ভরযোগ্য বলেছেন। তদ্রপ ইমাম আবু হাতেম, নাসাঈ, ইবনে সা‘দ ও ইয়াহইয়া ইবনে মাঈনও তাঁকে নির্ভরযোগ্য বলেছেন এবং ইমাম মালেকসহ সকল ইমাম তাঁকে প্রমাণযোগ্য হিসাবে গ্রহণ করেছেন। ইবনে হিব্বান রহ. তাঁকে নির্ভরযোগ্য রাবীদের বিষয়ে রচিত ‘কিতাবুস্ সিকাত’ এর অর্ন্তভুক্ত করেছেন।
.
আর ইমাম বুখারী ও মুসলিম দু’জনই যে তাঁকে প্রমাণ হিসাবে পেশ করেছেন সেটি অবশ্যই আলবানী রহ. এর অজানা নয়। দেখুন, সহীহুল বুখারী, হাদীস নং: ৪৭০, ১০৭২, ২৩২৩, ৩৩২৫, ৬২৪৫, ৬৭৭৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং : ৪৪৪, ৫৭৭, ১৫৭৬, ২১৫৩, ২৫৭২। এসব হাদীসে সনদে ইয়াযীদ ইবনে খুসাইফা রয়েছেন।
.
সুতরাং ইয়াযীদ ইবনে খুসাইফা যদি মুনকারুল হাদীস হন, তাহলে বুখারী-মুসলিমের উপরোক্ত হাদীসগুলোকে কি বলা হবে?
.
বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন হাফেজ মিয্যী কৃত ‘তাহযীবুল কামাল’ ৩২/১৭২-১৭৪ এবং ইবনে হাজার আসকালানী কৃত ‘তাহযীবুত তাহযীব’ ৩/৩৯১ ও ফতহুল বারী এর ভূমিকা ‘হাদয়ুস্ সারী’ ১/৪৫৩।
.
আলবানী রহ. ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহ. এর যে বক্তব্যটি দলিল হিসাবে পেশ করেছেন সেটি বর্ণনা করেছেন আজুররী রহ. ইমাম আবূ দাউদে রহ. এর সূত্রে। হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী ‘হাদয়ুস সারী’ তে বক্তব্যটি উল্লেখ করার পর লিখেছেন,
.
قلت هذه اللفظة – منكر الحديث – يطلقها أحمد على من يغرب على أقرانه بالحديث عرف ذلك بالاستقراء من حاله وقد احتج بابن خصيفة مالك والأئمة كلهم.
.
অর্থ: ‘মুনকারুল হাদীস’ শব্দটি ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহ. এমন বর্ণনাকারীর ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করেন যিনি বর্ণনা করার ক্ষেত্রে সমসাময়িক রাবীদের তুলনায় নিঃসঙ্গ অর্থাৎ এমন বিশেষ কিছু (একসূত্র বিশিষ্ট) বর্ণনা করেন যা তার সমসাময়িক বর্ণনাকারীগণ বর্ণনা করেননি। ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রা. এর এ বিশেষ পরিভাষা রীতি তাঁর অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে বুঝা গেছে। তাছাড়া ইয়াযীদ ইবনে খুসাইফাকে ইমাম মালেক রহ.সহ সকল ইমামগণ প্রমাণ হিসাবে গ্রহণ করেছেন। [হাদয়ুস সারী- ফাতহুল বারীসহ ১/৪৫৩]
.
অতএব হাফেজ আসকালানী রহ. এর বক্তব্য থেকে এ কথা সুস্পষ্ট যে, ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহ. তাঁকে ‘মুনকারুল হাদীস’ দোষযুক্ত করার জন্য বলেননি; বরং তার উদ্দেশ্য হল, ইয়াযীদ ইবনে খুসাইফা বিশেষ কিছু হাদীস বর্ণনা করেন যা তাঁর সমকালীন বর্ণনাকারীগণ বর্ণনা করেননি।
.
উল্লেখ্য যে, ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রা. সহীহ বুখারীর বর্ণনাকারীদের মধ্যে শুধু ইয়াযীদ ইবনে খুসাইফাকে ‘মুনকারুল হাদীস’ তথা আপত্তিকর হাদীস বর্ণনাকারী বলেছেন এমনটি নয়। ইয়াযীদ ইবনে খুসাইফা ছাড়া সহীহ বুখারীর আরো অনেক বর্ণনাকারী সম্পর্কেও তাঁর এমন মন্তব্য রয়েছে। যেমন দেখুন:
.
ক. মুহাম্মদ ইবনে ইবরাহীম আত-তাইমী যিনি সহীহ বুখারীর ১ম হাদীসসহ একাধিক হাদীসের রাবী। দেখুন হাদীস নং ২৫২৯, ৩৮৫৬ ও ৪৮১৫। তার সম্পর্কে ইবনে হাজর আসকালানী রহ. ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহ. এর বক্তব্য উল্লেখ করেছেন,
محمد بن إبراهيم التيمي استنكر أحمد بعض حديثه
অর্থ: মুহাম্মদ ইবনে ইবরাহীম আত্ তাইমী এর কিছু হাদীসকে ইমাম আহমদ রহ. মুনকার বলেছেন। দেখুন, ফতহুল বারী এর ভূমিকা ‘হাদয়ুস সারী’ ১/৪৬৩
.
খ. বুরাইদ ইবনে আব্দুল্লাহ যার থেকে সহীহ বুখারীতে বহু হাদীস বর্ণিত রয়েছে। যেমন, ৭৯, ৬৫১, ১০৫৯, ১৪৩৮, ২৩১৯, ২৬৬৩, ২৮৮৪, ৩১৩৬, ৩৬২২, ৩৮৭৬, ৪০৮১, ৪১২৮, ৪২৩০, ৪২৩৩, ৪৩২৩, ৪৩২৮, ৪৪১৫, ৫০৪৮, ৬০৬০, ৬১৯৮, ৬২৯৪, ৬৩৮৩, ৬৪০৭, ৬৪৮২, ৭০৪১। তার সম্পর্কে হাফেজ ইবনে হাজার ইমাম আহমদের বক্তব্য উল্লেখ করছেন এভাবে,
.
بريد بن عبد الله بن أبي بردة بن أبي موسى الأشعري … قال أحمد روى مناكير، قلت احتج به الأئمة كلهم، وأحمد وغيره يطلقون المناكير على الأفراد المطلقة
.
অর্থ: ইমাম আহমদ রহ. বলেন, বুরাইদ ইবনে আব্দুল্লাহ অনেক মুনকার হাদীস বর্ণনা করেছেন। আমি (ইবনে হাজার) বলবো, বুরাইদ ইবনে আব্দুল্লাহকে ইমামদের সকলেই প্রমাণ হিসাবে গ্রহণ করেছেন। ইমাম আহমদ এবং আরো অনেকে একসূত্র বিশিষ্ট বর্ণনার ক্ষেত্রেও ‘মুনকার’ পরিভাষা ব্যবহার করে থাকেন। দেখুন, ফতহুল বারী এর ভূমিকা ‘হাদয়ুস সারী’ ১/৩৯২
.
ইমাম আহমদ রহ. এর মত ইমাম আবু বকর বারদিজীও ইউনুস ইবনুল কাসেম আলহানাফী সম্পর্কে ‘মুনকারুল হাদীস’ বলেছেন। ইবনে হাজার রহ. তার এ মন্তব্য সম্পর্কে বলেন,
.
مذهب البرديجي أَن الْمُنكر هُوَ الْفَرد سَوَاء تفرد بِهِ ثِقَة أَو غير ثِقَة فَلَا يكون قَوْله مُنكر الحَدِيث جرحا بَينا
.
অর্থ: ‘মুনকার’ বলার ক্ষেত্রে বারদিজীর রীতি হচ্ছে যে, কোন হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে রাবী নিঃসঙ্গ হলেই অর্থাৎ এক সূত্র বিশিষ্ট হাদীসকে ‘মুনকার’ বলেন, চাই এর বর্ণনাকারী নির্ভরযোগ্য হোক বা না হোক। তাই তাঁর ‘মুনকারুল হাদীস’ বক্তব্যটি কারো ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট আপত্তি নয়। দেখুন, ফাতহুল বারী এর ভূমিকা ‘হাদয়ুস সারী’ ১/ ৪৫৫
সহীহ বুখারীর নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীদের মধ্যে আরো যাদেরকে অনেকে ‘মুনকার’ হাদীস বর্ণনাকারী বলেছেন এবং এমন মন্তব্য তাদের নির্ভযোগ্যতার ক্ষেত্রে কোন প্রভাব ফেলতে পারেনি। এর জন্য ‘হাদয়ুস সারী’ থেকে এদের আলোচনা দেখুন: আহমদ ইবনে শাবীব আল হাবাতী, তাওবা বিন আবুল আসাদ আল আম্বরী, খুছাইম ইবনে ইরাক আলগিফারী, দাঊদ ইবনুল হুসাইন আলমাদানী, আব্দুর রহমান ইবনে শুরাইহ আল মাআফিরী, মুহাম্মদ ইবনে আব্দুর রহমান আততুফাবী, মুগীরা বিন মিকসাম আদ্দাব্বী, মুসা বিন নাফে আল হান্নাত প্রমূখ।
.
ইমাম যাহাবী তার ‘মিযানুল ই‘তিদাল’ গ্রন্থে আলী ইবনুল মাদিনী এর জীবনীতে বলেন,
.
بل الثقة الحافظ إذا انفرد بأحاديث كان أرفع له، وأكمل لرتبته، وأدل على اعتنائه بعلم الاثر، وضبطه دون أقرانه لأشياء ما عرفوها، اللهم إلا أن يتبين غلطه ووهمه فيعرف ذلك، فانظر أول شئ إلى أصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم الكبار والصغار، ما فيهم أحد إلا وقد انفرد بسنة، فيقال له: هذا الحديث لا يتابع عليه، وكذلك التابعون، كل واحد عنده ما ليس عند الآخر من العلم
.
অর্থ: হাফেজ ও সিকা রাবী যখন কিছু হাদীস নিঃসঙ্গভাবে বর্ণনা করেন, এটি হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে তার মর্যাদা ও স্তর উন্নত হওয়ার প্রমাণ বহন করে। বুঝা যায় হাদীস শাস্ত্রের পিছনে তিনি মেহনত ও গুরুত্ব বেশি দিয়েছেন। তিনি সমসাময়িকদের তুলনায় এমন কিছু বিষয় অতিরিক্ত জানতেন যা তারা জানত না। হ্যাঁ, তবে যদি এ ক্ষেত্রে তার ভুল ও বিচ্যুতি প্রকাশ পায় তাহলে তা তো বুঝাই যাবে। আপনি প্রথমে সাহাবায়ে কেরামের দিকেই তাকিয়ে দেখুন, ছোট বড় নির্বিশেষে তাদের প্রত্যেকেই এমন কিছু বর্ণনা করেছেন যা অন্য কেউ করেনি। এ কারণেই বলা হয়, এই সাহাবীর এ হাদীসের (অন্য কোন বর্ণনাকারী দ্বারা) সমর্থন নেই। তাবিঈদের বিষয়টিও এমনি। তাদেরও প্রত্যেকের নিকট এমন কিছু জ্ঞান ছিল যা অন্যদের নিকট ছিল না। [মিযানুল ই‘তিদাল ৩/১৪০]
.
আর এটি জানা কথা যে, ইয়াযীদ ইবনে খুসাইফা তারাবীহ এর হাদীসের ক্ষেত্রে ভুলের স্বীকার হননি এবং তিনি এক্ষেত্রে ‘মুতার্ফারিদ’ তথা সঙ্গীহীন ও একাকী নন।
.
সুতরাং ইয়াযিদ ইবনে খুসাইফা সম্পর্কে ইমাম আহমদ রহ. এর ‘মুনকারুল হাদীস’ শব্দটি দোষ হিসাবে বলা হয়নি। তাই এর কারণে তাঁর নির্ভরযোগ্যতায় ও ২০ রাকাত তারাবীর বর্ণনায় কোন দুর্বলতা সৃষ্টি হয়নি।
.
২ নং আপত্তি:
.
ইয়াযীদ ইবনে খুসাইফাকে ইমাম যাহাবী তার ‘মিযানুল ই‘তিদাল’ গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। (আর এ কথা সকলের জানা যে, তিনি তার এ গ্রন্থে শুধু ‘মুতাকাল্লাম ফিহ’ তথা অভিযুক্ত বর্ণনাকারীদের আলোচনা করেছেন। [টীকা ১, সালাতুত্ তারাবীহ, আলবানী পৃষ্ঠা ৫০])
.
জবাব:
.
আলবানী রহ. কি ধারণা করেছেন যে, যাহাবী রহ. কৃত ‘মিযানুল ই‘তদাল’ এ কোন বর্ণনাকারী অন্তর্ভুক্ত হওয়াই তার দুর্বলতার প্রমাণ?! বিষয়টি কিন্তু এমন নয়। কারণ, স্বয়ং যাহাবী রহ. ‘মিযানুল ই‘তিদাল’ এর শেষদিকে ৪/৬১৬ পৃষ্ঠায় বলেছেন,
.
فأصله وموضوعه في الضعفاء وفيه خلق من الثقات ذكرتهم للذب عنهم ولأن الكلام فيهم غير مؤثر ضعفا.
.
অর্থ: মূলত এ কিতাবের বিষয়বস্তু দুর্বল বর্ণনাকারীগণ। তবে এতে অনেক ‘সিকা’ তথা নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীদেরও স্থান হয়েছে। আমি তাদেরকে উল্লেখ করেছি দোষমুক্ত করার জন্য এবং এ কথা বুঝানোর জন্য যে, তাদের ক্ষেত্রে কথিত সমালোচনা তাদের নির্ভরযোগ্যতায় কোন প্রভাব ফেলতে পারেনি।
.
এ জন্যই দেখা যায় তাঁর কিতাবের বিভিন্ন স্থানে অনেক ‘সিকা’ তথা নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীদের উল্লেখ করে তাদের দোষমুক্ত করেছেন। যেমন,
.
১. নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারী জা‘ফর ইবনে ইয়াস ওয়াসিতী সম্পর্কে বলেন, ইবনে আদী তাঁকে ‘আল কামিল’ গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত করে অনুচিত কাজ করেছেন। (দেখুন : ১/ ৪০২)
.
২. হাম্মাদ ইবনে আবি সুলাইমান সম্পর্কে বলেন, ইবনে আদী তাঁকে ‘আল কামিল’ গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত না করলে আমি তাঁকে এ গ্রন্থে উল্লেখ করতাম না। (দেখুন : ১/৫৯৫)
.
৩.সাবিত আল বুনানী সম্পর্কে বলেন, সাবিত তার নামের মতই সাবিত তথা দৃঢ় ও নির্ভুল বর্ণনাকারী। ইবনে আদী তাঁকে উল্লেখ না করলে আমিও করতাম না। (দেখুন : ১/৩৬৩)
.
৪. একজন বড় মাপের বর্ণনাকারী হুমাইদ ইবনে হিলাল সম্পর্কে বলেন, তাঁকে ইবনে আদীর ‘আল কামিল’ গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ জন্যই আমি তাঁকে এ গ্রন্থে উল্লেখ করেছি, অন্যথায় তিনি ‘হুজ্জত’ তথা দলীল হওয়ার যোগ্য। (দেখুন : ১/৬১৬)
.
৫. উআইস কারনী সম্পর্কে বলেন, বুখারী রহ. যদি তাকে দুর্বলদের মধ্যে উল্লেখ না করতেন তাহলে আমিও তাঁকে উল্লেখ করতাম না। কারণ তিনি একজন আল্লাহর নেক বান্দা। (দেখুন : ১/২৭৯)
.
৬. প্রসিদ্ধ হাফেজ আব্দুর রহমান ইবনে আবী হাতেম সম্পর্কে বলেন, আবুল ফযল সুলাইমানী যদি তাঁকে দোষযুক্ত হিসাবে উল্লেখ না করতেন তাহলে আমিও উল্লেখ করতাম না। এভাবে তাঁকে দুর্বলদের মধ্যে উল্লেখ করে তিনি বড়ই মন্দ কাজ করেছেন। (দেখুন: ২/৫৮৮)
.
ইমাম বুখারী রহ. এর শ্রেষ্ঠতম উস্তাদ ইমাম আলী ইবনুল মাদীনী রহ.। যাঁর হাদীস দিয়ে ইমাম বুখারী রহ. তাঁর সহীহ বুখারী অনেকটা ভরে রেখেছেন। স্বয়ং ইমাম বুখারী রহ. যাঁর সম্পর্কে বলেন, ‘আলী ইবনুল মাদীনী রহ. নিকট নিজেকে যতটা ছোট মনে হয়, অন্য কারো নিকট এতোটা ছোট মনে হয়নি।’ (দেখুন : মিযানুল ইতিদাল ৩/১৪০, তাহযীবুত তাহযীব ৭/৩০৮ ও ৯/৪৩; সিয়ারু আলামিন নুবালা ১১/৪৬)।
.
হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহ. যার সম্পর্কে বলেন, আলী ইবনুল মাদীনী রহ. হাদীস ও ইলালুল হাদীস শাস্ত্রে তাঁর যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ ছিলেন। (দেখুন : তাকরীবুত তাহযীব ১/৪০৩ রাবী নং ৪৭৫৮)

এই আলী ইবনুল মাদীনীর আলোচনাও ‘মিযানুল ইতিদাল’ গ্রন্থে ৩/১৩৮ রয়েছে। তাই বলে তিনিও কি আলবানী রহ. এর দৃষ্টিতে দুর্বল?! যাহাবী রহ. তার নাম উল্লেখ করে বলেন, উকাইলী তাকে তার ‘আয্ যুআফা’ গ্রন্থে উল্লেখ করে বড়ই নিকৃষ্ট কাজ করেছেন।
.
ইমাম যাহাবী রহ. এ বিষয়ে (বর্ণনাকারী নির্ভরযোগ্য, কিন্তু তাদের ব্যাপারে এমন সমালোচনা রয়েছে যা তাদের নির্ভরযোগ্যতায় প্রভাব ফেলতে পারেনি) একটি স্বতন্ত্র গ্রন্থও রচনা করেছেন। (গ্রন্থটির নাম, আর রুআতুস সিকাতুল মুতাকাল্লাম ফিহিম বিমা লা ইউজিবু রাদ্দাহুম) (গ্রন্থটি পায় দুই যুগ পূর্বে পাকিস্তান থেকে মাওলানা আব্দুল মালেক সাহেব “আমীনুত তালীম, মারকাযুদ দাওয়াহ ঢাকা” এর ভূমিকাসহ প্রকাশিত হয়েছে।)এ গ্রন্থের শুরুতে তিনি বলেছেন,
.
وَقد كتبت فِي مصنَّفِي الْمِيزَان عددا كثيرا من الثِّقَات الَّذين احْتج البُخَارِيُّ أَو مُسلمٌ أَو غَيرُهمَا بهم، لكَون الرجل مِنْهُم قد دُوِّنَ اسْمُه فِي مصنَّفاتِ الْجرْح، وَمَا أوردتُهم لضعف فيهم عِنْدِي، بل ليعرف ذَلِك، وَمَا زَالَ يمر بِي الرجل الثبت وَفِيه مقَال من لَا يعبأ بِهِ.
.
অর্থ: আমি আমার রচিত ‘মিযানুল ই‘তিদাল’ গ্রন্থে এমন অনেক সংখ্যক ‘সিকা’ তথা নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীদেরও উল্লেখ করেছি যাদেরকে ইমাম বুখারী, মুসলিম বা অন্য কোন ইমাম প্রমাণ হিসাবে গ্রহণ করেছেন। তারপরও তাদেরকে আমি এ জন্য উল্লেখ করেছি যে, সমালোচিত বর্ণনাকারী নিয়ে লেখা গ্রন্থসমূহে তার নাম অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে। আমার নিকট তারা দুর্বল হওয়ায় তাদেরকে এ গ্রন্থে উল্লেখ করেছি বিষয়টি এমন নয়। বরং সমালোচিত হওয়া সত্ত্বেও যে তাঁরা দুর্বল নয় এ কথা প্রমাণ করার জন্যই তাদেরকে এনেছি। আমি এমন অনেক বর্ণনাকারীর দেখা পেয়েই চলেছি যারা নির্ভরযোগ্য, কিন্তু তাদের ব্যাপারে এমন ব্যক্তির সমালোচনা রয়েছে যার কথা গ্রহণযোগ্য নয়। [আর রুওয়াতুস্ সিকাত আল মুতাকাল্লাম ফিহিম বিমা লা ইউজিবু রদ্দাহুম পৃ : ২৩]
.
এরপর তিনি এমন অনেক সমালোচিত অথচ নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীদের আলোচনা করেছেন যাদের ক্ষেত্রে ঐ সমালোচনা কোন প্রভাব ফেলতে পারেনি।
.
(সুতরাং আলবানী সাহেবের এ আপত্তিটি খুবই স্থূল বুদ্ধির পরিচায়ক; বরং তা হাদীস শাস্ত্রে তাঁর ব্যাপক বিচরণ সত্ত্বেও নেহায়েত অপরিপক্বতারই প্রমাণ বহন করে বৈকি!)
.
৩ নং আপত্তি:
.
ইয়াযীদ ইবনে খুসাইফার বর্ণনায় তারাবীহ এর রাকাত সংখ্যার ক্ষেত্রে ‘ইযতিরাব’ (বর্ণনার বিভিন্নতা) রয়েছে। তার কোন বর্ণনায় ২১ এবং কোন বর্ণনায় ২০ (বিতরসহ ২৩) রাকাতের কথা এসেছে। পক্ষান্তরে মুহাম্মদ বিন ইউসুফ এর বর্ণনা ‘ইযতিরাব’মুক্ত।
.
জবাব:
.
কোন ‘ইযতিরাব’ (বর্ণনার বিভিন্নতা) (মুযতারিব এর সংজ্ঞা
কোন হাদীস এক বা একাধিক বর্ণনাকারীর সূত্রে এমন বিভিন্নতার সাথে বর্ণিত হওয়া যার মাঝে সমন্বয় সম্ভব নয় এবং বর্ণনাগুলো শক্তির দিক থেকে সমপর্যায়ের হওয়ার কোন একটিকে অগ্রগণ্য সাব্যস্ত করারও সুযোগ থাকে না।
হাদীস মুযতারিব হওয়ার শর্ত
.
ক. হাদীসগুলোর মাঝে এমন বিভিন্নতা ও ইখতিলাফ থাকা যা সমন্বয় করা সম্ভব নয়।
.
খ. শক্তির বিচারে বর্ণনাগুলো সমপর্যায়ের হওয়ায় কোন একটিকে অগ্রগণ্য সাব্যস্ত করতে না পারা।
.
ইযতিরাবের হুকুমঃ
.
ইযতিরাব বর্ণনার জন্য একটি ত্রুটি যার কারণে বর্ণনাটি আমলযোগ্য থাকে না। তবে যদি কোন দিক দিয়ে একটি বর্ণনাকে অগ্রগণ্য সাব্যস্ত করা সম্ভব হয় তাহলে রাজিহ তথা অগ্রগামী বর্ণনাটি অথবা যদি সমন্বয় করা সম্ভব হয় তাহলে সবগুলো বর্ণনা আমলযোগ্য হয়ে যায়।
বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন, ‘আন নুকাত’ ইবনে হাজার ২/৭৭২- ৮১০; ‘ফাতহুল মুগিস’ সাখাবী ১/২৯০-২৯৬; আদ দুরারুস সামীনা ৯২-৯৩; ও ‘আল হাদীসুল মুযতারিব’ নামে উম্মুল কুরা ইউনিভার্সিটি থেকে প্রকাশিত শুধু মুজতারিব হাদীস বিষয়ে তিন) যদি সমন্বয়যোগ্য হয় তাহলে তা দোষের কিছু নয়। এ কারণে হাদীস অগ্রহণযোগ্য হয় না। আমাদের হাদীসের ইযতিরাবও সমন্বয়যোগ্য। এ সম্পর্কে হাফেজ আসকালানী বলেন,
.
والاختلاف فيما زاد عن العشرين راجع إلى الاختلاف في الوتر وكأنه كان تارة يوتر بواحدة وتارة بثلاث
.
অর্থ: তারাবীহর নামাজ ২০ রাকাতের উপরে বর্ণনার যে বিভিন্নতা রয়েছে তা মূলত বিতর নামাজের কারণে। কারণ, বিতর কখনও এক রাকাত কখনো ৩ রাকাত পড়া হত। [ফাতহুল বারী ৪/২৫৩]
.
সমন্বয়টি করেছেন হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহ.। আর তাঁর মতে বিতির এক রাকাত। তিনি শাফেয়ী মাযহাবের অনুসারী ছিলেন।
.
(সুতরাং ইযতিরাবের অজুহাত দেখিয়ে ২০ রাকাতের বর্ণনাকে দুর্বল বলার কোন সুযোগ নেই।)
.
যদি শুধু সংখ্যার বিভিন্নতা ‘ইযতিরাব’ এর কারণ হয় এবং তার কারণে হাদীস অগ্রহণযোগ্য হয় তাহলে আমরা বলবো, ইয়াযীদ ইবনে খুসাইফার বর্ণনার তুলনায় মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফ এর বর্ণনায় আরো বেশি ‘ইযতিরাব’ রয়েছে। কারণ, মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফ থেকে তিন ধরণের বর্ণনা পাওয়া যায়। এক বর্ণনায় ১১, অন্য দুটিতে যথাক্রমে ১৩ ও ২১ রাকাতের কথা রয়েছে। (পক্ষান্তরে ইয়াযীদ ইবনে খুসাইফা থেকে বর্ণনা রয়েছে দুই ধরণের, ২১ ও ২০ (বিতরসহ ২৩) রাকাতের, যার মাঝে হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহ. সমন্বয় করেছেন।)
.
.
ইযতিরাব মূলত ৮ রাকাতের হাদীসে!
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷
.
মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফ থেকে তারাবীর রাকাত সংখ্যার ক্ষেত্রে তিন ধরণের বর্ণনা রয়েছে।
.
ক. ইমাম মালেক রহ. থেকে ১১ রাকাতের বর্ণনা:
.
অর্থ: মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফ বলেন, সাহাবী সায়েব ইবনে ইয়াযীদ বলেন, হযরত উমর রা. উবাই ইবনে কা‘ব ও তামীম দারী রা.কে সকলকে নিয়ে ১১ রাকাত নামাজ পড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন। [মুআত্তা মালেক হাদীস নং ৩৭৯; মারিফাতুস সুনান বাইহাকী হাদীস নং ৫৪১৩] (ইমাম মালেক রহ. ছাড়াও মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফ এর আরো তিন জন ছাত্র ১১ রাকাতের বর্ণনা করেছেন। যথা:

১. ইয়াহইয়া ইবনে সাঈদ আল কাত্তান। (দেখুন, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ৫/২২০ হাদীস নং ৭৭৫৩)

