ইমাম বুখারীর উস্তাদ ও ইমাম আবু হানীফা রহ. এর শাগরিদ মক্কী বিন ইবরাহীমের জীবন যেভাবে আমূল পরিবর্তন সূচিত হলো!

ইমাম বুখারীর উস্তাদ ও ইমাম আবু হানীফা রহ. এর শাগরিদ মক্কী বিন ইবরাহীমের জীবন যেভাবে আমূল পরিবর্তন সূচিত হলো!
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷
.
মাওলানা মুহসিনুদ্দীন খান
.
 ইতিহাস প্রসিদ্ধ বিশ্বখ্যাত হাদীসের ইমাম, ইমাম মক্কী বিন ইবরাহীম হলেন হাদীস শাস্ত্রের দিকপাল ইমাম আবু হানীফা (রঃ) এর হাতেগড়া বিশিষ্ট শাগরেদদের অন্তর্ভূক্ত। সদরুল আয়িম্মা মক্কী “মানাকিবুল ইমাম আ‘যম” কিতাবে (১/ ২০৩) লিখেন,

هو مكى بن ابراهيم البلخى امام بلخ دخل الكوفة سنة اربعين ومائة ولزم ابا حنيفة رحمه الله وسمع منه الحديث والفقه واكثر عنه الرواية .

অর্থাৎ তিনি মক্কী বিন ইবরাহীম বলখী। বলখের ইমাম। ১৪০হিজরীতে কুফায় আগমণ করেন। এবং সার্বক্ষণিকভাবে তিনি ইমাম আবু হানীফার খেদমতেই থাকেন। তাঁর থেকে হাদীস ও ফিকহ্ শ্রবণ করেন।এবং তাঁর থেকে অধিক সংখ্যক হাদীস বর্ণনা করেন। ইমাম মক্কী হাদীস শাস্ত্রের শীর্ষ পর্যায়ের ইমাম ছিলেন। ইমাম যাহাবী (রঃ) তাঁর আকর গ্রন্থ “তাযকিরাতুল হুফ্ফাজ”( হুফফাজে হাদীস মনীষীদের পরিচিতি মূলক জীবনীকোষ)কিতাবে তাঁকে উল্লেখ করেছেন নিম্নোক্ত শব্দে

                مكى بن ابراهيم الحافظ الامام شيخ خراسان ابوالسكن التميمى الحنظلى

শীর্ষ পর্যায়ের হাদীসের ইমামগণ ছিলেন তাঁর শাগরেদ । ইমাম আহমদ বিন হাম্বল,ইমাম ইয়াহ্ইয়াহ্ বিন মায়ীন,ইমাম যুহ্লী,এবং ইমাম বুখারী তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। ইমাম বুখারী (রঃ) এর অধিকাংশ ( অর্থাৎ বাইশটির মধ্যে এগারটি)  ছুলাছিয়াত তাঁরই সূত্রে বর্নিত। (তাযকিরাতুল হুফ্ফাজ )

ইমাম আবু হানীফাই সর্বপ্রথম তাঁকে ইলম অর্জনের প্রতি দৃষ্টি নিবন্ধ করেন। সুতরাং ইমাম হারেসী, আব্দুস সামাদ বিন ফজল এর উদ্ধিৃতিতে তাঁর থেকেই বর্ণনা করেছেন যে, আমি ব্যাবসা বাণিজ্য করতাম।একবার ইমাম আযমের খেদমতে আসলে তিনি বলতে লাগলেন, মক্কী ! তুমি ব্যাবসা বাণিজ্য তো কর কিন্তু ব্যাবসা -বাণিজ্যের ( হালাল  – হারামের) ইলম না থাকলে এর মধ্যে অনেক অপকার ও ক্ষতি রয়েছে। অতএব তুমি ইলম কেন শিখছ না এবং হাদীস কেন লিখছ না ?. ইমাম আবূ হানীফা রহ. বরাবরই আমাকে এ দিকে মনোযোগ আকর্ষন করতে লাগলেন, এমনকি আমি তা  অর্জন করা শুরু করলাম এবং ইলম লিপিবদ্ধ করার প্রতি মনোনিবেশ করলাম । পরিশেষে আল্লাহ্ তাআলা আমাকে অনেক কিছুই দান করেছেন। এজন্য আমি প্রতি নামাযের পরে এবং যখনই ইমাম আযমের কথা স্মৃতিপটে আসে তখন তাঁর জন্য (প্রাণ খুলে) কল্যানের দোআ করি । لان الله تعالى ببركته فتح لى باب العلم  কেননা আল্লাহ্ তাআলা তাঁরই কল্যাণ ও বরকতে  আমার জন্য ইলমের অবারিত দ্বার উন্মুক্ত করেছেন । (ছদরুল আয়িম্মা মক্কী কৃত “মানাকিবুল ইমাম আযম” ২/১৬১)                                                                                                                         ইসমাইল বিন বিশর বর্ণনা করেন যে, একবার আমরা ইমাম মক্কী বিন ইবরাহীম এর দরসের মজলিসে উপস্থিত ছিলাম। তিনি বর্ণনা শুরু করলেন  حدثنا ابوحنيفة   উপস্থিতদের মধ্যে এক অপরিচিত ব্যক্তি চিৎকার করে বললো حدثنا عن ابن جريج ولا تحدثنا عن ابى حنيفة (আমাদেরকে ইবনে জুরাইজের হাদীস বর্ণনা করুন। আবু হানীফার হাদীস বর্ণনা করবেন না।) তার উপর ইমাম মক্কী এত রাগান্বিত হলেন যে, চিহারার রঙ পরিবর্তন হয়ে গেল। তিনি বলতে লাগলেন,