২. আব্দুল আযীয ইবনে মুহাম্মদ। দেখুন, সুনানে সাঈদ ইবনে মানসুর।

৩. ইসমাঈল ইবনে জাফর। (দেখুন, আহাদিসু ইসমাঈল ইবনে জাফর ১/৪৯৯ হাদীস নং ৪৪০)
মুহাম্মদ বিন ইউসুফের এই চার ছাত্র ১১ রাকাতের সংখ্যা বর্ণনার ক্ষেত্রে এক হলেও এদের বক্তব্যের মাঝে বিভিন্নতা তথা ইযতিরাব রয়েছে। আবার মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফ এর অপর দুই ছাত্র ইবনে ইসহাক এর বর্ণনায় ১৩ ও দাউদ ইবনে কায়স এর বর্ণায় ২১ রাকাতের ইযতিরাব তো রয়েছেই। বিস্তারিত দেখুন, রাকআতে তারাবীহ, হাবীবুর রহমান আযমী পৃষ্ঠা ২০; দলীলসহ নামাযের মাসায়েল (বর্ধিত সংস্করণ) পৃষ্ঠা ৪০০-৪০১)
.
খ. ইবনে ইসহাক থেকে ১৩ রাকাতের বর্ণনা:
.
حدثني محمد بن يوسف عن السائب فقال : ثلاث عشرة
.
অর্থ: ইবনে ইসহাক বলেন, আমাকে মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফ সায়েব ইবনের ইয়াযীদ থেকে ১৩ রাকাতের কথা বর্ণনা করেছেন। [ফাতহুল বারী ৪/২৫৩; ক্বিয়ামু রমযান মুহাম্মদ ইবনে নসর আল মারওয়াযী পৃ : ২২০]
.
গ. দাউদ ইবনে কায়স ও আরো অন্যান্যজন থেকে ২১ রাকাতের বর্ণনা
.
عَنْ دَاوُدَ بْنِ قَيْسٍ، وَغَيْرِهِ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ يُوسُفَ، عَنِ السَّائِبِ بْنِ يَزِيدَ، أَنَّ عُمَرَ: جَمَعَ النَّاسَ فِي رَمَضَانَ عَلَى أُبَيِّ بْنِ كَعْبٍ، وَعَلَى تَمِيمٍ الدَّارِيِّ عَلَى إِحْدَى وَعِشْرِينَ رَكْعَةً
.
অর্থ: দাউদ ইবনে কায়েস এবং অন্যন্যদের থেকে বর্ণিত, মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফ সাহাবী সায়েব ইবনে ইয়াযীদ রা. থেকে বর্ণনা করেন, হযরত উমর রা. রমজান মাসে উবাই ইবনে কা‘ব এবং তামীমে দারী রা. এর পিছনে সকলকে ২১ রাকাত তারাবীহ নামাজের উপর ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। [মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক হাদীস নং : ৭৭৩০]
.
উল্লিখিত ৩ ধরণের বর্ণনার মাঝে সমন্বয়
.
আহলে ইলমদের পদ্ধতি হচ্ছে বিভিন্ন রকম বর্ণনার মধ্যে যথাসম্ভব সমন্বয় সাধন করা। তাই তারা এ বর্ণনাগুলোর মাঝে বিভিন্নভাবে সমন্বয় করেছেন।
.
১ নং পদ্ধতি: হাফেজ আসকালানী রহ. বলেন,
.
وَالْجَمْعُ بَيْنَ هَذِهِ الرِّوَايَاتِ مُمْكِنٌ بِاخْتِلَافِ الْأَحْوَالِ وَيُحْتَمَلُ أَنَّ ذَلِكَ الِاخْتِلَافَ بِحَسَبِ تَطْوِيلِ الْقِرَاءَةِ وَتَخْفِيفِهَا فَحَيْثُ يُطِيلُ الْقِرَاءَةَ تَقِلُّ الرَّكَعَاتُ وَبِالْعَكْسِ وَبِذَلِكَ جَزَمَ الدَّاوُدِيُّ وَغَيْرُهُ
.
অর্থ: এ সকল বর্ণনাগুলো মাঝে এভাবে সমন্বয় সম্ভব যে, এগুলো বিভিন্ন অবস্থার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। হতে পারে কোন সময় কেরাত লম্বা করা হত তখন রাকাত কম হত, আবার কোন সময় কেরাত সংক্ষিপ্ত করা হত তখন রাকাত বেশি হত। ইমাম দাউদীসহ অরো অনেকে দৃঢ়তার সাথে এ কথা বলেছেন। [ফাতহুল বারী ৪/২৫৩]
.
২ নং পদ্ধতি: এই ইযতিরাব দূর করার ক্ষেত্রে হাফেজ ইবনু আব্দিল বার ও ইমাম ইবনুল আরাবী রহ. এর আরেকটি মত রয়েছে। মতটি হচ্ছে এই যে, ইমাম মালেক রহ. থেকে ১১ রাকাতের বর্ণনাটি ওহাম বা ভুল। (অর্থাৎ এখানে ইমাম মালেক রহ. থেকে বিচ্যুতি ঘটে গেছে) এ ক্ষেত্রে দাউদ ইবনে কায়সের ২১ রাকাতের বর্ণনাই সহীহ।
.
তবে এ মতটি এ জন্য গ্রহণযোগ্য নয় যে, ইমাম মালেক রহ. মুহাম্মদ বিন ইউসুফ থেকে ১১ রাকাত বর্ণনার ক্ষেত্রে একাকী ও নিঃসঙ্গ নন। মুহাম্মদ বিন ইউসুফ এর আরো দুইজন ছাত্র আব্দুল আজিজ ইবনে মুহাম্মদ এবং ইয়াহইয়া ইবনে সাঈদ আল কাত্তানও মুহাম্মদ বিন ইউসুফ থেকে ১১ রাকাতের কথা বর্ণনা করেছেন। আব্দুল আজিজ ইবনে মুহাম্মদ এর বর্ণনা রয়েছে ‘সুনানে সাঈদ ইবনে মানসুরে’। আর ইয়াহইয়া ইবনে সাঈদ আল কাত্তান এর বর্ণনা রয়েছে মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবাতে (হাদীস নং ৭৭৫৩)। অতএব, ইমাম মালেক রহ. এর ১১ রাকাতের বর্ণনাটি ভুল এ কথা বলা যায় না। (গ্রন্থকারের আপত্তি হল এ কথার উপর যে, বিচ্যুতিটি ঘটেছে ইমাম মালেক রহ.এর। তবে অনেক মুহাদ্দিস মনে করেন, এখানে ‘ওয়াহাম’ তথা ভুল হয়েছে মুহাম্মদ বিন ইউসুফ এর। আর এটিই যথার্থ বলে মনে হয়।)
.
মোট কথা ইযতিরাবের কারণে ইয়াযিদ ইবনে খুসাইফার ২০ রাকাতের বর্ণনা নয়; বরং মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফের বর্ণনাই দোষযুক্ত প্রমাণিত হয়।
.
ইবনে খুসাইফা কর্তৃক বর্ণিত ২০ রাকাতের বর্ণনাই সঠিক। আরবের বিখ্যাত সালাফী আলেম শায়খ মুহাম্মদ ইবনে ইবরাহিম আততুওয়াইজিরী তারাবীর রাকাত সংখ্যা পর্যালোচনা করতে গিয়ে মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফের বর্ণনার তুলনায় ইবনে খুসাইফার ২০ রাকাতের বর্ণনাকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। তিনি মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফের বর্ণনার বিভিন্নতার কথা উল্লেখ করে লিখেছেন, ‘মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফ উপরোক্ত কথাগুলোর বর্ণনাকারী। হাদীসের মৌল সূত্র অনুসারে একই রাবীর একই বিষয়ে পৃথক পৃথক মত প্রকাশ করা বিশুদ্ধ হওয়ার অন্তরায়। সুতরাং ২০ রাকাতের অভিন্ন মত গ্রহণ করাই যুক্তিসঙ্গত।’ (দেখুন, পিস পাবলিকেশন-ঢাকা থেকে প্রকাশিত ‘কুরআন ও সহীহ্ হাদীসের আলোকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্র্যাকটিক্যাল নামায’ পৃষ্ঠা নং ২২২)
.
মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক’ এ বর্ণিত দাউদ ইবনে কায়স এর ২১ রাকাতের বর্ণনা সম্পর্কে আলবানী রহ. এর আপত্তি:

আলবানী রহ. বলেন, আব্দুর রাজ্জাক ও মুহম্মদ ইবনে ইউসুফ এর মধ্যবর্তী বর্ণনাকারী যদিও ত্রুটিমুক্ত, তথাপি এ বর্ণনার ত্রুটি মূলত স্বয়ং আব্দুর রাজ্জাক এর মধ্যেই। কারণ তিনি সিকাহ হাফেজ এবং প্রসিদ্ধ লেখক হলেও শেষ বয়সে অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন, তাঁর স্মৃতিশক্তি পরিবর্তন হয়ে গিয়েছিল। আর এ কথা জানা নেই যে, এ বর্ণনা তার পরিবর্তনের আগের না পরের? তাই এ বর্ণনা গ্রহণযোগ্য নয়। (শায়খ আলবানী এখানে উসূলে হাদীসের মারাত্মক অপব্যবহার করেছেন। যারা শাস্ত্র সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা রাখেন তাদের কাছে বিষয়টি অস্পষ্ট নয়। দেখুন, তার এ কথার কারণে আব্দুর রাজ্জাক এর ‘মুসান্নাফ’ গ্রন্থ পুরোটাই অগ্রহণযোগ্য ও সন্দেহপূর্ণ হয়ে যায়। যা গোটা উম্মতে মুসলিমার চিন্তা ও আমল বিরোধী। আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন।
এভাবে একটি হাদীস গ্রন্থের সকল হাদীস সম্পর্কে সন্দেহ সৃষ্টি করে হাদীস বিরোধীদের সহযোগিতা ছাড়া আর কি হচ্ছে বলুন?)
.
জবাব:
.
আব্দুর রাজ্জাক ও মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফ এর মধ্যবর্তী বর্ণনাকারী হচ্ছেন, বরেণ্য ইমাম দাউদ ইবনে কায়স, যাকে ইমাম শাফেয়ী, আহমদ, ইবনে মাঈন, আলী ইবনুল মাদীনী, আবু যুরআ, ইবনে সা‘দ, নাসাঈ, কা‘নাবী ও ইবনে হিব্বান প্রমুখ ইমামগণ সিকাহ বলেছেন। (দেখুন : হাফেজ আসকালানী কৃত ‘তাহযীবুত তাহযীব’)
.
আর আব্দুর রাজ্জাক রহ. অনেক উঁচু মাপের ইমাম ছিলেন। হাফেজ আসকালানী তাঁর সম্পর্কে বলেছেন,
.
عبد الرزاق بن همام بن نافع الحميري الصنعاني أحد الحفاظ الأثبات، صاحب التصانيف، وثقه الأئمة كلهم إلا العباس بن عبد العظيم العنبري وحده، فتكلم بكلام أفرط فيه، ولم يوافقه عليه أحد
.
وقد قال أبو زرعة الدمشقي قيل لأحمد: من أثبت في ابن جريج، عبد الرزاق أو محمد بن بكر البرساني؟ فقال عبد الرزاق.
.
وقال عباس الدوري عن ابن معين: كان عبد الرزاق أثبت في حديث معمر من هشام بن يوسف.
.
وقال يعقوب بن شيبة عن علي بن المديني: قال لي هشام بن يوسف: كان عبد الرزاق أعلمنا وأحفظنا.
.
অর্থ: ইমাম আব্দুর রাজ্জাক হচ্ছেন বহু গ্রন্থ রচয়িতা নির্ভরযোগ্য হাফিজুল হাদীসদের একজন। সকল ইমাম তাঁকে সিকা তথা নির্ভরযোগ্য বলেছেন। শুধু আব্বাস ইবনে আব্দুল আজীম আল আম্বরী তার ব্যাপারে সমালোচনা করেছেন। তবে তার সমালোচনায় অতিরঞ্জন রয়েছে। যে কারণে কেউ এ সমালোচনার ক্ষেত্রে তার সাথে সহমত পোষণ করেননি।
.
ইমাম আবু যুরআহ রহ. বলেন, আহমদ ইবনে হাম্বল রহ.কে একবার জিজ্ঞাসা করা হল, ইবনে জুরাইজ সম্পর্কে কে বেশি গ্রহণযোগ্য, ইমাম আব্দুর রাজ্জাক না মুহাম্মদ ইবনে বকর আল-বারসানী? তিনি বললেন, ‘ইমাম আব্দুর রাজ্জাক’।
.
ইয়াকুব ইবনে শাইবার সূত্রে বর্ণিত ইমাম আলী ইবনুল মাদীনী বলেন, আমাকে হিশাম ইবনে ইউসুফ বলেছেন, ইমাম আব্দুর রাজ্জাক ছিলেন আমাদের সবচেয়ে বড় আলেম এবং সবচেয়ে বড় হাফিজুল হাদীস। [হাদয়ুস সারী ফতহুল বারীসহ ১/৪১৯]
.
হাফেজ মিয্যী রহ. বলেন,
.
قال عبد الرزاق: كتب عني ثلاثة لا أبالي أن لا يكتب عني غيرهم، كتب عني ابن الشاذكوني، وهو من أحفظ الناس، وكتب عني يحيى بن مَعِين وهو من أعرف الناس بالرجال، وكتب عني أحمد بن حنبل وهو من أزهد الناس.
.
অর্থ: ইমাম আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমার থেকে তিন ব্যক্তি হাদীস সংগ্রহ করার পর আর কেউ সংগ্রহ করল কি না- আমি তার প্রতি কোন ভ্রুক্ষেপ করি না। প্রথমজন হচ্ছেন, এ যুগের সবচেয়ে বড় হাফিজুল হাদীস ইবনুস সাযাকুনী। দ্বিতীয়জন হচ্ছেন, হাদীস বর্ণনাকারীদের অবস্থা সম্পর্কে সর্বাধিক জ্ঞাত ইমাম ইয়াহইয়া ইবনু মাঈন। তৃতীয়জন হচ্ছেন ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল, যিনি সবচেয়ে বেশি দুনিয়াবিমুখ ব্যক্তি। [তাহযীবুল কামাল ১৮/৫৯]
.
হাফেজ যাহাবী রহ. আলী ইবনুল মাদীনী রহ. এর জীবনীতে লিখেছেন,
.
ولو تركت حديث على وصاحبه محمد وشيخه عبد الرزاق وعثمان بن أبي شيبة وإبراهيم بن سعد وعفان وأبان العطار وإسرائيل وأزهر السمان وبهز بن أسد وثابت البناني وجرير بن عبد الحميد لغلقنا الباب وانقطع الخطاب ولماتت الآثار واستولت الزنادقة ولخرج الدجال
.
অর্থ: যদি আমি আলী ইবনুল মাদীনী, তাঁর শিষ্য মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল বুখারী, তাঁর উস্তাদ আব্দুর রাজ্জাক, উসমান ইবনে আবি শাইবা, ইবরাহিম ইবনে সা‘দ, আফ্ফান, আবান আল আত্তার, ইসরাঈল, আযহার আস সাম্মান, বাহ্য ইবনে আসাদ, সাবেত আল বুনানী এবং জারীর ইবনে আব্দুল হামীদ এ সকল মুহাদ্দিসদের থেকে হাদীস বর্ণনা করা ছেড়ে দেই তাহলে তো হাদীসের দরজাই বন্ধ করে ফেলব। আর হাদীস বিষয়ে কথা বলাও বন্ধ হয়ে যাবে। তখন সকল বর্ণনা বিলুপ্ত হয়ে যাবে, যিন্দীকরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে এবং মিথ্যুকদের আবির্ভাব ঘটবে। [মিযানুল ইতিদাল ৫/১৬৯]
.
বাকি থাকল আব্দুর রাজ্জাকের শেষ জীবনে অন্ধ হয়ে যাওয়ার পর তাঁর স্মৃতিশক্তি পরিবর্তন হয়ে যাওয়া। মূলত এ পরিবর্তন তাঁর রচনাবলীতে কোন প্রভাব ফেলতে পারেনি। আসরাম এর সূত্রে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল বলেন,
.
من سمع منه بعد ما عمي فليس بشيء وما كان في كتبه فهو صحيح وما ليس في كتبه فإنه كان يلقن فيتلقن
.
অর্থ: ইমাম আব্দুর রাজ্জাক রহ. রচনাবলীতে যা আছে তা সঠিক। তবে যারা তাঁর অন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে শুনেছে এবং তা তাঁর রচনাবলীতে নেই তা গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, তখন তাঁকে যা বলা হত তিনি তাই বলতেন। [হাদয়ুস সারী ফাতহুল বারী সহ ১/৪১৯]
.
আর দাউদ ইবনে কায়স সূত্রে বর্ণিত আলোচ্য হাদীসটি আব্দুর রাজ্জাক রহ. এর ‘আল মুসান্নাফ’ গ্রন্থে রয়েছে। তাই তাতে তার শেষ বয়সের স্মৃতিশক্তিজনিত দুর্বলতার কোন প্রভাব পড়েনি।
.
(সুতরাং মুসান্নাফে বর্ণিত ইমাম আব্দুর রাজ্জাকের বর্ণনার বিষয়ে এমন আপত্তি উত্থাপন করা জরাহ-তাদীল বিষয়ে জ্ঞান স্বল্পতার একটি বড় প্রমাণ।)
.
৪ নং আপত্তি:
.
মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফ সাহাবী সায়েব ইবনে ইয়াযীদের ভাগিনা। তাই তিনি সায়েবের বর্ণনা সম্পর্কে অন্যদের তুলনায় অধিক অবগত ও সংরক্ষণকারী হবেন বৈ কি।
.
জবাব:
.
সাহাবী সায়েব ইবনে ইয়াযীদ রা. এর সাথে মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফ এর যেমন আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে তদ্রুপ ইয়াযীদ ইবনে খুসাইফারও তাঁর সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক আছে। কারণ, খুসাইফা ইবনে ইয়াযীদ এবং সায়েব ইবনে ইয়াযীদ দুজন আপন ভাই, সে হিসাবে ইয়াযীদ ইবনে খুসাইফা সাহাবী সায়েব ইবনে ইয়াযীদের ভাতিজা।
.
হাফেজ ইবনু আব্দিল বার বলেন,
.
يَزِيدُ بْنُ خُصَيْفَةَ بْنِ يَزِيدَ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ الْكِنْدِيُّ ابْنُ أَخِي السَّائِبِ بْنِ يَزِيدَ
.
ইয়াযীদ ইবনে খুসাইফা সায়েব ইবনে ইয়াযীদের ভাতিজা। [‘আত তামহীদ লিমা ফিল মুআত্তা মিনাল মাআনী ওয়াল আসানীদ : ২৩/২৫]
.
হাফেজ মিয্যী বলেন,
.
إن خصيفة بْن يزيد والسائب بْن يزيد أخوان.

খুসাইফা ইবনে ইয়াযীদ এবং সায়েব ইবনে ইয়াযীদ দুই ভাই। [তাহযীবুল কামাল ৩২/১৭২]
.
৫ নং আপত্তি:
.
হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহ. তাঁর ‘তাক্বরীবুত্ তাহযীব’ কিতাবে মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফকে ‘সিকাতুন সাব্তুন’ (দুটি গুণবাচক শব্দে) বলেছেন। পক্ষান্তরে ইয়াযীদ ইবনে খুসাইফাকে শুধু ‘সিকাতুন’ (একটি গুণবাচক শব্দে) বলেছেন। (তাকরীবুত তাহযীব’ রিজাল শাস্ত্রের একটি সংক্ষিপ্ত গ্রন্থ। বিখ্যাত দু’জন রাবীর মধ্যে তুলনা করার সময়ও আলবানী সাহেব তাঁদের জীবনীর মূল বিস্তারিত গ্রন্থাদী না পড়ে কেবল ‘তাকরীব’ এর উপর এমনভাবে নির্ভর করাটা সত্যিই বিস্ময়কর।)
.
জবাব:
.
হাফেজ আসকালানী ইয়াযীদ ইবনে খুসাইফাকে শুধু ‘সিকাতুন’ বললেও, হাদীস শাস্ত্রের সর্বজনবিদিত ইমাম ইয়াহইয়া ইবনু মাঈন তাঁকে ‘সিকাতুন হুজ্জাতুন’ তথা নির্ভরযোগ্য ও প্রমাণযোগ্য দুটি শক্তিশালী বিশেষণে উল্লেখ করেছেন। [হাদয়ুস সারী ফাতহুল বারীসহ ১/৪৫৩]
.
(মুহাম্মদকে ইয়াযীদ এর উপর প্রাধান্য দেওয়ার যে কারণ আলবানী সাহেব উল্লেখ করেছেন এর অসারতা যে কোন শাস্ত্রবিদের কাছেই সুস্পষ্ট, বিশেষত ‘তাক্বরীবুত তাহযীব’ কিতাবের পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে যারা অবগত আছেন।)
মুহাম্মদ বিন ইউসুফ ও শায়খ আলবানী রহ. এর মতেও ইয়াযীদ ইবনে খুসাইফার বর্ণনা সহীহ !
.
শায়খ আলবানী রহ. তার ‘সালাতুত তারাবীহ’ গ্রন্থের ৫০ নং পৃষ্ঠায় ইয়াযীদ ইবনে খুসাইফার বর্ণনায় ইযতিরাব প্রমাণ করতে গিয়ে লিখেছেন,
.
قال إسماعيل بن أمية أن محمد بن يوسف ابن أخت السائب بن يزيد أخبره ( قلت : فذكر مثل رواية مالك عن ابن يوسف ثم قال ابن أمية ) : قلت : أو واحد وعشرين ؟ قال : ( يعني محمد بن يوسف ) : لقد سمع ذلك من السائب بن يزيد – ابنُ خصيفة، فسألتُ (السائل هو اسماعيل بن أمية) يزيد بن خصيفة؟ فقال: حسبتُ أن السائب قال: أحد وعشرين. قلتُ : وسنده صحيح.
.
অর্থ: মুহাম্মাদ ইবনে ইউসুফ থেকে ১১ রাকাতের বর্ণনা শুনে ইসামাঈল ইবনে উমাইয়া তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, এ বর্ণনায় রাকাত সংখ্যা ১১ নাকি ২১? তিনি উত্তরে বললেন, ‘সায়েব ইবনে ইয়াযীদ থেকে ২১ রাকাতের বিষয়টি শুনেছে ইয়াযীদ ইবনে খুসাইফা। এরপর আমি (ইসমাঈল ইবনে উমাইয়া) ইয়াযীদ ইবনে খুসাইফাকে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, আমি ধারণা করছি যে, সায়েব রা. বলেছেন ২১ রাকাত’ (শায়খ আলবানী রহ. তার ‘সালাতুত তারাবীহ’ গ্রন্থে ইয়াযীদ ইবনে খুসাইফার বর্ণনায় ইযতিরাব প্রমাণ করতে গিয়ে এই বর্ণনাটি উল্লেখ করেছেন, কিন্তু তিনি কোন্ কিতাব থেকে তা সংগ্রহ করেছেন তার বরাত উল্লেখ করেননি। হাদীসের সনদটিও উল্লেখ করেননি। যে কিতাব থেকে হাদীসটি নিয়েছেন তা মুদ্রিত না পা-ুলিপি তাও বলেননি। আলবানী রহ. এমনটি কেন করলেন তা আমাদের বোধগম্য নয়। মুযাফ্ফর বিন মুহসিনও তার ‘তারাবীহর রাকাত সংখ্যা একটি তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ’ নামক পুস্তিকার ২৯ নং পৃষ্ঠায় উক্ত ইযতিরাবের প্রমাণে শায়খ আলবানী রহ. এর অন্ধ তাকলীদ করে গেছেন এবং এ বর্ণনাটির কোন সূত্র তিনিও উল্লেখ করেননি।
অবশ্য বর্ণনাটির আমরা পেয়েছি ইমাম আবু বকর নাইসাবুরী এর সাথে সম্বন্ধিত ‘আল ফাওয়াইদ’ গ্রন্থে। কিন্তু বিভিন্ন যৌক্তিক কারণে আমরা এ বর্ণনাকে দলিলরূপে গ্রহণ করার উপযুক্ত মনে করি না। সম্ভবত এ দুর্বলতার কারণেই আলবানী সাহেব হাদীসের সনদও উল্লেখ করেননি এবং কিতাবের কোন তথ্যও দেননি। বর্ণনাটি দলীল হওয়ার উপযুক্ত না হওয়ার কারণ নিম্নরূপ:
‘আল ফাওয়াইদ’ নামক গ্রন্থটি এখনো পা-ুলিপি আকারে রয়েছে, মুদ্রিত হয়নি। সংরক্ষিত পা-ুলিপি থেকে কম্পোজকৃত শুধু একটি কপি আল মাকতাবাতুশ শামেলার ওয়েব সাইটে সফ্ট কপি আকারে পাওয়া যায়।
তাতে হাদীসটি সনদসহ এভাবে উল্লিখিত রয়েছে,
.
حدثنا يوسف بن سعيد، ثنا حجاج، عن ابن جريج، حدثني إسماعيلُ بن أمية أن محمد بن يوسف ابن أخت السائب بن يزيد، أخبره أن السائب بن يزيد أخبره قال: جمع عمر بن الخطاب الناس على أبي بن كعب، وتميم الداري، فكانا يقومان بمائة في ركعة فما ينصرف حتى نرى أو نشكَّ في فروع الفجر، قال فكنا نقوم بأحد عشر، قلتُ أو واحد وعشرين، قال: لقد سمع ذلك من السائبِ بن يزيدَ إبنُ خصيفةَ، فسألتُ يزيدَ بن خصيفة، فقال: أحسنتَ، إن السائب قال إحدى وعشرين، قال محمد: أو قلت لإحدى وعشرين، قال أبو بكر: هذا حديث حسن لو كان عند علي بن مديني لفرح به إلا إنه قال: ابن أخت السائب.
.
কিন্তু যেহেতু বিষয়টি কোন ইতিহাস বা সাধারণ তথ্য নয়; বরং এটি একটি হাদীস যার মাধ্যমে অন্য সহীহ হাদীসকে চ্যালেঞ্জ করা হচ্ছে। তাই প্রথমেই প্রমাণিত হতে হবে যে,
.
১. ‘আল ফাওয়াইদ’ নামে আবু বকর নাইসাবুরী কোন কিতাব লিখেছেন কিনা? লিখে থাকলে এই পাণ্ডলিপিটিই তার রচিত কিতাব কিনা? এ ক্ষেত্রে পাণ্ডলিপি যাচাই-সম্পাদনা বিষয়ক যাবতীয় শর্ত এতে বিদ্যমান রয়েছে কিনা?
.
২. সংরক্ষিত পা-ুলিপি থেকে যিনি এ কপিটি প্রস্তুত করেছেন তার বিশ্বস্ততা ও আমানতদারী এবং এ কপিটি তিনি যথাযথ প্রস্তুত করেছেন কিনা এ বিষয়ক কোন তথ্য আমাদের কাছে নেই।
.
৩. পা-ুলিপি থেকে প্রস্তুত করা কপি ও আলবানী সাহেবের উদ্ধৃত বর্ণনায় শব্দের তারতম্য রয়েছে। কিন্তু এ তারতম্য কিভাবে সৃষ্টি হল তাও আমাদের জানা নেই।
.
৪. এ সবকিছুর পরও যদি এ বর্ণনাকে গ্রহণযোগ্য বিবেচনা করা হয় তবুও কয়েকটি কারণে এটি প্রশ্নবিদ্ধ :
.
ক. ২০ রাকাতের হাদীস ইয়াযিদ ইবনে খুসাইফা থেকে বর্ণনা করেছেন দু‘জন। ইবনু আবী যীব ও মুহাম্মদ ইবনে জাফর। আর এখানে ইসমাঈল ইবনে উমাইয়্যা একা বলেন ২১ রাকাত।
.
খ. তাদের দু‘জনের বর্ণনা এসেছে নিশ্চয়তাবোধক শব্দে। আর ইসমাঈলের বর্ণনায় এসেছে حَسِبْتُ (আমি ধারণা করেছি) তথা অনিশ্চয়তাবোধক শব্দ।
.
গ. তাদের দুজনের বর্ণনা তাহদীস বা রিওয়াহ, আর এটি হল মুযাকারা বা প্রশ্নের জবাব।
এখানে এ কথাও স্পষ্ট থাকা চাই যে, ২১ রাকাতের বর্ণনাটি তো লা-মাযহাবী বন্ধুদের মতানুসারে ২৩ রাকাতের বর্ণনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয় না। কারণ, তারা বলে থাকেন বিতর এক রাকাতও পড়া যায়, তিন রাকাতও পড়া যায়। তাহলে মূল তারাবীহ ২০ রাকাতই প্রমাণিত হলো। ফলে হাদীসটি মুযতারিব থাকল না। (দলীলসহ নামাযের মাসায়েল বার্ধিত সংস্করণ পৃ ৪০০; ‘ফসলুল খিতাব ফি বয়ানি আদাদি রাকাআতি সালাতিত তারাবীহ ফি যামানি উমারাবনিল খাত্তাব’ ড. কামাল কালিমী)। আমি (আলবানী রহ.) বলি, এই বর্ণনাটির সনদ সহীহ।
.
লক্ষ করুন, এখানে স্বয়ং মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফ (আলবানী সাহেব যার সূত্রে ১১ রাকাত সহীহ বলে দাবী করেছেন) সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, ইয়াযীদ ইবনে খুসাইফা সায়েব ইবনে ইয়াযীদ থেকে ২১ রাকাতের বর্ণনা শুনেছেন। আর এ বর্ণনা উল্লেখ করে আলবানী রহ. বলেছেন, এর সনদ সহীহ।
.
তাহলে ফলাফল দাঁড়াল এই, মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফের সাক্ষ্য অনুযায়ী ইয়াযীদ ইবনে খুসাইফার ২১ রাকাতের বর্ণনা সহীহ এবং সেটি আলবানী রহ. এর নিকটেও সহীহ।
.
আলবানী রহ. মূলত ইয়াযীদ ইবনে খুসাইফার বর্ণনায় ইযতিরাব প্রমাণ করতে গিয়ে বর্ণনাটি উল্লেখ করেছেন। কিন্তু এটি যে তাঁর মতের বিরুদ্ধে এভাবে দলীল হয়ে দাঁড়াবে তিনি হয়তো সেটা টের পাননি।
.
এ পর্যন্ত আমরা যা আলোচনা করেছি তা ছিল ইয়াযীদ ইবনে খুসাইফার বর্ণনা সংশ্লিষ্ট আলোচনা (হযরত উমর রা. এর যুগের ২০ রাকাত তারাবীহ সংক্রান্ত ইয়াযীদ ইবনে খুসাইফার বর্ণনার সমর্থনে আরো ছয়টি বর্ণনা রয়েছে। দুইটি মুত্তাসিল বর্ণনা, অর্থাৎ ইবনু আবি যুবাব ও আবুল আলিয়ার বর্ণনা। আর চারটি সহীহ মুরসাল বর্ণনা, অর্থাৎ তাবেয়ী ইয়াহইয়া ইবনে সাঈদ আল আনসারী, তাবেয়ী আব্দুল আযীয ইবনে রুফাই, তাবেয়ী ইয়াযীদ ইবেন রুমান ও তাবেয়ী মুহাম্মদ ইবনে কাআব আল কুরাযীর বর্ণনা। [বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন, দলীলসহ নামাজের মাসায়েল বর্ধিত সংস্করণ পৃষ্ঠা নং ৪০৮-৪১৭])।
সামনে আলবানী রহ. এর অবশিষ্ট ৬ টি দলীল যাচাইয়ের চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।
.
.

ঘরের মহিলাদের নিয়ে হযরত উবাই ইবনে কা‘ব রা. এর নামাজ পড়ানো সংক্রান্ত বর্ণনা
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷
.
নং দলীল:
.
عن جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ: جَاءَ أُبَيُّ بْنُ كَعْبٍ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنْ كَانَ مِنِّي اللَّيْلَةَ شَيْءٌ يَعْنِي فِي رَمَضَانَ، قَالَ: > وَمَا ذَاكَ يَا أُبَيُّ؟ ، قَالَ: نِسْوَةٌ فِي دَارِي، قُلْنَ: إِنَّا لَا نَقْرَأُ الْقُرْآنَ فَنُصَلِّي بِصَلَاتِكَ، قَالَ: فَصَلَّيْتُ بِهِنَّ ثَمَانَ رَكَعَاتٍ، ثُمَّ أَوْتَرْتُ، قَالَ: فَكَانَ شِبْهُ الرِّضَا وَلَمْ يَقُلْ شَيْئًا.

অর্থ: জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ রা. বলেন, উবাই ইবনে কা‘ব রা. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে এসে বললেন, ইয়া রাসূলল্লাহ! আজ রাতে অর্থাৎ রমজান মাসে আমার একটি বিষয় সংঘটিত হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, কী বিষয়? তিনি বললেন, আমার ঘরে কয়েকজন মহিলা রয়েছেন, তারা বলল, আমরা কুরআন পড়তে পারি না, তাই আপনার পিছনে নামাজ পড়তে চাই। আমি তাদেরকে ৮ রাকাত নামাজ ও বিতর পড়ালাম। বর্ণনাকারী বলেন, এ কথা শুনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিছু বললেন না, অনেকটা সন্তুষ্টির মতই মনে হল। [মুসনাদে আবু ইয়ালা, হাদীস নং : ১৭৯৫ (১৮০১); এ ছাড়া হাদীসটি আরো যে সকল গ্রন্থে রয়েছে: ক্বিয়ামুল লাইল, পৃ: ৯০ (২১৭); আওসাত তাবারানী ৩৭৩১; মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ২১০৯৮]
.
এ বর্ণনায় ঈসা ইবেন জারিয়ার মত একজন মুনকারুল হাদীস রাবী রয়েছেন। তথাপি এটি মুসানাদে আহমদ ও তাবারানীর আওসাত গ্রন্থে উদ্ধৃত হয়েছে, সেখানে রমযানের কোন কথাই নেই। ‘অর্থাৎ রমজান মাসে’ এ অংশটুকু শুধু মুসনাদে আবু ইয়ালাতে রয়েছে। অবশ্য কিয়ামুল লাইল এর বর্ণনায় আছে, ‘হযরত উবাই রা. রমযানে আসলেন’।
উপরোক্ত বর্ণনাগুলোর আলোকে অনুমিত হয় যে, ঈসা ইবনে জারিয়া কখনো রমযানে আসার কথা বলেছেন; কখনো বলেছেন, ‘অথাৎ রমযান মাসে’; আবার কখনো তিনি রমযানের প্রসঙ্গই বাদ দিয়ে দিয়েছেন। এতে করে তার স্মৃতিশক্তির দুর্বলতাই বেশী করে প্রমাণিত হয়। কেননা হাদীসটি কেবল তার সূত্রেই বর্ণিত হয়েছে। তাই রমযানের কথাটি ‘মুদরাজ’ তথা পরবর্তীতে যুক্ত শব্দ বলেই মনে হয়।
তাছাড়া কিয়ামুল লাইল এর সূত্রে মুহাম্মদ ইবেন হুমাইদ রাযী আছেন, যার ব্যাপারে ইমাম বুখারী বলেছেন, فيه نظر ‘তার ব্যাপারে আপত্তি আছে’। ইবনে হাজার বলেছেন, ‘তিনি দুর্বল হাফেজ’ ও যাহাবী রহ. বলেছেন, ‘তাকে বর্জন করাই শ্রেয়’। সুতরাং ‘রমজানে আসলেন’ কথাটি তার বৃদ্ধিও হতে পারে। [দেখুন দলীলসহ নামাযের মাসায়েল বর্ধিত সংস্করণ পৃ ৪৪৩] শায়খ শুআইন আরনাঊত মুসনাদে আহমদ এর টীকায় এ বর্ণনাটিকে ঈসা ইবনে জারিয়ার কারণে দুর্বল বলেছেন।
.
জবাব:
.
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উল্লিখিত হাদীসে নীরব থেকে মৌন সমর্থন করেছেন। তবে এই সমর্থন অবশ্যই ৮ রাকাতে সীমাবদ্ধ হওয়াকে বুঝায় না। স্বয়ং বর্ণনাকারী উবাই ইবনে কা‘ব রা.ও এ কথা বোঝেননি। তাই তিনি উমর রা. এর খেলাফত কালে প্রথম দিকে ১১ রাকাত পড়েছেন এবং পরবর্তীতে কোন সঙ্গত কারণে ২০ রাকাত পড়েছেন। বিতর কখনো ৩ রাকাত আবার কখানো ১ রাকাত পড়েছেন। কোন একজন সাহাবীও তাঁর এ বিষয়টির বিরোধিতা করেননি।
.
এ জবাব তো তখন, যদি আমরা বর্ণনাটিকে সহীহ ধরে নেই। বাস্তবে বর্ণনাটি সহীহ নয়। কারণ, এ বর্ণনার সূত্রে একজন বর্ণনাকারী আছেন ঈসা ইবনে জারিয়া। যিনি দুর্বল। হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী বলেন,
.
قال ابن أبي خيثمة عن ابن معين ليس بذاك، لا أعلم أحدا روى عنه غير يعقوب، وقال الدوري عن ابن معين: عنده مناكير، حدث عنه يعقوب القمي وعنبسة قاضي الري … وقال الآجري عن أبي داود: منكر الحديث، وقال في موضع آخر: ما أعرفه، وروى مناكير، … وذكره الساجي والعقيلي في الضعفاء، وقال ابن عدي: أحاديثه غير محفوظة.
.
অর্থ: ইবনে আবী খাইসামা বর্ণনা করেছেন, ইয়াহইয়া ইবনে মাঈন বলেছেন, ঈসা ইবনে জারিয়া তেমন গ্রহণযোগ্য নয়। তার থেকে ইয়াকুব ছাড়া কেউ বর্ণনা করেছেন বলে আমার জানা নেই।
.
দূরী বর্ণনা করেন, ইয়াহইয়া ইবনে মাঈন বলেন, তাঁর (ঈসা ইবনে জারিয়ার) কাছে অনেক আপত্তিকর হাদীস রয়েছে যা তার থেকে ইয়াকুব কুম্মি ও রায় এলাকার বিচারক আনবাসা বর্ণনা করেছেন।
.
আজুররী বলেন, আবু দাউদ রহ. বলেছেন, ঈসা ইবনে জারিয়া ‘মুনকারুল হাদীস’ অর্থাৎ আপত্তিকর হাদীস বর্ণনাকারী।
.
আবু দাউদ রহ. আরেক জায়গায় বলেছেন, আমি তাকে চিনি না। তিনি আপত্তিকর হাদীস বর্ণনা করেছেন।
.
সাজী ও উকাইলী তাকে দুর্বল বর্ণনাকারীদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন।
.
ইবনে আদী বলেন, তার হাদীসগুলো সংরক্ষিত নয়। (অর্থাৎ ভুল ও আপত্তিকর হওয়ায় বর্জনযোগ্য)। [তাহযীবুত তাহযীব ৮/২০৭]
.
যাহাবী রহ. বলেন,
.
وقال النسائي: منكر الحديث، وجاء عنه: متروك.
.
অর্থ: নাসাঈ রহ. বলেন, ঈসা ইবনে জারিয়া ‘মুনকারুল হাদীস’ (অর্থাৎ আপত্তিকর হাদীস বর্ণনাকারী)। ইমাম নাসাঈ থেকে আরেক বর্ণনায় আছে, তিনি মাতরুক তথা তার হাদীস বর্জনযোগ্য। [মিযানুল ই‘তিদাল ৩/৩১১] (ঈসা ইবনে জারিয়া সম্বন্ধে উল্লিখিত ছয়জন ইমামের সমালোচনার বিপরীতে শুধু ইমাম আবু যুরআ বলেছেন ‘তার মধ্যে কোন অসুবিধা নেই’ এবং ইবনে হিব্বান তাকে ‘সিকাত’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। হাদীস শাস্ত্রের মূলনীতি অনুসারে ব্যাখ্যা সম্বলিত সমালোচনা অগ্রগণ্য হয়ে থাকে যদি সেই জারহে অন্য কোন ত্রুটি না থাকে। ফলে ঈসা ইবনে জারিয়া যঈফ প্রমাণিত হন। বিশেষত নাসায়ী ও আবূ দাঊদ বলেছেন, ‘মুনকারুল হাদীস’।
তাছাড়া তার বিষয়ে এতো সমালোচনার বিপরীতে আবু যুরআর প্রশংসামূলক শব্দ মোটেই শক্তিশালী নয়। আর ইবনে হিব্বানের ‘সিকাত’ গ্রন্থে উল্লেখ করাও এমন সমালোচনার মুখে বিশেষ গুরুত্ব রাখে না।
সুতারাং হায়ছামী ও আলবানী সাহেব তার হাদীসকে হাসান বললেই এটা হাসান হয়ে যাবে না। একইভাবে ‘মিযানুল ইতিদাল’ গ্রন্থে যাহাবী রহ. এর সনদকে ওয়াসাত বা মধ্যম স্তরের বলে যে মন্তব্য করেছেন, পূর্ববর্তী মুহাদ্দিসগণের মন্তব্যগুলো সামনে রাখলে সেটিও সঠিক বলে মনে হয় না। [দেখুন, দলীলসহ নামাযের মাসায়েলবর্ধিত সংস্করণ ৪৪২-৪৪৩]
এজন্যই হাফেজ যাহাবী রহ. এর সনদকে মধ্যম পর্যায়ের বললেও নিমাভী রহ. তার এ মতকে সঠিক নয় বলে মন্তব্য করেছেন এবং বলেছেন, এর সনদ মধ্যম পর্যায় থেকেও নিচে। [দেখুন: আসারুস সুনান পৃষ্ঠা ২০০ টীকা নং ২৭৭ মাকতাবা হক্কানিয়া]
এ সব বর্ণনায় দুর্বলতা কথা জানার পরও কেউ যদি এ ক্ষেত্রে হাইসামী ও আলবানী সাহেবের হাসান বলার বরাত দেয় তাহলে তা হবে অন্ধ তাকলীদ।
বিশেষ করে আলবানী সাহেবের কিতাব পড়ার যাদের অভ্যাস আছে তারা যদি ইনসাফের সাথে বলতেন, নিজের বিপক্ষের কোন হাদীসে এরূপ বর্ণনাকারী থাকলে আলবানী সাহেব এখানে কি বলতেন?!
.
ঈসা ইবনে জারিয়া সম্পর্কে স্বয়ং আলবানী রহ. এর কিছু বক্তব্য শুনুন,
.
ক.‘ঈসা ইবনে জারিয়ার মধ্যে দুর্বলতা রয়েছে’ দেখুন, ‘সিলসিলাতুল আহাদিসিস্ যঈফা’ হাদীস নং ৬২৬৪
.
খ. ইমাম হাইসামী রহ. কর্তৃক ইয়াকুব কুম্মি এবং তার শায়খ ঈসা ইবনে জারিয়াকে নির্ভরযোগ্য বলার প্রতিবাদ করে আলবানী সাহেব বলেন, ‘ইয়াকুব কুম্মি এবং তার শায়খ ঈসা ইবনে জারিয়াকে নির্ভরযোগ্য বলা বৈধ হবে না। কারণ তাদের ব্যাপারে প্রসিদ্ধ মতবিরোধ রয়েছে। সর্বোচ্চ এতটুকু বলা যায়, তাদের হাদীস হাসান হওয়ার সম্ভাবনা রাখে’। দেখুন, ‘সিলসিলাতুল আহাদিসিস্ যঈফা’ হাদীস নং ৬৭২২
.
গ.‘সিলসিলাতুল আহাদিসিস্ সহীহা’ গ্রন্থের ১৭৬০ নং হাদীস উল্লেখ করে বলেন, ‘এই সনদটি হাসান হওয়ার সম্ভাবনা রাখে, কারণ এর বর্ণনাকারীগণ নির্ভরযোগ্য, কিন্তু ঈসা ইবনে জারিয়া বিতর্কিত বর্ণনাকারী’। এরপর তিনি ইমাম বূসিরী রহ. কর্তৃক ঈসা ইবনে জারিয়াকে নির্ভরযোগ্য বলার প্রতিবাদ করে বলেন, ‘তার এ কথায় আপত্তি আছে, যা অস্পষ্ট নয়’।
.
ঘ.‘সিলসিলাতুল আহাদিসিস্ সহীহা’ গ্রন্থের ১৭৬০ নং হাদীসের আলোচনায় ইমাম মুনযিরী কর্তৃক এক হাদীসের সনদকে ‘জায়্যিদ’ বলার প্রতিবাদ করে বলেন, ‘এর সনদ কেবল হাসান হওয়ার সম্ভাবনা রাখে, কারণ ঈসা ইবনে জারিয়া এবং ইয়াকুব ইবনে আব্দুল্লাহ কুম্মি সম্পর্কে প্রসিদ্ধ আপত্তি রয়েছে’।
.
ঙ.‘সিলসিলাতুল আহাদিসিস্ সহীহা’ গ্রন্থের ৬৮৭৩ নং হাদীসের আলোচনায় বলেন, ‘ঈসা ইবনে জারিয়া হচ্ছেন এ হাদীসের আপত্তি (দুর্বলতার) কারণ। কারণ ইবনে হিব্বান ছাড়া তাকে কেউ নির্ভরযোগ্য বলেননি; বরং সকলেই তাকে দুর্বল বলেছেন’।
.
উল্লেখ্য যে, আলবানী সাহেব যেখানে বললেন, ‘তাদের হাদীস হাসান হওয়ার সম্ভাবনা রাখে’। এর অর্থ হল যদি এর কোন সমর্থক বর্ণনা পাওয়া যায় তাহলে হাসান হবে। অথচ আলোচ্য হাদীসের উপযুক্ত কোন সমর্থক তো পাওয়াই যায় না, উপরন্তু এটির বিপরীত বর্ণনা ও আমল রয়েছে। তাহলে আলোচ্য হাদীসটি আলবানী সাহেবের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কোন পর্যায়ের হবে তা সহজেই বোধগম্য।)
.
অতএব, ইয়াযীদ ইবনে খুসাইফা যাকে সকল ইমামগণ প্রমাণ হিসাবে গ্রহণ করেছেন তাকে পরিত্যাগ করে ঈসা ইবনে জারিয়ার মত বর্ণনাকারীকে গ্রহণ করা খুবই বিস্ময়কর ব্যাপার। যাকে ইয়াহইয়া ইবনে মাঈন, আবু দাঊদ, সাজী, উকাইলী, নাসাঈ ও ইবনে আদী দুর্বল বলে আখ্যায়িত করেছেন।
.
নং দলীল:
.
জূরী রহ. এর সূত্রে বর্ণিত, ইমাম মালেক রহ. এর মাযহাব সর্বোচ্চ ১৩ রাকাত!
.
ইমাম সুয়ূতী রহ. বলেন,
.
قَالَ الجوري مِنْ أَصْحَابِنَا: عَنْ مالك أَنَّهُ قَالَ: الَّذِي جَمَعَ عَلَيْهِ النَّاسَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ أَحَبُّ إِلَيَّ، وَهُوَ إِحْدَى عَشْرَةَ رَكْعَةً، وَهِيَ صَلَاةُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قِيلَ لَهُ: إِحْدَى عَشْرَةَ رَكْعَةً بِالْوَتْرِ؟ قَالَ: نَعَمْ وَثَلَاثَ عَشْرَةَ قَرِيبٌ، قَالَ: وَلَا أَدْرِي مِنْ أَيْنَ أُحْدِثَ هَذَا الرُّكُوعُ الْكَثِيرُ؟
.
অর্থ: আমাদের শাফিয়ী মাযহাবের অনুসারী জূরী রহ. বর্ণনা করেন যে, মালেক রহ. বলেছেন, উমর রা. সকলকে যে বিষয়ের উপর ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন তা আমার নিকট খুবই পছন্দনীয়। তা হচ্ছে ১১ রাকাত। এটিই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নামাজ। ইমাম মালেক রহ.কে জিজ্ঞাসা করা হল, ১১ রাকাত কি বিতরসহ? তিনি বললেন হ্যাঁ, ১৩ রাকাতও কাছাকাছি। তিনি বলেন, তবে আমার জানা নেই যে, (এর চেয়ে অতিরিক্ত) এত বেশি রাকাত কোথা থেকে আবিষ্কার করা হল? [আলহাভী লিল্ ফাতাওয়া ১/৪১৭]
.
আলবানী রহ. মনে করেন, এর মাধ্যমে ইমাম মালেক রহ. স্পষ্টভাবে ২০ রাকাত তারাবীহ অস্বীকার করেছেন। তদ্রƒপ মালেকী মাযহাবের ইমাম ইবনুল আরাবীও এ বিষয়ে তার অনুসরণ করেছেন। [দেখুন, আরিযাতুল আহওয়াযী ৪/১৯ দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ]
.
জবাব:
.
প্রথম কথা হচ্ছে, এই বর্ণনাটি ‘মুনকাতি’ তথা সূত্রবিচ্ছিন্ন। কারণ, ইমাম মালেক রহ. মৃত্যু বরণ করেছেন ১৭৯ হিজরীতে (দেখুন তাযকিরাতুল হুফ্ফাজ ১/১৫৭)।
.
আর জূরী রহ. যার উপরোক্ত বক্তব্য উল্লেখ করেছেন সুবকী রহ. এবং তার থেকে বর্ণনা করেছেন সুয়ূতী রহ.। তিনি হচ্ছেন আবু বকর নাইসাবুরীর শাগরিদ। তার জন্মই হচ্ছে ২৩৮ হিজরীতে (দেখুন, ইমাম সুবকী কৃত তাবাকাতুশা শাফিইয়্যাহ ৩/৪৫৭)। তাহলে ২৩৮ হিজরীতে জন্ম নেওয়া আবু বকর নাইসাবুরী এর শাগরিদ জুরি কিভাবে ১৭৯ হিজরীতে মৃত্যু বরণ করা ইমাম মালেক থেকে বর্ণনা করেন?!
.
উল্লেখ্য যে, আলবানী রহ. তার ‘সালাতুত্ তারাবীহ’ পুস্তিকার ৭৯ নং পৃষ্ঠার ১ নং টীকায় জূরী নামে তিনজন ব্যক্তির উল্লেখ করে বলেছেন, সুয়ূতী রহ. এই তিন ব্যক্তির কাকে বুঝিয়েছেন তা আমার সুনির্দিষ্টভাবে জানা নেই।
.
বাস্তবে আমাদের আলোচ্য জূরী এই তিনজনের কেউ নয়; বরং ইমাম সুবকী এর বর্ণনা অনুযায়ী এই জূরী হচ্ছেন আলী ইবনে হুসাইন কাজী আবুল হাসান জূরী। যিনি পারস্যের অন্তর্গত জুর নামক এলাকার দিকে সম্পৃক্ত। তিনি উঁচু মাপের একজন ইমাম ছিলেন। আবু বকর নাইসাবুরীসহ একদল মুহাদ্দিসীনে কেরামকে পেয়েছেন এবং তাদের থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন। তার উল্লেখযোগ্য রচনাবলীর মধ্যে রয়েছে ‘কিতাবুল মুরশিদ ফি মুখতাসারিল মুযানী’। সুবকী আরো বলেন, ইবনুর রিফআহ ও আমার পিতা তক্বী উদ্দিন সুবকী বিভিন্ন সূত্রে তাঁর থেকে প্রচুর বর্ণনা করেন। দেখুন : তাবকাতুশা শাফিইয়্যাহ ৩/৪৫৭
.
ইমাম যাহাবী রহ.ও ‘আল মুশতাবিহ ফি আসমাইর রিজাল’ নামক গ্রন্থে তার আলোচনা করে বলেছেন, তিনি শাফেয়ী মাযহাবের একজন ফক্বীহ। ফিকহ শাস্ত্রে তার ‘আল মুওজায’ নামক দুই খন্ডের একটি কিতাব রয়েছে। তিনি পারস্যের জুর নামক এলাকার। (দেখুন : ১/১৮৭, টীকা নং ২)
.
তাছাড়া ইমাম জূরী রহ.ও তো নিজের বর্ণিত ইমাম মালেক রহ. মত প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি ইমাম মালেক রহ. এর এ মতটি উল্লেখ করে তা প্রত্যাখ্যান করে লিখেছেন,
.
وقال الجوري : إن عدد الركعات في شهر رمضان لا حد له عند الشافعي لأنه نافلة
.
অর্থ: তবে ইমাম শাফেয়ী রহ. এর নিকট রমযানের তারাবীর ক্ষেত্রে কোন রাকাত সংখ্যা নির্ধারিত নেই, কারণ তা নফল নামাযের অন্তর্ভুক্ত। [দেখুন, আল হাভী লিল ফাতাওয়া ১/৩৩৭]
.
দ্বিতীয় কথা হচ্ছে, ‘আমার জানা নেই যে, ১১ বা ১৩ রাকাত থেকে অতিরিক্ত এত বেশি রাকাত কোথা থেকে আবিষ্কার হল?’ – এ কথা ইমাম মালেক থেকে একটি অসম্ভব বিষয়। কারণ,
.
ক. ইয়াযীদ ইবনে রুমান থেকে স্বয়ং ইমাম মালেক রহ. বর্ণনা করেছেন যে, হযরত উমর রা. এর যুগে রমজান মাসে সকলে ২৩ রাকাত তারাবীহ পড়তেন। (দেখুন, মুআত্তা মালিক, হাদীস নং ৩৮০)। আরবী পাঠঃ
.
عَنْ مَالِك عَنْ يَزِيدَ بْنِ رُومَانَ أَنَّهُ قَالَ كَانَ النَّاسُ يَقُومُونَ فِي زَمَانِ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ فِي رَمَضَانَ بِثَلَاثٍ وَعِشْرِينَ رَكْعَةً
.
খ. ইয়াহইয়া ইবনে সাঈদ থেকেও স্বয়ং ইমাম মালেক রহ. বর্ণনা করেন যে, উমর রা. এক ব্যক্তিকে ২০ রাকাত তারাবীহ পড়ানোর নির্দেশ প্রদান করেন। (দেখুন, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং : ৭৭৬৪)।
.
(আমাদের দেশের বিখ্যাত আহলে হাদীস আলেম শায়খ আকরামুজ্জমান বিন আব্দুস সালাম তাউহীদ পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত সহীহ বুখারীর অনুবাদের ২/৩৪৩ নং পৃষ্ঠায় টীকায় ইয়াহইয়া ইবনে সাঈদ আনসারীর এ বর্ণনাকে জাল বানানোর জন্য লিখেন, ‘তা ছাড়া কেউ কেউ ইয়াহইয়া ইবনে সাঈদকে মিথ্যাবাদী বলেছেন, যেমন ইমাম আবু হাতেম রহ. বলেন, ইয়াহইয়া ইবনে সাঈদ কর্তৃক কোন কথাই সত্য নয়; বরং প্রত্যাখ্যাত। কারণ, সে হল মিথ্যাবাদী।’
তার এ কথার বরাত হিসাবে তিনি ‘আল জারহু ওয়াত তাদীল’ ও ‘তাহযীবুত তাহযীব’ এর নাম উল্লেখ করেছেন। এখানে তিনি কি পরিমাণ জালিয়াতি ও অসত্য কথা বলেছেন দেখুন-
প্রথম কথা হচ্ছে, ইয়াহইয়া ইবনে সাঈদ আনসারী সহীহ বুখারী ও মুসলিম এর রাবী। সহীহ বুখারীর প্রথম হাদীসটিই তার সূত্রে বর্ণিত। তাই ইয়াইয়া ইবনে সাঈদ কর্তৃক কোন কথাই যদি সত্য না হয়, সবই জাল হয়, তাহলে তো সহীহ বুখারীর প্রথম হাদীসসহ সহীহ বুখারী ও মুসলিম এর অনেক হাদীস জাল!
দ্বিতীয় কথা হচ্ছে, তিনি তাঁকে মিথ্যাবাদী বলে যে দুটি কিতাবের বরাত দিয়েছেন।সেখানে এ ধরণের কোন কথা তো নেই, থাকতেও পারে না; বরং আছে সম্পূর্ণ উল্টা কথা। (দেখুন, আল জারহু ওয়াত তা‘দীল ৯/১৪৯; তাহযীবুত তাহযীব ১১/১৯৫)
শায়খ আলবানী রহ. তো এ বর্ণনাটিকে সর্বোচ্চ মুনকাতি তথা সূত্রবিচ্ছিন্ন বলেছিলেন, কিন্তু এ কি করলেন আমাদের দেশের শায়খ আকরামুজ্জামান সাহেব?)
.
আরবী পাঠ:
.
حَدَّثَنَا وَكِيعٌ ، عَنْ مَالِكِ بْنِ أَنَسٍ ، عَنْ يَحْيَى بْنِ سَعِيدٍ، أَنَّ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ أَمَرَ رَجُلاً يُصَلِّي بِهِمْ عِشْرِينَ رَكْعَةً.
.
উল্লিখিত দুই বর্ণনা সম্পর্কে আলবানী রহ. এর আপত্তি:
.
আলবানী রহ. তার ‘সালাতুত তারাবীহ’ পুস্তিকার ৫২-৫৫ নং পৃষ্ঠায় বলেছেন যে, এ উভয় বর্ণনা ‘মুনকাতি’ তথা বিচ্ছিন্ন ও মুরসাল। কারণ, ইয়াযীদ ইবনে রুমান এবং ইয়াহইয়া ইবনে সাঈদ উভয়ের কেউ উমর রা. কে পাননি। তাই উভয় বর্ণনা দুর্বল।
(এখানেও আলবানী সাহেব উসূলে হাদীসের ভুল ব্যবহার করেছেন। যা সামনে আলোচনা করা হবে। ইনশা আল্লাহ। আশ্চর্যের বিষয় হল, এখানে যে দুটি বর্ণনা মুরসাল বা সূত্রবিচ্ছিন্ন বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন- তা হল তাবেয়ী সাহাবীর আমল বর্ণনা করেছেন। আর এর পক্ষে মুরসাল ও মুত্তাসিল অনেক শক্তিশালী সমর্থক বর্ণনাও রয়েছে। কিন্তু বুকে হাত বাঁধার বিষয়ে তাউসের মুরসাল বর্ণনাটি যেখানে তাবেয়ী নবীজীর আমল বর্ণনা করেছেন- সেটি জোরের সাথে গ্রহণ করে নিয়েছেন। অথচ এর পক্ষে বিশেষ কোন শক্তিশালী সমর্থক বর্ণনাও নেই।)
.
জবাব:
.
ইলমে হাদীস এর সাথে যাদের ন্যূনতম সম্পর্ক আছে তাদের সকলের জানা যে, সব মুরসাল বর্ণনা পরিত্যাজ্য নয়। কোন মুরসাল বর্ণনার বক্তব্য যদি সকলের আমলের মাধ্যমে অনুসৃত হয় তাহলে অবশ্যই গ্রহণযোগ্য এবং তা দলীল হওয়ার উপযুক্ত।
.
ইবনে তাইমিয়া বলেন,
.
وَالْحَدِيثُ الْمُرْسَلُ الَّذِي لَهُ مَا يُوَافِقُهُ ، أَوْ الَّذِي عَمِلَ بِهِ السَّلَفُ حُجَّةٌ بِاتِّفَاقِ الْفُقَهَاء
.
অর্থ: যে মুরসাল বর্ণনার পক্ষে কোন হাদীস সহীহ রয়েছে অথবা সে অনুযায়ী সলফের আমল রয়েছে তা সকলের নিকট দলীল হিসাবে গ্রহণযোগ্য। [ইক্বামাতুদ দলীল আলা ইবতালিত তাহলীল ; ১/৭৫]
.
(মুরসাল বর্ণনাকে আলবানী রহ.ও বিভিন্ন সময় প্রমাণ হিসাবে গ্রহণ করেছেন:
.
ক. বুকের উপর হাত বাধার মাসআলায় আলবানী রহ. ‘ইরওয়াউল গালিল ফি তাখরীজি আহাদীসি মানারিস সাবিল’ (২/৭১) গ্রন্থে মুরসাল বর্ণান দ্বারা প্রমাণ পেশ করেছেন। তাউস থেকে বর্ণিত, ‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ডান হাত বাম হাতের উপর রাখতেন এরপর উভর হাত বুকের উপর বাধতেন’। এই মুরসাল বর্ণনাটি প্রমাণ হিসাবে পেশ করে বলেছেন, ‘এ হাদীসটি যদিও মুরসাল, তথাপি এটি সকলের নিকট প্রমাণ হওয়ার যোগ্য’। আরো দেখুন, ‘আসলু সিফাতি সালাতিন নাবিয়্যি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ (১/২১৭)
.
খ. তদ্রপ ইমামের পিছনে কেরাত পড়ার মাসাআলায়ও তিনি মুরসাল বর্ণনা দ্বারা প্রমাণ পেশ করেছেন। ‘আসলু সিফাতি সালাতিন নাবিয়্যি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ এর ৩৩৩ নং পৃষ্ঠায় মুক্তাদীর সূরা ফাতেহা পড়ার বৈধতার প্রমাণ পেশ করতে গিয়ে বলেন,
.
ويدل على ذلك: ما رواه ابن أبي شيبة مرسلاً: أن رسول الله صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قال لأصحابه: هل تقرؤون خلف إمامكم؟. قال بعض: نعم. وقال بعض: لا. فقال: إن كنتم لا بدَّ فاعلين؛ فليقرأ أحدكم بـ: {فاتحة الكتاب} في نفسه
.
অর্থ: এ বিষয়ের প্রমাণ হচ্ছে মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবার এর ই মুরসাল বর্ণনা, ‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার সাহাবীদের বললেন, তোমরা কি ইমামের পিছনে কেরাত পড়? কেউ বলল, হ্যাঁ। কেউ বলল, না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমাদের কেউ যদি পড়তেই চায় তাহলে যেন সূরা ফাতেহা মনে মনে পড়ে।
এ ছাড়াও তিনি এ গন্থের বিভিন্ন জায়গায় মুরসাল বর্ণনা প্রমাণ হিসাবে পেশ করেছেন। দেখুন পৃষ্ঠা নং ৩৪১, ৩৪৫, ৩৫৬ ইত্যাদি। বরং মুরসালকে প্রমাণ হিসাবে গ্রহণ করার জন্য তিনি যে শর্ত আরোপ করেছেন সে শর্ত অনুযায়ীও আমাদের আলোচ্য মুরসাল বর্ণনাগুলো সহীহ)
.
আলবানী রহ. এর অনুমান নির্ভরতা দেখুন !
.
আলবানী রহ. এই বর্ণনাগুলো উল্লেখ করে লিখেছেন, ইয়াযীদ ইবনে রুমান ও ইয়াহইয়া ইবনে সাঈদ এর দুই মুরসাল বর্ণনার ক্ষেত্রে এ কথা বলা কোনভাবেই বৈধ হবে না যে, একটি অপরটির শক্তিসঞ্চারক। কারণ, দুর্বল বর্ণনা পরস্পরে শক্তি সঞ্চারণের জন্য শর্ত হচ্ছে বর্ণনাকারী যে সকল উস্তাদ থেকে হাদীসটি বর্ণনা করেছে তারা ভিন্ন হতে হবে। আর এখানে সেটি প্রমাণিত নয়। বরং প্রবল ধারণা তো এটিই যে, তারা উভয়ে একই উস্তাদ থেকে হাদীসটি শুনেছেন এবং হতে পারে সে উস্তাদ অজ্ঞাত বা দুর্বল, যাকে প্রমাণ হিসাবে পেশ করা যায় না। আর যদি উভয়ে ভিন্ন উস্তাদ থেকেও হাদীস শুনে থাকে তাহলেও হতে পারে তারা দুর্বল অগ্রহণযোগ্য। এ সব কিছুরই সম্ভাবনা ও সংশয় রয়েছে। আর সন্দেহ-সংশয় ও সম্ভাব্যতা থাকা অবস্থায় তা দিয়ে তো প্রমাণ পেশ করা যায় না।
.
জবাব:
.
এ কথাগুলো নিছক মনের কল্পনা। যদি এমন কল্পনাকে গ্রাহ্য করা হয় তাহলে তো শরীয়তের সুপ্রমাণিত বিষয়াদিও এমন অবান্তর কল্পনার কারণে অগ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হবে।
.
তাছাড়া আলবানী রহ. সে সকল সম্ভাবনার কথা বলেছেন তাতে আমাদের এ আপত্তি করার অবশ্যই সুযোগ আছে যে, এখানে ইয়াহইয়া ইবনে সাঈদ সায়েব ইবনে ইয়াযীদ থেকে বর্ণনাকারীদের একজন। তাই প্রবল ধারণা তো এটাই যে ইয়াহইয়া ইবনে সাঈদ এ বর্ণনাটিও সায়েব ইবনে ইয়াযীদ থেকে শুনেছেন। ইয়াযীদ ইবনে রুমানের ব্যাপারটিও এমন হতে পারে। এবং উভয় বর্ণনার শুদ্ধতার বিষয়টি সমর্থন করবে ইয়াযীদ ইবনে খুসাইফার ২০ রাকাতের বর্ণনা এবং মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাকে বর্ণিত মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফের ২১ রাকাতের বর্ণনা। গোটা উম্মতের আমলের বা স্বীকারোক্তির মাধ্যমে অনুসরণ করার সমর্থন তো রয়েছেই।
.
.
তারাবীহ এর রাকাত সংখ্যার ব্যাপারে ইমাম মালেক রহ. এর সঠিক মাযহাব
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷
.
ফিকহে মালেকীর প্রসিদ্ধ গ্রন্থ ‘আল মুদাওয়ানা’য় ইবনুল কাসিমের সূত্রে ইমাম মালেক রহ. বলেন,
.
قَالَ مَالِكٌ: بَعَثَ إلَيَّ الْأَمِيرُ وَأَرَادَ أَنْ يُنْقِصَ مِنْ قِيَامِ رَمَضَانَ الَّذِي كَانَ يَقُومُهُ النَّاسُ بِالْمَدِينَةِ، قَالَ ابْنُ الْقَاسِمِ: وَهُوَ تِسْعَةٌ وَثَلَاثُونَ رَكْعَةً بِالْوِتْرِ سِتٌّ وَثَلَاثُونَ رَكْعَةً وَالْوِتْرُ ثَلَاثٌ، قَالَ مَالِكٌ: فَنَهَيْته أَنْ يُنْقِصَ مِنْ ذَلِكَ شَيْئًا، وَقُلْتُ لَهُ: هَذَا مَا أَدْرَكْتُ النَّاسَ عَلَيْهِ وَهَذَا الْأَمْرُ الْقَدِيمُ الَّذِي لَمْ تَزَلْ النَّاسُ عَلَيْهِ.
.
অর্থ: মদীনা মুনাওয়ারায় মানুষ যত রাকাত তারাবীহ পড়ত তা থেকে কিছু কমানো যায় কিনা এ মর্মে আমার নিকট মদীনার তৎকালীন আমীর লোক প্রেরণ করলেন। ইবনুল কাসিম বলেন, তখন মদীনাতে রমযানে ৩৯ রাকাত নামায হত। ৩৬ রাকাত আর বিতর ৩ রাকাত। (৩৬ রাকাতের মধ্যে ২০ রাকাত তারাবীহ আর ১৬ রাকাত নফল)
(সাহাবী যুগের শেষ দিকে মদীনাবাসীগণ যখন দেখলেন মক্কাবাসীগণ বিশ রাকাত তারাবী পড়েন বটে, কিন্তু তারা প্রতি চার রাকাত পর বিশ্রামের জন্য বিরতির সময় তওয়াফ করে অতিরিক্ত ফায়দা লাভ করছেন। তখন থেকে তারা সেখানে প্রত্যেক তারবীহার সময় চার রাকাত বাড়িয়ে নফল পড়তে লাগলেন। এভাবে সেখানে ২০+১৬ = ৩৬ রাকাত পড়ার প্রচলন শুরু হয়ে যায়। কেউ আরো দু’রাকাত যোগ করে ৩৮ রাকাত পড়তে থাকেন। এভাবে তিন রাকাত বেতেরসহ তাদের ৩৯ বা ৪১ রাকাত হতো। [দলীলসহ নামাযের মাসায়েল বর্ধিত সংস্করন পৃষ্ঠা ৪২৬]
এভাবে মদীনায় ২য় হিজরী শতকে তারাবীহ ৩৬ রাকাত ও বিতর তিন রাকাত পড়া হতো। তৃতীয় শতকেও তাই হয়ে থাকবে। হিজরী ৪র্থ শতকে ৩৬ রাকাতের পরিবর্তে তারাবীহ ২০ রাকাতে ফিরে আসে। [আত তারাবীহ আকসারু মিন আলফি আম ফি মাসজিদিন নাবিয়্য সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ শায়খ আতিয়া সালেম পৃষ্ঠা নং ৪১-৪২])
.
ইমাম মালেক রহ. বলেন, আমি কমাতে বারণ করলাম এবং বললাম, আমি সকলকে এভাবেই পেয়েছি, এটিই হচ্ছে সেই পুরানো পদ্ধতি যার উপর আজো মানুষ অবিচল আছে। [আল-মুদাওয়ানা ১/২৮৭]
.
এ বর্ণনাটি একটি স্পষ্ট দলীল যে, ইমাম মালেক রহ. ১১ থেকে অতিরিক্ত রাকাত তারাবীহকে অস্বীকার করেননি এবং সকলে যদি পূর্বসূরিদের থেকে এক পদ্ধতিতে তারাবীহ পড়ে আসতে থাকে তাহলে তাদেরকে সে পদ্ধতি ছেড়ে অন্য কোন পদ্ধতি গ্রহণ করার জন্য বাধ্য করা সমীচীন নয়। কারণ, এর দ্বারা দ্বীনের ব্যাপারে তাদের অনাস্থা ও অস্থিরতাই শুধু বৃদ্ধি পায়।
.
আলবানী রহ. ইমাম মালেক রহ. এর ১১/১৩ রাকাতের যে মাযহাব জূরী নামক শাফেয়ী মাযহাবের এক ব্যক্তির বরাতে উল্লেখ করেছেন এ ব্যাপারে আমরা বলব, এতে কোন সন্দেহ নেই যে, অন্যদের কিতাব থেকে ইমাম মালেক এর মাযহাব বা মত গ্রহণ করার তুলনায় স্বয়ং তাঁর কিতাব মুআত্তা ও তার মাযহাবের কিতাব ‘মুদাওয়ানা’ থেকে তাঁর মাযহাব গ্রহণ করা অধিক যুক্তিযুক্ত। ইবনু দাক্বিকিল ঈদ রহ. ‘শরহুল ইলমাম’ এর ভূমিকায় লিখেছেন,
.
مَا جزمت بنقله عَن أَئِمَّة الِاجْتِهَاد تحريت فِيهِ، ومنحته من طَرِيق الِاحْتِيَاط مَا يَكْفِيهِ، فَإِن كَانَ من أحد الْمذَاهب الْأَرْبَعَة نقلته من كتب أَصْحَابه، وأخذته عَن الْمَتْن، فَأتيتُ الْأَمر من بَابه، وَلم أعتبر حِكَايَة الْغَيْرِ عَنْهُم، فَإِنَّهُ طَرِيقٌ وَقع فِيهِ الْخلَل، وتعدد من جمَاعَة من النقلَة فِيهِ الزلل، وَحكى المخالفون للمذاهب عَنْهَا مَا لَيْسَ مِنْهَا
.
অর্থ: ‘আমি মুজতাহিদ ইমামগণের যে সব মাযহাব বর্ণনা করেছি, তা বর্ণনা করার ক্ষেত্রে ভালভাবে অনুসন্ধান করেছি এবং যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করেছি। আর চার মাযহাবের একটি হলে তা আমি সে মাযহাবের অনুসারীদের থেকে বর্ণনা করেছি এবং সরাসরি তাদের মূল কিতাব থেকে সংগ্রহ করেছি। মাযহাব বর্ণনার ক্ষেত্রে এটিই সঠিক পদ্ধতি। এ ক্ষেত্রে আমি অন্যদের বর্ণনাকে গ্রাহ্য করিনি। কারণ, এটি ত্রুটিপূর্ণ পদ্ধতি। অনেক বর্ণনাকারী থেকে এ ক্ষেত্রে অনেক ত্রুটি-বিচ্যুতি প্রকাশ পেয়েছে। অনেক ভিন্ন মতাবলম্বীগণ অন্য মাযহাবের এমন সব বক্তব্য বর্ণনা করেছেন যা তাদের মাযহাবই নয়। [তাবাকাতুশ শাফিইয়্যাতিল কুবরা, সুবকী ৯/২৪০]
.
ইমাম ইবনুল আরাবী রহ. এর ১১ এর অতিরিক্ত রাকাত অস্বীকার :
.
আলবানী রহ. বলেন, ইমাম মালেক রহ. এর মত ইমাম ইবনুল আরাবী রহ.ও তারাবীহ নামাজে ১১ এর অতিরিক্ত রাকাতকে অস্বীকার করেন। তিনি তার সুনানুত তিরমিযী এর ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘আরিযাতুল আহওয়াযী’তে লিখেছেন,
.
والصحيح أن يصلى إحدى عشر ركعة، صلاة النبى عليه السلام وقيامه، فأما غير ذلك من الأعداد فلا أصل له ولا حد فيه، فاذا لم يكن بد من الحد فما كان النبى عليه السلام يصلى مازاد النبى عليه السلام فى رمضان ولا فى غيره على إحدى عشر ركعة وهذه الصلاة هى قيام الليل فوجب أن يقتدى فيها بالنبى عليه السلام.
.
অর্থ: ১১ রাকাত পড়াই সহীহ- যা ছিল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নামায। এ ছাড়া যত সংখ্যা বর্ণিত রয়েছে তার কোন ভিত্তি নেই। আর এ ক্ষেত্রে কোন নির্দিষ্ট সীমারেখাও নেই। যদি সীমা নির্ধারণ করতে হয়ই, তাহলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে নামাজ পড়তেন অর্থাৎ ‘রমযান ও তার বাইরে ১১ রাকাতের বেশি পড়তেন না’ এটিই ক্বিয়ামুল লাইল তথা রাতের নামাজ। তাই এ ক্ষেত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অনুসরণ করা আবশ্যক। [আরিযাতুল আহওয়াযী ৪/১৯]
.
জবাব:
.
ইবনুল আরবী এর ‘আরিযাতুর আহওয়াযী’ (৪/১৯) গ্রন্থের শুধু এতটুকু কথা আস্থাযোগ্য যা তিনি কথার শুরুতে বলেছেন, ‘তারাবীহ এর রাকাত সংখ্যার ক্ষেত্রে কোন নির্ধারিত সীমা নেই’। কারণ, এ কথাটুকু তারই আরেকটি রচনা ‘আহকামুল কুরআন’ গ্রন্থেও পাওয়া যায়। [দেখুন, আহকামুল কুরআন, ইবনুল আরাবী ১/১২৫] এতটুকু কথা ছাড়া ‘আরিযাতুল আহওয়াযী’ এর অবশিষ্ট ইবারতে প্রচুর বিকৃতি ও ত্রুটি রয়েছে; যার কারণে এর উপর আমি আস্থা রাখতে পারছি না।
.
তাছাড়া সাহাবায়ে কেরাম থেকে যে বিষয়টি (২০ রাকাত তারাবীহ) সুপ্রমাণিত সে ক্ষেত্রে অন্য কারো দ্বিমত গ্রহণযোগ্য নয়।
.
(শেষোক্ত কথাটি যদি ইবনুল আরাবীরও হয়, তবুও তা ঠিক নয়। কারণ, বক্ষমান প্রবন্ধে প্রমাণ করা হয়েছে যে, ১১ এর বেশি সংখ্যার ব্যাপারে ‘এর কোন ভিত্তি নেই’ কথাটি একেবারেই দলিল বিহীন।)
.
৪ নং দলীল:
.
২০ রাকাত এর মতকে ইমাম শাফিঈ ও তিরমিযী রহ. এর দুর্বলভাবে উপস্থাপন
.
ইমাম শাফেয়ী রহ. ও ইমাম তিরমিযী রহ. তারাবীহ ২০ রাকাতের উক্তিটি رُوِيَ শব্দ দ্বারা বর্ণনা করেছেন।
.
ইমাম শাফেয়ী রহ. বলেন,
.
رَأَيْتهمْ بِالْمَدِينَةِ يَقُومُونَ بِتِسْعٍ وَثَلَاثِينَ وَأَحَبُّ إلَيَّ عِشْرُونَ؛ لِأَنَّهُ رُوِيَ عَنْ عُمَرَ، وَكَذَلِكَ يَقُومُونَ بِمَكَّةَ وَيُوتِرُونَ بِثَلَاثٍ
.
অর্থ: আমি তাদেরকে মদীনা মুনাওয়ারায় ৩৯ রাকাত তারাবীহ পড়তে দেখেছি। তবে আমার নিকট পছন্দনীয় হচ্ছে ২০ রাকাত, কারণ এটি হযরত উমর রা. থেকে বর্ণিত। তারা মক্কাতেও এরূপ তারাবীহ পড়ত এবং ৩ রাকাত বিতর পড়ত। [মুখতাসারুল মুযানী ৮/১১৪]
.
ইমাম তিরমিযী বলেন,
.
وَأَكْثَرُ أَهْلِ العِلْمِ عَلَى مَا رُوِيَ عَنْ عُمَرَ، وَعَلِيٍّ، وَغَيْرِهِمَا مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عِشْرِينَ رَكْعَةً، وَهُوَ قَوْلُ الثَّوْرِيِّ، وَابْنِ المُبَارَكِ، وَالشَّافِعِيِّ وقَالَ الشَّافِعِيُّ: وَهَكَذَا أَدْرَكْتُ بِبَلَدِنَا بِمَكَّةَ يُصَلُّونَ عِشْرِينَ رَكْعَةً.
.
অর্থ: সংখ্যাগরিষ্ঠ উলামায়ে কেরামের মত সেটাই যা বর্ণিত আছে হযরত উমর, হযরত আলী রা. ও অন্যান্য সাহাবায়ে কেরাম থেকে। অর্থাৎ ২০ রাকাত। এটিই ইমাম সাওরী, ইবনুল মুবারক ও শাফেয়ী রহ. এর মত। ইমাম শাফেয়ী বলেন, আমাদের শহর মক্কা মুর্কারামায় আমি এমনটিই পেয়েছি যে, তারা ২০ রাকাত তারাবীহ পড়তেন। [জামে তিরমিযী ৩/১৬০]
.
আলবানী রহ. মনে করেন, ইমাম শাফেয়ী ও ইমাম তিরমিযী ২০ রাকাত তারাবীহ এর উক্তিটি মাজহুল সীগা (কর্মবাচ্যমূলক ক্রিয়া অর্থাৎ বর্ণিত হয়েছে ধরণের শব্দ) দ্বারা বর্ণনা করাটাই প্রমাণ যে এ উক্তিটি দুর্বল। কারণ ইমাম নববী রহ. বলেন, বিদগ্ধ গবেষক উলামায়ে কিরামের নিকট رُوِيَ শব্দ দুর্বলতা বুঝানোর জন্য ব্যবহার হয়।
.
(এখানেও শায়খ আলবানী রহ. উসূলে হাদীসের মারাত্মক অপব্যবহার করেছেন। নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে প্রযোজ্য একটি মূলনীতিকে ব্যাপক করে দেওয়া উসূলে হাদীস সম্পর্কে অনভিজ্ঞতার সুস্পষ্ট প্রমাণ।)
.
জবাব:
.
ইমাম শাফিঈ ও ইমাম তিরমিযী রহ. উভয়ের বক্তব্যের মধ্যেই এ কথার প্রমাণ রয়েছে যে, ২০ রাকাতের বর্ণনাটি দুর্বল নয়; বরং এটিই সবল। ইমাম শাফিয়ী রহ. বলেছেন, ‘আমার কাছে পছন্দনীয় ২০ রাকাত’, তদ্রপ ইমাম তিরমিযী রহ. বলেছেন, ‘২০ রাকাতের মতটিই সংখ্যাগরিষ্ঠ উলামায়ে কেরামের মত এবং এটিই হযরত উমর, হযরত আলী রা. ও অন্যান্য সাহাবায়ে কেরাম থেকে বর্ণিত’। তাদের এ বক্তব্যই অকাট্য প্রমাণ যে, তারা এখানে ‘মাজহুল সীগা’ দ্বারা দুর্বলতা বুঝাননি।
.
তাছাড়া, ইমাম নববী রহ. যে নীতির কথা বলেছেন তা ব্যাপক নয়। এমন প্রচুর বর্ণনা রয়েছে যা মাজহুল সীগা (কর্মবাচ্যমূলক ক্রিয়া অর্থাৎ বর্ণিত হয়েছে ধরণের শব্দ) দ্বারা বর্ণনা করা হলেও দুর্বলতা বুঝানো উদ্দেশ্য নয়। যেমন, ইমাম বুখারী রহ. তার সহীহুল বুখারীতে সূরা ফাতিহা দ্বারা ঝাড়ফুঁক করার হাদীসের শুরুতে লিখেছেন,
.
وَيُذْكَرُ عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
.
এখানে يُذْكَرُ অর্থাৎ বর্ণনা করা হয় ‘মাজহুল সীগা’ দ্বারা অবশ্যই দুর্বলতা বুঝানো উদ্দেশ্য নয়। কারণ, এ হাদীসটিই ইমাম বুখারী রহ. সনদসহ অন্যত্র উল্লেখ করেছেন। সহীহুল বুখারী الرُّقَى بِفَاتِحَةِ الكِتَابِ অধ্যায়ে ঝাড়ফুঁক করার হাদীসটি সনদসহ উল্লেখ করেছেন। (দেখুন, হাদীস নং ৫৭৩৬)
.
তদ্রপ বুখারী রহ. নামাযের অধ্যায়ে বলেছেন,
.
وَيُذْكَرُ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ السَّائِبِ: قَرَأَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ المُؤْمِنُونَ فِي الصُّبْحِ، حَتَّى إِذَا جَاءَ ذِكْرُ مُوسَى، وَهَارُونَ – أَوْ ذِكْرُ عِيسَى – أَخَذَتْهُ سَعْلَةٌ فَرَكَعَ.
.
এখানেও ইমাম বুখারী রহ. হাদীসটি يُذْكَرُ অর্থাৎ বর্ণনা করা হয় ‘মাজহুল সীগা’ দ্বারা বর্ণনা করেছেন। অথচ হাদীসটি সহীহ, যা ইমাম মুসলিম রহ. তার সহীহ মুসলিমে বর্ণনা করেছেন। দেখুন সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৫৫।
.
এ জন্য ইবনুস সালাহ রহ. এ মতকে প্রাধান্য দিয়েছেন যে, এ ধরণের মাজহুল সীগাগুলো (কর্মবাচ্যমূলক ক্রিয়া অর্থাৎ বর্ণিত হয়েছে ধরণের শব্দ) দুর্বল ও শক্তিশালী সব ক্ষেত্রেই ব্যবহার হয়। বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন, ইমাম সুয়ূতী কৃত ‘তাদরীবুর রাবী’।
.
(স্বয়ং ইমাম তিরমিযী রহ.ও আরো অনেক সহীহ বর্ণনার ক্ষেত্রে মাজহুল সীগা (কর্মবাচ্যমূলক ক্রিয়া অর্থাৎ ‘বর্ণিত হয়েছে’ ধরণের শব্দ) ব্যবহার করেছেন, যা তার সুনান অধ্যয়নকারীদের অজানা নয়। যেমন, তিনি ১২৪ নং হাদীসের আলোচনায় বলেন,
.
قَوْلُ عَامَّةِ الفُقَهَاءِ: أَنَّ الجُنُبَ، وَالحَائِضَ إِذَا لَمْ يَجِدَا الْمَاءَ تَيَمَّمَا وَصَلَّيَا. وَيُرْوَى عَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ: أَنَّهُ كَانَ لاَ يَرَى التَّيَمُّمَ لِلْجُنُبِ، وَإِنْ لَمْ يَجِدِ الْمَاءَ. وَيُرْوَى عَنْهُ أَنَّهُ رَجَعَ عَنْ قَوْلِهِ: فَقَالَ: يَتَيَمَّمُ إِذَا لَمْ يَجِدِ الْمَاءَ. وَبِهِ يَقُولُ سُفْيَانُ الثَّوْرِيُّ، وَمَالِكٌ، وَالشَّافِعِيُّ، وَأَحْمَدُ، وَإِسْحَاقُ
.
অর্থ: সকল ফক্বীহদের মত হচ্ছে, জুনুবী ব্যক্তি ও ঋতুবর্তী নারী যদি পানি না পায় তাহলে তারা তায়াম্মুম করে নামাজ আদায় করবে। ইবনে মাসঊদ রা. থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি মনে করেন, যুনুবী ব্যক্তি পানি না পেলেও তায়াম্মুম করতে পারবে না। অবশ্য তার থেকে এ কথাও বর্ণিত আছে যে, তিনি তার মত প্রত্যাহার করেছেন এবং বলেছেন, পানি না পেলে তায়াম্মুম করবে। এটিই ইমাম সুফিয়ান সাওরী, মালেক, শাফেয়ী, আহমদ ও ইসহাক রহ. এর মত। লক্ষ করুন, তিরমিযী রহ. তার উক্ত আলোচনায়, ইবনে মাসউদ রা. বিপরীতমুখী উভয় বক্তব্যকে মাজহুল সীগা (বর্ণিত আছে শব্দ) দ্বারা উল্লেখ করেছেন। তার সবল ও দুর্বল উভয় মতকেই ‘বর্ণিত আছে’ শব্দ দ্বারা উল্লেখ করেছেন এবং সবল মতের পক্ষে সকল ফুকাহায়ে কেরামের মতের সমর্থনের কথা ব্যক্ত করেছেন। অথচ আলবানী রহ. এর রীতি অনুযায়ী উভয় মতই দুর্বল। তাহলে সবল মত কোনটি?
সবল মতকে ‘বর্ণিত আছে’ ধরণের শব্দ দ্বারা ব্যক্ত করার এমন উদাহরণ ইমাম তিরমিযী ও শাফেয়ী রহ. এর গ্রন্থ অধ্যয়নকারীদের সামনে কম নয়। আরো দেখতে পারেন, সুনানে তিরমিযী হাদীস নং ১৭৮ ও ১৮৪ ইত্যাদি)
.
সারকথা, উভয় ইমামের এ ধরণের সুস্পষ্ট বক্তব্য থেকে ২০ রাকাতের মতকে শক্তিশালী না বুঝে, একটি অস্পষ্ট উপস্থাপনাগত নীতি থেকে এ মতের দুর্বলতা আবিষ্কারের চেষ্টা অবশ্যই বড় বিস্ময়কর ব্যাপার।
.
৫ নং দলীল:
.
আলী রা. এর আমল সম্পর্কে ইবনে তাইমিয়া রহ. এর বক্তব্য