انا لا نحدث السفهاء حرمت عليك ان تكتب عنى قم من  مجلسى .

(আমরা বেয়াকুফ ও নির্বোধদের কাছে হাদীস বর্ণনা করি না। আমার কাছ থেকে হাদীস লিখা তোমার জন্য হারাম। তুমি আমার মজলিস থেকে উঠে যাও।) সুতরাং যতক্ষণ পর্যন্ত ঐ ব্যক্তিকে দরসের মজলিস থেকে উঠানো না হলো তিনি হাদীস বর্ণনা করলেন না। যখন সে বের হলো তখন আবার সেই

حدثنا ابوحنيفة      এর সিলসিলা ও ধারাবাহিকতা শুরু হলো। (ছদরুল আয়িম্মা মক্কী কৃত “মানাকিবুল ইমাম আযম” ১/২০৪)

হানাফী কিতাব ও হানাফী উস্তাদের মাধ্যমে ইমাম বুখারীর হাদীস শিক্ষার হাতে খড়ি/

যার মাধ্যমে ও যে কিতাবের মাধ্যমে ইমাম বুখারীর হাদীস শিক্ষার হাতে খড়ি:/

ইমাম বুখারীর উস্তাদ, হানাফী মাযহাব অবলম্বী ইমাম আবু হাফস কাবীর এর সংক্ষিপ্ত পরিচয়:-  .                                                                                                ইমাম মুহাম্মাদের রেওয়ায়েতকৃত “কিতাবুল  আছারের” মুদ্রিত নুসখা যেহেতু  ইমাম আবু হাফস কাবীর এর সূত্রে বর্ণিত তাই নিম্নে তাঁর সংক্ষিপ্ত পরিচয় উল্লেখ করা হলো।  তাঁর নাম আহমদ বিন হাফস । এবং কুনিয়াত আবু হাফস। তাঁর ছেলের নাম মুহাম্মাদ বিন আহমদ বিন হাফস । যিনি আবু হাফস সগীর নামে পরিচিত। যেহেতু পিতা পুত্র উভয়ের কুনিয়াত হলো আবু হাফস সেকারণে পিতাকে কাবীর এবং পুত্রকে সগীর বলা হয়। তাঁরা বুখারার ঐ সকল ইতিহাসখ্যাত ইমামদের অন্তরভূক্ত ছিলেন যাদের শ্বাস ও ফুতকারে সেখানে ইলমে হাদীসের বাজার গরম ছিল। ইমাম আবু হাফস কাবীর  ইমাম আবু ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মাদ এর নিকট থেকে ফিকহ্ শিক্ষা করেন। হাফেজ যাহাবী রহ. তাঁর বিশ্বনন্দিত ‘সিয়ারু আলামিন নুবালা’ গ্রন্থের চৌদ্দতম তবকায় (বয়সের এবং সমকালীন মাশায়েখের শিষ্যত্ব গ্রহণে যে সকল সমকালীন মনীষীবগের্র মাঝে মিল রয়েছে।)আবু হাফস কাবীর এর ছেলে মুহাম্মাদ বিন আহমদ বিন হাফস এর জীবনীতে লিখেছেন যে,

 وكان ابوه من كبار تلامذة محمد بن الحسن انتهت اليه رياسة الاصحاب ببخارا .