জনৈক রাফেযী এর বক্তব্য (আলী রা. দিন রাতে হাজার রাকাত নামাজ পড়তেন) এর খন্ডনে ইমাম ইবনে তাইমিয়া বলেন, আলী রা. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুন্নত সম্পর্কে অবগত ও তাঁর অনেক বেশি অনুগত ছিলেন। দিন-রাতে হাজার রাকাত নামাজ পড়া সম্ভব হলেও তা করে তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বিরোধিতা করতে পারেন না। (কারণ এটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নত নয়)।
.
আলবানী রহ. বলেন, চিন্তা করে দেখুন- ‘ইবনে তাইমিয়া কিভাবে হযরত আলী রা. কে রাসূলের সুন্নাহ এর অতিরিক্ত নামাজ পড়া থেকে পবিত্র ঘোষণা করলেন।’ এ দ্বারা আলবানী রহ. বুঝাতে চান যে, আলী রা. ২০ রাকাত তারাবীহর ব্যাপারেও সন্তুষ্ট নন। কারণ, তাও (আলবানী রহ. রহ. এর দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী) সুন্নাহ পরিপন্থী।
.
জবাব:
.
ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহ. তাই এই বক্তব্যের মর্ম স্পষ্ট হয় তাঁর ‘মিনহাজুস সুন্নাহ’ কিতাবের পূর্ব বক্তব্য দেখলে। সেখানে তিনি বলেছেন,
.
وَصَلَاةُ أَلْفِ رَكْعَةٍ فِي الْيَوْمِ وَاللَّيْلَةِ، مَعَ الْقِيَامِ بِسَائِرِ الْوَاجِبَاتِ غَيْرُ مُمْكِنٍ، فَإِنَّهُ لَا بُدَّ لَهُ مِنْ أَكْلٍ وَنَوْمٍ، وَقَضَاءِ حَقِّ أَهْلٍ ، وَقَضَاءِ حُقُوقِ الرَّعِيَّةِ، وَغَيْرِ ذَلِكَ مِنَ الْأُمُورِ الَّتِي تَسْتَوْعِبُ مِنَ الزَّمَانِ إِمَّا النِّصْفَ أَوْ أَقَلَّ أَوْ أَكْثَرَ. وَالسَّاعَةُ الْوَاحِدَةُ لَا تَتَّسِعُ لِثَمَانِينَ رَكْعَةً، وَمَا يُقَارِبُ ذَلِكَ، إِلَّا أَنْ يَكُونَ نَقْرًا كَنَقْرِ الْغُرَابِ، وَعَلِيٌّ أَجَلُّ مِنْ أَنْ يُصَلِّيَ صَلَاةَ الْمُنَافِقِينَ، كَمَا ثَبَتَ فِي الصَّحِيحَيْنِ.
.
অর্থ: সকল দায়িত্ব পালনসহ দিন রাতে হাজার রাকাত নামাজ পড়া অসম্ভব। কারণ, তার পানাহার, পরিবারের হক্ব আদায়, জনগণের হক্ব আদায়সহ আরো অনেক দায়িত্ব রয়েছে যা তার কমবেশি অর্ধেক সময় নিয়ে নেয়। আর বাকী অর্ধেক তথা ১২ ঘণ্টার প্রতি ঘণ্টায় ৮০ বা তার কাছাকাছি রাকাত নামাজও পড়া সম্ভব নয়। হ্যাঁ, পড়া যেতে পারে তবে তা হবে কাকের ঠোকরের ন্যায়, যা হচ্ছে মুনাফিকদের নামাজ যেমনটি বর্ণিত আছে সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে। আর আলী রা. এর ব্যাপারে এমন ধারণা কখনই পোষণ করা যায় না। [মিনহাজুস সুন্নাহ ৪/৩১]
.
এ বক্তব্য থেকে স্পষ্ট যে, ইবনে তাইমিয়া রহ. আলী রা.কে যেই অতিরিক্ত নামাজ পড়া থেকে পবিত্র ঘোষণা করেছেন সেটি এমন নামাজ যার কারণে ওয়াজিব দায়িত্বসমূহ পালন সম্ভব হয় না এবং অতি দ্রুততার কারণে নামজের রুকু-সেজদা হয়ে যায় কাকের ঠোকরের ন্যায়। ১১ রাকাতের চেয়ে বেশি তারাবীহ পড়ার অনুমতি প্রদান থেকে তাকে পবিত্র ঘোষণা করেননি। কারণ, ২০ রাকাত তারাবীহ পড়লে এ সবকিছু আবশ্যক হয়ে যায় না।
.
আর জনৈক রাফেজী যখন এই ফতোয়া প্রদান করল যে, ২০ রাকাত তারাবীহ হযরত উমর রা. এর চালু করা বেদআত ও গর্হিত কাজ। তখন ইবনে তাইমিয়া রহ. তার খন্ডনে করে লিখলেন,
.
أنَّ هَذَا لَوْ كَانَ – عملُ عمرَ في التراويح – قَبِيحًا مَنْهِيًّا عَنْهُ لَكَانَ عَلِيٌّ أَبْطَلَهُ لَمَّا صَارَ أَمِيرَ الْمُؤْمِنِينَ وَهُوَ بِالْكُوفَةِ، فَلَمَّا كَانَ جَارِيًا فِي ذَلِكَ مَجْرَى عُمَرَ دَلَّ عَلَى اسْتِحْبَابِ ذَلِكَ، بَلْ رُوِيَ عَنْ عَلِيٍّ أَنَّهُ قَالَ: نَوَّرَ اللَّهُ عَلَى عُمَرَ قَبْرَهُ كَمَا نَوَّرَ عَلَيْنَا مَسَاجِدَنَا.
.
وَعَنْ أَبِي عَبْدِ الرَّحْمَنِ السُّلَمِيِّ أَنَّ عَلِيًّا دَعَا الْقُرَّاءَ فِي رَمَضَانَ، فَأَمَرَ رَجُلًا مِنْهُمْ يُصَلِّي بِالنَّاسِ عِشْرِينَ رَكْعَةً، قَالَ وَكَانَ عَلِيٌّ يُوتِرُ بِهِمْ.
.
وَعَنْ عَرْفَجَةَ الثَّقَفِيِّ قَالَ: كَانَ عَلِيٌّ يَأْمُرُ النَّاسَ بِقِيَامِ شَهْرِ رَمَضَانَ، وَيَجْعَلُ لِلرِّجَالِ إِمَامًا وَلِلنِّسَاءِ إِمَامًا، قَالَ عَرْفَجَةُ: فَكُنْتُ أَنَا إِمَامَ النِّسَاءِ رَوَاهُمَا الْبَيْهَقِيُّ فِي سُنَنِهِ.
.
অর্থ: আলী রা. যদি তারাবীর ক্ষেত্রে উমর রা. এর আমলকে পছন্দই না করতেন তাহলে তিনি যখন খলিফাতুল মুসলিমীন হলেন তখন তিনি তা অবশ্যই বাতিল করতেন। কিন্তু তিনি যেহেতু এ ক্ষেত্রে উমর রা. পদ্ধতিই অনুসরণ করেছেন। এর দ্বারা বুঝা গেল আলী রা.ও ২০ রাকাত তারাবীহকে পছন্দ করতেন। এ মর্মেই আলী রা. থেকে এ কথা বর্ণিত আছে যে তিনি বলেছেন, ‘আল্লাহ তায়ালা হযরত উমর রা. এর কবরকে আলোকিত করুন যেমন তিনি আমাদের মসজিদসমূহকে আলোকিত করেছেন’।
(এ বর্ণনাটির জন্য দেখুন, তারিখে দিমাশ্ক ইবনে আসাকির ৪৪/ ২৮০)
.
আবু আব্দির রহমান সুলামীর বর্ণনাঃ
.
আবু আব্দির রহমান সুলামী বলেন, হযরত আলী রা. এক রমজানে কুরআনের হাফেজদের ডেকে তাদের থেকে একজনকে ২০ রাকাত তারাবীহ পড়াতে বললেন আর আলী রা. নিজে বিতর পড়াতেন।
.
আরফাযা আস সাক্বাফী বলেন, হযরত আলী রা. সকলকে রমযানের তারাবীহ পড়ার আদেশ দিতেন। পুরুষ ও মহীলাদের জন্য ভিন্ন ভিন্ন ইমাম নির্ধারণ করতেন। আরফাযা বলেন, আমি ছিলাম মহিলাদের ইমাম। এই উভয় বর্ণনা রয়েছে ইমাম বাইহাকী রহ. এর সুনানে কুবরা গ্রন্থে। [মিনহাজুস সুন্নাহ ৮/৩০৮]
.
ইবনে তাইমিয়া রহ. এর পূর্ণ বক্তব্য দ্বারা এ কথা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হয়ে গেল যে, তিনি আলী রা.কে ১১ এর অতিরিক্ত রাকাত তারাবীহ বহাল রাখা থেকে পবিত্র ঘোষণা করেননি। বরং রাফেজীর বক্তব্য খন্ডনে তার আবু আব্দির রহমান (২০ রাকাতের) বর্ণনা দ্বারা দলীল পেশ করাই এ কথার প্রমাণ যে, ২০ রাকাত তারাবীহ ইবনে তাইমিয়া রহ. এর নিকটও আলী রা. থেকে প্রমাণিত।
.
.
আবু আব্দির রহমান সুলামীর বর্ণনা সম্পর্কে আলবানী রহ. এর আপত্তি
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷
.
আপত্তিঃ
.
অবশ্য এ বর্ণনা সম্পর্কে আলবানী রহ. আপত্তি করেছেন যে, এর সূত্রে দুইজন দুর্বল বর্ণনাকারী রয়েছেন। হাম্মাদ ইবনে শুআইব এবং আতা ইবনে সায়েব।
.
জবাব:
.
এ বর্ণনাটি দুর্বল হলেও এর সমর্থনে আরো কয়েকটি বর্ণনা পাওয়া যায়, যার দ্বারা বিষয়টি শক্তিশালী বলে গণ্য হয়।
(এ কারণই হয়তো হাফেজ ইবনে তাইমিয়া রহ. ‘মিনহাজুস সুন্নাহ’ গ্রন্থে (৮/৩০৮) ও ইমাম যাহাবী রহ. ‘আল মুনতাকা’ গ্রন্থে (পৃষ্ঠা ৫৪২) হাদীসটিকে দলিলরূপে পেশ করেছেন এবং এর মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন, হযরত আলী রা. তারাবীর জামাত, রাকাত সংখ্যা ইত্যাদি বিষয়ে দ্বিতীয় খলীফা হযরত উমর রা. এর নীতিই অনুসরণ করেছিলেন। [দলীলসহ নামাযের মাসায়েল পৃষ্ঠা ৪২১]) বর্ণনাগুলো এই,
.
১. সুওয়াইদ ইবনে গাফালার বর্ণনা
.
أَخْبَرَنَا أَبُو الْخَصِيبِ قَالَ : كَانَ يَؤُمُّنَا سُوَيْدُ بْنُ غَفَلَةَ فِى رَمَضَانَ فَيُصَلِّى خَمْسَ تَرْوِيحَاتٍ عِشْرِينَ رَكْعَةً.
.
অর্থ: আবুল খাসীব থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রমযানে আমাদের ইমামত করতেন সুওয়াইদ ইবনে গাফালা। তিনি ৫ তারবিহায় (প্রতি ৪ রাকাতে ১ তারবিহা) মোট ২০ রাকাত নামাজ পড়াতেন। [আস সুনানুল কুবরা বাইহাকী ২/৪৯৭ হাদীস নং : ৪৮০৩]
.
২. শুতাইর ইবনে শাকাল এর বর্ণনা
.
وَرُوِّينَا عَنْ شُتَيْرِ بْنِ شَكَلٍ وَكَانَ مِنْ أَصْحَابِ عَلِىٍّ رَضِىَ اللَّهُ عَنْهُ : أَنَّهُ كَانَ يَؤُمُّهُمْ فِى شَهْرِ رَمَضَانَ بِعِشْرِينَ رَكْعَةً، وَيُوتِرُ بِثَلاَثٍ.
.
অর্থ: আলী রা. এর শিষ্যদের একজন শুতাইর ইবনে শাকাল তিনি বলেন, আলী রা. তদেরকে ২০ রাকাত তারাবীহ ও ৩ রাকাত বিতর পড়াতেন। [আস সুনানুল কুবরা বাইহাকী ২/৪৯৬ হাদীস নং : ৪৮০৩]
.
৩. আবুল হাসনা এর বর্ণনা
.
عَنْ أَبِى الْحَسْنَاءِ : أَنَّ عَلِىَّ بْنَ أَبِى طَالِبٍ رَضِىَ اللَّهُ عَنْهُ أَمَرَ رَجُلاً أَنْ يُصَلِّىَ بِالنَّاسِ خَمْسَ تَرْوِيحَاتٍ عِشْرِينَ رَكْعَةً.
.
অর্থ: আবুল হাসনা থেকে বর্ণিত, আলী রা. এক ব্যক্তিকে লোকদের নিয়ে ৫ তারবিহায় (প্রতি ৪ রাকাতে ১ তারবিহা) ২০ রাকাত নামাজ পড়াতে নির্দেশ প্রদান করেন। [আস সুনানুল কুবরা বাইহাকী ২/৪৯৭ হাদীস নং : ৪৮০৫]
.
তাহলে আলী রা. এর ছাত্রদের আমল ও আলী রা. এর আমল সম্পর্কে তাদের বক্তব্য দ্বারা এ কথা সুস্পষ্ট হয়ে গেল যে, ২০ রাকাত তারাবীহ হযরত আলী রা. থেকে প্রমাণিত।
.
আবুল হাসনা এর বর্ণনা সম্পর্কে আলবানী রহ. এর আপত্তি
.
আবুল হাসনার বর্ণনা সম্পর্কেও আলবানী রহ. আপত্তি করেছেন যে, এ সূত্রে এক বর্ণনাকারী হচ্ছেন আবুল হাস্না, যিনি মাজহুল তথা যার পরিচয় অজ্ঞাত। ইমাম যাহাবী ও হাফেজ আসকালানী রহ. তার ব্যাপারে এমনটি বলেছেন।
.
জবাব:
.
এর জবাবে আমরা বলব যে, ইমাম দুলাবী রহ. ‘আল কুনা ওয়াল আসমা’ গ্রন্থে বর্ণনা করেন যে, ইমাম ইয়াহইয়া ইবনু মাঈন বলেছেন
.
أَبُو الْحَسْنَاءِ رَوَى عَنْهُ شَرِيكٌ وَالْحَسَنُ بْنُ صَالِحٍ كُوفِيٌّ
.
অর্থ: আবুল হাস্না থেকে শরীক এবং হাসান ইবনে সালিহ দুজন শিষ্য হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি কূফী ছিলেন। [আল কুনা ওয়াল আসমা, দুলাবী ২/৪৬৭]
.
আর এটি হাদীস শাস্ত্রের স্বতঃসিদ্ধ নীতি যে, কারো থেকে যদি দুইজন ব্যক্তি বর্ণনা করে তাহলে সে মজহুল তথা অপরিচিত থাকে না। যেমনটি বলেছেন ইমাম দারাকুতনী রহ. ‘আস সুনান’ গ্রন্থে, ইবনু আব্দিল বার ‘আল ইসতিযকার’ গ্রন্থে এবং খতীব বাগদাদী ‘আল কিফায়া’ গ্রন্থে।
.
(এখানে আলবানী রহ. সুস্পষ্ট ভুল করেছেন। একই ভুল করেছেন মোবারকপুরীও। আসলে হাফেজ যাহাবী রহ. ও হাফেজ ইবনে হাজার রহ. যে আবুল হাসনাকে অপরিচিত বলেছেন তিনি আর এই আবুল হাসনা দুই ব্যক্তি। আমাদের আলোচ্য আবুল হাসনা হযরত আলী রা. এর শাগরিদ, আর যাকে যাহাবী ও ইবেন হাজার অপরিচিত বলেছেন তিনি হযরত আলী রা. এর ছাত্রের ছাত্র হাকাম ইবনে উতাইবার শাগরিদ। অপরিচিত আবুল হাসনাকে ইবনে হাজার ‘তাকরীব’ গ্রন্থে ৭ম স্তরের বলে উল্লেখ করেছেন। আর আলোচ্য আবুল হাসনার ছাত্র আবু সা‘দ বাক্কালকে ৫ম স্তরের বলে উল্লেখ করেছেন। তাহলে তার উস্তাদ আবুল হাসনা অবশ্যই ৩য় বা ৪র্থ স্তরের হয়ে থাকবেন। সুতরাং দুজন এক ব্যক্তি হয় কিভাবে ?

আমাদের আলোচ্য আবুল হাসনাকে সর্বোচ্চ মাসতুর বলা যেতে পারে। অর্থাৎ যার একাধিক বর্ণনাকারী ছাত্র আছে, কিন্তু তার ব্যাপারে কারো পক্ষ থেকে সুনাম বর্ণিত হয়নি। মাসতুরের বর্ণনা অনেকে নিঃশর্তে গ্রহণ করেছেন। দেখুন, ‘আর রাফউ ওয়াত তাকমীল’ এর পরিশিষ্ট।
কেউ কেউ শর্ত আরোপ করেছেন সমর্থক বর্ণনাকারীর। অর্থাৎ তার সমর্থনে যদি অন্য কোন ব্যক্তির বর্ণনা পাওয়া যায়, তবে তার বর্ণনা গ্রহণযোগ্য হবে। (দেখুন, শরহুন নুখবাতিল ফিকার, হাসান লি যাতিহি এর আলোচনা) এখানে তাও পাওয়া যাচ্ছে। কারণ, আবু আব্দির রহমান সুলামীও হযরত আলী রা. থেকে একই কথা উল্লেখ করেছেন।
তা ছাড়া আলী রা. এর বিশিষ্ট ছাত্র শুতাইর ইবনে শাকাল, আব্দুর রহমান ইবনে আবু বাকরা, সাঈদ ইবনে আবুল হাসান, সুয়াইদ ইবনে গাফালা ও আলী ইবনে রাবীআ প্রমুখ বিশ রাকাত তারাবীহ পড়তেন ও পড়াতেন। (দেখুন, মুসান্নাফে ইবেন আবি শাইবা ৭৭৬২, ৭৭৬৫, ৭৭৮৪; সুনানে বাইহাকী; ক্বিয়ামুল লাইল)। [দলীলসহ নামাযের মাসায়েল পৃষ্ঠা ৪২৪])
.
এ জন্যই বাইহাকী রহ. বর্ণনাটিকে দুর্বল বললেও (দুর্বলতার কারণ উল্লেখ করেননি। এর কারণ উল্লেখপূর্বক) ইবনুত তুরকুমানী ‘আল জাওহারুন নাক্বী’ গ্রন্থে লিখেছেন, এ বর্ণনার দুর্বলতা মূলত আবুল হাস্না এর কারণে নয়; বরং আবূ সা‘দ সাঈদ ইবনে মারযুবান আল বাক্কাল এর কারণে। কারণ, তিনি বিতর্কিত বর্ণনাকারী। এমনটি হলেও বর্ণনাটি অগ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, আবু সা‘দ বাক্কালের মুতাবে তথা সমর্থক রয়েছে। যেটি আমর ইবনে কায়স আবুল হাসনা থেকে বর্ণনা করেছেন। নিম্নে মুতাবে তথা সমর্থক বর্ণনাটি উল্লেখ করা হল।
.
আবুল হাসনা থেকে আমর ইবনু কায়স এর বর্ণনা
.
حَدَّثَنَا وَكِيعٌ ، عَنْ حَسَنِ بْنِ صَالِحٍ ، عَنْ عَمْرِو بْنِ قَيْسٍ، عَنِ أَبِي الْحَسْنَاءِ ؛ أَنَّ عَلِيًّا أَمَرَ رَجُلاً يُصَلِّي بِهِمْ فِي رَمَضَانَ عِشْرِينَ رَكْعَةً.
.
অর্থ: আবুল হাসনা থেকে বর্ণিত, আলী রা. এক ব্যক্তিকে লোকদের নিয়ে ২০ রাকাত নামাজ পড়ার নির্দেশ প্রদান করেন। [মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা ৫/২২৩ হাদীস নং : ৭৭৬৩]
.
ইবনুত তুরকুমানী বলেন, আমার ধারণা, ইনি আমর ইবনু কায়স আল মুলায়ী হয়ে থাকবেন। যাকে ইমাম আহমদ, ইয়াহইয়া ইবনু মাঈন, আবু হাতেম ও আবু যুরআসহ আরো অনেকে নির্ভরযোগ্য বলেছেন এবং ইমাম মুসলিম রহ. তার ‘সহীহ’ গ্রন্থে তার থেকে হাদীস এনেছেন। [দেখুন, সহিহ মুসলিম হাদীস নং ২৭৬ ও ৫৯৬]
.
আর এ কথা তো বলার অপেক্ষা রাখে না যে, আলী রা. থেকে ২০ রাকাত প্রমাণিত হওয়ার ক্ষেত্রে আলবানী রহ. এর বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্যের তুলনায় ইমাম বাইহাকী, ইবনে তাইমিয়া ও ইবনুত তুরকুমানী রাহ. এর মত বড় বড় ইমামদের মতই অধিক শ্রেয়।
.
৬ নং দলীল:
.
আয়েশা রা. এর ১১ রাকাতের বর্ণনাঃ
.
বুখারী ও মুসলিম শরীফে হযরত আয়েশা রা. এর হাদীস,
.
عَنْ أَبِي سَلَمَةَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، أَنَّهُ سَأَلَ عَائِشَةَ، كَيْفَ كَانَتْ صَلَاةُ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي رَمَضَانَ؟ قَالَتْ: مَا كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَزِيدُ فِي رَمَضَانَ، وَلَا فِي غَيْرِهِ عَلَى إِحْدَى عَشْرَةَ رَكْعَةً
.
অর্থ: আবু সালামা ইবনে আব্দুর রহমান থেকে বর্ণিত তিনি হযরত আয়েশা রা.কে জিজ্ঞাসা করলেন, রমজান মাসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নামাজ কেমন ছিল? উত্তরে তিনি বললেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমযানে ও রমযান ছাড়া অন্য মাসসমূহে ১১ রাকাতের বেশি পড়তেন না। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং : ১১৪৭, ২০১৩, ৩৫৬৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং : ৭৩৮]
.
জবাব:
.
(এ হাদীসটি তাহজ্জুদ নামাজের ক্ষেত্রে; তারাবীহ এর ক্ষেত্রে নয় এবং তাহাজ্জুদ ও তারাবীহ এক নামাজ নয়; দুটি ভিন্ন ভিন্ন নামায। বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন, দলীলসহ নামাযের মাসায়েল পৃষ্ঠা ৪৩৪-৪৪০।)
.
এ হাদীসে এর কোন প্রমাণ নেই যে, তারাবীহ নামাজে ১১ রাকাত থেকে অতিরিক্ত রাকাত যোগ করা যাবে না। ওয়ালী উদ্দিন ইরাকী রহ. ‘তরহুত তাসরীব’ গ্রন্থে বলেন,
.
তারাবীহ এর ব্যাপারে সকল আলেমগণ একমত যে, এর কোন নির্দিষ্ট সীমা নেই। হ্যাঁ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কত রাকাত তারাবীহ পড়তেন সে ব্যাপারে বিভিন্ন বর্ণনা রয়েছে।
.
কাযী ইয়ায রহ. বলেন,
.
সা‘দ ইবনে হিশামের সূত্রে বর্ণিত আয়েশা রা. এর হাদীসে আছে ৯ রাকাত।
.
উরওয়া এর সূত্রে আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত বিতরসহ ১১ রাকাত, প্রতি ২ রাকাত পর পর সালাম। আর ফজরের আযান হলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজরের দুই রাকাত পড়তেন।
.
হিশাম ইবনে উরওয়াসহ অন্যরা উরওয়া এর সূত্রে আয়েশা রা. থেকে বর্ণনা করেন, ফজরের দুই রাকাতসহ ১৩ রাকাত।
.
আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমযান ও তার বাইরে ১১ রাকাতের বেশি পড়তেন না। চার রাকত চার রাকাত এবং তিন রাকাত।
.
আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ১৩ রাকাত পড়তেন। আট রাকাত পড়ে বিতর পড়ে দুই রাকাত বসে আদায় করতেন। এরপর দুই রাকাত ফজরের সুন্নত পড়তেন। আয়েশা রা. তার হাদীসে ব্যাখ্যা দিয়েছেন যে, এর মধ্যে দুই রাকাত ফজরের।
.
(হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাতে তের রাকাত সালাত আদায় করতেন, অতঃপর সকালে আযান শোনার পর সংক্ষিপ্ত দু’রাকাত সালাত আদায় করতেন। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১১৭০, পৃষ্ঠা ১/৫৬৬ তাওহীদ পাবলিকেশন্স )
সুতরাং বুঝা গেল এই ১৩ রাকাত ফজরের ২ রাকাত সুন্নত ব্যতীত।)
.
আয়েশা রা. থেকে সহীহুল বুখারীতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর রাতের নামাজ ছিল সাত ও নয় রাকাত।
.
ইমাম বুখারী ও মুসলিম রহ. হযরত ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর রাতের নামাজ ১৩ রাকাত, আরো দুই রাকাত ফজরের সুন্নত।
.
যায়েদ ইবনে খালিদ রা. থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুই রাকাত অল্প সময়ে পড়েছেন এর পর লম্বা দুই রাকাত পড়েছেন। এ হাদীসের শেষে এসেছে, এই মোট ১৩ রাকাত।
.
কাযী ইয়ায রহ. বলেন, উলামায়ে কিরাম বলেছেন, এ হাদীসগুলোতে হযরত ইবনে আব্বাস, আয়েশা ও যায়দ রা. প্রত্যেকেই যা দেখেছেন সেটিই বর্ণনা করেছেন। আর আয়েশা রা. এর বর্ণনার বিভিন্নতার বিষয়টি কেউ বলেছেন, এটি আয়েশা রা. থেকেই, আবার কেউ বলেছেন, তার বর্ণনাকারীদের থেকে। তাই সম্ভাবনা আছে, ১১ রাকাতের বর্ণনাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অধিকাংশ সময়ের আমল, আর তার থেকে বর্ণিত অন্যান্য বর্ণনাগুলোর আমলও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে মাঝেমধ্যে প্রকাশ পেয়েছে। অতএব রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত সর্বোচ্চ রাকাত সংখ্যা হচ্ছে, ফজরের দুই রাকাতসহ ১৫ রাকাত। আর সর্বনিম্ন হচ্ছে ৭ রাকাত। এ বিভিন্নতার কারণ হচ্ছে, সময়ের পর্যাপ্ততা বা সংকীর্ণতার কারণে কেরাত দীর্ঘ বা সংক্ষিপ্ত করা। যেমনটি বর্ণিত আছে হযরত হুযাইফা ও ইবনে মাসউদ রা. এর হাদীসে। অথবা বার্ধক্যের সময় ঘুম, অসুস্থতা বা অন্য কোন উযর, যেমনটি আয়েশা রা. বলেছেন, যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বার্ধক্যে উপনীত হলেন, তখন সাত রাকাত পড়তেন। অথবা, কখনো রাতের নামাজের পূর্বের দুই রাকাতও গণনা করা হত, যেমনটি বর্ণনা করেছেন, যায়েদ ইবনে খালেদ এবং আয়েশা রা. তার কিছু বর্ণনায়। আয়েশা রা. কখনো ফজরের দুই রাকাতকে গণনা করেছেন, কখনো বাদ দিয়েছেন, আবার কখনো তার কোন একটিকে গণনা করেছন। কখনো ইশার ফরজ নামাযকেও তার সাথে যোগ করেছেন, আবার কখনো বাদ দিয়েছেন।
.
সারকথাঃ
.
কাযী ইয়ায রহ. বলেন, এ ব্যাপারে কারো দ্বিমত নেই যে, এ ক্ষেত্রে আসলে এমন কোন সীমারেখা নেই যা থেকে কম-বেশ করা যাবে না। বরং রাতের নামাজ হচ্ছে ঐ সকল ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত যা যতই বৃদ্ধি করা হবে তার সওয়াবও ততই বৃদ্ধি পাবে। হ্যাঁ, মতভেদ রয়েছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি করেছেন এবং নিজের জন্য কি পছন্দ করেছেন তা নিয়ে। [তরহুত তাসরীব ৩/৫০-৫১]
.
৭ নং দলীল:
.
জাবির রা. এর ৮ রাকাতের মারফু বর্ণনা ইমাম তাবারানী হযরত জাবির রা. থেকে বর্ণনা করেন,
.
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: صَلَّى بِنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّمَ فِي شَهْرِ رَمَضَانَ ثَمَانِ رَكَعَاتٍ وَأَوْتَرَ، فَلَمَّا كَانَتِ الْقَابِلَةُ اجْتَمَعْنَا فِي الْمَسْجِدِ وَرَجَوْنَا أَنْ يَخْرُجَ ، فَلَمْ نَزَلْ فِيهِ حَتَّى أَصْبَحْنَا ، ثُمَّ دَخَلْنَا، فَقُلْنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ ، اجْتَمَعْنَا الْبَارِحَةَ فِي الْمَسْجِدِ، وَرَجَوْنَا أَنْ تُصَلِّيَ بِنَا ، فَقَالَ: إِنِّي خَشِيتُ أَنْ يُكْتَبَ عَلَيْكُمْ.
.
অর্থ: হযরত জাবির রা. বলেন, রমজান মাসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে নিয়ে ৮ রাকাত তারাবীহ ও বিতর পড়লেন। পরের রাতে আমরা মসজিদে সমবেত হলাম এবং আশা করলাম তিনি বেরিয়ে আমাদের কাছে আসবেন। কিন্তু সকাল পর্যন্ত আমরা মসজিদে অপেক্ষায় থাকলাম। এরপর আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে গিয়ে বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ আমরা গত রাতে মসজিদে সমবেত হয়েছিলাম এবং আশা করেছিলাম আপনি আমাদের নিয়ে নামাজ পড়বেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আমি তোমাদের উপর তারাবীহ ফরজ হয়ে যাওয়ার ভয় করেছি।
[আল মুজামুস্ সগীর, তাবারানী ৫২৫; সহীহ ইবনে খুযাইমা ১০৭০; সহীহ ইবনে হিব্বান ২৪০৯, ২৪১৫; মুসনাদে আবু ইয়ালা আল মাওসিলী ১৮০২; ক্বিয়ামু রমযান মুহাম্মদ ইবেন নসর পৃষ্ঠা ২১৭]
.
(এ হাদীসটিও যঈফ, প্রমাণযোগ্য নয়। কেননা এর সনদেও পূর্বোক্ত ঈসা ইবনে জারিয়া আছেন। তাছাড়া এ হাদীস থেকে বুঝা যায়, এটা কেবল এক রাতের ঘটনা ছিল। যেহেতু সে সময় তারাবী নামায জামাতের সঙ্গে পড়ার প্রচলন ছিল না, তাই এই হাদীসকে সহীহ ধরে নিলেও এই সম্ভাবনা থাকে যে, অবিশষ্ট নামাজ জামাত ছাড়া একাকী পড়ে নেওয়া হয়েছে। আর এটা নিছক অনুমান নয়। সহীহ মুসলিমে হযরত আনাস থেকে এক রাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সঙ্গে তারাবীতে শরীক হওয়ার ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। সেখানে তিনি বলেছেন, ‘এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিছু নামায পড়েছেন যা আমাদের নিকট পড়েননি। [সহীহ মুসলিম হাদীস নং ১১০৪]
এ হাদীসটি সহীহ না হওয়ার আরো একটি কারণ এই যে, এটি শায তথা বিচ্ছিন্ন বর্ণনা। সহীহ হাদীসসমূহে একাধিক সাহাবী কর্তৃক রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর তারাবী পড়ার ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। দেখুন, হযরতু আয়েশা রা. এর বর্ণনা বুখারী ৯২৪ ও মুসলিম ৭৬১; হযরত আনাস রা. এর বর্ণনা মুসলিম ১১০৪; হযরত যায়েদ ইবনে সাবেত রা. এর বর্ণনা বুখারী ৭৩১ ও মুসলিম ৭৮১; আবু যর গিফারী রা. এর বর্ণনা আবু দাউদ ১৩৭৫ ও তিরমিযী ৮০৬; নুমান ইবনে বশীর রা. এর বর্ণনা সুনানে নাসায়ী ১৬০৬। এদের কারো বর্ণনাতেই রাকাত সংখ্যা উল্লেখ আসেনি। এসেছে শুধু হযরত জাবির রা. এর বর্ণনায়, ঈসা ইবনে জারিয়ার মত দুর্বল বর্ণনাকারীর সূত্রে। [দলীলসহ নামাযের মাসায়েল বর্ধিত সংস্করণ ৪৪৪-৪৪৫])
.
জবাব:
.
হাফেজ যাহাবী রহ. এর সনদকে মধ্যম পর্যায়ের বললেও (অন্যান্য অনেক হাদীস বিশারদ তার এ মতকে গ্রহণ করেননি যেমন,) নিমাভী রহ. তার এ মতকে সঠিক নয় বলে মন্তব্য করে বলেন, এর সনদ মধ্যম পর্যায় থেকেও নিচে। [দেখুন: আসারুস সুনান পৃষ্ঠা ২০০ টীকা নং ২৭৭ মাকতাবা হক্কানিয়া]
.
(তাছাড়া:
.
ক. আলবানী সাহেব আপন রীতি অনুসারে বর্ণনাকারী দেখে হাদীসের বিধান বলবেন। এখানে তিনি যাহাবী রহ. এর তাক্বলীদ করতে যান কেন?
.
খ. ইমাম যাহাবী রহ. এটিকে পরিচিত পরিভাষা – সহীহ, হাসান, জায়্যিদ ইত্যাদি না বলে নতুন শব্দ ‘ওয়াসাত’ বলাই প্রমাণ করে এতে দূর্বলতা রয়েছে।
.
গ. অনেক সময় বর্ণনাকারী নির্ভরযোগ্য হলেও মতনে সমস্যা থাকায় হাদীস গ্রহণযোগ্য হয় না। তাই হয়ত যাহাবী রহ. হাদীস সম্পর্কে কিছু না বলে কেবল সনদ সম্পর্কেই বলেছেন।)
.
.

প্রয়োজনীয় স্ক্রীনসট সমূহঃ
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷
.
স্ক্রীনসট – ১

image

হযরত ওসমান রাঃ ও মওলা আলী রাঃ উনাদের জামানায় তারাবীহ নামায ২০ রাকাত সাহাবায়ে কেরামগণ ইজমা হয়ে পড়েছেন। ৮ রাকাত নয়। সহিহ সনদে স্কিনসর্ট দেখে নিন, জীবন বড় সময় দিলেও ৮ রাকাত ইজমা বা ঐকমত্য হয়েছে, প্রমাণ করিতে পারবে না!
.
আশ শায়খ ইমাম আল্লামা বদরুদ্দিন আইনী আলাইহির রহমত (ওফাত ৮৫৫ হিজরি) তদীয় البناية فى شرح الهداية ‘আল বেনায়া শরহে হেদায়া’ নামক কিতাবের দ্বিতীয় জিলদের ২৬০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন..
.
.