তাঁর পিতা (ইমাম আবু হাফস কাবীর) ইমাম মুহাম্মাদের শীর্ষ পর্যায়ের শাগরেদদের অর্ন্তভূক্ত। এবং বুখারায় হানাফী আলেমদের কিয়াদাত ও নেতৃত্ব তাঁর উপর পরিসমাপ্তি হয়।

হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহ.ও ফতহুল বারীর ভূমিকায় ইমাম আবু হাফস কাবীরকে ইমাম বুখারীর মাশায়েখদের অন্তরভূক্ত করেছেন। ইমাম বুখারীর ব্যাপারে ইমাম আবু হাফস কাবীরের এ উক্তি উদ্ধৃতি করেছেন যে,  هذا يكون له صيت  একসময় সে (বুখারীর) প্রসিদ্ধি  ও খ্যাতি লাভ করবে। ( মুকাদ্দিমায়ে ফতহুল বারী পৃ: ৪৮২) ইমাম আবু হাফস কাবীর ইন্তেকাল করেন ২১৭ হিজরীতে। তিনি ইমাম শাফেয়ীর সমবয়সী ছিলেন। (ইমাম ইবনে মাজাহ্ আওর ইলমে হাদীস ১৮৫, ১৮৬)

জামে সুফিয়ান সাওরী ও ইমাম বুখারীর হাদীস শিক্ষাগ্রহণঃ-

ইমাম সুফিয়ান সাওরী রহ.কুফার বাসিন্দা ছিলেন। ফিকহের ক্ষেত্রে সাধারণত তাঁর ও ইমাম আযমের একই মাযহাব। ইমাম তিরমিযী রহ.তাঁর “জামে তিরমীযীতে” সুফিয়ান সাওরীর মাযহাব তথা মতামত উল্লেখ করেন। যার অধিকাংশই ইমাম আবু হানীফার মতানুযায়ী হয়ে থাকে। ইমাম আবু ইউসুফ বলতেন যে, سفيان الثورى اكثر متابعة لابى حنيفة منى    সুফিয়ান সাওরী আমার চেয়েও বেশি ইমাম আবু হানীফার অনুসারী ছিলেন। (হাফেজ ইবনে আব্দুল বার কৃত “আল ইনতিকা ফি ফাযায়িলিছ ছালাছাতিল আয়িম্মাতিল ফুকাহা পৃ:১২৮. মিসরী ছাপা ১৩৫০ হিজরী ) ইমাম সুফিয়ান সাওরী যদিও স্বয়ং ইমাম আবু হানীফার দরসের মজলিসে উপস্থিত হয়েছেন। এবং তাঁর থেকে হাদীসও বর্ণনা করেছেন। কিন্তু ইমাম আবু হানীফার ফিক্হকে তিনি গ্রহণ করেছেন আলী বিন মুসহির থেকে । যাকে ইমাম আযমের বিশিষ্ট শাগরেদদের মধ্যে গণ্য করা হয়। ইমাম সুফিয়ান সাওরী রহ. তাঁর “জামে সুফিয়ান সাওরী” সংকলনের কাজেও বেশির ভাগ তাঁর থেকে সহযোগিতা নিয়েছেন। ইমাম ইয়াযীদ বিন হারুন বলেন যে,

كان سفيان ياخذ الفقه عن على بن مسهر من قول ابى حنيفة وانه استعان به وبمذاكرته على كتابه هذا الذى سماه الجامع .

সুফিয়ান সাওরী ইমাম আবু হানীফার ফিক্হকে আলী বিন মুসহির থেকে গ্রহণ করতেন। এবং তাঁরই সহযোগিতায় ও মুযাকারায় তথা পারস্পারিক আলোচনায় তিনি তাঁর এ কিতাব -যার নাম “জা‘মে” রেখেছেন  -সংকলন করেন। সুফিয়ান সাওরী কৃত জা‘মে একসময় মুহাদ্দিসদের মধ্যে খুব মাকবুল ও বিপুল সমাদৃত ছিল। সুতরাং ইমাম বুখারী যখন ইলমে হাদীস অর্জন করা শুরু করলেন তখন সর্বপ্রথম যে কিতাবের দিকে তিনি দৃষ্টি নিবন্ধ করেন তা ছিল সুফিয়ান সাওরী কৃত জা‘মে এবং আব্দুল্লাহ্ ইবনে মুবারক,এবং ওয়াকী এর তাসনীফাত ( গ্রন্থাবলী)। ইমাম বুখারী তাঁর নিজ দেশ বুখারাতেই ইমাম আবু হাফস কাবীর এর নিকট থেকে ‘জা‘মে সুফিয়ান সাওরী’ শ্রবণ করেন। মুহাদ্দিস খতীব বাগদাদী সনদ সহ বর্ণনা করেন যে,