স্ক্রীনসট – ২
.
নামধারী আহলে হাদিসরা বলে, আনোয়ার শাহ কাস্মীরী নাকি ৮ রাকাত তারাবী’কে সহিহ বলেছেন এবং ২০ রাকাত’কে যঈফ বলেছেন?

image

অথচ, আল্লামা আনোয়ার শাহ কাস্মীরী রাহঃ পরিষ্কার করে বলেছেনঃ-
.
وقال العلامة محمد أنور شاه الكشميري الحنفي رحمه الله ، لم يقل أحد من الأئمة الأربعة بأقل من عشرين ركعة فى التراويح وعليه جمهور الصحابة الخ
أقول : إن سنة الخلفاء الراشدين أيضاً تكون سنة الشريعة لما في الأصول أن السنة سنة الخلفاء وسنته، وقد صح في الحديث :عليكم بسنتي وسنة الخلفاء الراشدين المهديين‘‘ فيكون فعل الفاروق الأعظم أيضاً سنة… واستقر الأمر على عشرين ركعة. اھ۔
(العَرف الشذي شرح سنن الترمذي جلد 2 صفحہ 208)
.
মাজহাবের ৪ ইমামের কেউ ২০ রাকাতের কমে তারাবীহ পড়ার কথা বলেন নি। এবং জমহুর সাহাবায়ে কেরামের অভিমতও এটি।
আমি (আনোয়ার শাহ) বলিঃ খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নতও শরীয়তে সুন্নত সাব্যস্ত হবে। মূলনীতি হল, সুন্নত বলা হয়, রাসুল সাঃ এর সুন্নত’কে এবং খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নতকে।
.
সহিহ সুত্রে হাদিস বর্ণিত হয়েছে, রাসুল সাঃ বলেন, তোমাদের জন্য আবশ্যক হল, আমার সুন্নত এবং আমার হেদায়তপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নতকে আকড়ে ধরা।
তাই, ফারুকে আযম ওমর রাঃ এর কর্মও হচ্ছে সুন্নত। আর বিষয়টি ২০ রাকাত তারাবীর উপরই সিদ্ধান্ত হয়।
.
[ আরফুশ শাযী শরহে তিরমিজি – ২/২০৮ পৃষ্ঠা ]
.
অন্যত্র আনোয়ার শাহ কাস্মীরী রহঃ বলেন:—
.
ومن إدعي العمل بالحديث فأولي له أين يصليها حتي يخشي فوت الفلاح فإن هذه صلاة النبي صلي الله عليه وسلم في اليوم الآخر أما من إكتفي بالركعات الثانية وسد عن السواد الأعظم وجعل يرميهم بالبدعة فليري عاقبته
.
যারা হাদিসের উপর আমলের দাবিদার (আহলে হাদিস) তাদের জন্য উচিত হবে, তারাবীহ সালাত এমনভাবে পড়বে যে, যাতে সাহরী ছুটে যাওয়ার আশংকা হয়। কারণ রাসুল সাঃ এর শেষ দিনের সালাত এটাই ছিল।
এমনিভাবে যারা ৮ রাকাত’কে যতেষ্ট মনে করে বৃহৎ একটা দল থেকে পৃথক হয়ে গিয়েছে এবং যারা ২০ রাকাত পড়ে তাদেরকে বিদআতি অপবাদ দেয়, তারা যেন তাদের শেষ পরিণাম দেখে নেয়।
.
[ ফায়জুল বারী শরহে সহিহ বুখারী, হাদিস নং-২০১৩ অধ্যায়ঃ তারাবী, পরিচ্ছদঃ কিয়ামে লাইলের ফজীলত ]
.
স্ক্রীনসট –
.
বিশ রাকাত তারাবীহ সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ- শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইম্যিয়া রহঃ
.

image

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইম্যিয়া রহঃ বলেন নিঃসন্দেহে হযরত উবাই ইবনে কাব রাঃ রমজান মাসে সকল সাহাবাদের নিয়ে ২০ রাকাত তারাবীহ ও ৩রাকাত বিতর পড়তেন। এজন্য জমহুর উম্মতের নিকট এটিই সুন্নাত। কারন, ২০রাকাত তারাবীহ এর আমল মুজাহির ও আনসার সাহাবাদের সামনে করা হয়েছে। তাদের কেউ তার বিরুধিতা করেন নাই।
(মাজমু ফাতাওয়া -১১২)
.
স্ক্রীনসট – ৪
.
ইমাম বুখারী রহঃ রমজান মাসে তারাবী পড়ে সেহরীর সময় তাহাজ্জুদও পড়তেন।
.

image

ইমাম বুখারী রহঃ,,
.
ﻛَﺎﻥَ ﻣُﺤَﻤَّﺪ ﺑﻦ ﺇِﺳْﻤَﺎﻋِﻴﻞ ﺍﻟﺒُﺨَﺎﺭِﻱّ ﺇِﺫَﺍ ﻛَﺎﻥَ ﺃَﻭَّﻝُ ﻟَﻴْﻠَﺔٍ ﻣِﻦْ ﺷَﻬْﺮِ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ﻳﺠْﺘَﻤﻊ ﺇِﻟَﻴْﻪِ ﺃَﺻْﺤَﺎﺑﻪ ﻓﻴﺼﻠﻰ ﺑﻬﻢ ﻭَﻳﻘْﺮَﺃ ﻓِﻲ ﻛﻞ ﺭَﻛْﻌَﺔ ﻋﺸْﺮﻳﻦ ﺁﻳَﺔ ﻭَﻛَﺬَﻟِﻚَ ﺇِﻟَﻰ ﺃَﻥ ﻳﺨْﺘﻢ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥ . ﻭَﻛَﺎﻥَ ﻳﻘْﺮَﺃ ﻓِﻲ ﺍﻟﺴﺤﺮ ﻣَﺎ ﺑَﻴﻦ ﺍﻟﻨّﺼْﻒ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﺜُّﻠُﺚ ﻣﻦ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥ ﻓﻴﺨﺘﻢ ﻋِﻨْﺪ ﺍﻟﺴﺤﺮ ﻓِﻲ ﻛﻞ ﺛَﻠَﺎﺙ ﻟَﻴَﺎﻝ
.
মুহাম্মদ বিন ইসমাঈল বুখারী রহঃ যখন রমজানের প্রথম রাত আসতো তখন তার সাথীরা তার কাছে একত্র হয়ে যেতো। তারপর তিনি তাদের নিয়ে [তারাবী]নামায পড়তেন। আর প্রতি রাকাতে তিনি বিশ আয়াত তিলাওয়াত করতেন। আর এভাবে তিনি খতম করতেন। আর যখন সেহরীর সময় হতো, তখন তিনি অর্ধেক থেকে কুরআনের এক তৃতিয়াংশ তিলাওয়াত করতেন। এভাবে সেহরীতে তিন দিনে খতম করতেন।
{হাদিয়ুস সারী মুকাদ্দিমা ফাতহুল বারী-৬৬}
.
স্ক্রীনসট -৫
.

image

সাহাবীরা ৮+৩=১১ রাকাত তারবিহাতান পড়েছিলেন মর্মে মুয়াত্তা মালেকের বর্ণনাটি “শাজ”।। কারণঃ–

و حَدَّثَنِي عَنْ مَالِك عَنْ ★مُحَمَّدِ بْنِ يُوسُفَ★ عَنْ السَّائِبِ بْنِ يَزِيدَ أَنَّهُ قَالَ، أَمَرَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ أُبَيَّ بْنَ كَعْبٍ وَتَمِيمًا الدَّارِيَّ أَنْ يَقُومَا لِلنَّاسِ بِإِحْدَى عَشْرَةَ رَكْعَةً قَالَ وَقَدْ كَانَ الْقَارِئُ يَقْرَأُ بِالْمِئِينَ حَتَّى كُنَّا نَعْتَمِدُ عَلَى الْعِصِيِّ مِنْ طُولِ الْقِيَامِ وَمَا كُنَّا نَنْصَرِفُ إِلَّا فِي فُرُوعِ الْفَجْرِ.

সায়িব ইবনু ইয়াযিদ (র) থেকে বর্ণিতঃ:

উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ)-উবাই ইবনু কা’ব এবং তামীমদারী (রাঃ)-কে লোকজনের (মুসল্লিগণের) জন্য এগার রাক’আত (তারাবীহ) কায়েম করতে (পড়াইতে) নির্দেশ দিয়েছিলেন। কারী একশত আয়াতবিশিষ্ট সূরা পাঠ করতেন, আর (আমাদের অবস্থা এই ছিল) আমরা নামায দীর্ঘ সময় দাঁড়াইতে দাঁড়াইতে (ক্লান্ত হয়ে পড়লে) সাহায্য গ্রহণ করতাম অর্থাৎ লাঠির উপর ভর দিতাম। (এইভাবে নামায পড়তে পড়তে রাত শেষ হত) আমরা ভোর হওয়ার কিছু পূর্বে ঘরে ফিরে আসতাম। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)

মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হাদিস নং ২৪৩,মিশকাতুল মাসাবীহ,হাদিস নং ১৩০২ ৷

👉হাদীসটি সম্পর্কে আল্লামা ইবনে আব্দিল বার মালেকী রহ. বলেন:

(هَكَذَا قَالَ مَالِكٌ فِي هَذَا الْحَدِيثِ إِحْدَى عَشرَةَ رَكْعَةً) وَغَيْرُ مَالِكٍ يُخَالِفُهُ فَيَقُولُ فِي مَوْضعٍ إِحْدَى عَشرَةَ رَكْعَةً (إِحْدَى وَعِشْرِينَ) وَلَا أَعْلَمُ أَحَدًا قَالَ فِي هَذَا الْحَدِيثِ إِحْدَى عَشرَةَ رَكْعَةً غَيْرَ مَالِكٍ وَاللَّهُ أَعْلَمُ.. إِلَّا أَنَّ الْأَغْلَبَ عِنْدِي فِي إِحْدَى عَشرَةَ رَكْعَةً الْوَهْمُ وَاللَّهُ أَعْلَمُ (ذكره أبو عمر يوسف بن عبد الله بن محمد بن عبد البر بن عاصم النمري القرطبي :المتوفى: ٤٦۳ه فى كتابه :الإستذكار فى باب مَا جَاءَ فِي قِيَامِ رَمَضَانَ)

“হযরত সায়েব বিন ইয়াযীদ রা.-এর হাদীসে ইমাম মালেক রহ. ১১ রাকাতের কথা বর্ণনা করেছেন। অথচ অন্যরা এখানে ২১ রাকাত বর্ণনা করেছেন। আমার জানামতে ইমাম মালেক ব্যতীত কেউ এ হাদীসে ১১ রাকাত উল্লেখ করেননি। আমার প্রবল ধারণা, ইমাম মালেক এখানে ভুল করেছেন”। (আল ইসতিজকার: কিয়ামু রমাযান অধ্যায়)

👉 হাদীসটির রাবী “মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফ” মুসান্নাফে আঃ রাজ্জাকের সহীহ হাদীসে ২১ রাকাতের কথা বর্ণনা করেছেনঃ—
.
عَبْدُ الرَّزَّاقِ، عَنْ دَاوُدَ بْنِ قَيْسٍ، وَغَيْرِهِ، عَنْ ★مُحَمَّدِ بْنِ يُوسُفَ★، عَنِ السَّائِبِ بْنِ يَزِيدَ، أَنَّ عُمَرَ: جَمَعَ النَّاسَ فِي رَمَضَانَ عَلَى أُبَيِّ بْنِ كَعْبٍ، وَعَلَى تَمِيمٍ الدَّارِيِّ عَلَى إِحْدَى وَعِشْرِينَ رَكْعَة يَقْرَءُونَ بِالْمِئِينَ وَيَنْصَرِفُونَ عِنْدَ فُرُوعِ الْفَجْرِ

হযরত সায়েব বিন ইয়াযীদ থেকে বর্ণিত, হযরত উমার রা. উবাই ইবনে কা’ব ও তামীম আদ্দারী রা.-এর মাধ্যমে একুশ রাকাত পড়তে মানুষকে একত্রিত করেছেন। যাতে তাঁরা দুইশত আয়াত বিশিষ্ট সূরাগুলো পাঠ করতেন এবং ফজরের অল্প আগে নামায থেকে ফিরে যেতেন। (আব্দুর রযযাক: ৭৭৩০ পৃষ্ঠা: ৪/২৬০)

হাদীসটির স্তর: সহীহ, মাউকুফ। এ হাদীসের রাবীগণ সবাই-ই বুখারী/মুসলিমের ثقة “নির্ভরযোগ্য” রাবী যাদের গ্রহণযোগ্যতা উম্মাতের নিকটে স্বীকৃত। সুতরাং সনদের বিবেচনায় এ হাদীসটি অত্যন্ত উঁচু মানের সহীহ। শায়খ বিন বায রহ.-এর সমর্থনপ্রাপ্ত আরবের বিশিষ্ট শায়খ আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ বিন আহমাদ আদদুআইশ রহ. বলেন: وهذا الإسناد رجاله ثقات رجال الصحيح. “এ হাদীসের রাবীগণ সবাই-ই নির্ভরযোগ্য, সহীহ হাদীসের রাবী”। (তাম্বীহুল কারী লিতাকবিয়াতি মা জ’আফাহুল আলবানী: ৩২ নম্বর হাদীসের আলোচনায়)

👉খোদ শায়খ আলবানী রহ. তার ‘সালাতুত তারাবীহ’ গ্রন্থের ৫০ নং পৃষ্ঠায় ইয়াযীদ ইবনে খুসাইফার বর্ণনায় ২৩ নাকি ২১ রাকাত এর ইযতিরাব প্রমাণ করতে গিয়ে লিখেছেন,

قال إسماعيل بن أمية أن محمد بن يوسف ابن أخت السائب بن يزيد أخبره ( قلت : فذكر مثل رواية مالك عن ابن يوسف ثم قال ابن أمية ) : قلت : أو واحد وعشرين ؟ قال : ( يعني محمد بن يوسف ) : لقد سمع ذلك من السائب بن يزيد – ابنُ خصيفة، فسألتُ (السائل هو اسماعيل بن أمية) يزيد بن خصيفة؟ فقال: حسبتُ أن السائب قال: أحد وعشرين. قلتُ : وسنده صحيح.

অর্থ: (মুয়াত্তা মালেকের) মুহাম্মাদ ইবনে ইউসুফ থেকে ১১ রাকাতের বর্ণনা শুনে ইসামাঈল ইবনে উমাইয়া তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, এ বর্ণনায় রাকাত সংখ্যা ১১ নাকি ২১? তিনি উত্তরে বললেন, ‘সায়েব ইবনে ইয়াযীদ থেকে ২১ রাকাতের বিষয়টি শুনেছে ইয়াযীদ ইবনে খুসাইফা। এরপর আমি (ইসমাঈল ইবনে উমাইয়া) ইয়াযীদ ইবনে খুসাইফাকে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, আমি ধারণা করছি যে, সায়েব রা. বলেছেন ২১ রাকাত’ ৷ আমি (আলবানী রহ.) বলি, এই বর্ণনাটির সনদ সহীহ।

লক্ষ করুন, এখানে স্বয়ং মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফ (আলবানী সাহেব যার সূত্রে ১১ রাকাত সহীহ বলে দাবী করেছেন) সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, ইয়াযীদ ইবনে খুসাইফা সায়েব ইবনে ইয়াযীদ থেকে ২১ রাকাতের বর্ণনা শুনেছেন। আর এ বর্ণনা উল্লেখ করে আলবানী রহ. বলেছেন, এর সনদ সহীহ।

তাহলে ফলাফল দাঁড়াল এই, মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফের সাক্ষ্য অনুযায়ী ইয়াযীদ ইবনে খুসাইফার ২১ রাকাতের বর্ণনা সহীহ এবং সেটি আলবানী রহ. এর নিকটেও সহীহ।অর্থাৎ,মুহাম্মদ বিন ইউসুফ নিশ্চিত ছিলেন না ১১ নাকি ২১ এর ব্যাপারে ৷৷
.
আলবানী রহ. মূলত ইয়াযীদ ইবনে খুসাইফার বর্ণনায় ইযতিরাব প্রমাণ করতে গিয়ে বর্ণনাটি উল্লেখ করেছেন। কিন্তু এটি যে তাঁর মতের বিরুদ্ধে এভাবে দলীল হয়ে দাঁড়াবে তিনি হয়তো সেটা টের পাননি।
.
স্ক্রীনসট – ৬
.
মুসনাদে আহমাদ শরীফের হাদিস নিয়ে আহলে হাদিসদের জালিয়াতী
.

image

স্ক্রীনসট – ৭
.

পাকিস্তানের কথিত আহলে হাদীস শায়েখ ” যুবাঈর আলী যাঈ ” কর্তৃক হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী (রহঃ) কে মিথ্যাবাদী সাব্যস্থকরণঃ
‘এগারো রাকায়াত’ এর হাদিসঃ ইমাম বুখারী রহ.এর রমযান মাসের আমলঃ
*****************************************
ঈমাম বোখারী রহ. এর সহিহ বোখারীর একটি হাদিসের রেফারেন্স দিয়ে দাবী করা হয়, “তারাবীহ-তাহাজ্জুদ এক-ই নামায” এবং তারাবীহ “৮ রাকাতের বেশী নয়, বিতর সহ ১১ এর বেশী নয়”।।
অথচ ঈমাম বোখারী রহ. এর নিজের আমল ছিল উক্ত দাবীর সম্পূর্ণ ভিন্ন!!
ঈমাম বোখারীর রহ. এর আমল সম্পর্কে হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী (রহঃ) বলেন-
যখন রামাদানের প্রথম রাত আসতো তখন সব লোক উনার কাছে একত্রিত হত।। তিনি নামাযে (কিয়াম এ রামাদান বা তারাবীহ ) প্রতি রাকাতে ২০ আয়াত পড়তেন এভাবে পুরো মাসে কোরআন খতম করতেন।।
আর সেহরির সময়ে নামাযে (কিয়াম উল লাইল বা তাহাজ্জুদ) তিনি কোরআনের অর্ধেক বা এক-তৃতীয়াংশ তিলাওয়াত করতেন, যেটাতে প্রতি ৩ রাতে একবার কোরআন খতম করতেন।। তিনি রাতে ১৩ রাকাত আদায় করতেন বিতরসহ।।
আর সারাদিনে তিনি ইফতারির আগ পর্যন্ত কোরআন থেকে তিলাওয়াত করে একবার খতম করতেন।।
সূত্রঃ
১.হাদিয়ুস সারী মোকাদ্দিমায়ে ফাতহুল বারী- ৫০৫ পৃষ্ঠা।।
লেখকঃ হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী (রহঃ)।।
২. তাইসিরুল বারী শরহে সহিহ বোখারী- ১ম খন্ড ১১ পৃষ্ঠা।।
লেখকঃ আল্লামা ওয়াহিদুজ্জামান খান সালাফী (রহঃ)।।
৩. জামে শুয়াব উল ঈমান- ৩য় খন্ড ৫২৪-২৫ পৃষ্ঠা।।
লেখকঃ ঈমাম বায়হাকী (রহঃ)
——————————-
পাকিস্থান আহলে হাদিসদের কথিত আলেম “যুবাঈর আলী যাঈ” দাবী করেছিলেন হাদিয়ুস সারী এর এই বর্ণনার সনদ নেই।। তার এই দাবী ভুল!!
ঈমাম বায়হাক্বী (রহঃ) এর কিতাব শুয়াব উল ঈমান এর ৩য় খন্ডে ৫২৪-২৫ পৃষ্ঠায় তিনি উত্তম সনদে এই ঘটনাটী বর্ণনা করেছেন।।
নিচে হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী (রহঃ) রচিত কিতাবের সেই স্ক্রীন সর্টটি দেখুন
.

image

স্ক্রীনসট – 8
.

image

বিন বায (রাহঃ), বিন উছাইমীন (রাহঃ), মুহাম্মাদ ইবনে ইবরাহিম আলে শায়েখ রাহঃ আল আযহার এবং ইবনে তাইমিয়ার ফাতওয়াঃ ২০ রাকাত তারাবীহ উমর (রাঃ) এর সুন্নাহঃ
.
এত দিন পর্যন্ত আহলে হাদিসদের এই কথা স্বীকার করতে দেখেছি যে, খুলাফা রাশেদীন তারাবীহ বিশ রাকাত পড়তেন । 
ঐ দিন হঠাত ‘তাওহীদ মিশন’ নামের আহলে হাদিসদের একটি পেজে দেখলাম, এখন তারা একেও অস্বীকার করছে ।
.
আসলে ধীরে ধীরে এরা দেখা যাবে দ্বীনের সব কিছু অস্বীকার করে দ্বীন থেকে বের হয়ে যাবে ।
.
কিন্তু ১৪ শত বছর পর্যন্ত কেও উমর রা. ও আলী রা. এর বিশ রাকাতের রেওয়ায়েতকে অস্বীকার করে নাই । সবাই বলেছেন যে, বিশ রাকাত খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাহ ও মুসলিম উম্মাহর কর্মধারা দ্বারা প্রমাণিত। সমসাময়িক অনেক নিষ্ঠাবান গায়রে সালাফী আলেমও তা স্বীকার করেন । নিম্মে এর প্রমান তুলে ধরা হল । আল্লাহ যেন উম্মাহকে আহলে হাদিস ফেতনা থেকে হেফাজত করেন । আমীন
.
১.ফাতাওয়া বিন বায –এ শাইখ বিন বায রাহ. বলেন, সাহাবাদের থেকে উমর রা.-এর নির্দেশে তেইশ রাকাত (বিতির সহ) প্রমানিত। তার বক্তব্যের আরবি পাঠ দেখুন-
ﻭﺛﺒﺖ ﻋﻨﻬﻢ ﺃﻧﻬﻢ ﺻﻠﻮﺍ ﺑﺄﻣﺮﻩ ﺛﻼﺛﺎ ﻭﻋﺸﺮﻳﻦ .
.
ফাতাওয়া শাইখ বিন বায ৭/১৭৩
.
২.আরবের সর্বোচ্চ ফাতাওয়া বোর্ড ‘আল্লাজনাতুদ দাইমা লিল বুহুছিল ইলমিয়াহ ওয়াল ইফতা’-এর মদ্ধে তারাবীহ সম্পর্কে এক প্রশ্নের উত্তরে উলামাগন বলেন,
.
ﻋﻤﺮ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻭﺍﻟﺼﺤﺎﺑﺔ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﻢ ﺻﻠﻮﻫﺎ ﻓﻲ ﺑﻌﺾ ﺍﻟﻠﻴﺎﻟﻲ ﻋﺸﺮﻳﻦ ﺳﻮﻯ ﺍﻟﻮﺗﺮ، ﻭﻫﻢ ﺃﻋﻠﻢ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﺑﺎﻟﺴﻨﺔ .
.
উমর রা. ও সাহাবাগন রা. কোন কোন রাতে বিতির ছাড়া বিশ রাকাত পরেছেন।-
আল্লাজনাতুদ দাইমা লিল বুহুছিল ইলমিয়াহ ওয়াল ইফতা ৭/১৯৯
.
উল্লেখ্য, এই বোর্ডের প্রধান হলেন বিন বায রাহ.।
.
৩.মুহাম্মাদ ইবনে ইবরাহীম আলে শাইখ রাহ. তার ফাতাওয়ার মাঝে বলেন-
.
. ﺫﻫﺐ ﺃَﻛﺜﺮ ﺃَﻫﻞ ﺍﻟﻌﻠﻢ ﻛﺎﻹِﻣﺎﻡ ﺃَﺣﻤﺪ ﻭﺍﻟﺸﺎﻓﻌﻲ ﻭﺃَﺑﻲ ﺣﻨﻴﻔﺔ ﺇِﻟﻰ ﺃَﻥ ﺻﻼﺓِ ﺍﻟﺘﺮﺍﻭﻳﺢ ﻋﺸﺮﻭﻥ ﺭﻛﻌﺔ؛ ﻷَﻥ ﻋﻤﺮ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻟﻤﺎ ﺟﻤﻊ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻋﻠﻰ ﺃُﺑﻲ ﺑﻦ ﻛﻌﺐ ﻛﺎﻥ ﻳﺼﻠﻲ ﺑﻬﻢ ﻋﺸﺮﻳﻦ ﺭﻛﻌﺔ، ﻭﻛﺎﻥ ﻫﺬﺍ ﺑﻤﺤﻀﺮ ﻣﻦ ﺍﻟﺼﺤﺎﺑﺔ، ﻓﻴﻜﻮﻥ ﻛﺎﻹِﺟﻤﺎﻉ، ﻭﻋﻠﻰ ﻫﺬﺍ ﻋﻤﻞ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﺍﻟﻴﻮﻡ ﺍﻵﻥ . ﻓﻼ ﻳﻨﺒﻐﻲ ﺍﻻﻧﻜﺎﺭ ﻋﻠﻴﻬﻢ ﺑﻞ ﻳﺘﺮﻛﻮﻥ ﻋﻠﻰ ﻣﺎ ﻫﻢ ﻋﻠﻴﻪ؛ ﻷَﻧﻪ ﻗﺪ ﻳﻨﺸﺄ ﻣﻦ ﺍﻹِﻧﻜﺎﺭ ﻋﻠﻴﻬﻢ ﻭﻗﻮﻉ ﺍﻻﺧﺘﻼﻑ ﻭﺍﻟﻨﺰﺍﻉ ﻭﺗﺸﻜﻴﻚ ﺍﻟﻌﻮﺍﻡ ﻓﻲ ﺳﻠﻔﻬﻢ، ﻭﻻ ﺳﻴﻤﺎ ﻓﻲ ﻫﺬﻩ ﺍﻟﻤﺴﺄَﻟﺔ ﺍﻟﺘﻲ ﻫﻲ ﻣﻦ ﺍﻟﺘﻄﻮﻉ، ﻭﺍﻷَﻣﺮ ﻓﻴﻬﺎ ﻭﺍﺳﻊ، ﻭﺯﻳﺎﺩﺓ ﺍﻟﺘﻄﻮﻉ ﺃَﻣﺮ ﻣﺮﻏﻮﺏ ﻓﻴﻪ
.
অধিকাংশ আহলে ইলমগন যেমন ইমাম আহমাদ, ইমাম শাফেয়ী, ইমাম আবু হানীফার মতে তারাবীহ নামায বিশ রাকাত।
কেননা উমর রা. উবাই ইবনে কাআবের ইমামতিতে সকলকে একত্রিত করলেন, তখন উবাই ইবনে কাআব রা. সবাইকে নিয়ে বিশ রাকাত পড়তেন । আর এটা সকল সাহাবাগনের উপস্থিতিতে হয়েছে। তাই এক্ষেত্রে ইজমা হয়ে গেছে । আজ পর্যন্ত এর উপরই আমল চলছে। তাই বিশ রাকাতের উপর আপত্তি করা উচিৎ নয় । বরং আদায়কারীদেরকে তাদের উবস্থায়ই ছেড়ে দিবে । কারন এই বিষয়ে আপত্তি করার দ্বারা বিভেদ ও ঝগড়া সালাফের প্রতি সাধারন লোকদের সন্দেহ তৈরি হয়। বিশেষ করে এই ধরনের নফল ইবাদতে ।
-ফাতাওয়া ওয়া রাসাইলে মুহাম্মাদ ইবনে ইবরাহীম আলে শাইখ 7/88
.
৪. শাইখ মুম্মাদ আস-সালিহ আল উছাইমীন রাহ. উবাই ইবনে কাআবের রেওয়ায়েতটি উল্লেখ করে বলেন-
.
ﻫﺬﺍ ﻳﺪﻝ ﻋﻠﻰ ﺃﻥ ﺃﻣﻴﺮ ﺍﻟﻤﺆﻣﻨﻴﻦ ﻋﻤﺮ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ – ﻭﻫﻮ ﺃﻋﻠﻢ ﻣﻨﺎ ﺑﺎﻟﺴﻨﺔ ﻭﺃﺧﺸﻰ ﻣﻨﺎ ﻟﻠﻪ – ﻳﺮﻯ ﺃﻧﻪ ﻻ ﺑﺄﺱ ﺃﻥ ﻳﺰﻳﺪ ﺍﻹﻧﺴﺎﻥ ﻋﻠﻰ ﺇﺣﺪﻯ ﻋﺸﺮﺓ ﺭ
ﻛﻌﺔ .
.
এটা প্রমান করে যে, আমীরুল মু’মিনীন উমর রা. –যিনি আমাদের চেয়ে সুন্নাহ সম্পর্কে বেশি জ্ঞান রাখেন ও আমাদের চেয়ে খাসয়াতে ইলাহী বেশি- মনে করতেন, এগারো রাকাতের চেয়ে বেশি (বিশ রাকাত) পড়তে কোন সমস্যা নেই ।-লিকাউল বাবিল মাফতুহ ১০/৫৯
.
ﺍﻟﻜﺘﺎﺏ : ﻟﻘﺎﺀ ﺍﻟﺒﺎﺏ ﺍﻟﻤﻔﺘﻮﺡ ﻹﺑﻦ ﻋﺜﻴﻤﻴﻦ
ﺍﻟﻤﺆﻟﻒ : ﻣﺤﻤﺪ ﺍﻟﺼﺎﻟﺢ ﺍﻟﻌﺜﻴﻤﻴﻦ
.
৫.নাজদের উলামাগনের বক্তব্য দেখুন-
.
ﻭﺃﻣﺎ ﺻﻔﺔ ﺻﻼﺓ ﺍﻟﺘﺮﺍﻭﻳﺢ ﻭﻋﺪﺩﻫﺎ، ﻓﺎﻟﺬﻱ ﺫﻛﺮﻩ ﺍﻟﻌﻠﻤﺎﺀ ﺃﻥ ﺍﻟﺘﺮﺍﻭﻳﺢ ﻋﺸﺮﻭﻥ ﺭﻛﻌﺔ، ﻭﺃﻥ ﻻ ﻳﻨﻘﺺ ﻋﻦ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﻌﺪﺩ ﺇﻻ ﺇﻥ ﺃﺭﺍﺩ ﺃﻥ ﻳﺰﻳﺪ ﻓﻲ ﺍﻟﻘﺮﺍﺀﺓ ﺑﻘﺪﺭ ﻣﺎ ﻳﻨﻘﺺ ﻣﻦ ﺍﻟﺮﻛﻌﺎﺕ؛ ﻭﻟﻬﺬﺍ ﺍﺧﺘﻠﻒ ﻋﻤﻞ ﺍﻟﺴﻠﻒ ﻓﻲ ﺍﻟﺰﻳﺎﺩﺓ ﻭﺍﻟﻨﻘﺼﺎﻥ، ﻭﻋﻤﺮ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻟﻤﺎ ﺟﻤﻊ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻋﻠﻰ ﺃﺑﻲ ﺑﻦ ﻛﻌﺐ ﻛﺎﻧﺖ ﺻﻼﺗﻬﻢ ﻋﺸﺮﻳﻦ ﺭﻛﻌﺔ .
ﺍﻟﻜﺘﺎﺏ : ﻣﺠﻤﻮﻋﺔ ﺍﻟﺮﺳﺎﺋﻞ ﻭﺍﻟﻤﺴﺎﺋﻞ ﺍﻟﻨﺠﺪﻳﺔ ‏( ﺍﻟﺠﺰﺀ ﺍﻷﻭﻝ ‏)ﺍﻟﻤﺆﻟﻒ : ﺑﻌﺾ ﻋﻠﻤﺎﺀ ﻧﺠﺪ ﺍﻷﻋﻼﻡ
.
উমর রা. উবাই ইবনে কাআবের ইমামতিতে সকল সাহাবাদের একত্রিত করলেন, তখন উবাই ইবনে কাআব রা. সবাইকে নিয়ে বিশ রাকাত পড়তেন ।-মাজমুআতুর রাসাইল ওয়াল মাসাইলিন নাজদিয়াহ ১/৯৫
.
৬.মিসর আল আযহারে ফাতাওয়া দেখুন-
.
ﻟﻜﻦ ﺻﺢ ﺃﻥ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻛﺎﻧﻮﺍ ﻳﺼﻠﻮﻥ ﻋﻠﻰ ﻋﻬﺪ ﻋﻤﺮ ﻭﻋﺜﻤﺎﻥ ﻭﻋﻠﻰ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠَّﻪ ﻋﻨﻬﻢ ﻋﺸﺮﻳﻦ ﺭﻛﻌﺔ، ﻭﻫﻮ ﺭﺃﻯ ﺟﻤﻬﻮﺭ ﺍﻟﻔﻘﻬﺎﺀ ﻣﻦ ﺍﻟﺤﻨﻔﻴﺔ ﻭﺍﻟﺤﻨﺎﺑﻠﺔ ﻭﺩﺍﻭﺩ . ﺩﺍﺭ ﺍﻹﻓﺘﺎﺀ ﺍﻟﻤﺼﺮﻳﺔ
.
সহীহ সনদে প্রমানিত যে, লোকেরা উমর রা., উসমান রা. ও উসমান রা.-এর যমানায় বিশ রাকাত পড়তেন। এটাই সকল ফকীহ আবু হানীফা, আহমাদ ও দাউদ রাহ.-এর মত।–ফাতাওয়াল আযহার ৮/৪৬৪
.
৭.আহলে হাদিসদের সবচে বড় আস্থাবাজন ইমাম ইবনে তাইমিয়া রাহ. বলেন-
.
ﺇﻧﻪ ﻗﺪ ﺛﺒﺖ ﺃﻥ ﺃﺑﻲ ﺑﻦ ﻛﻌﺐ ﻛﺎﻥ ﻳﻘﻮﻡ ﺑﺎﻟﻨﺎﺱ ﻋﺸﺮﻳﻦ ﺭﻛﻌﺔ ﻓﻲ ﻗﻴﺎﻡ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﻭﻳﻮﺗﺮ ﺑﺜﻼﺙ .
.
এটা প্রমাণিত যে, উবাই ইবনে কা’ব রা. লোকদের নিয়ে রমযানের রাতে বিশ রাকাত পড়তেন এবং তিন রাকাত বিতর আদায় করতেন।-মাজমুউল ফাতাওয়া ২৩/১১২
.
২০ রাকাত সম্পর্কে তিনি বলেছেন-
.
ﺛﺒﺖ ﻣﻦ ﺳﻨﺔ ﺍﻟﺨﻠﻔﺎﺀ ﺍﻟﺮﺍﺷﺪﻳﻦ ﻭﻋﻤﻞ ﺍﻟﻤﺴﻠﻤﻴﻦ .
.
এটি খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাহ ও মুসলিম উম্মাহর কর্মধারা দ্বারা প্রমাণিত।-মাজমুউল ফাতাওয়া ২৩/১১২
.
এরা যদি বাস্তবিক হাদিসের অনুসারী হয়ে থাকে তাহলে আশাকরি আল্লাহ তাদের হেদায়েত দিবেন ।
.
আর মুসলিম উম্মাহ তাদের ফেতনা থেকে বেচে যাবে ।
.
.

খতমে তারাবীতে ইমাম সাহেব দ্রুত তিলাতওয়াত করলে মুসল্লিদের করণীয় কী?
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷
.
কুরআনে কারীম তাড়াহুড়া করে পড়া উচিত নয়। আর যদি তিলাওয়াত বুঝাই না যায়, কিংবা অর্থ পাল্টে যায়, তাহলে এভাবে তিলাওয়াত করা পরিস্কার হারাম।
.
এটি আমাদের দেশের আম রোগ হয়ে গেছে। তারাবীতে খতম করতেই হবে। আর কুরআন খতমের নামে হাফিজ সাহেবরা পুরো কুরআনকেই খতম করে দেয়ার দুঃসাহসিক অভিযানে নেমে পড়েন। যা পড়েন তা কোনভাবেই কুরআন তিলাওয়াত বলে মনে হয় না। যেন কোন মন্ত্র পড়ছেন।
.
এভাবে কুরআন তিলাওয়াত করা কোনভাবেই জায়েজ নয়। বরং হারাম। হারাম। হারাম।
.
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআন তিলাওয়াতের পদ্ধতি বর্ণনা করে ইরশাদ করেছেনঃ
.
وَرَتِّلِ الْقُرْآنَ تَرْتِيلًا [٧٣:٤
.
এবং কোরআন আবৃত্তি করুন সুবিন্যস্ত ভাবে ও স্পষ্টভাবে। [সূরা মুজ্জাম্মিল ৭৩: ৪]
.
যেখানে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নিজেই তার কুরআন তিলাওয়াতের নির্দেশ দিচ্ছেন স্পষ্ট ও তারতীলের সাথে। সেখানে এভাবে তাড়াহুড়া করে মন্ত্র পড়া কিভাবে বৈধ হতে পারে?
.
এটি কুরআনের সাথে ঠাট্টা ছাড়া আর কিছু নয়।
.
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَيْسَ مِنَّا مَنْ لَمْ يَتَغَنَّ بِالقُرْآنِ
.
হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, সে আমাদের দলভূক্ত নয়, যে সুন্দর সূরে কুরআন তিলাওয়াত করে না। [বুখারী, হাদীস নং-৭৫২৭]
.
যদি তারতীলের সাথে পড়লে দাঁড়িয়ে থাকা অসহনীয় কষ্টকরই হয়ে যায়, তাহলে খতমে তারাবীহ পড়ার দরকার কি? সূরা তারাবীহ পড়লেই হয়।
.
এখন প্রশ্ন হল, যদি কোথাও তাড়াহুড়া করে খতমে তারাবীহ পড়া হয়, তাহলে এক্ষেত্রে সচেতন মুসল্লিদের করণীয় কী?
.
১) সম্ভব হলে ইমাম সাহেবকে বলে তাড়াহুড়া বন্ধ করে ধীরস্থীরভাবে বা স্পষ্ট শব্দে তিলাওয়াতের জন্য অনুরোধ করবে।
.
যদি ইমাম বা মসজিদ কমিটি তা মেনে নেয়, তাহলে উক্ত মসজিদেই নামায পড়তে হবে।
.
যদি ইমাম সাহেব না মানেন, বা মসজিদ কর্তৃপক্ষ তা করতে না দেয়, তাহলে দুই সূরত। যথা-
.
ক) ইমাম সাহেবের দ্রুত তিলাওয়াতের ফলে কুরআানের অর্থ বিকৃতি ঘটে।
.
খ) অর্থ বিকৃতি ঘটে না, বরং শব্দ স্পষ্টই হয়, কিন্তু পড়েন দ্রুত।
.
এ দুই সূরতের প্রথম সূরতে উক্ত ইমামের পিছনে নামায পড়া জায়েজ হবে না। বরং অন্যত্র নামাযের ব্যবস্থা করতে হবে।
.
আর যদি দ্বিতীয় সূরত হয়, তাহলে কাছাকাছি কোথাও ধীরস্থীরভাবে তিলাওয়াতকারী মসজিদের ইমাম না থাকলে উক্ত ইমামের পিছনেই নামায পড়তে হবে।
.
আলাদা সূরা তারাবীহ পড়বে না।
.
কারণ, সূরা তারাবীহ পড়ার দ্বারা খতমে কুরআনের সুন্নত আদায় হবে না।
.
তারাবীতে খতমে কুরআন করা সুন্নত। আর শব্দ স্পষ্ট তথা অর্থবিকৃতি হয় না, কিন্তু দ্রুত তিলাওয়াত করে, তাহলে একাজটি অনুত্তম হলেও নাজায়েজ বা হারাম নয়। এ কারণে নামায ভঙ্গ হয় না।
.
তাই, খতমে তারাবীহের সুন্নত বাদ দিয়ে আলাদাভাবে সূরা তারাবীহ পড়া উচিত হবে না।
.
وفى الدر المختار: (وَالْخَتْمُ) مَرَّةً سُنَّةٌ وَمَرَّتَيْنِ فَضِيلَةٌ وَثَلَاثًا أَفْضَلُ. (وَلَا يُتْرَكُ) الْخَتْمُ (لِكَسَلِ الْقَوْمِ) لَكِنْ فِي الِاخْتِيَارِ: الْأَفْضَلُ فِي زَمَانِنَا قَدْرُ مَا لَا يَثْقُلُ عَلَيْهِمْ، وَأَقَرَّهُ الْمُصَنِّفُ وَغَيْرُهُ. وَفِي الْمُجْتَبَى عَنْ الْإِمَامِ: لَوْ قَرَأَ ثَلَاثًا قِصَارًا أَوْ آيَةً طَوِيلَةً فِي الْفَرْضِ فَقَدْ أَحْسَنَ وَلَمْ يُسِئْ، فَمَا ظَنُّك بِالتَّرَاوِيحِ؟ وَفِي فَضَائِلِ رَمَضَانَ لِلزَّاهِدِيِّ: أَفْتَى أَبُو الْفَضْلِ الْكَرْمَانِيُّ وَالْوَبَرِيُّ أَنَّهُ إذَا قَرَأَ فِي التَّرَاوِيحِ  الْفَاتِحَةَ وَآيَةً أَوْ آيَتَيْنِ لَا يُكْرَهُ، وَمَنْ لَمْ يَكُنْ عَالِمًا بِأَهْلِ زَمَانِهِ فَهُوَ جَاهِلٌ.
.
وفى رد المحتار:فَالْحَاصِلُ أَنَّ الْمُصَحَّحَ فِي الْمَذْهَبِ أَنَّ الْخَتْمَ سُنَّةٌ لَكِنْ لَا يَلْزَمُ مِنْهُ عَدَمُ تَرْكِهِ إذَا لَزِمَ مِنْهُ تَنْفِيرُ الْقَوْمِ وَتَعْطِيلُ كَثِيرٍ مِنْ الْمَسَاجِدِ خُصُوصًا فِي زَمَانِنَا فَالظَّاهِرُ اخْتِيَارُ الْأَخَفِّ عَلَى الْقَوْمِ. (رد المحتار، كتاب الصلاة، باب الوتر والنوافل-2/497-498، مبحث صلاة التراويح)
.
وفى الدر المختار: وَيَجْتَنِبُ الْمُنْكَرَاتِ هَذْرَمَةَ الْقِرَاءَةِ، وَتَرْكَ تَعَوُّذٍ وَتَسْمِيَةٍ، وَطُمَأْنِينَةٍ، وَتَسْبِيحٍ، وَاسْتِرَاحَةٍ
.
وقال ابن عابدين: (قَوْلُهُ هَذْرَمَةَ) بِفَتْحِ الْهَاءِ وَسُكُونِ الذَّالِ الْمُعْجَمَةِ وَفَتْحِ الرَّاءِ: سُرْعَةُ الْكَلَامِ وَالْقِرَاءَةِ قَامُوسٌ، وَهُوَ مَنْصُوبٌ عَلَى الْبَدَلِيَّةِ مِنْ الْمُنْكَرَاتِ، )رد المحتار، كتاب الصلاة، باب الوتر، مبحث التراويح-2/499، حاشية الطحطاوى على مراقى الفلاح-415)
.
فى مراقى الفلاح: ويحذر من الهذرمة، وترك الترتيل، وترك تعديل الأركان، وغيرها كما فعله من لا خشية له
.
وفى حاشيته: قوله: “ويحذر من الهدرمة” الموجود في النسخ التي بأيدينا بالدال المهملة والذي في الدر بالذال المعجمة وفسرها في القاموس بسرعة الكلام والقراءة قوله: “وترك الترتيل” في القاموس رتل الكلام ترتيلا أحسن تأليفه اهـ والمراد أن لا يعطي التلاوة وحقها (حاشية الطحطاوى على مراقى الفلاح، كتاب الصلاة، فصل فى صلاة التراويح-416)
.
.
বিতরের পর তারাবীহ পড়ার হুকুম কী?
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷
.
বিতরের পর তারাবীহ আদায় করাতে কোন সমস্যা নেই। তারাবীহ আদায় হয়ে যাবে। তবে বিতরের আগে আদায় করাই উত্তম।
.
যেহেতু প্রশ্নোক্ত সূরতে উক্ত ব্যক্তির বিতর আদায় হয়নি। তাই তারাবীহ শেষে আবার বিতর পড়ে নেয়া উচিত ছিল। এখন কাযা করে নিতে হবে।
.
أَنَّ وَقْتَ التَّرَاوِيحِ بَعْدَ الْعِشَاءِ قَبْلَ الْوِتْرِ بِهِ قَالَ عَامَّةُ الْمَشَايِخِ، وَالْأَصَحُّ أَنَّ وَقْتَهَا بَعْدَ الْعِشَاءِ إلَى آخِرِ اللَّيْلِ قَبْلَ الْوِتْرِ وَبَعْدَهُ؛ (الجوهرة النيرة-1/100، رد المحتار، كتاب الصلاة، باب الوتر والنوافل، مبحث صلاة التراويح-2/44
.
.
রমজানে বিতর নামায জামাতে পড়ার কোন প্রমাণ আছে কি?
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷
.
রাসূল সাঃ বর্ণিত একটি হাদীস এবং সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়ীগণের নিরবচ্ছিন্ন আমল দ্বারা এটি প্রমাণিত যে, রমজানে তারাবী শেষে বিতর নামায জামাতের সাথে পড়া হবে। অন্য সময়ে এমনটি বর্ণিত হয়নি।
.

.
عن جابر بن عبد الله قال خرج النبى صلى الله عليه وسلم ذات ليلة فى رمضان فصلى الناس اربعة وعشرون ركعة واوتر بثلاثة
.
হযরত জাবের রাঃ বলেনঃ রমজান মাসের এক রাতে রাসূল সাঃ বাহিরে তাশরীফ নিয়ে এলেন। আর সাহাবায়ে কেরামকে ২৪ রাকাত [৪ রাকাত ঈশার, আর ২০ রাকাত তারাবীহের] নামায পড়ালেন। আর তিন রাকাত বিতির পড়ালেন। [তারীখে জুরজান-২৭}
.

.
عن ابى عبد الرحمن السلمى عن على قال دعى القراء فى رمضان فامر منهم رجلا يصلى بالناس عشرين ركعة قال وكان على يوتر بهم
.
হযরত আবু আব্দুর রহমান সুলামী বলেনঃ হযরত হযরত আলী রাঃ রমজান মাসে কারীদের ডাকতেন। তারপর তাদের মাঝে একজনকে বিশ রাকাত তারাবীহ পড়াতে হুকুম দিতেন। আর বিতিরের জামাত হযরত আলী নিজেই পড়াতেন। {বায়হাকী-৪/৪৯৬}
.

.
عن زيد بن وهب قال كان عبد الله يصلي بنا في شهر رمضان فينصرف وعليه ليل قال الا  عمش كان يصلى عشرين ركعة ويوتر بثلث
.
হযরত জায়েদ বিন ওহাব বলেনঃ হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাঃ আমাদের তারাবীহ পড়িয়ে ফারিগ হতেন এমতাবস্থায় যে, তখনো রাত অনেক বাকি থাকতো, ইমাম আমাশ বলেনঃ তিনি বিশ রাকাত তারাবীহ আর তিন রাকাত বিতির পড়াতেন। {কিয়ামুল লাইল-১৫৭}
.

.
عن عبد العزيز بن رفيع قال كان ابى بن كعب يصلى بالناس فى رمضان بالمدينة عشرين ركعة ويوتر بثلاثة
.
হযরত আব্দুল আজীজ বিন রফী থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ হযরত উবায় বিন কাব রাঃ লোকদেরকে রমজান মাসে মদীনা মুনাওয়ারায় বিশ রাকাত তারাবীহ এবং তিন রাকাত বিতির নামায পড়াতেন। {মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা-২/৩৯৩}
.