اخبرني أبو الوليد قال أنبأنا محمد بن أحمد بن سليمان الحافظ قال نبأنا أبو عمرو أحمد بن محمد بن عمر المقرئ وأبو نصر أحمد بن أبى حامد الباهلى قالا سمعنا أبا سعيد بن بكر بن منير يقول سمعت محمد بن إسماعيل بن إبراهيم بن المغيرة الجعفي يقول كنت عند أبى حفص أحمد بن حفص اسمع كتاب الجامع جامع سفيان في كتاب والدي فمر أبو حفص على حرف ولم يكن عندي ما ذكر فراجعته فقال الثانية كذلك فراجعته الثانية فقال كذلك فراجعته الثالثة فسكت سويعة ثم قال من هذا قالوا هذا ابن إسماعيل بن إبراهيم بن بردزبة فقال أبو حفص هو كما قال واحفظوا فان هذا يوما يصير رجلا.

মুহাম্মাদ বিন ইসমাইল বিন ইবরাহীম বিন মুগীরা জু‘ফী (ইমাম বুখারী) বর্ণনা করেছেন যে, আমি  জা‘মে সুফিয়ান সাওরীর শ্রবণ আবু হাফস (কাবীর) আহমদ বিন হাফস এর নিকট আমার পিতার কিতাবে করছিলাম।তিনি একটি হরফ অতিক্রম করলেন যা আমার এখানে ছিল না । আমি তাঁর কাছে মুরাজাআত করলাম ( তথা তাঁর শরনাপন্ন হলাম) তিনি দ্বিতীয় বার তাই বললেন। আমি দ্বিতীয় বার মুরাজাআত করলে তিনি পুনরায় তাই বললেন। পরিশেষে আমি তৃতীয়বার মুরাজাআত করলে তিনি কিছুক্ষণ চুপ থাকলেন এবং জিজ্ঞাসা করলেন ইনি কে? লোকজন বললো, ইসমাইল বিন ইবরাহীম বিন বারদিঝবা এর ছেলে। আবু হাফস বললেন , সে সঠিক বলেছে ।স্মরণ রেখ!এই ছেলে এক দিন মহাপুরুষ হবে। (ইমাম ইবনে মাজাহ্ আওর ইলমে হাদীস ১৮৬পৃ:)

টীকাঃ- কোন কোন গ্রন্থাগার লিখেছেন যে ,যদি কুতুবে সিত্তাহ এবং অন্যান্য প্রসিদ্ধ হাদীসের কিতাবসমূহ থেকে ইমাম আযম রহ.এর শাগরেদদের সনদের হাদীস সমূহ পৃথক করে ফেলা হয় , তাহলে বাকী অংশ শূণ্যের কোঠায় রয়ে যাবে । নি¤েœর সনদ গুলো লক্ষ্য করুন তাহলে বিষয়টি আরো সুস্পষ্ট হবে।

সনদ নং ১ এর চিত্র।

ইমাম আবু হানীফা রহ.

ওয়াকী ইবনুল জাররাহ্

আহমদ বিন মানী’

ইমাম বুখারী

 

সনদ নং ২ এর চিত্র –

ইমাম আবু হানীফা রহ.

ওয়াকী ইবনুল জাররাহ্

আলী ইবনুল মাদীনী

ইমাম বুখারী

 

সনদ নং ৩ এর চিত্র –

ইমাম আবু হানীফা রহ.

মক্কী বিন ইবরাহীম

ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম

 

সনদ নং ৪ এর চিত্র- –

ইমাম আবু হানীফা রহ.

আবু নুআইম ফযল ইবনে দুকাইন

ইমাম আহমদ বিন হাম্বল

ইমাম আবু দাউদ ও ইমাম মুসলিম

সনদ নং ৫ এর চিত্র–

ইমাম আবু হানীফা রহ.

আবু নুআইম ফযল ইবনে দুকাইন

হাফেজ যুহ্লী

ইমাম বুখারী

ইমাম তিরমীযী

(কাশফুল গুম্মাহ বিছিরাজিল উম্মাহ .পৃঃ নং ১৪,১৫.)

উল্লেখ্য যে,  হাদীস শাস্ত্রে ইমাম বুখারীর দাদা উস্তাদ ইমাম আবু হানীফা রহ.-এর  অবিস্মরনীয় অবদানের উপর একটি তথ্য বহুল সুবিস্তৃত ও ব্যাতিক্রমধর্মী কাজ চলছে । যা প্রায় শেষের দিকে। কিতাবটি যেন আল্লাহ্ তাআলা কবুল করেন এবং  উক্ত বিষয়বস্তর হক আদায় করে সার্বিক বিচারে মানোত্তীর্ণভাবে বের করার তাওফীক দান করেন সেজন্য সকলের দুআপ্রার্থী।

Leave a comment

search previous next tag category expand menu location phone mail time cart zoom edit close