.
عن سعيد بن ابى عبيد ان على بن ربيعة كان يصلى بهم فى رمضان خمس ترويحات ويوتر بثلاث
.
হযরত সাঈদ বিন আবু উবায়েদ থেকে বর্ণিত। হযরত আলী বিন রাবীয়া পাঁচ তারবিহা তথা বিশ রাকাত তারাবীহ এবং তিন রাকাত বিতির জামাতের সাথে পড়তেন। {মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা-২/৩৯৩}
.
.
সফর অবস্থায় তারাবীহ নামাযের হুকুম কী?
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷
.
যেহেতু তারাবীহ নামায সুন্নতে মুআক্কাদা। তাই সফর অবস্থায় অন্য সুন্নতে মুআক্কাদার যে হুকুম, তারাবীহ নামাযেরও একই হুকুম।
.
চলন্ত অবস্থায় হলে না পড়াতে কোন সমস্যা নেই। আর কোথাও নিরাপত্তার সাথে অবস্থান করাকালীন হলে পড়া উত্তম। না পড়লেও কোন গোনাহ নেই।
.
ويأتي) المسافر (بالسنن) إن كان (في حال أمن وقرار وإلا) بأن كان في خوف وفرار (لا) يأتي بها هو المختار لأنه ترك لعذر تجنيس، قيل إلا سنة الفجر
.
وفى رد المحتار- (قوله هو المختار) وقيل الأفضل الترك ترخيصا، وقيل الفعل تقربا. وقال الهندواني: الفعل حال النزول والترك حال السير، وقيل يصلي سنة الفجر خاصة، وقيل سنة المغرب أيضا بحر قال في شرح المنية والأعدل ما قاله الهندواني. اهـ.
.
قلت: والظاهر أن ما في المتن هو هذا وأن المراد بالأمن والقرار النزول وبالخوف والفرار السير لكن قدمنا في فصل القراءة أنه عبر عن الفرار بالعجلة لأنها في السفر تكون غالبا من الخوف تأمل
.
.
তারাবীহ নামাযের কাযা পড়ার বিধান কী?
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷
.
তারাবীহ নামাযের কোন কাযা নেই। তাই পরবর্তীতে কাযা করার কোন সুযোগ নেই। পড়লে তা নফল হবে। তারাবীহ নামাযের কাযা হবে না।
.
“ولا تقضى التراويح” أصلا “بفواتها” عن وقتها “منفردا ولا بجماعة” على الأصح لأن القضاء من خصائص الواجبات وإن قضاها كانت نفلا مستحبا لا تراويح (حاشية الطحطاوى على مراقى الفلاح، كتاب الصلاة، فصل فى صلاة التراويح-416)
.
(وَلَا تُقْضَى إذَا فَاتَتْ أَصْلًا) وَلَا وَحْدَهُ فِي الْأَصَحِّ (فَإِنْ قَضَاهَا كَانَتْ نَفْلًا مُسْتَحَبًّا وَلَيْسَ بِتَرَاوُحٍ) (الدر المختار مع رد المحتار، كتاب الصلاة، باب الوتر والنوافل، مبحث صلاة التروايح-494-495
.
.
তারাবীহ নামাযে দরূদ ও দুআয়ে মাসুরা পড়ার কোন প্রয়োজন নেই?
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷
.
নামাযের মাঝে দরূদ ও দুয়ায়ে মাসূরা পড়া সুন্নত। ফরজ নামায হোক, আর, বিতর, তারাবীহ বা নফল হোক।ছেড়ে দিলে নামায হবে। কিন্তু প্রয়োজন ছাড়া ইচ্ছেকৃত ছেড়ে দিলে গোনাহ হবে।
.
আর এভাবে ছেড়ে দেবার অভ্যাস করা মারাত্মক গোনাহ। যা হারামের কাছাকাছি। এর ফলে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুপারিশ না পাওয়ার শংকা রয়েছে।
.
তাই যেকোন নামাযেই দরূদ ও দুআয়ে মাসুরা ছেড়ে দেবার অভ্যাস পরিত্যাগ করা বাঞ্ছনীয়।
.
وفى الدر المختار: وَسُنَّةٌ فِي الصَّلَاةِ، وَمُسْتَحَبَّةٌ فِي كُلِّ أَوْقَاتِ الْإِمْكَانِ،
.
وفى رد المحتار: (قَوْلُهُ وَسُنَّةٌ فِي الصَّلَاةِ) أَيْ فِي قُعُودٍ أَخِيرٍ مُطْلَقًا، وَكَذَا فِي قُعُودٍ أَوَّلٍ فِي النَّوَافِلِ غَيْرِ الرَّوَاتِبِ تَأَمَّلْ وَفِي صَلَاةِ الْجِنَازَةِ. (رد المحتار، كتاب الصلاة، باب صفة الصلاة-2/230-231)
.
وفى الفتاوى الهندية: (سننها) …….والصلاة على النبى صلى الله عليه وسلم والدعا (الفصل الثالث فى سنن الصلاة وآدابها وكيفيتها-1/72)
.
وفيه ايضا: فَإِذَا فَرَغَ مِنْ الصَّلَاةِ عَلَى النَّبِيِّ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – يَسْتَغْفِرُ لِنَفْسِهِ وَلِأَبَوَيْهِ وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ. كَذَا فِي الْخُلَاصَةِ وَيَدْعُو لِنَفْسِهِ وَلِغَيْرِهِ مِنْ الْمُؤْمِنِينَ وَلَا يَخُصُّ نَفْسَهُ بِالدُّعَاءِ وَهُوَ سُنَّةٌ. هَكَذَا فِي التَّبْيِينِ (الفصل الثالث فى سنن الصلاة وآدابها وكيفيتها-1/76)
.
تَرْكُ السُّنَّةِ لَا يُوجِبُ فَسَادًا وَلَا سَهْوًا بَلْ إسَاءَةً لَوْ عَامِدًا غَيْرَ مُسْتَخِفٍّ.
.
وقال ابن عابدين الشامى رح: (قَوْلُهُ لَا يُوجِبُ فَسَادًا وَلَا سَهْوًا) أَيْ بِخِلَافِ تَرْكِ الْفَرْضِ فَإِنَّهُ يُوجِبُ الْفَسَادَ، وَتَرْكُ الْوَاجِبِ فَإِنَّهُ يُوجِبُ سُجُودَ السَّهْوِ (قَوْلُهُ لَوْ عَامِدًا غَيْرَ مُسْتَخِفٍّ) فَلَوْ غَيْرَ عَامِدٍ فَلَا إسَاءَةَ أَيْضًا بَلْ تُنْدَبُ إعَادَةُ الصَّلَاةِ كَمَا قَدَّمْنَاهُ فِي أَوَّلِ بَحْثِ الْوَاجِبَاتِ، (رد المحتار، كتاب الصلاة، باب صفة الصلاة، واجبات الصلاة-
.
تَرْكُ السُّنَّةِ الْمُؤَكَّدَةِ قَرِيبٌ مِنْ الْحَرَامِ يَسْتَحِقُّ حِرْمَانَ الشَّفَاعَةِ، لِقَوْلِهِ – عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ -: «مَنْ تَرَكَ سُنَنِي لَمْ يَنَلْ شَفَاعَتِي» . اهـ. وَفِي التَّحْرِيرِ: إنَّ تَارِكَهَا يَسْتَوْجِبُ التَّضْلِيلَ وَاللَّوْمَ،. اهـ. وَالْمُرَادُ التَّرْكُ بِلَا عُذْرٍ عَلَى سَبِيلِ الْإِصْرَارِ كَمَا فِي شَرْحِ التَّحْرِيرِ لِابْنِ أَمِيرِ حَاجٍّ، (رد المحتار، كتاب الطهارت، سنن الوضوء-1/104
.
.
রোযা রেখে তারাবীহ না পড়লেও কি চলবে?
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷
.
রোযা রাখা ফরজ আর তারাবীহ নামায পড়া সুন্নাতে মুআক্কাদা।
.
তাই না পড়লে সুন্নত ছেড়ে দেবার গোনাহ হবে। এ কারণে রোযা রাখার সাথে সাথে তারাবীহ নামাযও নিয়মিত আদায় করতে হবে।
.
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ
.
شَهْرٌ كَتَبَ اللَّهُ عَلَيْكُمْ صِيَامَهُ، وَسَنَنْتُ لَكُمْ قِيَامَهُ، فَمَنْ صَامَهُ وَقَامَهُ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا خَرَجَ مِنْ ذُنُوبِهِ كَيَوْمِ وَلَدَتْهُ أُمُّهُ
.
রমজান মাসে আল্লাহ তোমাদের উপর রোযাকে ফরজ করেছেন, আর আমি তোমাদের জন্য এ মাসের রাতের কিয়াম তথা তারাবীহকে সুন্নত করেছি। সুতরাং যে ব্যক্তি রোযা ও তারাবীহ ঈমান ও সওয়াব পাবার আশায় করবে, সে ব্যক্তি গোনাহ থেকে এমনভাবে মুক্ত হবে, যেন সে মায়ের পেট থেকে জন্ম নিয়েছে। [সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১৩২৮, শুয়াবুল ঈমান লিলবায়হাকী, হাদীস নং-৩৬১৮)
.
قَالَ: رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ اللَّهَ افْتَرَضَ عَلَيْكُمْ صِيَامَهُ وَسَنَنْتُ لَكُمْ قِيَامَهُ، فَمَنْ صَامَهُ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ
.
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের উপর রমজানের রোযাকে ফরজ করেছেন, আর এর রাতে তারাবীহ পড়াকে আমি সুন্নত করেছি। সুতরাং যে ব্যক্তি রোযা রাখবে ঈমান ও সওয়াবের আশায় তার পিছনের সমস্ত গোনাহ মাফ হয়ে যাবে। [মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-৭৭০৫, শুয়াবুল ঈমান লিলবায়হাকী, হাদীস নং-৩৬১৯]
.
مَسْأَلَةٌ: قَالَ (وَقِيَامُ شَهْرِ رَمَضَانَ عِشْرُونَ رَكْعَةً) . (يَعْنِي) (صَلَاةَ التَّرَاوِيحِ) وَهِيَ سُنَّةٌ مُؤَكَّدَةٌ، وَأَوَّلُ مَنْ سَنَّهَا رَسُولُ اللَّهِ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – قَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ «كَانَ رَسُولُ اللَّهِ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – يَرْغَبُ فِي قِيَامِ رَمَضَانَ، مِنْ غَيْرِ أَنْ يَأْمُرَهُمْ فِيهِ بِعَزِيمَةٍ، فَيَقُولُ: مَنْ قَامَ رَمَضَانَ إيمَانًا وَاحْتِسَابًا، غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ (المغنى لابن قدامة-2/364)»
.
(قَوْلُهُ وَالْجَمَاعَةُ فِيهَا سُنَّةٌ عَلَى الْكِفَايَةِ إلَخْ) أَفَادَ أَنَّ أَصْلَ التَّرَاوِيحِ سُنَّةُ عَيْنٍ، فَلَوْ تَرَكَهَا وَاحِدٌ كُرِهَ، بِخِلَافِ صَلَاتِهَا بِالْجَمَاعَةِ فَإِنَّهَا سُنَّةُ كِفَايَةٍ، فَلَوْ تَرَكَهَا الْكُلُّ أَسَاءُوا؛ أَمَّا لَوْ تَخَلَّفَ عَنْهَا رَجُلٌ مِنْ أَفْرَادِ النَّاسِ وَصَلَّى فِي بَيْتِهِ فَقَدْ تَرَكَ الْفَضِيلَةَ، وَإِنْ صَلَّى أَحَدٌ فِي الْبَيْتِ بِالْجَمَاعَةِ لَمْ يَنَالُوا فَضْلَ جَمَاعَةِ الْمَسْجِدِ (رد المحتار، كتاب الصلاة، باب الوتر والنوافل، مبحث صلاة التراويح-2/495
.
.
তারাবীহ নামাযের চার রাকাতের পর বসে মুনাজাত করা যাবে কি?
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷
.
ব্যক্তিগতভাবে একাকী মুনাজাত করলে জায়েজ আছে। তবে এক্ষেত্রে সম্মিলিত মুনাজাত প্রমাণিত নয়। তা’ই সম্মিলিত মুনাজাত করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
.
واما سننها: وَمِنْهَا أَنَّ الْإِمَامَ كُلَّمَا صَلَّى تَرْوِيحَةً قَعَدَ بَيْنَ التَّرْوِيحَتَيْنِ قَدْرَ تَرْوِيحَةٍ يُسَبِّحُ، وَيُهَلِّلُ وَيُكَبِّرُ، وَيُصَلِّي عَلَى النَّبِيِّ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – وَيَدْعُو وَيَنْتَظِرُ أَيْضًا بَعْدَ الْخَامِسَةِ قَدْرَ تَرْوِيحَةٍ؛ لِأَنَّهُ مُتَوَارَثٌ مِنْ السَّلَفِ (بدائع الصنائع، كتاب الصلاة، فصل فى سننها والتراويح-1/648
.
.
উলামায়ে দেওবন্দের নিকট তারাবীহ পড়িয়ে বেতন নেয়া বৈধ?
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷
.
কোন মুহাক্কিক উলামায়ে দেওবন্দ শুধু তারাবীহ পড়িয়ে টাকা নেয়াকে জায়েজ বলেছেন মর্মে আমাদের জানা নেই।
.
মুহাক্কিক উলামায়ে দেওবন্দ এর ফতুয়াঃ
.
১. হাকীমুল উম্মত আশরাফ আলী থানবী রহঃ। [ইমদাদুল ফাতওয়া-১/৪৮৫]
.
২. আল্লামা যফর আহমাদ উসমানী রহঃ। [ইমদাদুল আহকাম-৩/৫৫৯]
.
৩. দারুল উলুম দেওবন্দের বর্তমান সকল শিক্ষক মুহাদ্দিস্ ও মুফতীদের সর্বসম্মত মতামত। [মুআওয়াজা আলাত তারাবীহ কি শরয়ী হাইসিয়্যাহত]
.
৪. মুফতী তাকী উসমানী দা.বা. এর দারুল উলুম করাচীর মুফতীদের ফাতওয়া। [মুআওয়াজা আলাত তারাবীহ কি শরয়ী হাইসিয়্যাহত]
.
৫. মুফতী সালমান মানসূরী দা.বা. এর নিগরানীতে লিখা আনওয়ারে রহমাত গ্রন্থ দ্রষ্টব্য। যার শেষের দিকে জায়েজের দাবিদারদের খন্ডনে বড় প্রবন্ধ প্রকাশ করা হয়েছে।
.
এ লিষ্ট অনেক দীর্ঘ। আমি শুধু বড় বড় কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির নাম লিখলাম। ইনশাআল্লাহ সামনের নাতিদীর্ঘ প্রবন্ধে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার ইচ্ছে রাখি। ওয়ামা তাওফীকি ইল্লাবিল্লাহ।
.
বিঃদ্রঃ
.
উলামায়ে কেরামের জন্য দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে প্রকাশিত “মুআওয়াজা আলাত তারাবীহ কি শরয়ী হাইসিয়্যাত” নামক ফাতওয়াটি সন্নিবেশিত করে দেয়া হল।
.
https://www.scribd.com/document/266420350/1391338104-Muawaza-alattarawih-Risala-pdf
.
অথবা
.
https://archive.org/details/1391338104MuawazaAlattarawihRisala1/mode/1up
.
.
খতম তারাবীর ইমামতি করে বিনিময় বা হাদিয়া নেওয়া জায়েয কি না?
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷
.
খতম তারাবীর বিনিময় দেওয়া-নেওয়া দুটোই নাজায়েয। হাদিয়ার নামে দিলেও জায়েয হবে না। এক মাসের জন্য নিয়োগ দিয়ে বেতন হিসাবে দিলেও জায়েয নয়। কারণ এক্ষেত্রেও প্রদেয় বেতন তারাবীহ এবং খতমের বিনিময় হওয়া স্বীকৃত।
.
মোটকথা, খতম তারাবীর বিনিময় গ্রহণের জন্য হিলা অবলম্বন করলেও তা জায়েয হবে না। কারণ খতমে তারাবীহ খালেস একটি ইবাদত, যা নামায ও রোযার মতো ‘ইবাদতে মাকসূদা’-এর অন্তর্ভুক্ত। আর এ ধরনের ইবাদতের বিনিময় বা বেতন দেওয়া-নেওয়া উম্মতে মুসলিমার ঐকমত্যের ভিত্তিতে নাজায়েয। এতে না কোনো মাযহাবের মতপার্থক্য আছে, না পূর্ববর্তী ও পরবর্তী ফকীহগণের মাঝে কোনো মতভেদ আছে।
.
ইমামতির বেতন ঠিক করা এবং তা আদায় করা যদিও পরবর্তী ফকীহগণের দৃষ্টিতে জায়েয, কিন্তু খতম তারাবীর বিনিময়টা ইমামতির জন্য হয় না; বরং তা মূলত খতমের বিনিময়ে হয়ে থাকে। আর তেলাওয়াতের বিনিময় গ্রহণ করা সকল ফকীহ্র নিকট হারাম। অধিকন্তু পরবর্তী ফকীহ্গণ যে ইমামতির বেতন জায়েয বলেছেন সেটা হল ফরযের ইমামতি। সুন্নাত জামাতের ইমামতি এর অন-র্ভুক্ত নয়।
.
আর হাফেযদের দেওয়া বিনিময়কে জায়েয করার জন্য এই হিলা অবলম্বন করা যে, শুধু রমযান মাসের জন্য তার উপর দু-এক ওয়াক্ত নামাযের দায়িত্ব দেওয়া হবে-এটা একটা বাহানামাত্র; যা পরিহার করা জরুরি। কারণ এই হিলার যে বিমিনয়টা তাকে ফরযের ইমাতির জন্য দেওয়া হচ্ছে আর তারাবীর খতম সে বিনিময়হীনভাবেই করে দিচ্ছে। কিন’ আপনার মনকে একটু প্রশ্ন করে দেখুন, যদি ওই হাফেয সাহেব তার দায়িত্বে অর্পিত ফরয নামাযের ইমামতি যথাযথ গুরুত্বের সাথেও আদায় করেন আর খতম তারাবীতে অংশগ্রহণ না করেন তবে কি তাঁকে ওই বিনিময় দেওয়া হবে, যা খতম তারাবী পড়ালে দেওয়া হত? এ কথা সুস্পষ্ট যে, কখনো তা দেওয়া হবে না। বোঝা গেল, বিনিময়টা মূলত খতম তারাবীর, ফরযের ইমামতির নয়। এ জন্যই আকাবিরের অনেকে এই হিলা প্রত্যাখ্যান করেছেন। আর দলীলের ভিত্তিতেও তাঁদের ফতওয়াই সহীহ।
(দেখুন : ইমদাদুল ফাতাওয়া ১/৩২২; ইমদাদুল আহকাম ১/৬৬৪)
.
সারকথা হল, কুরআন তেলাওয়াত, বিশেষত যখন তা নামাযে পড়া হয়, একটি খালেস ইবাদত, যা একমাত্র আল্লাহ তাআলার সন’ষ্টির জন্যই হওয়া চাই। তাতে কোনো দুনিয়াবী উদ্দেশ্য শামিল করা গুনাহ। নিচে এ বিষয়ে কিছু হাদীস, আছারের অনুবাদ ও ফিকহের উদ্ধৃতি পেশ করা হল।
.
১. হযরত আবদুর রহমান ইবনে শিবল রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, তোমরা কুরআন পড় তবে তাতে বাড়াবাড়ি করো না এবং তার প্রতি বিরূপ হয়ো না। কুরআনের বিনিময় ভক্ষণ করো না এবং এর দ্বারা সম্পদ কামনা করো না।’
(মুসনাদে আহমদ ৩/৪২৮; মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ৫/২৪০; কিতাবুত তারাবীহ)
.
২. ‘ইমরান ইবনে হোসাইন রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, তোমরা কুরআন পড় এবং আল্লাহ তাআলার কাছে প্রার্থনা কর। তোমাদের পরে এমন জাতি আসবে, যারা কুরআন পড়ে মানুষের কাছে প্রার্থনা করবে।’
(মুসনাদে আহমদ ৪/৪৩৭; জামে তিরমিযী ২/১১৯)
.
৩. ‘হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মা’কিল রা. থেকে বর্ণিত, তিনি এক রমযান মাসে লোকদের নিয়ে তারাবীহ পড়লেন। এরপর ঈদের দিন উবাইদুল্লাহ ইবনে যিয়াদ রাহ. তাঁর কাছে এক জোড়া কাপড় এবং পাঁচশ দিরহাম পাঠালেন। তখন তিনি কাপড় জোড়া ও দিরহামগুলো এই বলে ফেরত দিলেন যে, আমরা কুরআনের বিনিময় গ্রহণ করি না।’
(মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ৫/২৩৭)
.
আরো দেখুন : ফাতাওয়া শামী ৬/৫৭; তানকীহুল ফাতাওয়া হামীদিয়া ২/১৩৭-১৩৮; আলইখতিয়ার লিতা’লীলিল মুখতার ২/৬২; শিফাউল আলীল ওয়াবাল্লুল গালীল (রাসায়েলে ইবনে ইবনে আবেদীন) ১/১৫৪-১৫৫; ইমদাদুল ফাতাওয়া ১/৩১৫-৩১৯ ও ৩২২; রাফেউল ইশকালাত আনহুরমাতিল ইসি-জার আলাত্তাআত, মুফতিয়ে আযম হযরত মাওলানা মুফতী ফয়যুল্লাহ রাহ.।
.
.
রমযানের শেষে হাফেয সাহেবকে কিছু হাদিয়া দিয়ে থাকি, এটা কি জায়েয আছে?
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷
.
খতম তারাবীর জন্য হাফেয সাহেবদেরকে হাদিয়ার নামে বিনিময় দেওয়া ও তাদের জন্য তা গ্রহণ করা ঠিক নয়। কেননা এটি মূলত কুরআন মাজীদের তিলাওয়াত ও খতমেরই বিনিময়, যা নাজায়েয। হাদীস শরীফে এসেছে, আবদুর রহমান ইবনে শিবল রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমরা কুরআন পড়। তবে এর বিনিময়ে কোনো কিছু ভোগ করো না।
(মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৫৫৩৫)
.
আরেক বর্ণনায় আছে, আবদুল্লাহ ইবনে মা‘কিল রা. থেকে বর্ণিত, তিনি এক রমযানে লোকদের নিয়ে তারাবীহ পড়লেন। এরপর ঈদের দিন উবাইদুল্লাহ ইবনে যিয়াদ তাঁর কাছে এক জোড়া কাপড় এবং পাঁচশ’ দিরহাম পাঠালেন। তখন তিনি কাপড় জোড়া ও দিরহামগুলো এ বলে ফেরত পাঠালেন যে, আমরা কুরআনের বিনিময় গ্রহণ করি না।
(মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবাহ, হাদীস ৭৭৩৯)
.
আরো দেখুনঃ (আলমুহীতুল বুরহানী ১১/৩৪৪; মাজমুআতু রাসাইলি ইবনি আবিদীন ১/১৬৭; ফাতাওয়া খালীলিয়া পৃ. ১২২; ইমদাদুল ফাতাওয়া ১/৩১৫-৩২২)
.
তারাবীহর হাফেয সাহেবদেরকে দিয়ে ইশা ও বিতর পড়িয়ে হাদিয়া দেওয়া-নেওয়া লেনদেনের একটি অপকৌশলমাত্র। একজন লোক শুধু এক ওয়াক্ত নামায পড়ালে তাকে এতগুলো টাকা বেতন দেওয়া হয় না-এ কথা সবাই বুঝে। এ ধরনের হীলা-বাহানার পথ পরিহার করাই কর্তব্য।-ইমদাদুল ফাতাওয়া ১/৩২২; ইমদাদুল আহকাম ১/৬৬৪
.
.
তারাবির নামাজের হাদিয়া নেওয়া কি জায়েজ?
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷
.
এক. সূরা তারাবীহ পড়িয়ে টাকা নেয়া জায়েয আছে। কেননা, সূরা তারাবীতে মূল লক্ষ্য থাকে নামায পড়ানো। আর নামাযের ইমামতি করে বিনিময় গ্রহণ করা বৈধ। তাই সূরা তারাবীহ পড়িয়ে টাকা নেয়া যাবে।
.
পক্ষান্তরে খতম তারাবীতে যেহেতু কোরআন খতমই মূল লক্ষ্য থাকে, তাই খতম তারাবীহ পড়িয়ে টাকা নেয়া ও দেয়া জায়েয নেই। কেননা, তা কোরআন খতমেরই বিনিময় বলে গণ্য হবে। বিশেষ করে বর্তমানে আমাদের সমাজে রমযানের শেষে যে পদ্ধতিতে হাফেজগণের জন্য চাঁদা উঠানো হয় এবং হাফেজ সাহেবদের তা প্রদান করা হয়, তা সম্পূর্ণ নাজায়েয ও হারাম। কেননা, উক্ত পদ্ধতিতে শরিয়তে নিষিদ্ধ একাধিক কারণ বিদ্যমান।
(ফতোয়ায়ে শামী ৬/৫৭, আল-বাহরুর রায়েক ৮/২৩, মাজমাউল আনহুর ৩/৫৩৩)
.
এর দলিল হল,
.
১. আল্লাহ তাআ’লা বলেন,
.
وَلَا تَشْتَرُوا بِآيَاتِي ثَمَنًا قَلِيلًا وَإِيَّايَ فَاتَّقُونِ
.
আর আমার আয়াতের অল্প মূল্য দিও না। এবং আমার (আযাব) থেকে বাঁচ। (সুরা বাকারা ৪১)
.
২. সুলাইমান ইবন বুরাইদা তাঁর পিতা থেকে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
.
مَنْ قَرَأَ الْقُرْآنَ يَتَأَكَّلُ بِهِ النَّاسَ جَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَوَجْهُهُ عَظْمٌ ، لَيْسَ عَلَيْهِ لَحْمٌ
.
যে ব্যক্তি কোরআন তেলাওয়াত করে বিনিময়ে মানুষ থেকে ভক্ষণ করল, সে কিয়ামতের দিন এমন অবস্থায় উঠবে যে, তার চেহারায় হাড্ডি থাকবে, কোনো প্রকার গোশত থাকবে না।
(বাইহাকি, শু’আবুল ঈমান ৪/১৯৬)
.
৩. ইমরান ইবনে হুসাইন রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ ﷺ-কে বলতে শুনেছি,
.
مَنْ قَرَأَ القُرْآنَ فَلْيَسْأَلِ اللَّهَ بِهِ، فَإِنَّهُ سَيَجِيءُ أَقْوَامٌ يَقْرَءُونَ القُرْآنَ يَسْأَلُونَ بِهِ النَّاسَ
.
তোমরা কোরআন পড়ো এবং আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রার্থনা করো। তোমাদের পরে এমন জাতি আসবে, যারা কোরআন পড়ে মানুষের কাছে প্রার্থনা করবে।
(মুসনাদে আহমদ ১৯৯১৭ তিরমিযি ২৯১৭)
.
৪. আবদুর রহমান ইবনে শিবল রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ ﷺ-কে বলতে শুনেছি,
.
اقْرَءُوا الْقُرْآنَ وَلَا تَغْلُوا فِيهِ وَلَا تَجْفُوا عَنْهُ وَلَا تَأْكُلُوا بِهِ وَلَا تَسْتَأْثِرُوا بِهِ
.
তোমরা কোরআন পড়ো। তবে তাতে বাড়াবাড়ি করো না। এর প্রতি বিরূপ হয়ো না। কোরআনের বিনিময় ভক্ষণ করো না এবং এর দ্বারা সম্পদ কামনা করো না।
(মুসনাদে আহমদ ১৫৫২৯ মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৫/২৪০)
.
৫. আবদুল্লাহ ইবনে মা’কাল রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি এক রমজানে লোকদের নিয়ে তারাবি পড়ালেন। এরপর ঈদের দিন উবাইদুল্লাহ ইবনে জিয়াদ রাযি. তাঁর কাছে একজোড়া কাপড় এবং ৫০০ দিরহাম পাঠালেন। তখন তিনি কাপড় জোড়া এবং দিরহামগুলো এই বলে ফেরত দিলেন, إِنَّا لَا نَأْخُذُ عَلَى الْقُرْآن أَجْرًاআমরা কোরআনের বিনিময় গ্রহণ করি না। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৭৮২১)
.
এরূপ আরো বহু হাদিস ও দলিল প্রমাণের আলোকে উম্মতের ফকিহগণ তারাবীতে পবিত্র কোরআন খতমের বিনিময়ে বা হাদিয়া দেওয়া-নেওয়া সম্পূর্ণরূপে হারাম বলেছেন।
.
দুই. তারপরও একটি বিষয় থেকে যায়, তাহলো মুসলমানগণের আবেগ, হাফেজদের মূল্যায়ন করা তাদের খেদমত করা, তা কিভাবে সম্ভব? মুসলমানদের এরূপ আবেগ, ভক্তি-ভালোবাসা থাকা স্বাভাবিক। কারণ পবিত্র কোরআনের হাফিজের অগণিত ফজিলত হাদিস শরিফে এসেছে। তাই হাফেজদের মূল্যায়ন করা, মুহাব্বত করা, তাদের যথাসম্ভব খেদমত করা সব মুসলমানের জন্য জরুরি বিষয়। শরিয়তে এরও পদ্ধতি ভিন্নভাবে আছে। রমজানসহ সারা বছর তাদের খেদমত করার সুযোগ আছে। যেমন-
.
১. এ ক্ষেত্রে মুসলমানদের সর্বপ্রথম দ্বীনি দায়িত্ব হলো পবিত্র কোরআনের হাফিজকে আন্তরিকভাবে ভালোবাসা ও ভক্তি করা। এই ভালোবাসা ও ভক্তি সব সময়ের জন্য, সারা বছরের জন্য। শুধু রমজানের জন্য সীমাবদ্ধ নয়।
.
২. পবিত্র কোরআন ও হাফেজে কোরআনের মুহাব্বত তখনই প্রকাশ পাবে, যদি অন্তরে নিজের সন্তানকে হাফেজে কোরআন বানানোর ইচ্ছা করা হয় এবং চেষ্টা করা হয়।
.
৩. রমজান মাসে যে হাফেজের পেছনে তারাবীহ পড়া হবে, তার খানাপিনার ক্ষেত্রে সর্বোন্নত ব্যবস্থা করা যায়।
.
৪. তাদের যাতায়াতের জন্য সবচেয়ে উন্নত গাড়ি ব্যবহার করা যায়।
.
৫. সারা বছর যারা পবিত্র কোরআন হিফজ করার কাজে নিয়োজিত, এরূপ ছাত্র-শিক্ষকদের যেকোনো খেদমত যেকোনো সময় আঞ্জাম দেওয়া যায়। নিজের সাধ্যমতো হাফেজদের খোঁজখবর রাখা, তাদের জরুরত পূরণ করা। তাদের খানাপিনার ব্যবস্থা করা ইত্যাদি।
.
এভাবে হাফেজদের যথাযথ খিদমত আঞ্জাম দেওয়া ও আন্তরিক ভালোবাসা দিয়ে তাদের অভিভাবকত্ব করার ফজিলত অপরিসীম। আল্লাহ আমাদের বৈধ পদ্ধতিতে হাফেজদের যথাযথ মূল্যায়ন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
.
.
তারাবীহ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ ভিডিও লিংকঃ
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷
.
১. তারাবীর সূচনা ও পরিচিতি
.
https://youtu.be/zIL12uzS4qw
.
২. সহীহ হাদীসের আলোকে তারাবীহ নামায বিশ রাকাত [ভিডিও]
.
https://youtu.be/L_cpxO3YivM
.
৩. ছালাত বিষয়ে মুযাফফর বিন মুহসিনের জালিয়াতি [পর্ব-১]
.
https://youtu.be/AkCoUTs-mwo
.
৪. আট রাকাত তারাবীহ প্রমাণে শায়েখ মুরাদ বিন আমজাদের নজীরবিহীন জালিয়াতি
.
https://youtu.be/3ftnEbcRuZY
.
৫. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কত রাকাত তারাবীহ পড়তেন?
.
https://youtu.be/EajVNajj79c
.
৬. খুলাফায়ে রাশেদীন কত রাকাত তারাবীহ পড়েছেন?
.
https://youtu.be/_vTsd6RrWD0
.
৭. শায়েখ ইবনে তাইমিয়া ও আরব আলেমদের দৃষ্টিতে তারাবীহ নামায কত রাকাত?
.
https://youtu.be/FfbYHS9m3Oo
.
৮. তারাবীহ নামায আট রাকাত না বিশ রাকাত?
.
https://youtu.be/5lPB562-1y8
.
৯. তারাবী তাহাজ্জুদ এক নামায নয়ঃ এক বলা তরাবীহ অস্বিকারের নিফাকী পদ্ধতি [ভিডিও]
.
https://youtu.be/n27wdcXb1SY
.
১০. তাওহীদ পাবলিকেশন্সের বুখারী অনুবাদে তারাবী বিষয়ে নজীরবিহীন জালিয়াতি
.
https://youtu.be/B-6d4aMvZOA
.
১১. শায়েখ আকরামুজ্জামান বিন আব্দুস সালামের অবিশ্বাস্য জালিয়াতি
.
https://youtu.be/gza-byoHwck
.
১২. ইফতারের পূর্ব মুহুর্তের দুআঃ এক মিনিট ১৬ সেকেন্ডে মুযাফফর বিন মুহসিনের ১০টি ভুল তথ্য প্রদান!
.
https://youtu.be/9uWFgy105L4
.
১৩. আট রাকাত তারাবী দাবিদারদের প্রতি চ্যালেঞ্জঃ আপনারা উল্টো লটকে যেতে পারেন কিন্তু আপনাদের স্বীয় আমলের স্বপক্ষে কোন দলীল পেশ করতে পারবেন না!
.
https://youtu.be/W-mKVV3JxPU
.
১৪. তারাবীহ নামায আট রাকাত না বিশ রাকাত? বয়ান-১বয়ান-২
.
https://youtu.be/5lPB562-1y8
.
১৫. তারাবীহ নামায আট রাকাত দাবিদারদের স্বপক্ষে কোন দলীল নেই! [ভিডিও]
.
https://youtu.be/Gstqy65Geng
.
১৬. রমজান মাসের গুরুত্বপূর্ণ দু’টি আমলঃ ফরজ রোযা এবং সুন্নত তারাবীহ
.
https://youtu.be/oy76QoCsdwA
.
১৭. আট রাকাত তারাবীর সূচনা হয়েছে বিন বাযের রহঃ ফতোয়া থেকে
.
https://youtu.be/MMD3iGb6GzY
.
১৮. তারাবীহ আর তাহাজ্জুদ কি একই নামাজ ? মূর্খ আব্দুর রাজ্জাকের মিথ্যাচারের জবাব
.
https://youtu.be/V4-hfg13YFg
.
১৯. মুজাফফর বিন মুহসিনের কবলে রাসুল সাঃ এর নামাজ
.
https://youtu.be/MYZH8KVI-cw
.
২০. তারাবীহ ও ইদের নামাজের হাদিস নিয়ে মুজাফফর বিন মুহসিনের অবিশ্বাস্য জালিয়াতির নমুনা দেখুন
.
https://youtu.be/ZR6XyqHpSwc
.
২০. হাদিসে রাসুল সাঃ সাহাবা আজমায়ীন রাঃ ও সালাফে সালেহীন্দের আমলের মাধ্যমে তারাবীর রাকাত সংখ্যা কত?
.
https://youtu.be/M1XWTDdvRho
.
২২. ফিরকায়ে আহলে হাদীস, ৮ রকায়াত তারাবীহ কি দিয়ে প্রমান করবে ??? – Molana Ilyas Ghuman
.
https://youtu.be/FOZzN8EVMb0
.
২৩. বিশ রাকাত তারাবি নামাজ নিয়ে এ কেমন জালিয়াতি শায়খ আকরামুজ্জামান সাহেবের
.
https://youtu.be/AuU9t5M84G8
.
২৪. আহলে হাদিস লা-মাঝাবীদের মিথ্যাচার, আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মীরির কি আট রাকাত তারাবির পক্ষে বলেছেন
.
https://youtu.be/314GCANnGvQ
.
২৫. ইমাম বুখারী রাহঃ তারাবীহ পড়ে তাহাজ্জুদ ও পড়তেন। তারাবীহ তাহাজ্জুদ এক নামাজ নয়
.
https://youtu.be/4ZLmytT9gXA
.
২৬. বাহাস শেষ পর্যন্ত বাহাসে হেরে ২০ রাকাত তারাবীহ মেনে নিল লা-মাজহাবী সম্প্রদায়
.
https://youtu.be/6zPf0VTGt1I
.
২৭. হযরত আয়েশা রা এর ১১ রাকাআতের হাদীসটি কি তারাবিহ নাকি তাহাজ্জুদের
.
https://youtu.be/cI7MFdg8OHs
.
২৮. তারাবীহ নামাজের ব্যাপারে ইমাম বুখারী রাহঃ এর আমল ও মা আয়শা রাঃ এর হাদিসের ব্যাখ্যা
.
https://youtu.be/pKfhSEd8Jkg
.
২৯. মসজিদুল হারামে কি তারাবিহ’র দুটি জামাত হয় , by Shaykh Tahmidul Mawla
.
https://youtu.be/bA40c5pOrZQ
.
৩০. দলীলের আলোকে ও সালাফদের মতামত অনুসারে উমর রা এর জামানায় পঠিত তারাবিহ নামায
.
https://youtu.be/Ji2UT9IaQkA
.
৩১. তারাবীহ তাহাজ্জুদ এক প্রমাণে আল্লামা কাশ্মীরী রহ এর কথা কাটছাঁট করেছেন শেখ মতিউর রহমান মাদানী
.
https://youtu.be/ai-WcPnWrxo
.
https://youtu.be/Fc6KtWHAvcM
.
৩২. তারাবিহ ও তাহাজ্জুদ নামাযকে নিয়ে আহলে হাদীস ও সালাফী আলেমদের মাঝে চরম মতবিরোধ
.
https://youtu.be/Z-uPVAwtsBY
.
৩৩. ঠেলা খেয়ে কাজী ইব্রাহিমের মুখে এখন নতুন সুর
.
https://youtu.be/MpPsFeBBxJE
.
৩৪. তারাবীহ নামাজের বেপারে আহলে হাদিস ফিরকার জাহিলি দেখুন
.
https://youtu.be/XAQYMa0E2OQ
.
৩৫. তারাবীহর নামাযের রাকায়াত সংখ্যা ২০ রাকায়াত
.
https://youtu.be/oyMImRzi6tc
.
৩৬. তারাবিহের নামাজ কেন ২০ রাকাত ?- শায়খ গোলামুর রাহমান (পর্ব-১)
.
https://youtu.be/ev0KPRfWCAU
.
৩৭. তারাবি কি ৮ রাকাত ? – শায়খ গোলামুর রাহমান (পর্ব-২)
.
https://youtu.be/kjDU-PolE1k
.
৩৮. তাওহীদ পাবলিকেশন এর কুরূচিপূর্ণ জালিয়াতীর নমূনা (পর্ব-১)
.
https://youtu.be/zSnCHWorKQQ
.
৩৯. আরাব উলামা দের দৃষ্টিতে ২০ রাকাআত তারাবি নামাজ (পর্ব-১)
.
https://youtu.be/CI2IKKN_snk
.
৪০. আরাব উলামা দের দৃষ্টিতে ২০ রাকাআত তারাবি নামাজ (পর্ব-২), by Shaykh Tahmidul Maula
.
https://youtu.be/-fieNza4Cx0
.
৪১. আট রাকাআত তারাবি প্রমাণ করতে গিয়ে এ কেমন মিথ্যাচার আহলে হাদীস ভাইদের ? (পর্ব-৩)
.
https://youtu.be/Tdf9bZOwzpw
.
৪২. বিশ রাকাআত তারাবি নামাজ নিয়ে এ কেমন জালিয়াতি শায়খ আকরামুজ্জামান সাহেবের
.
https://youtu.be/AuU9t5M84G8
.
৪৩. তারাবীহ তাহাজ্জুদ কি এক নামায? মতিউর রহমান মাদানীদের মিথ্যাচারের জবাব By Muftl Lutfor Rahman Farazi
.
https://youtu.be/n27wdcXb1SY
.
৪৪. আহমদ ইবনে হাম্বল রহ কি আট রাকাত তারাবিহ এর ইজমার কথা উল্লেখ করেছেন
.
https://youtu.be/RQgv5xI46uY
.
৪৫. মক্কা ও মদীনায় পঠিত ২০ রাকায়াত তারাবিহ নিয়ে গাইরে মুকাল্লিদ ভাইদের অসত্য বক্তব্যের জবাব
.
https://youtu.be/65KvDHzhonE
.
৪৬. হযরত আয়েশা রা এর ১১ রাকাআতের হাদীসটি কি তারাবিহ নাকি তাহাজ্জুদের
.
https://youtu.be/cI7MFdg8OHs
.
৪৭. লা-মাজহাবীদের এবারের আন্দোলন তারাবীহ ভুলিয়ে দেবার আন্দোলন, ইহুদীর স্বপ্ন বাস্তবায়ন কারিদের ফিতনা
.
https://youtu.be/y-QnWFk_o1M
.
৪৮. Taraweeh 8 or 20 rakat debate Resolved! Caught changing [Tahreef] the Daleel Proof Hadith of Tarawih
.
https://youtu.be/RFJVuiuM3tY
.
৪৯. হযরত উমর রাঃ এর নামে আট রাকাত তারাবীহের যে হাদিস লা মাযহাবীরা প্রচার করে, দেখে নিন সেই হাদিসের হাকিকত ও লা-মাযহাবীদের জালিয়াতি
.
https://youtu.be/oX4YsN3hy9I
.
৫০. বুখারী থেকে তারাবী অধ্যায় উলামায়ে দেওবন্দ উঠিয়ে দিয়েছেন?
.
https://youtu.be/eIJsBFOK8LU
.
৫১. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কত রাকাত তারাবীহ পড়েছেন?
.
https://youtu.be/_vTsd6RrWD0
.
৫২. তারাবীহ সালাত আট রাকাত হতেই পারে না!
.
https://youtu.be/twx0-fMUFbA
.
.
আল্লাহপাক আমাদের সকলকে দ্বীনের সহিহ বুঝ দান করুন। আমীন।

Leave a comment

search previous next tag category expand menu location phone mail time cart zoom edit close